প্যারাময়_লাভ❤❤ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_29

0
389

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_29

এত থাবড়ানোর পরও আবিরের কাশি থামছে না দেখে! রুহি দৌড়ে ঝাড়ু আনলো!মুগ্ধ রুহিকে না বলার আগেই রুহি ঝাড়ু দিয়ে আবিরের পিঠে দুম করে মেরে দেয়!আবির ঝাড়ুর মার খেয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে বসে আর সাথে সাথে কাশিও উবে যায়….


আবিরঃ মুগ্ধ ভাই তোর বউকে থামা ভাই!আজকে না হয় আমাকে মেরে ফেলবে।

রুহিঃআপনার কি কাশি থামছে? নাকি আর একটা দিবো ভাইয়া??

আবিরঃ না না আমি একদম ঠিক আছে।তুমি খেতে বস বোন…

রুহিঃ যাক বাবা! শেষ মেষ কাশিটা তাহলে থামলো।

রাহাতঃ আবির তুই ঠিক আছে তো ভাই??

আবিরঃ হ্যা মানে না… মানে হ্যা

সুমিঃ হা হা হা

ইরাঃ রুহি তোর বুদ্ধি আছে! একটা মারলি আর কাশি টা থেমে গেল।

মুগ্ধঃরুহি হয়েছে তোর চিকিৎসা করা! এবার খেতে আয়!

রুহিঃহুমম

মুগ্ধঃ আবির আমি এজন্য বলেছিলাম রুহিকে খোঁচাতে যাস না!আমব তো জানি ও কেমন তাই না।আমার কথা টা শুনলে এখন তোর আর ঝাড়ুর মার টা খেতে হতো না।

আবিরঃ…….

রাহাতঃআজকে জানলাম ঝাড়ু দিয়ে মারলে কারো কাশি থামানো যায়। হা হা হা

রুহিঃ ভালোর জন্যই তো মারলাম।

মুগ্ধঃ ভালো কাজ করে আপনি উদ্ধার করছেন…


তারপর যুদ্ধ করে কোনরকম খাওয়াটা সবাই শেষ করে!তারপর মুগ্ধরা চলে যায় আর রুহিকে ঘিরে ধরে সবাই! আর মেহেদী দিতে বসে।কালকে রাতে মেহেদী দেওয়া হয়নি তাই আজকে রুহির দুই হাত ভর্তি মেহেদি দেয়! আর রুহির হাতে মুগ্ধর নামও লিখে দেয়!মেহেদী শুকিয়ে গেলে! রুহিকে বাগানে নিয়ে যায় গোসলের করানোর জন্য!


বাঙালিদের বিয়ের নিয়ম-নীতির তো শেষ নাই!এখন সাতজন এও(বিবাহিত মহিলা) একটা কলসে পানি নিয়ে রুহির মাথায় সেই পানি ঢালবে কারন এটা করলে নাকি বিধবা নামক শব্দ টা রুহির জীবনে না আসে এজন্য..
(গ্রাম্য রীতি সব)


রুহি হাত ধুয়ে বসে ছিলো তখন একদম মহিলা এসে রুহিকে বাগানে ডেকে নিয়ে যায়!তারপর সদ্য বাটা হলুদ রুহির গায়ে ছোঁয়ায়! তারপর রুহিকে হলুদ ছোয়ানো শেষ হলে রুহিকে একটা চেয়ার বসায়!তারপর রুহির মুখে একটা পান দেয় আর রুহির মাথার উপর একটা একটা লাল গামছা দিয়ে ডেকে দেয়!তারপর রুহির এক ভাবি এসে গামছার নিচে ঢুকে রুহির মুখ থেকে মুখ দিয়েই পানটা নেয়! আর কানে কানে কি যেন বলে?তারপর গামছা সরিয়ে ফেলে।তারপর কয়েকজন বিবাহিত মেয়ে একসাথে আসে তারপর সাতজন মিলে একটা কলস ধরে আর রুহির মাথায় পানি ঢালতে থাকে!আর সবাই দোয়া করলো যাতে ওদের সংসারজীবন সুখের হয়। রুহি বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলে….


রুহিঃ বাঙালিরা পারেও বটে!ভাবি কানে কানে কি যে বললো সব তো মাথার উপর দিয়ে গেল।আর এসব কি নিয়ম কে জানে?যে এসব নিয়ম যে বানিয়েছে তাকে সামনে পেলে তার পেছনে ক্ষ্যাপা কুকুর লাগিয়ে দিয়ে দৌড় করাতাম।আর না হয় আছিলাম বাঁশ দিতাম।যওসব আলতু-ফালতু নিয়ম।বাঙালিরা এসব বিহেভ সাথে এসব রীতির জন্য অন্য দেশের মানুষ গুলো বাঙালীদের কথা শোনানোর সুযোগ পায়!আর এসব বোকা বোকা কাজ গুলোই তার প্রমান।এসব করার কোন মানেই হয় না তারপরেও…… যওসব আবালের দল।


তারপর রুহি ওয়াশরুমে চলে গেল!তারপর নিজের মনমত সাওয়ার নিয়ে বের হলো!একটুপর পার্লার থেকে রুহিকে সাজানোর জন্য দুইজন মেয়ে আসলো!তারপর রুহিকে সাজাতে বসলো!মেয়েটি রুহিকে সাজাচ্ছে না তো পুরাই যুদ্ধ করতে নেমেছে সেটা ওরাই জানে!রুহি আগেই বলে দিসে সাজাবে ভালো কথা হালকাভাবে যেন সাজায়!আর বেশি মেকাব ঘষলে এক টাকা তো দিবেই না! বরং ওদের থেকে আরো জরিমানা করবে।মেয়ে দুইটি রুহির চুল শুকিয়ে চুল বেঁধে নিলো তারপর মুখটাও সাজানো শেষ করে! শাড়ি পড়াতে গেল…


মেয়ে দুইটা মুচকি মুচকি হাসছে! রুহি ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা দুইটাকে এভাবে মুখ টিপে হাসতে দেখতে রুহি কিছু বলার আগেই একটা মেয়ে বলে উঠলো…

মেয়েটিঃম্যম আপনার বরের নাম কি মুগ্ধ?

রুহিঃ হুমম কেন?

মেয়েটিঃ না মানে!

রুহিঃআসলে,মানে ইয়ে এসব বাদ দিয়ে আসল কথায় আসুন!আর আমার বরের দিকে নজর দিলে চোখ তুলে মার্বেল খেলবো।

মেয়েটিঃ না ম্যস আসলে মুগ্ধ নামটা খুব সুন্দর।

রুহিঃ হুমম! তো??

১ম জনঃআসলে ম্যম আপনাকে দ দ…

রুহিঃ আমাকে দেখে কি আপনাদের জোকার মনে হচ্ছে নাকি!আর আমাকে দেখে এত হাসার কি হলো??

২য় মেয়েটিঃ না ম্যম আপনার পেটে দেখে আমরা..

রুহিঃ আপনার আর আমার পেট আলাদা নাকি! যে এমন ভাবে তাকাচ্ছেন আর হাসছেন?

১ম জনঃ আপনার পেটে আপনার বরের নাম লিখা তাই…

রুহিঃহুম তো!আমার যেখানে ইচ্ছা আমার বরের নাম লিখে রাখবো! তাতে আপনাদের কি?আপনার বরের ভুড়ির উপরে আমার বরের নাম লিখতে যায় নি তাহলে আপনাদের এত ফাটছে কেন??

১ম জনঃ ………..

রুহিঃ কি আর ফাটবে! ওই বুক ফাটার কথাই বলছি আর কি…..

তারপর ওদের সাথে বকবক করতে করতে রুহির সাজ কমপ্লিট হলো!রুহির মাথার বিয়ের সোনালী রংয়ের ওড়না টা দিয়ে দিলো! তারপর রুহি আয়নাতে নিজেকে দেখছে!লাল শাড়ি,গা ভর্তি গয়না,চুলে খোঁপা করে খোপাতে গোলাপের গাজরা,চোখে টানা কাজল,কপালে লাল টিপ,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,নাকে নোজপিন,গলার সোনার সীতা হার,হাতে সোনার চুড়ি,আঙুলের বেশ কয়েকটা সোনার আংটি,কপালে টিকলি,পায়ে নুপুর! হালকা সাজ আর গা ভর্তি গয়না একদম বিয়ের কনে সেজে নিজেকে দেখতে ব্যস্ত রুহি!রুহি আয়নাতে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বলছে…


রুহিঃ আজকে আমি তোমার লাল টুকটুকে বউ সেজেছি মুগ্ধ!আমার সেই আশা পূরণ হয়েছে মুগ্ধ।(মুচকি হেসে)


ওইদিকে মুগ্ধরাও সবাই নামাজ পড়ে রুহিদের বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি!হাস্যকে ব্যাপার মুগ্ধ হেটে যাচ্ছে ওর বউ আনতে! তারপর মুগ্ধ বর বেশে রুহির গেটের আসতেই ভাবি,ইরা,সুমি, আরো কয়েকজন মুগ্ধদের গেট আটকালো!তারপর জোরাজুরি ঝুলাঝুলি করে দশ হাজার টাকা নিয়ে তারপর গেট ছাড়লো! মুগ্ধ ঢুকতে যাবে আবার মুগ্ধর পথ আটকালো!রাহাত ফট করে বলে উঠলো..


রাহাতঃ এই তোমরা এখান থেকে সরবে! নাকি তুলে ছুড়ে মারবো…

সুমিঃ হাত ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিবো…

আরিয়ানঃওহ হো আমরা বুঝি দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাত ভাঙা দেখবো..

ইরাঃদেখবেন নাকি উল্টো ঘুরে দৌড় দিবেন আপনাদের ব্যাপার!বাট আমাদের হাতে মিষ্টি না খেলে ঢুকতে দিবো না।


তারপর মুগ্ধকে মিষ্টি খাইয়ে ফিতা কাটিয়ে তারপর ঢুকতে দিলো!সুমিরা মুগ্ধর গায়ে গোলাপের পাপড়িও ছিটালো!তারপর বরের বসার জায়গায় মুগ্ধকে বসতে দিলো!হঠাৎ দোতলা থেকে রুহি চিৎকার করে ওর আম্মু ডাকছে আর বলছে…

রুহিঃ আম্মু! ওহ আম্মু কুট্টুশকে কিছু খেতে দাও তো!আজকে কুট্টুশের খেতে দিতে মনে নাই আমার!বিয়ের আনন্দে সবকিছু ভুলে গেছি। পোলাও,মাংস দিও আজকে আমার বিয়ে বলে কথা।

রুহির কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে উপরে তাকিয়ে আছে!বিয়ের কনে যে গলা ফাটিয়ে এভাবে কথা বলতে পারে এটা কারো জানা ছিলো না।মুগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলো কারন এখানে মুগ্ধর অনেক কলিগরাও আছে! তারপর ভাবিরা রুহিকে এনেও মুগ্ধর পাশের চেয়ারে বসানো হলো!রুহি মুগ্ধর পাশে বসে উসখুস করছে!মুগ্ধ কিছু বলছে না! তাই রুহি মুগ্ধকে উদেশ্য করে বললো।


রুহিঃ কি হলো বর তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেন??তাকিয়ে দেখো আজকে আমি তোমার লাল টুকটুকে বউ সেজেছি আমি.. (লজ্জা মুখে)

মুগ্ধঃ…..

রুহিঃ এই তোমার পেটে কি গুড়ি কৃমি হয়েছে নাকি! তুমি কথা বলছো না কেন??

মুগ্ধঃচুপ করে বসে থাক!তা না হলে থাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারবো বলে দিলাম।

রুহিঃ আজকেও মারবে??কি করছি আমি??

মুগ্ধঃ এখন একটা যদি টু শব্দ করলে! আমি চলে যাবো তোকে রেখেই।

রুহিঃ যা বাবা আমি কি করছি??না বললে বুঝবো কি করে?

মুগ্ধঃ বিয়ের কনে কে কোনদিন এভাবে চিৎকার করতে দেখেছিস এর আগে!এত গুলো মানুষের আছে জেনেও এভাবে কথা বললি কেন?এটা কি কোন সুস্থ মানুষের কাজ..??

রুহিঃ আচ্ছা সরি!আর এমন হবে না…

মুগ্ধঃমনে থাকে যেন!বেশি বকবক করলে তোর খবর আছে? মনে রাখিস(দাঁতে দাঁত চেপে)

রুহিঃহুমম!উফফ রে পোলাও এর ঘ্রাণ আসছে! আমার পেটে তো খুধাতে কিলবিল করছে।ইসস কখন যে খাবো রে…

মুগ্ধঃ….


রুহি কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুগ্ধ দাড়িয়ে যায়!আর সামনে তাকিয়ে মুচকি হাসে! রুহি মুগ্ধর দৃষ্টি অনুসরণ করে আর সামনে তাকায়! তখন রুহির মুখেও হাসি ফুটে! কারন দুইটা বেস্ট কাপল হাসি হাসি মুখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে!যাদের দেখে ফিল করা যায় আসলে রিলেশন ঠিক কেমন হওয়া উচিত!ভালবাসা ঠিক কাকে বলে?আর ভালবাসার মানুষকে কিভাবে আগলে রাখতে হয়।
আর এরা হলো অনুষ্ঠানের স্পেশাল গেস্ট। আর তারা হলো…

#রোদ_আলো❤❤(এলোকেশী কন্যা)

#রাসেল_মিষ্টু❤❤(স্পর্শানুভূতি)

আর আলোর শাড়ির আঁচল ধরে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে… মেঘ….❤❤

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here