বাঁক ( ১৯ পর্ব )
_____________
মানহা আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে পুরুষালি নগ্ন পেশিতে খানিক্ষণ গাল চেপে ধরে। তারপর নাক ডুবিয়ে ঠোঁট দিয়ে আলতো চুমু খেয়ে মাথা তুলে মৃদুলের দিকে তাকায়। কথার কোনো জবাব না দিয়ে মানুষটা এখনও আনমনে কী যেন ভাবছে।
ডিম্বাকৃতির পেশিতে আলতো করে কামড়ে ধরলো মানহা। ‘উফ’ বলে আর্তনাদ করে উঠলো মৃদুল।
– ‘আগে তুমি পেটে চিমটি দিয়েছিলে এখন আবার কামড়, এমন করো কেন?’
ফিক করে প্রথমে হেঁসে পুনরায় ওর লোমশ বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,
– ‘একশোবার করবো হাজারবার করবো।’
– ‘বাচ্চামু করো না তো।’
– ‘তুমি আমার কথার জবাব না দিয়ে কোথায় হারিয়ে যাও? তাইতো কামড় দিলাম।’
– ‘কী জবাব দেবো খুঁজে পাই না।’
– ‘এতো দ্বিধা কীসের?’
মৃদুল আবার নীরব হয়ে গেল। মানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
– ‘ঘুমিয়ে যাও, কাল ভোরে আবার উঠতে হবে।’
– ‘এতো তাড়াতাড়ি ঘুম আসে না-কি?’
– ‘চোখবুজে থাকো, আসবে।’
মানহা ফিসফিস করে বললো,
– ‘তুমি বিয়ে করবে না আবার আদরও করবে না এমন করছো কেন?’
মৃদুল জবাব দিলো না, মানহা পুনরায় বললো,
– ‘সেই ছোটবেলা থেকে অন্যকোনো ছেলের প্রতি নজরও দেইনি। সব সময় তোমার কথাই ভেবেছি, অপেক্ষা করেছি। এখন কাছে পেয়েও পুরোপুরি পাচ্ছি না। তুমি এমন করছো কেন বলো তো? আমি কী দেখতে এতই খারাপ?’
মৃদুল ওর মাথায় হাত রেখে বললো,
– ‘না, তুমি দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী।’
– ‘তাহলে এতো এড়িয়ে চলা কেন?’
– ‘আমাদের তো বিয়ে হয়নি মানহা।’
– ‘বাবা, বিয়ে করার আগে আদর করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছো বুঝি? আমার বরটা কত ভালো। আচ্ছা তাহলে বিয়ে করছি না কেন আমরা?’
মৃদুল তারও জবাব দিলো না। মানহা আবার ম্লান মুখে পাশ ফিরিয়ে নিল। মৃদুলের বুকে কেমন একটা ব্যথার সুর বাজছে। তার ভীষণ ইচ্ছা করছে মানহাকে ভালোবেসে বুকে আগলে নিতে। ওর মতো কোনো নারী ভালোবাসতে পারে বলে তার জানা ছিল না। ফাতিহার সঙ্গে তো বিয়ে ছিল লোক দেখানো। ছিল অনেকটা করুণা। তবে আরেকটা কারণও আছে, সেটা হলো জীবন নিয়ে তার এতো আশা, স্বপ্ন বা লক্ষ্য কিছুই ছিল না। বিয়ে একটা করলেই হলো। একসঙ্গে থাকতে গিয়ে তাদের দেহের মিলন হয়েছে বটে। কিন্তু মানহার প্রতি তার যে মোহ কাজ করছে সেরকম অনূভুতি কখনও আসেনি। ক্ষীণ সময়ের জন্য মৃদুল ভাবলো, আচ্ছা ফাতিহার বিপদের সময় তো সে পাশে দাঁড়িয়েছে, বিয়ে করে নিয়েছে। এখন আর তার প্রয়োজন কী আছে? তার কী আলাদা চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে না? সেই ছোটবেলা থেকেই শুধু অন্যদের বোঝা সে বহন করে কেন পথ চলবে? মানহার মতো রূপবতী, মায়াবতী মেয়েকে কেন সে এড়িয়ে চলছে? তার জন্য যে মেয়ে নিঃস্বার্থভাবে এতকিছু করছে তাকে সে কেন কাঁদাবে? কার জন্য কাঁদাবে? মানহাকে ছেড়ে তারও কী কষ্ট হবে না? এইযে উম্মুক্ত পিঠ দেখা যাচ্ছে। ঘাড় দেখা যাচ্ছে। খানিকটা মেদ জমা ফর্সা পেটের ভাজ দেখা যাচ্ছে। এসব রূপের আক্রমণে কী সে আক্রান্ত হচ্ছে না? তাকে মায়াজালে বন্দী করার জন্য মানহার এতো আয়োজন কী বৃথা যেতে পারে? তার কাঁপা কাঁপা হাত ওর বাহুতে গেল,
– ‘মানহা।’
– ‘হু।’
– ‘পাশ ফিরলে কেন?’
– ‘এমনি।’
মৃদুল বাঁ হাত ওর নগ্ন মসৃণ পেটের ভাঁজে রেখে ডান হাতের কনুই বিছানায় ঠেকিয়ে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
– ‘আমার দিকে ফিরবে না?’
মানহা নিজের মুখ ঢেকে সোজা ঘুরে তার শরীরের সঙ্গে মিশে গেল। মৃদুল মুচকি হেঁসে তাকে ঠেলে সোজা করে। মানহা ঘন ঘন শ্বাস ছাড়ছে উপরের ফ্যানের দিকে তাকিয়ে। ফাতিহা তো এমন না। মানহার সবকিছু এমন কেন? সবকিছু কেমন শৈল্পিক, কাব্যিক। পুরুষ আর নারীর মাঝে বিশাল কিছু একটা যে আছে সেটা এভাবে তো সে টের পায়নি আগে। ফাতিহার সঙ্গে কেবল হুট করে দু’টি দেহের ঝড় উঠে পাশ ফিরে শুয়ে পড়া হতো। এর বাইরে সবকিছু সাংসারিক, সামাজিকতা। মানহার শ্বাস-প্রশ্বাসে বুক ওপরে উঠা-নামা করছে। পিটপিট করে তাকাচ্ছে ফ্যানের দিকে। হাত দু’টা ফেলে রেখেছে বিছানায়। মৃদুল ধীরে ধীরে এক হাত ওর পেটে রাখে। সঙ্গে সঙ্গে চোখবুজে নেয় মানহা। বিছানা থেকে ডান এনে চেপে ধরে মৃদুলের হাত। মৃদুল এক পা ওর ওপরে তুলে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে বলে,
– ‘মানহা।’
– ‘হু।’
– ‘আমি তোমার যোগ্য না।’
– ‘এসব কথা এখন না বললে হয় না?’
– ‘তাহলে কী বলবো?’
– ‘একটু আগে মানহা ডাকলে না?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘যদি জড়িয়ে ধরে কানের কাছে এসে বলতে বউ।’
– ‘তুমি আধুনিক একটা মেয়ে বউ ডাক শুনতে ভালো লাগে?’
‘জানি না’ বলে নিজের শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিল মানহা।
– ‘আমি যদি আবার হঠাৎ করে হারিয়ে যাই?’
– ‘এমন করো না প্লিজ।’
– ‘তুমি আমার দিকে না তাকিয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কথা বলছো কেন?’
– ‘আমার অসহ্যরকম অনূভুতি হচ্ছে। তোমার শ্বাস আমার দেহে যত আঁচড়ে পড়ছে ততই জল তেষ্টায় ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে আমার, তাকাতে পারবো না।”
– ‘কেন?’
– ‘তুমি যে আজ একটু ভালোবেসে তাকাচ্ছ আমার দিকে, তাতেই খুন হয়ে যাচ্ছি।’
– ‘কি যে বলো, এরকম কী হয়? অন্তত আমার জন্য তোমার এতো আগ্রহ বিশ্বাস করতে পারি না। তোমার সঙ্গে কী আমার যায়।’
– ‘প্লিজ আজ এসব কথা না।’
– ‘আচ্ছা জল খাবে তুমি?’
– ‘প্রচণ্ড তেষ্টা পেয়েছে।’
– ‘আনি?’
– ‘হু।’
মৃদুল উঠে গিয়ে সোফার সামনের টেবিলে রাখা জগ থেকে এক গ্লাস জল এনে মানহার দিকে বাড়িয়ে দেয়। মানহা এক চুমুকে সবটুকু জল খেয়ে তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
– ‘এই বাতির আলো তো কম আছে থাকবে না-কি বন্ধ করবো?’
– ‘থাকুক।’
মৃদুলও এসে ঘুমানোর জন্য উপুড় হয়ে শুয়ে গেল। এভাবেই তার ঘুমানোর পদ্ধতি। খানিক পর পিঠে উষ্ণ একটা হাত অনুভব করলো। সে চোখে মেলে তাকিয়ে দেখে মানহা কী অদ্ভুত এক মায়াবী ঘোর লাগা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়তেই মানহা লজ্জা পেয়ে পাশ ফিরে নিজের বালিশে চলে গেল৷ মৃদুল যেন আর পারে না, এতো ভালোবাসা উপেক্ষা করার ক্ষমতা তাকে স্রষ্টা দেননি। ওর বাহুতে হাত রেখে মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,
– ‘পাশ ফিরলে কেন’
– ‘হঠাৎ তাকালে কেন? আমার বুঝি লজ্জা লাগে না?’
– ‘তুমি এরকম কেন মানহা?’
– ‘কিরকম?’
– ‘যেরকমই হও তোমার মতো মেয়ে হয় না।’
– ‘তাই?’
– ‘হ্যাঁ, কিন্তু আমার দিকে পাশ ফিরবে না?’
– ‘না।’
মৃদুল আলগোছে ওর সামনের দিকে চলে গেল। মানহা ফিক করে হেঁসে মুখ ঢেকে পুনরায় অন্যপাশে হয়। মৃদুলও পাশ ফিরে শুয়ে যায় কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে।
মানহা বুঝতে পেরে টেনে সোজা করে লোমশ বুকে মাথা রেখে বললো,
– ‘আজ রাতটা কত সুন্দর তাই না মৃদুল?’
মৃদুল কোনো জবাব দেয় না। কেবল ওর খোলা পিঠে হাত রাখে।
– ‘মৃদুল।’
– ‘হু।’
– ‘আমার ভীষণ ইচ্ছা করছে তোমার চুমু খেতে। তুমি আদর করে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দেবে?’
মৃদুল জবাব দিলো না৷ মানহা পুনরায় বললো,
– ‘মেয়েদের আবার এসব বিষয়ে লজ্জা পাওয়া নিয়ম। ইচ্ছা থাকলেও প্রেমিক জোরাজোরি করার পর সুযোগ দিতে হয়। কিন্তু আমি বড়ো নির্লজ্জ হয়ে গেছি। তুমি খারাপ ভাবছো কি-না আল্লাহ জানেন।’
মৃদুলের খুব ইচ্ছা করছে বলে ফেলে মানহা আমি বিবাহিত। কিন্তু এরপর যদি মানহা মুখ ফিরিয়ে নেয়? আগে কেবল স্বার্থ ছিল। কিন্তু এখন যে তারও চাই মানহাকে?
– ‘মৃদুল।’
– ‘হু।’
– ‘তোমার জীবনটা আমার জন্য এমন হলো।’
– ‘এগুলো ভাগ্য মানহা, এসব বলে নিজেকে দোষারোপ করার কিছু নেই।’
– ‘তুমি একটু সুযোগ দাও মৃদুল, আমি তোমার জীবন ভালোবাসা দিয়ে রঙিন করে দেবো।’
মৃদুল নিশ্চুপ রইল। মানহা পুনরায় বললো,
– ‘আমার প্রতি তোমার কী একটুও আগ্রহ নেই?’
– ‘আছে।’
– ‘তাহলে এভাবে নিজেকে গুটিয়ে রাখছো কেন? তুমি মানুষ না কন্ট্রোলার?’
মৃদুল হেঁসে ফেলে ওর কথা শুনে৷ তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
– ‘ঘুমাও মানহা ভোরে উঠতে হবে তো।’
____চলবে___