#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_39
🍁🍁
রোদের কাছে প্রশংসা শুনে মেঘ খুশিতে ডগোমগো হয়ে উঠে বসলো!আর আলো দুই ভাইয়ের কথা শুনে উচ্চ মাত্রার টাসকি খেয়ে অটিস্টিকস রোগী মত কুটুর কুটুর করে রোদ আর মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকলো!
মেঘ আলোর আর একটু কাছে এগিয়ে আসলো!তারপর মেঘ আলোর কানে কানে বললো….!!
মেঘঃ বউমনি বদনা কত প্রকার??
আলোঃ আমার জানা মতে বদনা একটা প্রকারই হয়!
মেঘঃ আর.এফ.এল বদনা আবার কি বউমনি??অনেক দামী জিনিস তাই না (ফিসফিস করে)
আলোঃ হুমম মাএ ৮৭ টাকা দাম মনে হয়!ধবলিকে গোসল করানোর জন্য একটা বদনা এনে দিয়েছিলো ছোট মা!তখন দেখছিলাম বদনার দাম ৮৭ টাকা।
মেঘঃ কিহ!বউমনি দাভাই কি ওয়াশরুমের বদনার কথা বললো..! (চোখ বড় বড় করে)
আলোঃ হুমম!
মেঘঃকিহ!দাভাইই (চিৎকুর দিয়ে)
রোদঃ আমি কানে ভালো শুনতে পায়! এভাবে ছাগলের মত চিৎকার করছিস কেন???
মেঘঃ আমি ছাগল হলে তুমি গন্ডার..!!
রোদঃ তাহলে তুই কচি পাঠা..!!(ফোনের দিকে তাকিয়ে)
মেঘঃ বউমনি দাভাই আমাকে কচি পাঠা বলছে! তুমি আমাকে কিছু একটা শিখিয়ে দাও।(রাগি চোখের রোদের দিকে তাকিয়ে)
আলোঃ তোমাকে কচি পাঠা বললো তো!তাহলে তুমি তোমার দাভাইকে বলো বুইড়া ষাড় (কানে কানে)
মেঘঃ দাভাই তুমি বুইড়া ষাড় (খিলখিল করে হেসে)
মেঘের মুখের এমন কথা শুনে রোদ খুব ভাল করেই বুঝতে পারে আলো মেঘকে শিখিয়ে দিয়েছে!রোদ আলোর দিকে তাকাতেই আলো চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করতে থাকে!রোদ ওর ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসির রেখে টেনে বলে উঠলো….!!
রোদঃ ঠিক আছে! এই কথাটা যেন মাষ্টার ম্যম মনে রাখে!আমিও যদি এর শোধ তুলতে না পারি তাহলে আমার নামও রোদ মেহবুব না….!!
তারপর তিনজন খেয়ে শুয়ে পড়লো!আলো আর মেঘ একটা বেডে আর অন্য টাতে রোদ!আলো গল্প বলছে আর মেঘ মনোযোগ দিয়ে শুনছে!রোদ কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনছে আর চোখ বন্ধ করে আছে! ঝমঝম শব্দ করে ট্রেন চলছে তার আপন গতিতে!আলো খেয়াল করে দেখলো মেঘ ঘুমিয়ে গেছে! তাই আলো বেড থেকে আস্তে করে উঠে পড়ে!তারপর ব্যাগ থেকে একটা সুতির ওড়না বের করে মেঘের গায়ে দিয়ে দেয় আর সাবধানের মেঘের কপালে আদর দিয়ে দেয়!আলো রোদের দিকে তাকিয়ে দেখে রোদও চোখ বন্ধ করে আছে!তাই আলো মুচকি হেসে রোদের কপালের উপর থেকে চুল সরিয়ে খুব সাবধানে রোদের কপালেও আদর দিয়ে কেবিন থেকে হয়!আলো বের হওয়ার সাথে সাথে রোদ চোখ খুলে তাকায় আর ওর কপালে হাত রাখে!তখন রোদের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে…!যদিও রোদের কাছে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ছিলো…!!
আলো ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে একটু এগোতেই রোদকে দেখে চমকে উঠে!আলো বুঝতে বাকি নেই রোদ জেগে ছিলো তখন!এজন্য আলোর এখন লজ্জায় লাল টমেটোর রুপ ধারণ করেছে!রোদ আলো হাত ধরে ট্রেনের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো! ট্রেন অতিদ্রুত ছুটছে! দরজার কাছে এসে দাড়াতেই এত বাতাস আসছে যে,মনে হচ্ছে বাতাসের জন্য ঠিক ভাবে নিঃশ্বাসটাও নেওয়া যাচ্ছে না!ওড়নাটাও বাতাসের গতির সাথে তাল মিলিয়ে উড়ছে!রোদ আলোর বাম হাতটা শক্ত করে ধরে আছে!মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে ট্রেন চলতেই আছে।দূরের ওই বাড়িঘর গুলোর জ্বলে থাকা লাইট গুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে!আকাশেও মেঘ জমেছে!ট্রেনটা এখন একটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এজন্য চারদিকে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে….!!
আলো মুখ ঘুরিয়ে রোদের বুকে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো!রোদ মুচকি হেসে বললো..!!
রোদঃ বাব্বা!একেই মনে হয় বলে মেঘ না চাইতেই জল….(মুচকি হেসে)
আলো কিছু বললো না চুপ করেই থাকলো!এত বাতাস আসছে যে শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে এখন!রোদ আলোকে সামনে তাকাতে বললো!আলো মুখ উঠিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখতে পেলো শত শত জোনাকি পোকা! অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য….!!
(এটা সিনেমাতেই হয় না শুধু!বাস্তবেও হয় আর এটাকে জোনাকির মিছিলো বলা যায়! আসলেই অনেক অনেক সুন্দর হয় জোনাকির মিছিল!আমি নিজের চোখে দেখছি…..!!কোন একটা মুহূর্তে)
রোদ ওর ফোনটা বের ভিডিও করে নিলো!তারপর রোদ আলোকে কেবিনে যেতে বললো!কিন্তু আলো না করে দেয়!আর কিছু সময় রোদ আর আলো রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করে কেবিনে চলে যায়!রোদরা কেবিনে ঢুকতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে!বৃষ্টির কারনে শীত শীত লাগবে! তাই রোদ এসি বন্ধ করে দেয়। তারপর রোদ শুয়ে পড়ে!আলো মনে মনে রোদকে অসংখ্যবার ধন্যবাদ জানায়! রাতের অন্ধকারে জোনাকিদের মিছিল টা দেখানোর জন্য…!!অসম্ভব সুন্দর কিছু মুহূর্ত রোদ আলোকে উপহার দিয়েছে!আলো সেই মুহূর্ত গুলো নিয়ে ভাবতে থাকে!তারপর আলো ঘুমিয়ে পড়ে…!!
ভোরের দিকে রোদ আলো আর মেঘকে টেনে তুলে!কারন ৫মিনিট পরেই ট্রেন থামবে ঢাকা স্টেশনে!এই দুইজনকে ঘুম থেকে তুলতে গিয়ে রোদের কাল ঘাম ছুটে গেছে!রোদ আলো আর মেঘকে পানি দিলো চোখ মুখে দেওয়া জন্য! আলোর আর মেঘ চোখ মুখে পানি দিলো! রোদ সব ব্যাগ প্যাক গুছিয়ে নিলো!ট্রেন থামলো তারপর ওরা তিনজন স্টেশনে বাইরে এসে দাঁড়াতেই ওদের ড্রাইভার কাকুও গাড়ি নিয়ে আসলো!তারপর ওরা গাড়িতে উঠে বসলো…!!
রোদ ড্রাইভারের পাশে বসেছে আর মেঘ আর আলো বসেছে পেছনের সিটে! রোদ পেছনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আলো আর মেঘ আবার ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে!মেঘ আলোর কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আর আলো সিটের সাথে মাথা হেলিয়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে! রোদ আর কিছু না বলে জানালার বাইরে তাকালো!আধাঘন্টা পর ওরা বাসায় পৌঁছে গেল!রোদ গাড়ির দরজা খুলে মেঘকে কোলে নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে গেল!শিউলি বাসায় ছিলো এজন্য সব গোছগাছ করা। রোদ ওর রুমে গিয়ে মেঘকে বেডে শুইয়ে দিলো!তারপর আবার গিয়ে আলোকে কোলে তুলে নিয়ে মেঘের পাশে আলোকেও শুইয়ে দিলো!
ড্রাইভার সব ব্যাগ প্যাক বাসায় এনে রাখলো!রোদ ফ্রেশ হয়ে নিলো!আর ফোন বের করে ওর আম্মুকে জানিয়ে দিলো ওরা বাসায় পৌঁছে গেছে!রোদের আম্মু হুজুরকে জানালো!হুজুর উনার কাজ উনি করে ফেললো!রোদের আম্মু রোদকে বললো সব রুমে আয়াতুল কুরসি রাখতে।রোদ ওর আম্মুর সাথে কথা বলা শেষ করে!তারপর মেঘের রুমের দিয়ে রোদ শুয়ে পড়লো!কারন রোদ সারারাত একটুও ঘুমায়নি!
সকাল ৮ঃ৩০ টার দিকে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়!যদিও এখন মেঘের এত সুন্দর খুব ভাংতো না শুধু হতভাগা খুধার জন্য ঘুম রাজা মেঘের থেকে বিদায় নিয়েছে!মেঘকে উঠতে দেখে রকি (কুকুর)দৌড়ে এসে মেঘের গাল চাটতে থাকে আর ঘেউ ঘেউ করতে থাকে!মেঘকে পেয়ে রকি খুব খুশি! মেঘ আলোকে ঘুমাতে দেখে রকির একটা কান টেনে রকিকে বাইরে নিয়ে গেল।রকি খুশিতে ছুটাছুটি করতে গিয়ে একটা ফুলদানি ভেঙ্গে ফেলে! আর সেই শব্দে আলোরও ঘুম ভেঙ্গে যায়…!!আলো দৌড়ে রুমে থেকে বের হয়ে দেখে মেঘ ফুলদানির ভাঙা কাঁচ তুলতে যাচ্ছে। আলো গিয়ে মেঘকে সরিয়ে দিয়ে কাঁচ পরিষ্কার করে ফেলে!আলোকে দেখে রকি আলোর হাত চাটতে শুরু করে..!আলো রকির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তারপর রকি শান্ত হয়..!!
আলো আর মেঘ ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলো!রোদকে খুঁজে না পেয়ে আলো রকির মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করে রোদ কোথায়?? রকি আলোর ওড়নার একপাশে কামড়ে ধরে মেঘের রুমে নিয়ে যায়!আলো রোদকে ঘুমাতে দেখে আর ডাকে নি! আলো মেঘ আর রকি তিনজন খুনশুটিতে মেতে আছে ড্রয়িংরুমে !আলো যতবার রকির শরীর চুলকে দিচ্ছে রকি ততবার আলোর হাত চেটে দিচ্ছে। আর আলো ভ্যা ভ্যা করে কান্নার অভিনয় করছে!আর সেটা দেখে মেঘ হাসতে হাসতে মেঝেতে শুয়ে লুটোপুটি খাচ্ছে…!! মেঘের যত খেলনা আছে সব মেঘ আলোর সামনে এনে রেখেছে!আলোর পাশে রকি শুয়ে আছে আর আলো রকির মাথা চুলকিয়ে দিচ্ছে। আর রকি মেঝেতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে…!! এর মধ্যে শিউলি এসে বলতে শুরু করলো..!!
শিউলিঃ এ্যাই কুওাডা এমন হারামির হারামি। আমাকে দিনে তিন বার দৌড়ানি দেয়।(রকির দিকে তাকিয়ে)
মেঘঃ শিউলি আন্টি বলছিনা ওরে কুওা বলবে না।ওর নাম রকি!কুওা বললে রকি কষ্ট পায়।(ভ্রু কুচকে)
শিউলিঃ মেঘ বাবা!কুওাকে কুওা ডাকুম না তো কি ডাকুম কও।আমি তো ছুডু বেলা থেইকাই কুওারে কুওা ডাকছি। (জোর করে হাসার চেষ্টা করে)
আলোঃ শিউলি আন্টি!তুমি কষ্ট করে রকির নাম ধরো ডাকবে কেমন।মেঘ বাবু যখন বলছে…!!
শিউলিঃ আচ্ছা ভাবিমনি!তবে এই কুওাডা সলি এই রকিডা মেঘ বাবার ঘর ঝাড়ু দিতে গেলেই আমারে দৌড়ানি দেয়!এই গতর লইয়া কি দৌড়ানো যাই কও ভাবিমনি! তাও কুওার ভয়ে সলি রকির ভয়ে জান খান হাত লইয়া দৌড় দিসিলাম…!!(দাঁত বের করে)
আলোঃ শিউলি আন্টি ওই কথাটা সলি হবে না কেমন!এই কথাটা হবে সরি..!!(শিউলির দিকে তাকিয়ে)
মেঘঃ শিউলি আন্টি তুমি জান হাত নিয়ে তো দৌড় দিয়েছিলো বুঝলাম! বাট তুমি মরে গেলে না কেন??(চিন্তিত হয়ে)
শিউলিঃ কুওার ভয়ে তখন তো আমি দৌড় দিসিলাম! জান হাতে লইয়া!আজরাইল তো আসে নাইক্কা হের লাইগাই মরতে মরতে মুই বাইচ্ছা গেছিগা।আর তারাতারি তোমরা চইলা আইসো! তাই তোমাগোরে একটা থ্যাঙ্কুস ইউ সু মান
মেঘঃ শিউলি আন্টি এটা কি নতুন কোন খাবারের নাম নাকি??
শিউলিঃ হায় আল্লাহ !মেঘ বাবা এটা তুমি কেমুন কথা কইলা?এইডা খাওনের নাম হইবো ক্যান। আমি তো ইংলিশ ভাষা কইছি… (গর্ব করে)
মেঘঃ শিউলি আন্টি তোমাকে আমার স্কুলে একদিন নিয়ে যাবো কেমন। (গালে হাতে দিয়ে চিন্তিত হয়ে)
শিউলিঃ ক্যান!আমি ইশকুলে যাবো কিসের লাইগ্গা মেঘ বাবা??
মেঘঃ তোমার ইংলিশ শুনে যে কেউ হুটুস করে এবনরমাল হয়ে যাবে।তাই আমি চাচ্ছি আমার টিচার গুলোই আগে এবনরমাল হোক তাই।আর ওদের জানা উচিত তুমি কত ইংলিশ বলতে পারো ওদের থেকে…(ফোকলা হাতে হেঁসে হেঁসে)
শিউলিঃ থ্যাঙ্কুস ইউ সু মান মেঘ বাবা (খুশি হয়ে)
আলোঃ শিউলি আন্টি কথাটা হবে থ্যাংকিউ সো মাচ্
শিউলিঃ থাইক আমার ইংলিশটাই ভালা! ভাবিমনি তোমারটা ইংলিশডা মেলা শক্ত…!!
শিউলির কথা শুনে মেঘ আর আলো আর কিছু বললো না!কারন শিউলি হচ্ছে সেই পাবলিকের একজন, যারা নিজের কথা বা কাজ ভুল হলেও সঠিক বলে চালিয়ে দেয়।এদের এজন্য এদের মতই থাকতে দেওয়া ভালো…!!
একটুপর রোদ ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে এলো।রোদ ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য একেবারে রেডি হয়েই এসেছে!আলো রোদকে দেখে উঠে গিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে তারপর রোদকে খেতে দেয়..!!
To be continue……!!
(গল্পটা খুব তারাতারি শেষ করে দিবো….কারন গল্পটা আপনাদের কাছে নাকি এখন বোরিং লাগছে)