আমার_হৃদয়ে_সে #রোকসানা_আক্তার পর্ব-১১

0
756

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১১

”আপনার আগের ক্যালিগ্রাফির ডিজাইনগুলো আমাকে দেখান!যেটা আমার ভালোলাগবে সেটা চুজ করবো।”

পাশে রাখা আমার ল্যাপটপটা ওপেন করে ক্যালিগ্রাফির প্রোডাক্টগুলো স্ক্রিনে শো করে তা অভির দিকে এগিয়ে দিই।কাজটা অত্যন্ত ফর্মালভাবে করি।করার মাঝে কোনো রকম জড়তা বা আড়ষ্টতা ফুঁটে উঠে নি।দেখলেই যে কেউ বুঝবে অভির সাথে আমার এই প্রথম দেখা বা প্রথম কথা।অভি চটজলদি হাতে ল্যাপটপটা আমার থেকে টান মেরে ক্যালিগ্রাফিগুলো দৃঢ় মনোযোগে দেখতে ব্যস্ত হয়ে যায়।দেখা শেষ হলে সে ল্যাপটপটা আবার আমার দিকে তাঁক করে।স্ক্রিনে ইশারা করে। বলে,

“আমার কুয়াড্রানগুলার ক্যালিগ্রাফিগুলো পছন্দ হয়েছে।তবে গোলাপী কালার দেওয়া যাবে না।গোলাপীর বদলে গাঢ় নীল দিতে হবে।আর বাদবাকি কালার সব ঠিক আছে।তবে হ্যাঁ,কাজটা আমার একদম সলিড চাই।অত্যন্ত নিঁখুত কর্মা।কোনোরকম কাঁচা যেন না থাকে।আশা করি মোটামুটি ক্লিয়ার!”

বলে আমার দিকে তাকায়!আমার চোখের পাতা নিশপিশ করে উঠে।প্রথমে তাকাতে বিপত্তি বেঁধে যায়।তারপরও বিপত্তিকে ঠেলে স্বাভাবিক তাকিয়ে বলি,

“ক্লিয়ার!তবে হ্যাঁ,একদম নিঁখুতের ব্যাপারে আমি এখনো অনিশ্চিত।করার আগমুহূর্তে বলতে পারছি না।তবে আশা করি,নিঁখুত না হলেও সুন্দর হবে!”

বলে সৌজন্যতামূলক একটু হাসি।অভি চোখের দৃষ্টি অন্যদিক করে জোরে গাঢ় নিঃশ্বাস ছাড়ে।আবার আমার দিকে তাঁকায়।বলে,

“ইট’স ওকে।আমি তাহলে প্রোডাক্টসগুলো আপনাকে ই-মেইল করে দিচ্ছি যেগুলোর বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।”
“সিউর।”

তারপর অভি আমার ই-মেইলটা নিয়ে তাতে প্রোডাক্টসগুলো এক এক করে সেন্ড করে।সেন্ড করা শেষ হলে। বলে,
“কাজ করার সময় আপনার যাবতীয় যা যা তথ্য জানার প্রয়োজন হবে আমাদের এম.ডি সাহেব আছেন।তাকে কল করে জেনে নিতে পারবেন।আপনাকে ডিরেকশন দেওয়ার কাজ উনার উপর।”
“ওকে।”
“কয়দিন লাগবে বানাতে আপনার?”
“আপনি ক’দিনের মধ্যে চান?”
” চারদিনের মধ্যে চাই।”
“ঠিক আছে।”

অভি আর কিছু বলে নি।তার কথা সম্ভবত শেষ।সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে সামনে থেকে চলে যায়।তারপর এম.ডি আমার সামনে বসে।বিনীত বাক্যে বলে,

“ম্যাম,আপনার যত যা সমস্যা হয় কাজ করতে গিয়ে আমাকে সাথে সাথে কল দিবেন।ঠিক আছে?”
“সমস্যা হলে অবশ্যই দিব।”
“থ্যাংক ইউউ,ম্যাম।”
“মোস্ট ওয়েলকাম।”

তারপর চলে আসি।

১৩.
ভেতরটা নিশপিশ করছে।মনটা খুব একটা ভালো নেই!অবশেষে অভির কোম্পানিরও বিজ্ঞাপন বানাতে হচ্ছে?
জীবনে ঘুরে দাঁড়াবার সময়ে এটাও ছিল কপালে?কখনো ত ভাবিই নি ওর সামনে গিয়ে এভাবে দাঁড়াবো।আর আজ!আর আমি ওর সামনে কীভাবে এতটা শান্ত,স্বাভাবিক এবং সাবলীল থেকেছি!অবাক!বড্ড অবাক নিজের উপর!তবে কেনজানি ওর কোম্পানির বিজ্ঞাপন বানাতে মন থেকে একসেপ্ট করতে পারছি না।মন চায় এখুনি অফার টা সোঁজা রিজেক্ট করে দিই!কয়েক সেকেন্ডস নিশ্চুপ থাকি।এরইমাঝে খালামণি আসেন।আমি ফ্যাকাসে চোখমুখ মসৃণ করে আবার ঠিকঠাক হয়ে বসি।জোরপূর্বক হেসে।বলি,

“খালামণি..!”

তালে খালামণিও হেসে দেন।হাতে থাকা খাবারের প্লেট টি-টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলেন,
“বিকেলো আসার পর থেকেই রুম থেকে বের হচ্ছিস না।সন্ধে নাশতাও করলি না। আঁটটা বাজতে চললো।এখনতো কিছু খেয়ে নে?”
“খুদা নেই খালামণি।”
“খুদা নেই মানে?আবার জ্বরটর হলো নাকি?”

বলে তিনি উদ্বিগ্নতা মুখে আমার কাছে আসেন।কপালে,মুখে,গাঁয়ে হাত বুলান।নাহ তাপমাত্রা ঠিকই আছে।বলেন,

“তাপমাত্রা ত ঠিক আছে।তাহলে খেতে ইচ্ছে করছে না কেন?”
বলে খালামণি কয়েক সেকেন্ডস চুপ থাকেন।এরমাঝে কিছু ভাবেন।পরক্ষণে মনে অন্য আশঙ্কা ঢুকতেই চোখজোড়া বড় করে ফেলেম। বলেন,
“এই পারিসা?আবার মন খারাপ নাকি?ওখানে কিছু হয়েছে?ওখান থেকে আসার পর থেকেই ত দেখছি খেতে চাচ্ছিস না!”

আমি খালামণির এ’কথার পিঠে খালামণির দিকে মাথা তুলে তাকাই।পরক্ষণে মাথা আবার নত করে ফেলি।কথার জবাব দিই নি।নিশ্চুপতায় খালামণির জহুরি চোখ আমার মনের কথা বুঝে যায়।আসলেই মন খারাপ আমার।খালামণি ওমনির হাত চাপড়ে ধরেন।বলেন,

“কি হয়েছে অফিসে?বল আমাকে?”

আর চুপ থাকতে পারি নি।অভির কথা খালামণিকে বলে দিই।খালামণি সবটা শুনে হেসে দেন।তা দেখে আমার চোখ জোড়া সরু হয়ে আসে।খালামণি বুকে হাত রেখে হাসি থামান।বলেন,

“আরেহ,ওর কোম্পানি থেকে সুযোগটা হলো এটা তো খুশির সংবাদ!তুই ওর কোম্পানির বিজ্ঞাপন বানিয়ে দিবি এটা তোর যোগ্যতার প্রমাণ পারিসা!তুই ওকে তোর জাস্ট যোগ্যতা টা দেখিয়ে দিবি।আর সাথে ইগো,ব্যক্তিত্ব সব।কখনোই বুঝতে দিবি না তুই একসময় ওরজন্যে দুর্বল ছিলি! কেদেছিলি। কষ্ট পেয়েছিলি।ওর সামনে নিজের বিলং লাইফ এনজয় করবি।শেষে কি হবে জানিস?ও ভাববে তুই ওকে ছাড়া খুব ভালে আছিস।খুব ভালো।আর এই ভালোটুকুই তোর দাম্ভিকতা!তোর অহংকার!”

তাকিয়ে থাকলাম খালামণির দিকে।খালামণি কথাগুলোা বলা শেষে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলেন আমি সন্তুষ্ট নই।দ্বিধাদ্বন্দে।এবার কাঁধে হাত রাখেন।বলেন,

” কাজ এবং পার্সোনাল কিছু খুবই আলাদা!কাজের সাথে কখনো পার্সোনাল লাইফ টানবি না।পার্সোনাল পার্সোনালই।তা মানুষ একা ফিল করে।আর কাজটা সবার মাঝে!নিজের কাজকে এড়িয়ে যাবি না।আগে নিজের কাজ করবি তা যেই জায়গায় বা যেই পরিস্থিতিতেই হোক।এখানে মনোবল হারালে পরে অন্য জায়গায়ও মনোবল রাখতে কষ্ট হয়ে যাবে।তবে তোর পার্সোনাল লাইফে এখনতো আর মাথাব্যথা নেই তাই তো?”

আমি স্থির চাহনিতে খালামণির মুখ পানে তাঁকাই।খালামণি এবারো হাসেন।বলেন,

“যদিও থেকে থাকে।তুই তোর এই যোগ্যতা দিয়েই তোর পার্সোনাল লাইফকে সফল করবি।আর এটাতে এত দ্বিধাদ্বন্দ হবার কি আছে?সহজভাবে ভাব।যাইহোক একদম মন খারাপ করবি না।মনকে শক্ত কর।খেয়ে নে।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাছে।ফাহিম বোধহয় ডাকছে আমাকে। গেলাম।”

বলে খালামণি দরজার দিকে পা বাড়ায়।কিছু একটা ভেবে আবার পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়।বলে,

“ওহ পারিসা?তোকে একটা কথা বলতাম..।”
“বলো?”
“তুই যাওয়ার পর তোর মাকে তোর জবটার ব্যাপারে ডিটেইলস বুঝিয়েছি।বুঝেছেন হয়তো।কথার ভঙ্গিমায় বুঝলাম পরে আর আপত্তি করবে না মনে হয়।যদিও আপত্তি করে বসে তাহলে সোঁজা আমাকে জানাবি,ঠিক আছে?”

মৃদু হেসে উঠি।বলি,
“মা কখন বাসায় গিয়েছে,খালামণি?”
“তুই যাওয়ার দুই ঘন্টা পরই।থাকতে বলেছি।থাকে নি।”
“থাকবে না।আমার উপর রেগে আবার থাকবে!কল্পনা! ”

খালামণি ঠোঁট টিপে হেসে উঠেন।তারপর রুম ত্যাগ করেন।

চলবে…

(লোডশেডিং চলছিলো। ফোনে ওত চার্জ ছিল না।তাই গতকাল দিতে পারি নি।দুঃখিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here