আমার_হৃদয়ে_সে #রোকসানা_আক্তার পর্ব-২২

0
605

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২২

৩৩.
জ্বর এখন কিছুটা স্বাভাবিক।গত এক সপ্তাহের খালামণির সেবা-সুস্থতায় একশোর নিচে কমে এসেছে।তবে হ্যাঁ,দু্র্বলতা টা যায়নি তেমন।শরীরটা নিস্তেজ ভীষণ।বেশি সময়ই খাটে পিঠ ঠেকিয়ে থাকতে হচ্ছে।শরীরে একটু বল পেলে আশা করি এভাবে কাঠখোট্টার মতন পড়ে থাকতে হবে না।

“আপু?আপু?ভাইয়া তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে।”

ফাহিমের কন্ঠধ্বনিতে মাথা বেঁকে দরজার দিকে তাকাই।চোখমুখ তীব্র কুঁচকে ফেলি।বলি,
“কোন ভাইয়া!”
“দেখলেই বুঝবে।”

বলে ও কুটিল হেসে দরজার থেকে সরে যায়।তারপর দুই মিনিটের মাথায় অন্য কেউ একজন এসে দাঁড়ায়।আমি তাকে দেখে হতবাক!সেই ছেলেটি!মানে হৃদয়!ওমনি আমি তরহর শোয়া থেকে উঠে বসি।সে মুখে লম্বা একটা মৃদু হাসি টেনে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
“এত উত্তেজিত হবার কিছু নেই!আমি ই তো।”
বলে সে কোনোরকম ফর্মালিটি না দেখিয়ে আমার সামনে পড়ে থাকা একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে।তারপর ফের আবার তাকিয়ে এবার কিছুটা সেম্পেথি গলায় বলে,
” শুনলাম আপনার খুব জ্বর হয়েছে।আরো আগেই দেখতে আসতাম।ফাহিমের সাথে কাল আমার দেখা হলো।তাড থেকে শুনলাম।আর আপনার থেকে আপনার খোঁজ নেবই বা কীভাবে।নাম্বার, মেসেন্জার, হোয়াটসঅ্যাপ সব থেকে ব্লক করেছেন!তা এখন আপনার শরীরটা কেমন?”

আমি চুপ করে থাকলাম।আমি বুঝতেছি না এখন ছেলেটিকে আমার কী জবাব দেওয়া উচিত!ছেলেটি নিজ থেকে আবার বলে উঠলো,
“উত্তর আশা করছি…।”

এবার আমি ছেলেটির দিকে ক্ষীণ চোখে তাকাই।সোঁজা বলে উঠি,
“আপনি চাচ্ছেন টা কী আসলে?”

ছেলেটি হাসলো।মৃদুই হাসলো।তারপর ছোট্ট একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,
“আপাতত তা নাই শুনুন।যে টপিক নিয়ে শুরু করেছি তা নিয়ে কথা বলি?”

রাগটা আরো যেন বেড়ে গেল।
“আপনি কেন এসেছেন মিস্টার হৃদয় তা আমি জানি।দেখুন আমি সরাসরি আপনাকে এবার কিছু কথা বলে দিই।আপনি যে জন্যেই আসুন আমার পক্ষে তা সম্ভব না।আপনি খুব ভালো করে ই জানেন আমি ডিভোর্সি।ডিভোর্সি একজন মেয়েকে আপনার মা-বাবার যেমন পছন্দ হবে না।তেমনি একদিন আপনারও আমাকে পছন্দ হবে না।আপনার এখন আমার প্রতি জাস্ট ভালোলাগা করেছে।এই ভালোলাগাটাও একদিন থাকবে না।দেখতে দেখতে মুগ্ধতা কমে যাবে আর ভালোলাগাটাও চলে যাবে!সো,প্লিজ?নিজের রাস্তা দেখুন।এখানে আর আসবেন না!”

ছেলেটি আমার একটা কথারও উত্তর দিলো না!শুধু এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তাকিয়ে থাকার সময়টা একটু বেশিই গড়ালো।এরফাঁকে ওপাশ থেকে খালামণির ডাক চলে এলো।
“হৃদয়?সোফায় আসো?”

খালামণি হয়তো খাবারের জন্যে ডেকেছেন।ছেলেটি একদৃষ্টিতেই উঠে দাঁড়ালো।যাওয়ার সময় খুব আলতো গলায় আমাকে বলে গেলো,
“আসি”

বেরিয়ে গেলো।বেরিয়ে যেতে খুব তাচ্ছিল্যকর হাসি চলে এলো,
“ডিভোর্সি জানার পরও লেগে আছে?আজব লোক পৃথিবীতে! হা হা হা হা হা। ”

তারপর একমাস কেঁটে যায়।এই এক মাসের মধ্যে ছেলেটিকে আর আমার সামনে কখনো আসতে দেখে নি।আমিও ছেলেটিকে নিয়ে ওত আর ভাবি নি।বলা যায় একপ্রকারে ভুলেই গিয়েছি ছেলেটিকে।কারণ এরমাঝে জবের প্রতি কনক্রিট হই।কোম্পানি থেকে বিজ্ঞাপনের অফার আসতে থাকে।ভালো মতন দেখে স্বনামধন্য কয়েকটা কোম্পানির অফার একসেপ্ট করি।তাদের প্রোডাক্টসের স্যাম্পল নিয়ে কাজ শুরু করি ।বেড়ে যায় কাজের চাপ।কমে যায় সময়।।পরপর আরো দুইমাস কেঁটে যায়। কাজগুলোও শেষ হয়।কাজগুলো শেষ হলে বিজ্ঞাপন ফাইলগুলো কোম্পানিগুলোতে পাঠিয়ে দিই।এরমাঝে “নয়াপুরী টেক্সটাইল ” কোম্পানি থেকে আমাকে কল করা হয়।আমি তখন সবে গোসল করে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছি।ভেঁজা চুলগুলোও ভালো করে মুছি নি।আর্জেন্ট ভেবে তরহর কলটা রিসিভ করি।

“হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম?পারিসা বলছি।”
“ম্যাম,আমি ” নয়াপুরী টেক্সটাইল “কোম্পানির ম্যানেজার রাকিব মাহতাব বলছি।”
“জ্বী,বলুন?”
“আপনি কি ম্যাম,কাল আমাদের অফিসে একটু আসতে পারবেন?”
“কাজে কোনো ত্রুটি হয়েছে?”
“তা নয়, ম্যাম।কাজ ওকে।বাট একটু অন্য বিষয়ে কথা বলতাম চাচ্ছি।”
“কখন যেতে হবে?”
“আপনার যখন সুবিধে।তবে সাতটার পর নয়।কারণ সাতটা আমাদের অফিস বন্ধ হয়ে যায়।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।সমস্যা নেই।আমি কাল দশটার দিকে যাবো।”
“থ্যাংকস!”

৩৪.
“নয়াপুরী টেক্সটাইলে” পরদিন ঠিক ঠিক সকাল দশটায় এসে পৌঁছে যায়।ম্যানেজারের অফিসে ঢুকে পড়ি।বসেই বলি,
“জ্বী,কেন ডেকেছেন, স্যার?”

ম্যানেজার ল্যাপটপের সাটার বন্ধ করলো।আমার দিকে তাকালো।বললো,
“ধন্যবাদ ম্যাম,আসার জন্যে।”
বলে কিঞ্চিৎ থেমে তারপর আবার বলে,
“ম্যাম, আমরা আমাদের কোম্পানির কথা ভেবে একটা ডিসিশন নিয়েছি।তা হলো আমাদের কোম্পানিতে আমরা পার্মানেন্টলি একজন এডভার্টিজার চাচ্ছি।আর সেটা আপনাকেই।আপনার বিজ্ঞাপন ডিজাইনগুলো আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। ”
“স্যার,আমাকে অনেক কোম্পানি থেকেই পার্মানেন্টলি বিজ্ঞাপনদাতা হিসেবে জয়েন করার অফার করেছে।ইভেন তিনমাস আগেও একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি থেকে করেছিলো।আমি রাজি হইনি।”
“কেন, ম্যাম?”
“আমার ভালো লাগে না।আসলে টুকটাক কাজই আমার পছন্দ।রেগুলার একই সময়ে, একই জায়গায় এসে কাজ করা আমার কেমন যেন খাপছাড়া খাপছাড়া লাগে।তাছাড়া,আমার মতো সবার লাগে যে এমন না।আসলে আমার কেন জানি এরকম কাজ করতে ভালো লাগে না।ভালো লাগলে এতদিন কোনো না কোনো কোম্পানিতে পার্মানেন্টলি বিজ্ঞােনদাতা হিসেবে নিযুক্ত থাকতাম।আপনার এখানে আর বিজ্ঞাপন বানাতে আসতাম না।”

বলে হাসলাম।ম্যানেজার রাকীব মাহতাব বলেন,
“তারপরও দেখুন,ম্যাম।”

“রাকীব?”
“আরেহ হৃদয় যে?হোয়াট হ্যাপেন্ড,ব্রো?সাডেন আমার অফিসে?”
“এখান দিয়ে গেলাম।ভাবলাম তোর সঙ্গে দেখা করে যাই।”

কন্ঠস্বরটা পরিচিত মনে হতেই পাশ ফিরতে সেই ব্যক্তি আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।আমি তার একপাশ দেখলাম।দেখে চিনে ফেললাম। হৃদয়!কথাবার্তার ধরনে মনে হচ্ছে হৃদয় এবং ম্যানেজার রাকীব মাহতাব দুজন বন্ধু!আমি যে খুব স্বাভাবিক তা ব
নয়!অস্বাভাবিক থেকেও অস্বাভাবিক!হৃদয় নামের ছেলেটি অবশ্যি এখনো আমাকে খেয়াল করেনি।করলে তো তারও রিয়াকশন কি হয়!ভাবনার মাঝেই,

“ম্যাম,সরি!বন্ধু তো?কথা না বলে আর ..?”

আমি পিটপিট চোখে ম্যানেজারের দিকে তাকালাম।মৃদু হাসলাম।ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললাম,
“ইট’স ওকে!”

এই “ইট’স ওকে” বলামাত্রই হৃদয় নামের ছেলেটি ওমনি তরতর করে আমার দিকে তাকালো।আমি হালকা চোখমুখ ছোট্ট করে আনলাম।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here