আমার_হৃদয়ে_সে #রোকসানা_আক্তার পর্ব-১৩

0
746

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১৩

খালামণি কাছে এসে আমাকে একহাতে জড়িয়ে ধরেন।আরেক হাতে গালে আলতো ছুঁয়ে বলেন,
“একদম কাঁদবি না।তোকে কাঁদতে মানায় না।তোকে শুধু হাসিতে মানায়।সফলতা তোরই যোগ্য।”

খালামণির কথায় ফিক করে হাসি চলে আসে।কান্নাহাসি মিশ্রিত মুখে খালামণির বাম হাত চেপে ধরি। বলি,
“সেজন্যে কাদি নি।কাদি তোমাদের আতিথেয়তায়।তোমরা আমাকে অনেক বুঝ!আমার ফ্যামিলি আমাকে বুঝে না।আচ্ছা তোমরা এত ভালো কেন,হ্যাঁ?!”
“এভাবে বলতেছিস কেন?তুই ত আমাদেরই মেয়ে।বোনের মেয়ে মানেই ত আমার মেয়ে তাই না?”

হেসে দিই।খালামণিও সহিত হেসে উঠে আমার গালের উপর চিকচিক করা চোখের পানি মুছে দেম।তারপর সযত্নে আমাকে বুকের দিকে টেনে নেন।আমি খালামণির বুকের উপর আলতো মাথা রাখি।তীক্ষ্ণ কানে স্পষ্ট কানে বাঁজে হার্টবিটের ধ্বনি।দ্রুতগতিতে হার্টবিট হচ্ছে।প্রতিটি বিটে বিটে খালামণির কষ্টের কথার বাণ খুলছে। খালামণির বরাবরই মেয়ে সন্তান খুব পছন্দের।
।ফাহিম গর্ভে আসার পর খালামণির শখ ছিল প্রথম সন্তান মেয়ে হতে।হলো না।ছেলে হয়।ফাহিমের বয়স দেড় পেরুতে আন্টি আবারো মেয়ে সন্তানের আক্রোশে সন্তান নেন।আন্টির স্বপ্নটা পূরণও হয়ে যায়।কোল ভরে ফুটফুটে একটা মেয়ে সন্তান আসে।তবে ভাগ্য বলে যে একটা কথা আছে তা আন্টির কপালে হয়তো সহায় হয়নি।মেয়ে সন্তানের বয়স ছয় মাসে পড়তে সে প্রচন্ড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।সর্দি,কাশিতে মেয়েটির সারা দেহ অবশ হয়ে যায়।আন্টি তাকে বাঁচাতে অনেক হাসপাতালে ছুটোছুটি করে।কিন্তু লাভ বিশেষ হয়নি। তাকে বাঁচাতে পারে নি। মরে যায়।সেদিন খালামণি খুব কষ্ট পায়।বিষন্নতায় কেঁটে যায় কয়েকটা মাস । তারপর আন্টি আবারো নিজেকে ধাতস্থ করে।আবারো বুকে বাসা বাঁধে কন্যা সন্তানের আশায়।পরে আর আন্টির গর্ভে কোনো সন্তান আসে নি।সমস্যাটির জন্যে খালামণি ডাক্তারের কাছে ছুটে যায়।ডাক্তার বলে,জরায়ুর মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাই আর কোনো সন্তান ধারণের ক্ষমতা নেই খালামণির।কোনো সন্তানই না।কেঁদে দেয় আন্টি।ভীষণ রকমের কেঁদে দেয়।তারপর আমাকে জড়িয়ে আরো কাঁদেন।আমি তখন কিশোরী ছিলাম।কিশোরী মনেই বলি,খালামণি তোমার মেয়ে নেই বিধায় কি হয়েছে?আমি ই ত তোমার মেয়ে!”খালামণি প্রচন্ড খুশি হয়ে যান। আদরে সারা মুখে চুমু বসিয়ে দেন।সেই ভালোবাসাটা হয়তো আজও আমার প্রতি খালামণির রয়ে গেল।

১৭.
দুপুরের দিকে এম ডি আমাকে কল করে।বলে আর্জেন্ট তাদের অফিসে যেতে।অভি স্যার ডেকেছে।আমি যাই।যাওয়ার পরে শুনি তাদের অভি স্যার নাকি অন্য কোম্পানির সাথে চুক্তিতে বসেছেন।এখন তার মিটিং হচ্ছে। মিটিং শেষ হতে আরো দেড় ঘন্টার মতন সময় লাগবে।তাই এই দেড় ঘন্টা ওয়েটিং রুমে বসতে।ওয়েটিং রুমে বসতে যেয়ে খুব বিরক্ত লাগে এম ডির উপর।এম ডি কল করে আসতে এত তাগাদা দিলো।আর এখন এসে দেখি তাদের মিটিং চলছে।আমাকে আরো অপেক্ষা করতে হবে।মন চায় এম ডির মাথাটা ফাঁটিয়ে রক্ত ঝরিয়ে দিই।অপেক্ষা করতে থাকি।আধা ঘন্টা পার না হতে ধৈর্য্য আর ধরে রাখতে পারি নি।টগবগিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পিয়নকে ডাকি।বলি,

“আপনার স্যারকে বলুন তাড়াতাড়ি মিটিং শেষ করতে।আমি আর অপেক্ষা করে থাকতে পারবো না।”

আমার কথায় ক্রোধ দেখে পিয়ন কেঁপে উঠে।নত মাথায় বলে,
“জ্বী,ম্যাম।এখুনি গিয়ে বলতেছি।”

বলে চলে যায়।তবে পিয়নকে দেখে বড্ড অবাক হয়ে যাই।অনেক কোম্পানিতে গেলে দেখি পিয়ন গুলা ত্যাড়া টাইপের হয়।সহজে কথা শুনতে চায় না।আর অভির কোম্পানির পিয়ন দেখি খুবই সাদাসিধা আর বোকা টাইপ।কথাটা বলা মাত্রই কী সুন্দর মেনে নিল।মালিক চালাক টাইপ।আর তার পিয়ন বোকা টাইপ।বড্ড হাস্যকর!তার খানিকক্ষণ পর পিয়নের বদৌলতে এম ডি ফিরে আসে।মুখে নিরস ভাব এনে।বলে,

“সরি ম্যাম,আসলে হঠাৎ করে আমাদের একটা কোম্পানির সাথে অন্য আরেকটা কোম্পানির চুক্তি হয়ে যায়।তাই বাধ্য হয়ে বসতে হয়।আপনি একটু কষ্ট করে আর অপেক্ষা করুন।খানিক্ষণ বাদেই মিটিং শেষ হয়ে যাবে ম্যাম।”
এম ডির কথায় রাগ-ক্রোধ ভেতরে চাপি।তারপর স্বাভাবিকতায় বলি,
“জ্বী,আচ্ছা।”

ত্রিশ মিনিট বাদে অভির অফিসে ডাক আসে।যাই।তার কোনোরকম অনুরোধ ছাড়া চেয়ারটায় ধপাস করে বসে পড়ি।বিষয়টা একটু অভদ্রতা ই দেখালো।অভিও ব্তা দেখলো।তবে কিছু বললো না।বলবে ই বা কেন?তাদের
অফিসে কাজ করতে এসেছি এটাই ঢের।নাহলে এ’কদিনে তাদের এবারের সর্বোচ্চ অর্জন কী বিনে কারণে পেত?ভাবনার মাঝে,

“আই’ম সরি ফর লেট।হঠাৎ মিটিং এ বসতে হবে বুঝতে পারি নি।”
অভির কথার পিঠে বাম পাশের ভ্রু টা কুঁচকে ফেলি।তবে কোনো জবাব দিই নি।অভি এবার নড়েচড়ে বসে।বলে,

“আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!”

আমি চোখের দৃষ্টি প্রশ্নসূশক করে ফেলি।মানে -“থ্যাংকস কেন!”অভি কুটিল হাসে।বলে,

“গত বছরগুলো থেকে আমাদের কোম্পানি এবার সর্বোচ্চ অর্জন করতে পেরছে।আর তা আপনার কারণেই।থ্যাংকু ইউ সো মাচ।ভাবলাম আপনার এত বড় এ্যাচিভে আমাদের কোম্পানি থেকে একটা পার্টি দেওয়া হবে।পার্টির বিশেষ অতিথি থাকবেন আপনি।”

এবার ঠোঁটজোড়া স্থবির থাকলো না।বললাম,

“তার প্রয়োজন নেই।থ্যাংকস।”
“কিন্তু কেন?”
“নাথিং।”

অভি এবার ছোট্ট করে গলায় একটা খ্যাঁক শব্দ তুললো।ওদিক এদিক তাকিয়ে নিজেকে যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক করে নিল।বললো,

“দেখুন,এটা আমাদের কোম্পানির নিয়ম।প্রতিবছর আমরা কোম্পানি থেকে কাউকে এক্সিবিশন করতে পার্টি দিই।”
“মিস্টার অভি?আমার তার প্রয়োজন নেই।আপনি অন্যকাউকে নিয়ে এক্সিবিশন করুন।আমার যতটুকু কাজ তা করে দিলাম।যতটুকু পাওনা পেলাম।আর অতিরিক্ত পাওনা আমার পছন্দ না।আশা করি বুঝতে পেরেছেন!”

অভি কয়েক সেকেন্ডস চুপ থাকে।তারপর দৃঢ় গতিতে একটা শ্বাস ছাড়ে।বলে,
“এজ ইউর উইশ!”
“তাহলে উঠলাম।”

অভি নিশ্চুপ চাহনিতে আমার দিকে তাকায়।চোখমুখ দেখে বুঝলাম আমার কথাগুলোতে সে সন্তুষ্ট নই।
আমি জোরপূর্বক হেসে উঠলাম।উঠে দাঁড়ালাম।বললাম,
“বায়।”

১৮.
বাসায় আসার পর অনেকক্ষণ ধরে নিশ্চুপতায় বসে থাকলাম।কেনজানি ভালো লাগছে না।বুকের ভেতরটা বারবার ধড়ফড় করে উঠছে।অভিকে ইগনোর করে যতটা গুড ফিল হচ্ছে ততটাই খারাপ লাগছে ওর সামনে বসতে।ওর মুখাকৃতির দিকে তাকালে বার বার হৃদয়ে “ঘৃণা” নামক শব্দটা নড়ে উঠে।বিশ্বাস করুন?যতবার ওর সামনে গিয়ে বসেছি ততবার ভেতরটা রাগে-ঘৃণায় দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে।হয়তো তা প্রকায় পায় নি।বা প্রকাশ পেতে দিই নি।এখন কি করবো আমি?ওর বন্ধন এখনো আবদ্ধ হয়ে আছি।স্বামী নাকি ও আমার!কিন্তু স্বামীও ওকে ভাবতে পারছি না।দূরে ঠেলতেও পারছি না।ভেতরের কোনো এক অদৃশ্য দেয়াল দুই জায়গার সমান্তরালে দাঁড় করিয়ে রাখছে।খালামণির কাছে যাই।খালামণি কিচেনে রান্নাবান্না করছেন।চট করে বলে উঠি,

“খালামণি?অভিকে কি করবো আমি?ডিভোর্স দিতে ইচ্ছে হয়!”
“কিছু হয়েছে নাকি অফিসে?”খালামণি তেলের মধ্যে পেঁয়াজ কুচি,রসুন কুঁচি দিতে দিতে বলেন।বললাম,
” নাহ কি হবে।কিছুই হয়নি।তবে ওকে জাস্ট আমার অসহ্য লাগছে।”

খালামণি আমার এ’কথার পিঠে হেসে দেন।কাছে আসেন।কাঁধে হাত রাখেন।মিইয়ে স্বরে বলেন,
“লাগবেই ত।এটা স্বাভাবিক! ”

চুপ হয়ে থাকি।খালামণি বলেন,
“ওর ভুল বোঝা মিথ্যা অপবাদগুলো মেনে নিতে পারিস নি তাই এরকম লাগছে তোর।”
“তো তুমি কি বলতে চাচ্ছো ওসব ভুলে যেয়ে পরে আবার ওর সাথে সংসার করবো?”
“তা বলছি না।”
“তাহলে?”
“সময় হলে তুই নিজেই ডিসিশন নিবি কি করবি কি করবি না।তোর যথেষ্ট ম্যাচিউরড বয়স এখন।ভালো-মন্দ তুই ই বুঝবি।তোকে কারো থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে না।এখন এই মুহূর্তে তুই যে বললি ডিভোর্সের কথা?এটা তোর মনের ডিসিশন না।বা ধর ডিভোর্স দিবি না এটাও তোর মনের কথা না। এই দুটোই তোর ঘোরমাখা কথা।।কারণ তুই এখন অস্থিরতার মাঝে আসিস।যার কারণে এখন যেকোনো ডিসিশনই রিজনেবল না।আস্তে ধীরে অস্থিরতাটা কাঁটুক তারপর নিজেই বুঝতে কোনটা করলে ঠিক হবে,কোনটা করলে বেঠিক হবে ।”

চুপ থাকলাম।খালামণি মন্দ বলেননি।আমাকে হ্যাঁ,মাথা ঠান্ডা করতে হবে।যা করবো ঠান্ডা মাথায়।ভেবে রুমে এলাম।এসে দেখি ফোন বাঁজছে।স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখি একটা আননউন নাম্বার।রিসিভ করি,

“হ্যালো কে?”

ওপাশ থেকে ভেসে আসে,
“আমি অভি।আপনাকে কালকে আমাদের অফিসে যে করেই হোক একটু আসতে হবে।আর আপনি যদি না বলেন তারপরও আসতে হবে।আসার কারণ ফোনে বলছি না।আসলে সব বলবো।যে করেই হোক আসবেন!”

আমি মুহূর্তের জন্যে দমে যাই।অভির বলা কথাতে যথেষ্ট ক্ষীপ্রতা এবং তাগাদা!

চলবে….

(কাহিনীর প্লট শেষ না করা পর্যন্ত প্লিজ কেউ কোনো মন্তব্য করবেন না।আগে শেষ করুন। তারপর।কেননা প্লট শুরু না করতেই আপনারা ইনিয়বিনিয়ে অনেক অবাঞ্ছিত কথা টেনে আনেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here