#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৩
এই “ইট’স ওকে” বলামাত্রই হৃদয় নামের ছেলেটি ওমনি তরতর করে আমার দিকে তাকালো।আমি হালকা করে চোখমুখ ছোট্ট করে আনলাম।ছেলেটি আমাকে দেখে কেমন রিয়াকশন করলো জানি না।ম্যানেজার রাকীব মাহতাব বললো,
“হৃদয়,গত উইকে আমাদের কোম্পানির যেই ড্রয়িং বিজ্ঞাপন দিয়েছি সেটা ইনিই,মানে মিস পারিসা ম্যাম ডিজাইন করেছিল।”
“ওহ আচ্ছা।”
“ম্যাম,আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।এ আমার ফ্রেন্ড হৃদয় হাসান।আমরা দুজন একই ভার্সিটি থেকে পড়াশুনা শেষ করেছি।”
সৌজন্যতা রক্ষার্থে অনিচ্ছাসত্ত্বেও পাশ ফিরে তাকালাম।জোরপূর্বক হাসি টেনে বললাম,
“ওহ আচ্ছা।আমি পারিসা।”
হৃদয় কিছু বললো না।আমার কথায় আলতো শুধু মাথা নাড়লো।তারপর আবার মুখ ফিরিয়ে সোঁজা তাকালো। সেও আমাকে দেখে হয়তো অপ্রস্তুত!আমিও ত অনেক তা আপনারা দেখলেন ই।ম্যানেজার বললেন,
“হৃদয়,একটু স্টপ থাক, দোস।ম্যামের সাথে জরুরী কিছু কথা শেষ করে নিই।”
হৃদয় ওমনি উঠে দাঁড়ালো।বললো,
“আচ্ছা, কথা বল তাহলে।আমি বাইরেই আছি।”
“এখানেও বস।সমস্যা কোথায়? ”
“কিছু না।কথা বল।আমিতো আছিই।যাবো নাতো।”
বলে হর্ণ পায়ে বাইরে চলে গেলো।ম্যানেজার আমার দিকে ফিরলেেন।মৃদু হেসে বললেন,
“বন্ধুটা আমার একটু অন্য গোছের।কারো সাথে কথা বলার মাঝে থাকতে চায় না।ফর্মালিটিজ মেনে চলে আর কি।”
বলে ম্যানেজার আবারো হাসলো।আমিও তালে হাসলাম।
“ম্যাম,প্লিজ ভেবে দেখুন।কাইন্ডলি একটু জানাবেন প্লিজ?”
“আচ্ছা এখনতো সরাসরি ডিসিশন নিতে পারছি না।আমি বাসায় যাই।একটু ভাবি।তারপর আপনাকে ফোনে জানিয়ে দিব।”
“নিশ্চিত,ম্যাম।আপনি সময় নিন।”
বাসায় ফিরে খালামণির সামনে যেয়ে ধপসে বসে পড়ি।খালামণি টিভি দেখতেছিলেন তখন।আমাকে কিছুটা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখে বলে উঠেন,
“মন খারাপ লাগে তোর?”
“মন খারাপ না।নিজের উপর নিজের বির হচ্ছে।”
“কেন কি হয়েছে?”
“খালামণি বলো ত?আমার ক্ষেত্রে কেন এরকম হয়?”
“কীরকম?”
“যাদের এভয়েড করতে চাই সেই তারাই আমার সামনে এসে ঝাপটে বসে।ওদিন “ইকো কোম্পানিতে গেলাম ওখানে অভির সাথে দেখা হলো।আজ আবার নয়াপুরী টেক্সটাইল কোম্পানিতে গেলাম ওখানে আবার ওই হৃদয় নামের ছেলেটির মুখোমুখি হতে হলো!এসব কী?আমার সাথে কেন এরকম হয়,বলো ত?”
খালামণি হেসে উঠলেন।বললেন,
“মানুষের মনের সাথে মনের মিল হলে এরকমই হয়, পারিসা!”
“মানে?ওই হৃদয় ছেলেটির সাথে মনের মিল আবার কীভাবে?”
“তুই মনে না করলেও ও তোকে মনে করে।”
“যেমন…?”
“তিনমাস আগে হৃদয়কে তুই তোর সামনে না আসতে বারণ করেছিস।ছেলেটি তোর সামনে আর কখনো উপস্থিত হয়নি।অথচ দিনরাত্রি আমার মাধ্যমে তোর খবর নিচ্ছে।তুই কেমন আছিস,কি করিস,খাওয়াদাওয়া করছিস কিনা,মন ভালো কিনা হ্যানত্যান কথাবার্তা!”
“কি তোমার সাথে ওই ছেলেটির যোগাযোগ হয়?”
“জ্বী।”
“যোগাযোগ কেন করো ওর সাথে?”
“আমি করি নি তো। ও নিজেই করে।”
“তাই বলে তোমার কথা বলতে হবে?”
“একদৃষ্টিতে ধরলে তোর আঙ্কেলের রিলেটিভ।কথা না বললে খারাপ দেখায়।তাই বলি।”
“কিন্তু সে ত রিলেটিভ সম্পর্কে কথা বলছে না তোমার সাথে।কথা তো বলছে আমার সম্পর্কে। ”
“হ্যাঁ বলবে তো।তুই তো সাফ বারণ করে দিয়েছিস কথা না বলতে।সামনে না আসতে।এমনকি ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ, ফোন নাম্বার থেকেও ব্লক করেছিস।তাই আমার সাথে না বললে তোর খোঁজখবর কিভাবে নেবে?”
“ও কেন করে এসব?”
“কারণ ও তোকে ভালোবাসে,পারিসা।খুব ভালোবাসে।আমাকে এটাও বলেছে।তুই যেদিন বিয়ে করতে সম্মতি হবি সেদিন ও ওর মা-বাবাকে নিয়ে হাজির হবে তোর সামনে।”
“হাউ ফানি আন্টি!একটা ডিভোর্সি মেয়েকে কেউ এতসহজে ভালোবাসতে পারে?তোমার কি মনে হয় না তার এই ভালোবাসাটা হয়তো সুবিধা নেওয়ার জন্যেও হতে পারে!”
“সবাই তো আর এক না, পারিসা।সবাইকে অভির মতন কেন ভাবছিস?সবাইকে অভির মতন ভাবলে লাইফ চলবে?”
“হৃদয়ও যে ভালো তা কি তুমি সিউর দিয়ে বলতে পারবে?অভি কে তো বাবা ছোট্টোবেলা থেকে নাকি দেখে এসেছে।কতটা ভালো ছিল,সৎ ছিল।আর সে কি করলো…?পৃথিবীতে মানুষকে বিশ্বাস করা খুবই কঠিন।বর্তমান যুগ এমন এসেছে।ভালোদেরওকে খুঁজে বের করা কষ্ট হয়ে যায়।”
“আমি তোর সাথে একমত পারিসা।তবে ভালোদেরও খুঁজে বের করা সহজ হয়।তুই এখন ম্যাচিউরড। মানুষদের মনের কথা পড়তে বেগ পেতে হবে না আশা করি।”
“তা এখন তুমি চাচ্ছ হৃদয়ের প্রস্তাব মেনে নিতে?”
“নাহ।আমি চাচ্ছি সে যেহেতু এতটা পাগল তোর জন্যে।ওকে সময় দে।তুইও সময় নে।ওর সাথে ক’দিন চলাফেরা কর।কথা বল।ওকে বুঝ।সবকিছু যদি ওর উপর্যুক্ত মনে হয় তারপর নাহয় ডিসিশন নিস।কাউকে ভালোভাবে জানতে,বুঝতে তারসাথে অন্তত কিছুদিন চলতে হবে।এক দেখায়,এক কথায় মানুষকে কি বুঝতে পারবি?বা বিশ্বাস করতে পারবি??একদমই না।”
“তা জানি।”
“তাই ওর সাথে ক’দিন হাঁটাচলা কর।করলেই বুঝবি
অভি এবং ওর মাঝের পার্থক্য ।যদি দেখিস,নাহ ও অভি থেকেও ওতটা সুইটেবল না।তাহলে বাদ।আর ভালো মনে হলো তখন নাহয় একটা ডিসিশন নিবি।এভাবে কোনোকিছু হুটহাট রিজেক্ট করিস না মা।কারণ এভাবে লাইফ চলে না।মানছি ক্যারিয়ার ভালো তোর।নিজে চলার মতন ক্যাপাবিলিটি আছে।কিন্তু একাকীত্ব লাইফ কদিন?দেখলি ই তো অভি ডিভোর্সের সাতদিনের মাথায় আরেকটা মেয়েকে ঘরে নিয়ে এলো।সে যদি সব ভুলে সব শেষ করে আবার নতুন করে সংসার পাততে পারে তাহলে তুই কেন পারবি না?লাইফ কারো জন্যে থেমে থাকে না কেন বুঝিস না।”
“জানি,খালামণি জানি।আসলে আমি এরকম ভাবছি না।আমার ভাবছি হৃদয় আনম্যারিড এবং আমি ডিভোর্সি।একজন ডিভোর্সিকে কারো ভালোলাগতে পারে!”
“ভালোলাগাটা দেখে,বুঝে,শুনে হয় নারে মা।হুটহাট যে কারো প্রতি কারো ভালো লাগা কাজ করে যায়।আর এই অদ্ভুত ভালোলাগাটার কাছেই পৃথিবীর সব তুচ্ছ হয়ে যায়। হয় সেটা ভালো বা মন্দ!”
এক মিনিটের মতন চুপ করে থাকলাম।তারপর বললাম,
“হৃদয় কী করে এখন খালামণি?আইমিন চাকরি নাকি বেকার?”
“বেকার কেন থাকবে?আরেহ ” শাহীন মডেল কলেজ”-এর নাম শুনেছিস না?”
“হ্যাঁ।”
“ও ওখানের কেমিস্ট্রি টিচার!”
“ওর বাসায় কে কে আছেন?”
“ওর বাবা,মা এবং একটা ছোট্টবোন।তবে সে হালকা মানসিক ভারসাম্য!আর ভাবিস না সে তোকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে!মেয়েটা যে কারো সাথে ভালো-মন্দ না বুঝে যখন তখন মিশে যায় এটাই ওর মানসিক সমস্যা!”
“ওর ফ্যামিলি মানবে আমাকে?আইমিন ওর মা-বাবা?”
“সেটা নাকি ও কনভেন্স করবে!”
“ওর মা-বাবা আমাকে মানবে না,দ্যাখো তুমি!আর ও আমার ডিভোর্স হওয়ার ব্যাপারটা জানে?”
“সব জানে পারিসা।সব!আমি ওকে সব বলেছি!”
চুপ থাকলাম।আসলে আমি আশ্বস্ত না।কিছুতেই আশ্বস্ততা না।খালামণি আবারো বলে উঠেন,
“তুই যদি ভরসা দিস তাহলে ও তোর সাথে কথা বলবে অন্য নাম্বার দিয়ে। ”
“তোমাকে বলেছে এ’কথা?”
“হ্যাঁ।”
“জানিস?আরেকটা কথা?ও তোর সম্মতির অপেক্ষায় থাকবে।আইমিন ওকে বিয়ে করার সম্মতি না।তুই যেদিন যে কাউকে বিয়ে করতে সম্মতি হবি।সেদিন ও আবারো ঠিকঠিক তোর সামনে হাজির হবে।”
“আজব সব..!”
“আজব কেন?”
এমন সময় বাসার কলিংবেল বেজে উঠে।খালামণি উঠতে উঠতে বলেন,
“বস। দেখি কে এসেছে।”
বলে খালামণি দরজার দিকে এগিয়ে যান।দরজা খুলেন।খুলতেই দেখি আমার বাবা দাঁড়িয়ে।সাথে মাও আছেন।আমি হতবাক বাবাকে দেখে।বসা থেকে দাঁড়িয়ে যাই!
চলবে..
(আজ আরেকটা পর্বও পেয়ে যাবেন।)