#তৃণশয্যা(সিজন ২)
#নিয়াজ_মুকিত
#৫ম_পর্ব
আদনানের রুমের ভিতরে প্রবেশ করেই চমকে ওঠে চারু।একি অবস্থা রুমের।আদনান বিছানার এককোণায় বসে আছে মাথা নিচু করে।চারু সাবধানে এগিয়ে আদনানের কাছে পৌঁছায়।আদনান মাথা তুলে তাকায় চারুর দিকে।তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে পুনরায় বসে আগের মতো হয়ে বসে থাকে।চারু এবার ধপ করে বসে পড়ে আদনানের সামনের সোফাটায়।আদনান এবার তার কড়া দৃষ্টি অর্পন করে চারুর মুখের দিকে।চারু কি বলবে বুঝতে পারছে না?কোনো ভুমিকা ছাড়াই হঠাৎ করে চারু বলে,
–“তুমি নাকি কালকে থেকে কলেজে জয়েন করতেছো।শুনলাম এরকম..”
আদনান এবার উঠে ধারায়।মুখের মধ্যে রয়েছে সেই রহস্যময় হাসিটা।চারু কিছু বলার আগেই আদনান চারুর হাতটা খানিকটা জোড়ে চিপে ধরে বলে,
–“তুমি কাকে বলিস রে?তুই তো দেখি বেয়াদবির শিক্ষকের আসনে বসতে শুরু করেছিস।আপনি বলবি আর হ্যাঁ এখন থেকে পারলে আমাকে ভাইয়া বলবি।”
চারু আস্তে করে আদনানের কবল থেকে নিজের হাতটা হেফাজত করে নিয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে বলে,
–“কিন্তু আপনার সাথে যে আমার বিয়ে হয়েছে সেটা কি হবে?বিয়ের পরে কি বরকে কেউ ভাইয়া বলে ডাকে নাকি?”
আদনান ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।তারপর বা হাতটা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
–“good question.এর দুইটা উত্তর।১.তোর সাথে বিয়ে হয়েছে ঠিকই বাট সেটা গাড়ির পেট্রলের মতো।যেকোনো সময় মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে।২.তুই আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবি কারন,কলেজে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকতে হবে ওখানে যদি তুমি বলিস মেরে হাড়গুড় ভেঙ্গে দেব।তাই এখন থেকে প্রাকটিস কর?আর তুই একটা ছেলের রুমে কি করছিস রে?বের হ..”
চারু আর এক সেকেন্ডও সেখানে না থেকে মুখ ভেংচি দিয়ে বের হয়ে আসে।আদনান বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়।একদিনে এত পরিবর্তন,কেমনে সম্ভব?
এদিকে আদনানের রুম থেকে বের হওয়ার পর থেকে চারু শুধু ভেবেই চলেছে একটা কথা।আগের আদনান আর এখনকার আদনানের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ না হলে পাতাল আর আকাশের মধ্যেবর্তি স্থান পর্যন্ত তফাৎ হয়েছে।একদিনে এত বদলে গেল কেমনে।এসব ভাবতে ভাবতে চারু এসে দাঁড়ায় রাহিনা বেগমের সামনে।রাহিনা বেগমকে দেখে চারু বলে ওঠে,
–“আমি যাচ্ছি..”
রাহিনা বেগম অবাক হয়ে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
–“যাচ্ছি মানে কি?কালকে যাবি।এখান থেকে কলেজ করে।”
চারু অনেক কষ্টে তাকে বোঝায়।চারু রাহিনা বেগমকে বলে,
–“কালকে একেবারে কাপড়-চোপড় নিয়ে আসবো।আর উনিতো কাল থেকে কলেজে জয়েন করতেছেন।তাকে বলিও আমাকে যেন নিয়ে আসে।একাই আসতে পারবোনা..”
রাহিনা বেগম হাসতে হাসতে বলে,
–“আচ্ছা বলব নি।সাবধানে যাস”
চারু সেখান থেকে বের হয়ে একটা রিকসা দাঁড় করায়।রিকসায় উঠে বসে রিকসাওয়ালা রিকসা চালানোর নির্দেশ দেয় সে।রিকসা চলতে শুরু করে।হঠাৎ চারু খেয়াল করে সামনের দিকে রাস্তার এককোণে কিছু মানুষ ভীড় করেছে।রিকসা সেখানে পৌঁছালে চারু রিকসাওয়ালাকে থামার নির্দেশ দেয়।রিকসা ওয়ালা থামলে চারু রিকসা থেকে নেমে ভীরের উদ্দেশ্য রওনা হয়।অনেক কষ্ট করে সে দেখতে পায় একটা রক্তাক্ত ছেলে পড়ে আছে।চারু ছেলেটার মুখ দেখে চিনতে পারে।তাদের কলেজে পড়ে ছেলেটা।
চারু ব্যাপারটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে রিকসায় উঠে পুনরায় রিকসাওয়ালাকে চালানোর নির্দেশ দেয়।একপর্যায়ে চারু বাসায় এসে পৌঁছায়।বাসায় পৌঁছে প্রথমে ফ্রেস হয়ে নেয় সে।কয়েকবার তার মাকে ডাকলে সাড়া পায় না সে।শেষ বার ডাকার সাথে সাথে তার বাবা বলে,
–“তোর মা তোর নানু বাসায় গেছে কিছুক্ষন আগে।হঠাৎ তোর নানু নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নে!”
চারু টেবিলে বসে খেতে শুরু করে।খাওয়া-দাওয়া শেষ করে টিভির রিমুটটা নিয়ে সোফায় বসে পড়ে চারু।টিভি অন করে দেখতে দেখতে চোখ বন্ধ হয়ে যায় চারু।শেষে বাধ্য হয়ে টিভি বন্ধ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে চারু।এক ঘুমে পাড় করে দেয় সকাল হওয়ার আগ পর্যন্ত বাকি সময়টা।
চারু ঘুম থেকে উঠে দেখে ৭টা বাজে।সে আস্তে আস্তে ফ্রেস হয়ে রেডি হতে শুরু করে কলেজে যাওয়ার জন্য।রেডি হয়ে নাস্তা করে রওনা দেয় সে।কলেজে পৌছায় ৭:৪৪-এ।৮টায় তাদের শিফট শুরু হয়।চারু গিয়ে বসে পড়ে ক্লাসে।একপর্যায়ে ঘড়িতে আটটা বেজে যায়।চারু জানালা দিয়ে তাকায় কলেজের মেইন গেটের দিকে।গেট দিয়ে আদনানের গাড়ি ঢুকছে।চারু আরো কড়া দৃষ্টিতে তাকায় আদনানের গাড়িটার দিকে।গাড়িটা থেমে যায়।ভিতর থেকে বের হয় আদনান।
হুট করে একটা মেয়ে এসে জড়িয়ে ধরে তাকে।আদনান তাকে সড়িয়ে দিয়ে হালকা একটা হাসি দেয়।মেয়েটা আদনানের সাথে কি কথা বলছে সেটা শুনতে কিংবা বুঝতে পারে না চারু।সে রেগে তাকিয়ে থাকে সেই দিকে।একপর্যায়ে ক্লাসে প্রবেশ করে বাংলা শিক্ষক।তিনি ক্লাস নিতে শুরু করেন।
বাংলা ক্লাস শেষ হতেই রুমে প্রবেশ করে প্রিন্সিপাল স্যার।সাথে রয়েছে আদনান।প্রিন্সিপাল স্যার সবার উদ্দেশ্যে বলে,
–“হ্যালো অল,ইনি হচ্ছে তোমাদের ইংলিশ টিচার আদনান চৌধুরী।আজ থেকে ইনি তোমাদের ক্লাস নিবে।অনেক ব্রিলিয়ান্ট পারসন।তো তোমরা ক্লাস করো।বাই.”
এই বলে প্রিন্সিপাল স্যার চলে যান।সব মেয়েরাই এমন ভাবে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে যেন এখনি গিলে ফেলবে।একজনতো দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসাও করে,
–“স্যার আপনি কি সিঙ্গেল?”
আদনান সাথে সাথে তাকায় চারুর দিকে।তারপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“হুম”
আদনান আবার বলতে শুরু করে,
–“তো পরিচিত হওয়া যাক সবার সাথে।এই দিক থেকে শুরু কর।”
সবাই এক এক করে নিজ নিজ পরিচয় দিতে শুরু করে।যখনি চারুর পালা আসে চারু বলার আগেই আদনান বলে ওঠে,
–“তুমি চারু,রাইট।”
চারু খুশি হয়ে বলে,
–“হুহ”
চারু আদনানের কথোপকথন দেখে সম্পুর্ন ক্লাস একসঙ্গে প্রশ্ন করে,
–“স্যার আপনি ওকে চেনেন নাকি?”
চারু উত্তর দেয়ার আগেই আদনান বলে ওঠে,
–“হুম।তাকে চেনার অনেক বড় একটা কাহিনী আছে।শুনবে..”
সবাই একসাথে বলে ওঠে,
–“হ্যাঁ,বলেন”
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে,
–“একদিন আমি গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম।সামনে দেখি একটা মেয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে।আমি তাকে ধরে ফেলি।এই মুহুর্তে লাঠি নিয়ে আমার সামনে দাঁড়ায় একটা বৃদ্ধ।বৃদ্ধের কাছ থেকে জানতে পারি মেয়েটা তার বানানো ভাপা পিঠা চুরি করে পালাচ্ছিলো।আর সেই মেয়েটাই চারু।ভাপা চোর”
সম্পুর্ন ক্লাস হো হো করে হাসতে শুরু করে।লজ্জায় চোখে পানি চলে আসে চারুর।এত বানিয়ে মিথ্যা কেমনে বললো আদনান?একপর্যায়ে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করে চারুর।সে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায় ক্লাস থেকে।এক দৌড়ে পার হয়ে যায় কলেজ গেট।
চলবে..ইনশাআল্লাহ
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।