তৃণশয্যা(সিজন ২) #নিয়াজ_মুকিত #৩য়_পর্ব

0
265

#তৃণশয্যা(সিজন ২)
#নিয়াজ_মুকিত
#৩য়_পর্ব

হঠাৎ করে চারুর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কারনটা বুঝতে পারে না আদনান।সে মাথা ঘুড়িয়ে চারদিকে দেখতে থাকে কোনো কিছু আছে নাকি যা দেখে চারু ভয় পেতে পারে।সে চারদিকে তাকিয়ে কোনো কিছু দেখতে পায় না।এবার আদনানের মনের ভিতরে কিছুটা ভয় ঢুকে যায়।তার কথা শুনে যদি চারু অজ্ঞান হয়ে থাকে তাহলে তার রক্ষে নেই।এদিকে সমালতালে দরজায় বাড়ি মেরেই চলেছেন চারুর বাবা-মা।সাথে চিল্লিয়ে বলছেন,
–“চারু,দরজা খোল মা।কি হয়েছে?চারু..”

আদনান কি করবে বুঝতে পারছে না।এই সময় দরজা খুলে দিলে অন্যকিছু ভাবতে পারে চারুর বাবা-মা।দ্রুততম ভাবনা চলছে আদনানের মগজে।শেষ পর্যন্ত আদনান সিদ্ধান্ত নেয় সে যেদিক দিয়ে এসেছে সেদিক দিয়ে বের হয়ে যাবে।তারপর মেইন গেট দিয়ে বাসায় প্রবেশ করে সবার অনুমতি নিয়ে আবার জানালা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে দরজা খুলে দেবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী জানালার পাশের ছোট গাছটাতে উঠে পড়ে আদনান।তাকে গাছ থেকে নামতে দেখে হাসতে থাকে একটা মেয়ে।আদনান সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ না করে তারাতারি করে গাছ থেকে নেমে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিয়ে সদর দরজার দিকে রওনা হয়।সেখানে কয়েকবার বাড়ি মারতেই দরজা খুলে দেয় চারুর মা।আদনানকে দেখে তিনি খানিকটা অবাক হন।আদনান চারুর মাকে দেখে বলে,
–“খালা,আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?”

চারুর মা আদনানকে নিয়ে উপরে যেতে যেতে বলে,
–“আর বলিস না বাবা,হঠাৎ করে খুব জোড়ে চিল্লান দেয় চারু।আমরা তারাতারি করে তার রুমের দিকে রওনা হলে দেখি দরজা বন্ধ করা।এত ডাকা-ডাকি করছি তবুও দরজা খুলতেছে না।কিছু হলো নাকি বুঝতে পারছি না।”

আদনান এবার এমন একটা ভাব নেয় যেন সে এসব কথা শুনে বেশ অবাকই হয়েছে।সে এবার তার খালাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“ওয়েট আমি দেখছি কি‌ করা যায়?”

এই বলে আদনান দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।বেশ কিছুক্ষন তার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকেন চারুর মা তারা বেগম।তারপর পুনরায় চারুর দরজার সামনে এসে স্বামীর সাথে তাল মিলিয়ে মেয়েকে ডাকতে শুরু করেন।

এদিকে গাছ দিয়ে চারুর ব্যালকনিতে উঠে পড়ে আদনান।রুমে প্রবেশ করে প্রথমে চারদিক দেখে নেয় সন্দেহের কবলে পড়ার মতো কোনো জিনিস আছে কিনা?চারদিক দেখা শেষ হলে সে খানিকটা হাস-ফাঁস করতে করতে দরজাটা খুলে দেয়।বাতাসের বেগে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে চারুর বাবা-মা।দুজনেই দেখতে পান বিছানার উপরে এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে চারু।তার বাবা আমজাদ সাহেব দ্রুত পানি আনতে বলেন তারা বেগমকে।তারা বেগম পানি নিয়ে আসলে কিছুটা পানি চারুর মুখে দিতেই জ্ঞান ফিরে চারুর।

জ্ঞান ফেরার পর চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকায় সে।আদনানকে দেখে একটুও অবাক হয় না সে।
–“হঠাৎ করে কি দেখে অজ্ঞান হইলি তুই?”প্রশ্নটা চারুর দিকে ছুড়ে দেয় বাবা আমজাদ হোসেন।চারু একবার আদনানের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলে,
–“বুঝলাম‌ না হঠাৎ করে কি হলো আমার?মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা শুরু করে।সামনের সব কিছু ঘোলাটে দেখতে পাই।সেই সময় আবার আমার সামনে একজন রাক্ষস বসে ছিল।তাকে দেখে ভয়ে চিল্লিয়ে উঠে সেন্সলেস হই।”

চারুর কথা শুনে বেশ রেগে তার দিকে তাকায় আদনান।টের চোখে আদনানের রাগ দেখে মুচকি একটা হাসি দেয় চারু।আমজাদ সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বের হতে হতে বলেন,
–“কালকে না হয় একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব তোকে।”
এই বলে বের হয়ে যান তিনি।তার কথার কোনো উত্তর দেয় না চারু।তারা বেগমও আদনান আর চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলেন,
–“কি খাবে?চা না কফি!”
চারু বলার আগেই আদনান বলে ওঠে,
–“কফি”

আদনানের উত্তর পেয়ে আর দেরি না করে সেখান থেকে বের হয়ে যান তারা বেগম।তিনি বের হয়ে যেতেই ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়ে আদনান।হাসি মুখে তার দিকে তাকায় চারু।আদনান মাথা ঘুড়িয়ে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
–“তোকে তো আসল কথা বললামই‌ না”
চারু এবার খানিকটা ভ্রু-কুঁচকে তাকায় আদনানের দিকে।চারুর তাকানো দেখে আদনান বলে ওঠে,
–“শোন,তোদের কলেজে বাবুল এমপির মেয়ে নিত্তিয়া পড়ে না।”
চারু স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়,
–“হ্যাঁ।আমার থেকে এক ক্লাস বড়।”

আদনান এবার মাথা নিচু করে বলতে শুরু করে,
–“সে আমাকে ভালোবাসে।ভালোবাসে বলতে উপরে উপরে ভালোবাসে।তুই তো জা‌নিস তার বাবা এবং ‌নিত্তিয়া দুজনেই কেমন।এখন তারা যদি জানতে পারে যে আমার বিয়ে হয়েছে তোর সাথে তাহলে তোকে এবং খালা-খালুকে তারা শেষ করে দিবে।একদিনে শতশত মাডার করতেও হাত কাপে না তাদের।তাই আমি বলছিলাম ডিবোর্সের কথা।”

চারু আদনানের সব কথা মন দিয়ে শুনে তারপর মুখ ফুটে বলে,
–“তুমিও কি তাকে ভালোবাসো?”
চারুর প্রশ্নের উত্তর আদনান সাথেসাথে দিয়ে দেয়।
–“পাগল নাকি,ওই ফালতু মেয়েটাকে আমি ভালোবাসবো।ছি.আমার রুচি এত বাজে।একটা ক্রিমিনাল।”আদনান বেশ রেগেই বলে কথাটা।
আদনানের কথা শুনে চারু একটা হাসি দেয়।তারপর আদনানের গালটা আলতো করে টেনে দিয়ে বেশ আদুরে গলায় বলে,
–“ওলে আমার জামাইটা লে।কাউকে ভালোবাসে না সে আমাকে ছাড়া।”

চারুর কথার উত্তর দেয়ার আগেই কফি নিয়ে রুমে প্রবেশ করে তারা বেগম।তিনি আদনান ও চারুকে কফি দিয়ে চলে যান।আদনান কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে,
–“তুই তো জানিস না,নিত্তিয়া তার বাবাকে বলে আমাকে ওই কলেজের টিচার বানিয়েছে।পরের সপ্তাহেই আমার জয়েন।”
আদনানের কথা শুনে বেশ অবাক হয় চারু।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
–“ভালোই করেছে শাকচুন্নিটা।তোমার চাকরী হয়ে গেছে তারমানে আমরা তারাতারি বিয়ে করতে পারবো।ধন্যবাদ শাকচুন্নিটাকে।”

চারুকে থামিয়ে দিয়ে আদনান বেশ রেগে বলে,
–“রাখ তোর শয়তানি।প্রশ্ন উঠছে বাঁচা মরার আর সে আছে বিয়ে নিয়ে।বলি না বাঁচলে বিয়ে করবি কেমনে।বাদদে আমি ডিবোর্স পেপার রেডি করি,”
চারু এবার কফির কাপটা রেখে আদনানের মাথায় হালকা করে একটা মাইর দেয়।আদনান রেগে তাকায় চারুর দিকে।চারুও রেগে তাকায় আদনানের দিকে।দুজনের চোখেই বিরাজ করছে রাগ।আদনান কিছু বলার আগেই চারু চিল্লিয়ে বলে,
–“আরেকবার ডিবোর্সের কথা বললে আমাকে আর এই পৃথিবীতে খুঁজে পাবে না তুমি।একটা মেয়ের জন্য ডিবোর্স দিবে।দেখি মেয়েটা কতদুর গেছে।যাও তুমি।”

চারুর রাগ মুহুর্তেই থামিয়ে দেয় আদনানের রাগকে।আদনান আস্তে করে বলে,
–“তো কি করবো?যে সব সময় গান নিয়ে ঘোরে তার সাথে লড়াই করবো।সম্ভব না।আমি গেলাম রেডি করতে।তুই থাক।”
এই বলে আদনান রুম থেকে বের হয়ে যায়।বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসতেই চারুর কথাটা কানে ভাসে।’আরেকবার ডিবোর্সের কথা বললে পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না তাকে।’

সত্ত্যি যদি খারাপ কিছু করে বসে চারু তাহলে কি হবে?আদনান তারাতারি গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দেয় বাসার দিকে।সে মনেপ্রাণে চাইছে চারুর যাতে কিছু না হয়।কিন্তু তার চাওয়া‌ কি সত্ত্যি হবে নাকি…

চলবে..ইনশাআল্লাহ

নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here