প্যারাময়_লাভ❤❤ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_33

0
324

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_33

ইভার আম্মু মুগ্ধর আম্মুকে রুহির নামে হাজিবাজি বলছে!বাট মুগ্ধর আম্মু সে কথা কাটিয়ে অন্য কথা বলতে শুরু করছে!রুহি ওদের বাসায় গিয়ে ওর বাপি আর আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো।রুহি ওর বাপি আর আম্মু সাথে কথা বলে নিজের রুমে গেল।রুহি আম্মু হুট করে এসে একটা নীল শাড়ি ধরিয়ে দিলো কারন বিয়ের পরের দিন থ্রীপিস পড়ে থাকাটা বেমানান লাগছে!রুহি প্রথমে রাজি হচ্ছিল না পরে ওর আম্মু ওকে বোঝানোর পর রুহি শাড়ি পড়তে রাজি হলো।
রুহি তো শাড়ি পড়তে পারে না তাই রুহির আম্মু রুহিকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো….


তারপর রুহি শাড়ি পড়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে মুগ্ধর বাসার দিকে!রুহি মুগ্ধদের বাসায় ঢুকতেই আগে মুগ্ধর বাবার সাথে হয়…

মুগ্ধর বাবাঃ আরে রুহি মা তোকে তো একদম আমার মায়ের মত লাগছে…

রুহিঃ এত সুন্দর করে শাড়ি পড়লাম আর তুমি কিনা বলছো তোমার বুড়ি মায়ের মত লাগছে (গাল ফুলিয়ে)

মুগ্ধর আম্মুঃ তাই তো তুমি এসব বলছো কেন??
আমার রুহি মা তো দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে!

রুহিঃ সত্যি তো!!!

মুগ্ধর বাবাঃ হুমম একদম!অনেক সুন্দর লাগছে আমার মা টাকে…

মুগ্ধর আম্মুঃ রুহি মা মুগ্ধকে গ্রীণ ট্রি টা দিয়ে আয় মুগ্ধর রুমে! আর তারাতারি ফ্রেশ হয়ে দুইজনই নিচে ব্রেকফাস্ট করতে আয়..

রুহিঃ আচ্ছা!!!


রুহি মুগ্ধর রুমে গিয়ে দেখলো মুগ্ধ রুমে নেই!মুগ্ধ ওয়াশরুমে আছে। রুহি তারাতারি করে ওর মাথায় ঘোমটা টেনে দেয়! আর হাতের কাপটা সেন্টার টেবিলের উপর রাখে!তখনই মুগ্ধ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে!মুগ্ধ ভ্রু কুচকে সামনে দাড়িয়ে থাকা ঘোপটাওয়ালির দিকে তাকায় আর বলে..

মুগ্ধঃ কে আপনি??আর আমার রুমে কি চাই??

রুহিঃ…..

মুগ্ধঃ আমার রুমে আসার সাহস হলো কি করে?যাই হোক চলে যখন এসেছেন! তাহলে চলেন একটু রোমাঞ্চ শুরু করি।কারন আমার এখন খুব রোমাঞ্চ
করতে ইচ্ছে করছে।

রুহিঃ….


মুগ্ধ রুহিকে প্রথমেই চিনে ফেলছে আর মুগ্ধর রুমে হুট রুমে যে সে হুট করে ঢুকতে পারে না।মুগ্ধ দুষ্টু হেসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে আর রুহির কাঁধে মুখ রেখে বলে…

মুগ্ধঃ সকাল সকালে এভাবে পাগল করা হচ্ছে!হুট করে শাড়ি পড়তে ইচ্ছে কেন আমার বউটার??

রুহিঃব ব ব

মুগ্ধঃ আরে আপনি তোতলাচেছন কেন?আমি চুপটি করে থাকুন প্লিজ! আর আমাকে আমার কাজ করতে দেন..

রুহিঃ….


এরপর মুগ্ধ রুহির ঘোপটা সরিয়ে ফেলে!তারপর আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে।আর এভাবে খুনশুটি চলতে থাকে ওদের মাঝে!তারপর দুইজন নিচে যায় ব্রেক ফাস্ট করতে!সবার সাথে রুহিও গিয়ে ডায়নিং টেবিলে বসে…

ইভার আম্মুঃএই মেয়ে তুমি এখন খেতে বসলে কেন?তুমি এখন খেতে বসলে আমাদের সার্ভ করবে কে??

রুহিঃ আচ্ছা আমি সার্ভ করে দিচ্ছি (উঠে দাড়িয়ে)

মুগ্ধঃ (মুগ্ধ রুহি উঠতে দেয় না!বরং রুহির হাত ধরে বসিয়ে দেয়)

ইভার আম্মুঃ মুগ্ধ এসব কেমন ধরনের অসভ্যতামী!আমাদের সামনে এভাবে বউয়ের হাত ধরে রাখছো!তোমার থেকে তো এসব আশা করি নি….

মুগ্ধঃ…..

ইভাঃ একদিনেই কেমন বউ পাগলা হয়ে গেছে মুগ্ধ ভাইয়া! এটাও দেখার বাকি ছিলো…হা হা হা

ইভার আম্মুঃ বড় আপা তোমার কপালে দুঃখই আছে!এখনই তোমার ছেলের যে অবস্থা দেখছি আর তো দিন পরেই আছে…

মুগ্ধর বাবাঃ এসব কথা থাক না!যে যার মত খাওয়া শুরু করো তো।কথায় কথা বাড়ে…

রুহিঃ……

মুগ্ধর আম্মুঃ খাওয়ার সময় এত কথা বলা ঠিক না!এই টপিক বাদ দে আর মনোযোগ দিয়ে খাওয়া শুরু কর…


এসব কথা শুনে রুহির খুব খারাপ লাগছে!রুহি ভেবেছিলো মুগ্ধ উনাকে কিছু বলবে বাট মুগ্ধ কিছু বলছে না নিজের মত খেয়েই যাচ্ছে! রুহি মুখে খাবার দিয়ে আর গিলতে পারছে না! কারন রুহি বিনাদোষে কেউ কিছু বললে তাকে ছেড়ে দেয় না!বাট এখন এখানে বড় বাবা আর বড় আম্মু আছে তাই রুহিও কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।রুহি রাগে ফোঁস ফোঁস করছে…মুগ্ধ রুহির দিকে তাকিয়ে দেখলো রুহি খাচ্ছে না!তাই মুগ্ধ রুহির দিকে তাকিয়ে বললো তারাতারি খেয়ে রুমে আসতে দরকারী কথা আছে!এই নিয়ে ইভার আম্মু আবার পকপক করা শুরু করলো!মুগ্ধর খাওয়া শেষ তাই মুগ্ধ উঠে গিয়ে বেসিনের হাত ধুয়ে আবার ওর চেয়ারেই বসে আর রুহিকে তারাতারি খাওয়ার জন্য তারা দিতে শুরু করলো।তারপর মুগ্ধ আরাম করে চেয়ারে বসে বললো…


মুগ্ধঃ খালামনি আপনি কি যেন বললেন?রুহি কে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করার জন্য তাই না।তা আপনাদের হাত কি বাসায় রেখে এসেছে নাকি, যে নিজে নিজেরা সার্ভ করে খেতে পারবেন না!আর আপানারা কোন জমিদার যে আপনাদের সার্ভ করে খাওয়াতে হবে…

ইভার আম্মুঃ মুগ্ধ তুমি কি আমাকে অপমান করতে চাচ্ছো??

মুগ্ধঃ না অপমান করছি না বাট আপনার ভুল গুলো ধরিয়ে দিচ্ছি!আর যদি অপমান ভাবেন তো ভাবতে পারেন আমি কিছু মনে করবো না।(শান্ত সুরে)

মুগ্ধর বাবাঃ থাক না মুগ্ধ এসব বাদ দে..

মুগ্ধঃ বাবা আমার বউকে কেউ কটু কথা বলবে আর আমি তা শুনে যাবো সেই রকম কাপুরুষ আমি না।আর হ্যা ইভা তুই কি যেন বললি একদিনেই আমি বউ পাগল হয়ে গেছি তাই না!হুমমম বউকে সাপোর্ট করলে যদি বউ পাগল হতে হয় তো হলাম সমস্যা কি!আর খালামনি আমি অসভ্যতামির কিছুই করি নি বাট এর পর যদি সেইম কাজ আপানারা করেন তো আমি আমার মতো করে অসভ্যতামি কাকে বলে সেটা আপনাদের বুঝিয়ে দিবো।

ইভার আম্মুঃ এই মেয়েটার জন্য তুমি আমাদের সাথে এইভাবে কথা বলতে পারলে??(ন্যাকা সুরে)

মুগ্ধঃ এই মেয়ে না বলে ওর যেহেতু সুন্দর একট নাম আছে! তাই ওর নাম ধরে ডাকেন।আর নাম না জানলে মিসেস মুগ্ধও বলতে পারেন।আর হ্যা আর একটা কথা আমার বউকে যদি আর একবার আপনারা কোন রকম ভাবে অপমান বা কটু কথা শোনান! তো আমিও ভুলে যাবো আপনারা আমাদের রিলেটিভ হন..


কথাটা বলে মুগ্ধ রুহির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে ওপরে৷ চলে গেল।মুগ্ধর বাবা মা অবাক হন নি কারন এটা নতুন কিছু না।মুগ্ধ বরাবরই এইরকমই! সহজে কাউকে কিছু বলে না বাট বলতে শুরু করলে আর ছাড়ে না।


আজকে ওদের রিসিপশন তাই মুগ্ধ একটু ছোটাছুটি করতে থাকে!আরো একটি কারন আছে এর জন্য মুগ্ধও বাসার বাইরেও এসেছে কারন আজকে রুহির রেজাল্ট দিবে।রুহি বিয়ের আনন্দে রেজাল্টের কথাও ভুলে গেছে।


১১ টার দিকে রুহিকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক এসেছে। মুগ্ধর আম্মু রুহিকে একটা গয়নার বক্স দেয়!রুহি আজকে পড়ছে এ্যাশ কালার লেহেঙ্গা। লেহেঙ্গাতে গোল্ডেন সুতা আর পাথরের কাজ করা।এই ড্রেসটা মুগ্ধ বাইরের দেশ থেকে আনিয়েছে।রুহি সাজতে বসে বার বার ছটফট করছে!

পার্লারের মেয়েঃম্যম নড়বেন না প্লিজ আমাদের সাজাতে সমস্যা হচ্ছে..

রুহিঃ নড়বো না মানে কি!আমি কি রোবট নাকি যে নড়াচড়া না করে থাকতে পারবো।

ভাবিঃ একটু কষ্ট করো রুহি!আজকের দিনই তো…

রুহিঃ ভাবি শরীরের মধ্যে কুটকুট করছে!মনে হচ্ছে কে জানি সুচ দিয়ে গুতো দিচ্ছে

ভাবিঃ কাপড়ের মধ্যে সূচ আসবে কোথায় থেকে??

রুহিঃ তা তো জানিনা!


তারপর সাজগোজ শেষ করে! আর রুহি সেজেগুজে বসে লক্ষী বউয়ের মত বসে আছে!বাট মুগ্ধর কোন দেখা নাই।বাসায় মেহমানরা গিজগিজ করছে। রুহি চারদিকে চোখ বুলিয়ে মুগ্ধকে খুঁজছে। মুগ্ধ ফোনটাও রিসিভ করছে না।রুহি মন মরা হয়ে বসে আছে ঠিক তখনই মুগ্ধ বাসায় ঢুকে আর রুহির দিকে না তাকিয়ে হনহন করতে করতে রুমে চলে যায়।রুহি আহাম্মকের মত তাকিয়ে মুগ্ধর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে?৩০মিঃ পর মুগ্ধ কালো শার্টের সাথে
এ্যাশ কালারে ব্লেজার পড়ে আসে!রুহি চোখ বড় বড় মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে!রুহির পাশে মুগ্ধ বসলো তখন রুহি মনে মনে বিরবির করে বলে উঠলো…

রুহিঃ এই বরটা কার রে!!ভাভা গো ভাভা আমি তো পাঁচ কেজি ওই সব খেয়ে ফেলছি!ওইসব মানে ক্রাস আর কি!ওমা এ তো দেখি আমার বাবার মেয়ের জামাই! এজন্য তো বলি এমন ভাব আর কার হতে পারে!কাল রাতে কত কামড়ালাম তাও চেহারাটা একটুও অসুন্দর হলো না বরং আরো হ্যান্ডস্যাম লাগছে…(মনে মনে)

মুগ্ধঃ…..

রুহিঃআজকে একবার সুযোগ পায়! তার পর তোর ভাব না কমাতে পারলে আমার নামও রুহি না।তোর মাথায় এমন ডগা মারবো যেন সাথে সাথে তোর মাথায় আলু উঠে যায়।শালা খাটাশ তোকে না কালো শার্ট পড়তে না করছি তাও কালো শার্ট পড়ছিস…মন তো চাচ্ছে এক খাবলা থুথু দিয়ে আসি!যাতে কারো নজর না লাগে…
(মনে মনে)


মুগ্ধ রুহির সাথে কোন কথা বলছে না বাট অন্যদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে!রুহি মনে মনে মুগ্ধর গুষ্ঠী উদ্ধার করছে আর সেটা খুব যত্নে।রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো…


রুহিঃও স্বামী তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেন??

মুগ্ধঃ…..

রুহিঃ কি এমন করছি আমি! যে কথা বলছো না তুমি!প্লিজ কথা বলো না আমার সাথে! তুমি কথা না বললে আমার মনটা আকুপাকু করছে।

মুগ্ধঃ আজকে তোর পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে! তোর কি মনে আছে?

রুহিঃ ওহহ আজকে রেজাল্ট!!!!!!! ইসস আজকের দিনেই হারামজাদা রেজাল্টকে বের হতে হলো!আর দুইদিন পর বের হলে কি হতো??যাই হোক দুপুর ১তো বেজে গেছে রেজাল্ট দিবে কখন…

মুগ্ধঃতিনটা সাবজেক্টে ফেল করছিস!ছিঃ! ফেলের কথা মুখে বলতেও আমার লজ্জা লাগছে।তোকে এত কষ্ট করে পড়ানো টাই বৃথা.. (দাঁতে দাঁত চেপে)

রুহিঃ যাক বাবা বাচলাম!তাহলে বাকি গুলোতে তো পাশ করছি!(অনেক খুশি হয়ে)

মুগ্ধঃ পরীক্ষাতে ফেল করে তুই এত খুশি হচ্ছিস???তুই আসলেই কি মানুষ??? ..

রুহিঃ যা বাবা তুমি তো কালকে রাতে আসার সাথে বাসর করলে আর আজকে বলছো আমি মানুষ কি না??

মুগ্ধঃ…..

রুহিঃথাক মন খারাপ করো না!আসছে বছর আবার হবে!আর বাদ বাকি গুলোতে তো পাশ করছি! এর জন্য আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া..একটা কথা সব সময় মনে রাখবা…

মুগ্ধঃ….

রুহিঃ অল্পতে খুশি হতে শিখো!তাহলে জীবনে কিছু করতে পারবে…

মুগ্ধঃ তা তিনটা বিষয়ে ফেল করে তুই কি করবি শুনি??(অবাক হয়ে)

রুহিঃ এমন একটা কাজ করবো! যেটা পড়াশোনা না জানলেও খুব ভালো ভাবে করা যায়।ঝাক্কাস কাজ আছে একটা আর আমি ওইটাই করে তোমাকে দেখাবো…

মুগ্ধঃহুমম সেই মহৎ কাজটা কি?? যদি বলতি! তাহলে তোর কথা শুনে আমার কান দুটোকে ধন্য করতাম।

রুহিঃফেল যখন করেছি তখন কি আর করবো! হালি হালি বাচ্চা পয়দা করবো…আর সেই ছালপাল কে মানুষ করবো।আর আমার এত পড়াশোনা করে কি হবে? আমার ছানাগুলো কে অ আ মুরগির ঠ্যাং শেখানোর পর টিচারের গলায় ঝুলিয়ে দিলেই তো ল্যাটা লুকে গেল! তাহলে হুদাই আমি পড়াশোনার করে ব্রেণ ক্ষয় করবো কেন? বলো! বলো! এটাও উওর দাও আগে আমাকে??

রুহির কথা শুনে মুগ্ধ কি বলবো বুঝতে পারছে না!আপাতত রুহিকে কি বলা উচিত মুগ্ধর জানা নেই….

To be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here