তৃণশয্যা(সিজন ২) #নিয়াজ_মুকিত #৪র্থ_পর্ব

0
177

#তৃণশয্যা(সিজন ২)
#নিয়াজ_মুকিত
#৪র্থ_পর্ব

আদনান খানিকটা জোড়ে দৌড় দেয় চারুর রুমের উদ্দেশ্যে।মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা হলো,চারু যদি নিজের কোনো ক্ষতি করে তাহলে।একপর্যায়ে আদনান এসে পৌঁছে যায় সদর দরজার সামনে।সে বেড় হয়ে যাওয়ার পর দরজাটা লাগানো হয় না,এখনো খোলাই আছে।আদনান এক সেকেন্ড দেরি না করে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করে।একপর্যায়ে সে পৌঁছে যায় চারুর রুমে।প্রথমে দরজা দেয়া দেখে খানিকটা ভয় পায় সে।পড়ে যখন দরজায় হাত দিতেই দরজা খুলে যায় তখন খানিকটা চিন্তামুক্ত হয় সে।আদনান চোখ পিটপিট করে রুমের চারদিকে তাকায়।বিছানার উপর উবুর হয়ে চারুকে শুয়ে থাকতে দেখে দৌড়ে তার কাছে যায় আদনান।হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মাথা ঘুড়িয়ে পিছনে তাকায় চারু।আদনানকে দেখে সে খানিকটা আশ্বর্য হয়।আদনান দেখতে পায় চারুর চোখে পানি।চোখগুলো লাল টকটকে রং ধারন করে।

আদনান ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।চারু পুনরায় মাথা বালিশের সাথে চেপে ধরে শুয়ে থাকে।আদনান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চারুর দিকে।একপর্যায়ে আদনান নিজের হাতটা রাখে চারুর মাথায়।হাত দিয়ে চারুর এলোমেলো চুলগুলো গোছাতে গোছাতে বলে,
–“চারু দেখ অযাথা কান্না করিস না।আমি বুঝতে পারছি কেন তুই কান্না করছিস?কিন্তু এখন ডিবোর্স না দিলে পরবর্তিতে এর থেকে বেশি কান্না করতে হবে তোকে।অনেক ভয়ংকর লোক নিত্তিয়ারা।”

আদনানের কথা শুনে বেশ রেগে যায় চারু।একলাফে বিছানায় উঠে বসে পড়ে।তারপর হাত দিয়ে আদনানকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে,
–“কেমন মানুষ আপনি?একটা মেয়ের ভয়ে আগেই ডিবোর্স দিচ্ছেন নিজের বউকে।ছি‌.।আচ্ছা এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে,আপনি সত্ত্যিই আমাকে ভালোবাসেন তো?”
চারু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আদনান বিন্দুমাত্র সময় অপচয় করে না।সে সাথে সাথে বলে দেয়,
–“তুই আমার খালাতো বোন।তোকে আমি কেন ভালোবাসবো?আগেও বাসিনি এখন বাসবো না পরবর্তিতেও মনে হয় না।বাদ দে,আমি যাই।”

চারু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।আদনান মুখে প্রকাশ না করলে কি হবে?চারু জানে আদনান তাকে কতটা ভালোবাসে।আদনান রুম থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে চলে আসে।ততক্ষনে পশ্চিম আকাশে সুর্য হেলে পড়েছে।আদনান গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করে।কিছুদুর যাওয়ার পর একপর্যায়ে জ্যামে আটকে যায় গাড়ি।আদনান খানিকটা বিরক্তি নিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরের গাড়ি গুলো দেখতে থাকে।এমন সময় একটা গাড়ির ভিতরের দৃশ্য দেখে চোখ সানাবড়া হয়ে যায় আদনানের।আদনান আরো ভালো করে বোঝার জন্য অলটাইম গাড়িতে রাখা দুরবীণটা হাতে তুলে নেয়।দুরবীণে চোখ লাগিয়ে ভালো করে যাচাই করে ব্যাপারটাকে।একপর্যায়ে রিপোর্ট আসে যে প্রথমে যা দেখেছে সেটা সত্ত্যি।আদনান এবার ভাবতে শুরু করে।তারমানে নিত্তিয়া তাকে ব্যবহার করে।সে আসলে ভালোবাসে অন্য একজনকে।কিছুক্ষন আগে আদনান যে দৃশ্য দেখেছে সেটা ছিল,নিত্তিয়া একটা ছেলেকে চুমু খাচ্ছে।

এর মধ্যে জ্যাম কেটে যায়।আদনান গাড়ি চালাতে শুরু করে পুনরায়।নিত্তিয়া যে এতদিন তার সাথে ছলনা কিংবা ভালোবাসার যে নাটক করেছে সেটা আজকে বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারে আদনান।এতদিন হালকা পাতলা বুঝলেও আজকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে,২-২ মাঝে মাঝে ০-ও হয়।

একপর্যায়ে আদনান এসে পৌঁছে যায় নিজের বাসার সামনে।গাড়ি পার্কিং করে রেখে রওনা দেয় বাসার ভিতরে।আদনান ভিতরে প্রবেশ করতেই মাগরিবের আজান দিতে শুরু করে সব মসজিদে।আদনান নিজের রুমে গিয়ে ওজু করে টুপিটা নিয়ে রওনা হয় মসজিদের উদ্দেশ্যে।

এদিকে নিত্তিয়া সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য কালেক্ট করছে চারু তার বান্ধবীদের কাছ থেকে।সবকিছু জানার পর চারু বুঝতে পারে নিত্তিয়া সত্ত্যিই অনেক ভয়ংকর সাথে প্রচুর অত্যাচারীও।সামান্য একটা কলম চুরির অপরাধে যে মেরে মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয় সে কতটা ভয়ংকর সেটা বলার বাকি থাকে না।চারু আরো জানতে পারে যে নিত্তিয়ার একটা ভাইয়াও আছে।তাদের কলেজেই পড়ে।তবে সে নিত্তিয়ার মতো না।শান্ত স্বভাবে ছেলে এবং শান্তিপ্রিয় ছেলে।সে এসব মারামারি-কাটাকাটি সহ্য করতে পারে না।একেবারে সব তথ্য যোগাড় করে ঘুমিয়ে পড়ে চারু।কালকে কলেজে গিয়ে আরো তথ্য যোগাড় করতে হবে।যেভাবেই হোক নিত্তিয়াকে আদনানের জীবন থেকে সড়িয়ে ফেলতেই হবে।

নামাজ শেষ করে বাসায় আসে আদনান।কিছুক্ষন টিভি দেখে সেও ঘুমাতে চলে যায়।সারাদিন অনেক ধকল গেছে সবার উপর দিয়ে।তাই আজ তারাতারি ঘুমাতে যায় সবাই।আদনান সবেমাত্র বিছানায় এসে শুয়েছে এমন সময় তার ফোন বেজে ওঠে।স্কিনের নামটা দেখে বেশ অবাক হয় আদনান।নিত্তিয়া তাকে কল দিয়েছে।আদনান রিসিভ করে কোনো কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে নিত্তিয়া বলতে শুরু করে,

–“বেব,তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না আমার।চলে আসো না।”
নিত্তিয়ার কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় আদনান।তারপরেও মাথাটাকে ঠান্ডা করে বলে,
–“তা কি সম্ভব?আচ্ছা বাদ দাও আমি ঘুমাবো।”
আরো কিছুক্ষন নিত্তিয়ার সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেয় আদনান।সে বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকে নিত্তিয়া কেন এসব করছে?একজনের সাথে ঘুড়ছে,অশ্লীল কাজ-কারবার করে বেড়াচ্ছে ‌আর অন্যজনকে বিয়ে করতে চাচ্ছে।কি কাহিনী কিছুই মাথায় ঢুকছে না?তবে এটা বুঝতে বাকি থাকে না যে,নিত্তিয়া একটা অত্যান্ত চুড়ান্ত পর্যায়ের বাজে মেয়ে।

সেদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়ে আদনান।ঘুমানোর আগে আরো অনেক কিছু ভেবেছিল সে।ঘুমানোর আগে একটা সিদ্ধান্তও নিয়েছে সে।কাল থেকে আর এরকম থাকবে না।নিজের সুন্দর চেহারাটাকে আরো সুন্দর করে উপস্থাপন করবে।পরিবর্তন আনবে নিজের চলা-ফেরার মধ্যে।এককথায় কাল ভোর থেকে এক অন্য আদনানকে দেখতে পাবে ধরণীর প্রত্যেকটা ব্যাক্তি।

প্রত্যেকদিনের মতো ফজরের আজান শুনে আজও ঘুম ভাঙ্গে আদনানের।তার এই গুণটার জন্য অনেক প্রশংসিত সে।আদনান লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে ওজু করে রওনা হয় মসজিদের উদ্দেশ্য।পথে দেখা হয় তার বাবার সাথে।তার বাবাও মসজিদের দিকে যাচ্ছে।দুজনে একসাথে মসজিদে প্রবেশ করে।নামাজ শেষ করে পুনরায় একসাথে বাসায় আসে বাবা-ছেলে।

বাসায় প্রবেশ করে আদনান নিজের রুমে চলে যায়।প্রতিদিনের মতো এইসময় তাকে এককাপ কফি দিয়ে আসে তার মা রাহিনা বেগম।আদনান তার মায়ের কাছ থেকে কফির কাপটা নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।নিজেকে খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে দেখতে থাকে।এমন সময় টুং করে মেসেজ বাজে আদনানের ফোনে।আদনান কফি খেতে খেতে মোবাইলটা হাতে তুলে নেয়।বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করে মেসেজটা।মেসেজটাতে শুধু বলা হয়েছে কালকে থেকেই কলেজে জয়েন করতে হবে আদনানকে।আদনান একটুও অবাক হয় না।

কলেজের সম্পুর্ন ক্লাস শেষ করে আদনানদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয় চারু।আদনানের বাসায় এসে আদনানের রুমে যেতেই চমকে ওঠে সে..

চলবে.‌.ইনশাআল্লাহ

নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here