#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৬
৪০.
সকাল বেলায় ঘুমটা হঠাৎ হালকা হয়ে আসে অনেকগুলো গলার কন্ঠস্বরের আওয়াজে।ভাবলাম খালামণির প্রতিবেশী কেউ।তাই ঘুমতে আবারো উদগ্রীব হই।কম্বলটা বুকের কাছে টেনে এনে আবারো চোখজোড়া বন্ধ করি।তবে লাভ বিশেষ হলো না।ওপাশের খালামণি ছাড়া অন্যান্য গলার কিছু ধ্বনি এপাশে বেজে উঠে।আর ধ্বনিগুলো বেশ পরিচিত পরিচিতও লাগছে!শুয়ে থাকতে পারি নি।কম্বলটি একপাশে সরিয়ে উঠে বসি।কয়েক সেকেন্ডস লাগে ঘুমের আড়মোড়া ভাঙ্গতে।তারপর নেমে দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়াই।সোফার দিকে তাকাতেই চোখজোড়া চমকে উঠে।খালামণির সামনের সোফা টায় হৃদয়।সে খালামণির সাথে কথা বলছে।আমি দরজা থেকে ছিটকে ওমনি কিছুটা দূরে সরে আসি।ব্যাপার কি?হৃদয় এখানে?এখানে আসার তার কি এমন উদ্দেশ্য?খানিক্ষন চুপ করে থাকি।পরক্ষণে মনে পড়ে কালরাতে ই ত খালামণিকে বললাম পাত্র দেখতে!খালামণি সেই কথাটা হৃদয়কে আবার বলে দেয়নি তো?ভাবনার মাঝে দরজায় টোকা পড়ে।
“ম্যাডাম,আসবো?”
হৃদয়ের কন্ঠস্বর!খালামণির উপর প্রচন্ড রাগ উঠতাছে।খালামণি এটা কি একদমই ঠিক করলো তাও আমাকে কিছু না বলে?পেছনে ফিরলাম।সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
“কেন এসেছেন এখানে?”
“আমার হবু বউকে দেখতে!”
“ফাজলামোর একটা লিমিট থাকে হৃদয়!আপনি লিমিট ছাড়া ফাজলামো করতেছেন।”
“ফাজলামো এই হৃদয় করে না কখনো।এবং সামনে করেও না।”
“তাহলে কেন এলেন?”
“বললাম না হবু বউকে দেখতে?”
“এই যে এবারো ফাজলামো করলেন!”
এ’কথার পিঠে হৃদয় ফিক করে হেসে দিলো এবার।আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।ওর ওই হাসির দিকে তাকালে আবার নিজেকে দুর্বল করে ফেলবো।বেসিক্যালি, ওর ওই হাসির কাছেই দুর্বল হয়ে গিয়েছি সেদিন।সেই হাসিটা তার এড়াতে হবেই এ্যানিহাউ।ভাবনার মাঝে,
“পারিসা?”
নড়ে উঠলাম।তবে সরাসরি তার চোখের দিকে তাকালাম না।সে বললো,
“আমার চোখের দিকে একটু সরাসরি তাকাও।”
এই বাক্যটি প্রকাশের ধরণ খুবই হৃদয় স্পর্শনীয়।আমি তাকানোর সাহস পেলাম না।বা কিছু বলারও।যেভাবে ছিলাম সেভাবেই।হৃদয় এবার আমার দিকে এগিয়ে এলো।বললো,
“সত্যি করে বলো ত পারিসা,আমাকে তোমার ভালো লেগেছে কি না?বেশি ভালোলাগার আবার দরকার নেই।একটুও লেগেছে কিনা এটা বলো।”
এবারো জবাব দিলাম না।
“জবাব তো দেবে, পারিসা?”
হৃদয়ের স্বর এবার আগের থেকে অনেকটা জোর গলার।আমি ভেবে না পেরে হৃদয়ের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলে দিলাম,
“একজন ডিভোর্সি আমি!আপনি আমার পেছনে পড়ে কেন নিজের লাইফটা এভাবে নষ্ট করতেছেন?আমার থেকেও তো কত ভালো মেয়ে আপনি ডিজার্ভ করেন!শিমলা আমার থেকেও কত গুণে সুন্দরী!ওকে কেন পাত্তা দিচ্ছেন না!”
সাথে সাথে আমার বাম গালে খুব জোরে একটা চড় পড়লো।আমি টলমল চোখে ফের সামনে ফিরলাম।হৃদয় ই চড়টা মেরেছে।হৃদয় নিজের হাতের দিকে তাকালো।চড়টা মেরে সে এবার খুব অপ্রস্তুত হয়ে গেল।টগবগ চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।তারপর আমার দিকে ফিরলো,
“সরি পারিসা!আমি ঠিক ছিলাম না।”
বলে খানিক থামে।তারপর আবার বলে,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি পারিসা।শিমলাকে না।শিমলার ব্যাপারে তুমি কতটুকু জানো,বলো?ওকে যতটুকু আমি চিনি তুমি হয়তো তাকে চেনো না।তাই প্লিজ ইগনোর হার।আমি তোমাকে কেন ভালোবাসি জানি না।তবে আমার অপরিসর মাথায় একটুকুই ব্যাখ্যা করছি তোমার মাঝে মায়া দেখেছি।তোমার মাঝে সততা দেখেছি।এবং তোমার মাঝে সুন্দর একটা মন দেখেছি।
যদি আবারো প্রশ্ন করো এটুকু দেখেই ভালোবাসি?তাহলে এই উত্তরগুলোও ভুল হবে।ওগুলো জাস্ট হালকা রিজন।তবে তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি তার পরিমাণ জানি না।আর জানতেও চাই না।তাই প্লিজ বারবার আমাকে একই প্রশ্নে ফেলো না।তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউরড!বারবার বাচ্চাসুলভ ব্যবহার করে যাচ্ছো।এসব মানায় না তোমাকে।তোমার এই বয়সের জ্ঞানের গভীরতা আমাকে এতদিনে ধাচ করে ফেলা উচিত ছিল।তা পারো নি।আর আবারো দুঃখিত,তোমাকে চড় মেরেছি।রাগ কন্ট্রোলে ছিল না।সরি।”
তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে।তার চড়ে আমার রাগ না।
রাগ হচ্ছে এখন আমার নিজের উপর।তার সাথে দেখা হবার পর থেকেই বার বার শুধু ওভার থিংকিং ই করে যাচ্ছি।এতটা ভেবেচিন্তে ক’জনকে জাস্টিফাই করা যায়?হৃদয় ছাড়া অন্য আরেকজন যে ভালো হবে বা আমাকে এরকম ভালোবাসে অথবা আমাকে সে মেনে নেবে তার গেরান্টি দিতে পারবো?পারবো না!কখনোই পারবো না।তাছাড়া ইদানীং এই ছেলেটার প্রতি আমারওতো কেমন যেন পরিবর্তন এসেছে।প্রতিরাতেই তো ছেলেটির কথা ভাবি।তার মেসেজ অপশনে যেয়ে ঘুরে আসি।অস্থিরতায়,উত্তেজনায় থেকেছি এই বিশটা দিন!এই দিনগুলোর কথাও কি ভুলে যাবো?এসব কি তার প্রতি আমার এক ভালোলাগা কাজ করা নয়?হ্যাঁ,এক অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা! এই ছেলেকে আমার এক অদ্ভুত রকমের ভালো লেগে গেছে।ভাবনার মাঝে,
“পারিসা?”
কাঁপা কাঁপা চোখে হৃদয়ের দিকে তাকালাম।বললো,
“আমি তোমাকে জোর করবো না।যদি আমাকে একসেপ্ট করার ইচ্ছে না থাকল অথবা থাকে তাহলে খালামণিকে জানিয়ে দিও।আমি তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো বিকেল পর্যন্ত।আসি।ভালো থেকো।”
বলে হৃদয় পেছন ঘুরলো।দুই কদম এগিয়ে দরজার দিকে যেতে,
“শুনুন? ”
হৃদয় আমার দিকে আবার পেছন ঘুরলো।বললাম,
“উত্তরের অপেক্ষায় আপনাকে থাকতে হবে না।আমি রাজি!”
হৃদয় যেন আমার কথা বুঝলো না।চোখ জোড়া বোঁজার মতন একটু নাড়িয়ে উঠলো।আমি দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে মুখে লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি টেনে উল্টোদিক ঘুরে দাঁড়িয়ে গেলাম।এবার হয়তো বুঝেছে সে,তার প্রস্তাবে রাজি হয়েছি।মানে তাকে আমিও ভালোবেসে ফেলেছি!”
৪১.
সন্ধের পর পর বাসায় মেহমানের হামাগুড়ি খায়।এদের মাঝে একজন হৃদয়ের মা,আরেকজন চাচী,আরেকজন চাচা,আরেকজন খালা,আরেকজন কাজিন, আরেকজন কাজী এবং আরেকজন হৃদয় নিজেই।এনগেজমেন্টের মোটামুটি সবকিছু নিয়ে হাজির হয়েছে।অবশ্যি শুনলাম আজই নাকি বিয়ে পড়িয়ে নিয়ে যেতো।কিন্তু হৃদয়ের বাবা তাদের গ্রামের বাড়িতে গেছে।গ্রামের বাড়ির জমিজমাতে কি নাকি সমস্যা হয়েছে সেগুলোর বন্দোবস্তো করতে এই দিন বিবেকের মতন লাগবে।তাই আজ বিয়ে পড়িয়ে রাখতে আপাতত।পরে উনি শহরে ফিরলে অনুষ্ঠান করা হবে।তাছাড়া হৃদয় আজ ই যে একরম কান্ড করে বসবে আমিতো জানতামই না।এবং খালামণিও না।খালামণি হতবুদ্ধিকর অবস্থায় পড়ে গেছেন।হুটহাট কি করবেন।না করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না!দৌড়ে আমার রুমে চলে আসেন।তাগাদা দিয়ে বলেন,
” তোর ফোন দিয়ে তোর খালুজানকে কল করে বল তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসতে।বাসায় মেহমান এসেছে।আর আমি তোর মা-বাবাকে কল করছি।”
বলে খালামণি আবার দ্রুতপায়ে বাইরে চলে যান।খালুজানকে কল করি।খালুজানের কল রাখার পর এই হৃদয়ের উপর এবার একটা চাপা রাগ ফুঁসে উঠে,
“কী দরকার ছিল,হুটহাট সবাইকে এরকম বিব্রতকর অবস্থা ফেলার?!পরে মজা বুঝাবো!আসুক!”
চলবে….