#কহিনুর,১২,১৩
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব: ১২
আলো ঝলমলে শীতের দুপুর। ধুসর রঙের অট্টালিকার ভেতরটা মোটেও ধুসর রঙের না সাদা রঙের। কেমন অদ্ভুত সব কিছু। ভেতরে দামিদামি আসবাবপত্রের ছড়াছড়ি। অধরার পাশে আয়াত চুপচাপ বসে আছে। ছেলেটা এদের অতিথি সেবায় মুগ্ধ, যেটা ওর চোখেমুখে প্রকাশ পাচ্ছে। জুবায়ের ওদেরকে বসিয়ে দিয়ে কোথায় একটা ঘাপটি মেরেছে। অধরা অনবরত ঢোক গিলছে। জুবায়েরের দাদুর দৃষ্টিটা কেমন কু-ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেমন জানি অদ্ভুত রকম। লোকটার চোখের পাপড়ি গুলো তুলনামূলক ভাবে বেশ বড় আর সাদা রঙের। সাদা পাঞ্জাবীর সঙ্গে লোকটা সাদা রঙের লুঙ্গি পরেছে। ভদ্রলোক যে বাঙালি সেটা উনার পোশাক দেখে বোঝা যাবে কথা বলার দরকার হবে না। অধরার ধ্যান ভাঙলো ভদ্রলোকের কথা শুনে। চমৎকার করে হেসে বলে উঠলেন,
> দাদুভাই কেমন আছো? আমার শরীর ঠিক ছিল না তাই বাংলাদেশ গিয়েছিলাম তাই তোমার সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ হয়নি। তবে কিন্তু তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে দাদুভাই। কাছ ছাড়া করছি না।
অধরা জোর করে ওষ্ঠে হাসি এনে বলল,
> আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি দাদুভাই। আপনার কথা আমি জানতাম না। জুবায়ের কখনও বলেননি আপনার কথা। আপনাকে আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছিল কেনো দাদুভাই?
ভদ্রলোক যেনো কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন এমন প্রশ্ন শুনে তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে কাকে একটা ডেকে ওদেরকে ফ্রেস হতে কক্ষে নিয়ে যেতে বললেন। জুবায়েরের একটা ফুপি আম্মা আছেন তার এক ছেলে দুই মেয়ে। সবাই এখানে থাকে। মেয়ে দুটো কথা বলতে পারে কি বুঝতে পারলো না। কারণ এখনো পযর্ন্ত ওদের কোনো কথা শোনা যায়নি। জুবায়ের যে মাঝেমাঝেই গায়েব হয়ে যেতো এটাই তাঁর রহস্য। এখানে এসে থাকতো। অধরা ভাবতো অফিসের কাজ বিজি আছেন। আয়াতকে ফুপির ছেলেটা এসে নিয়ে গেলো। অধরা সেদিকে তাঁকিয়ে একটু টেনশন করলো ছেলেটার আবার কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়। অধরা আসার সময় লুকিয়ে ফোন নিয়ে এসেছে যেটা জুবায়ের জানেনা। অধরা ফোনটা নিজের সঙ্গে সঙ্গে রাখবে। যখনই বিপদের ঈঙ্গিত পাবে পুলিশে ফোন করবে। তাছাড়া শাশুড়ির দেওয়া জিনিসপত্রগুলোকে সঙ্গে নিয়েছে। খালি হাতে যুদ্ধে নেমে হেরে যাওয়ার মানে হয়না। এবার যা করবে বুদ্ধি দিয়ে। অধরাকে ওর ফুপি শাশুড়ি রুমে নিয়ে গেলো। একটু পরে কাজের মেয়েটা লাগেজ দিয়ে গেলো। বেশ বড়সড় সাজানো গোছানো কক্ষ। দেয়ালে টাঙানো জুবায়েরের বড় একটা ফ্রেম বন্দি ছবি টাঙানো আছে। অধরা আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখলো। হঠাৎ জুবায়েরের কন্ঠ শুনে ও চমকে উঠে পেছনে তাকালো। জুবায়ের দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
> ম্যামের পদধুলিতে আমার কক্ষটা ধণ্য হলো। এবার বলুন কেমন লাগছে! পছন্দ হয়েছে?
অধরা মুখে হাত রেখে চিন্তিত হয়ে বলল,
> সব ঠিকঠাক, তবে একটাই সমস্যা সেটা হচ্ছে বেলকনি। এখানে কোনো বেলকনি নেই কেনো? মন খারাপ হলে আমি কোথায় গিয়ে কান্নাকাটি করবো? বাইরের দৃশ্য দেখবো কিভাবে? বেলকনির অবদান আমার জীবনে প্রচুর। এই বেলকনি ছিল বলেই না বর আর বরের গার্লফ্রেন্ড রোমান্টিক সিনটা দেখতে পেয়েছিলাম। এই জানতো জঘন্য খারাপ রুম আপনার।
অধরা হাতের টাওয়েল টা জুবায়েরের দিক ছুড়ে দিয়ে বসে পড়ে পড়লো। মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। জুবায়ের হতভম্ব হয়ে গেছে অধরার কথা শুনে। মান ইজ্জতের ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট থাকলো না। কোনরকম মাথা চুলকে বলল,
> সরি আসলে জুহি তখন জোর করছিলো। আমি না করতে পারিনি।
অধরা বিরক্ত হয়ে বলল,
> হয়েছে হয়েছে, সরি বলতে হবে না। জানি প্রেম ট্রেম করলে এসব হয়ে থাকে। আমিও করবো। ইউনিভার্সিটির একটা ছেলে আমাকে পছন্দ করতো। ছেলেটা এখনো সিঙ্গেল। ভাবছি ঝামেলা শেষ হলে ওর সঙ্গে প্রথমে প্রেম করে তারপর বিয়ে করবো। আমি বেশ ক্লান্ত আছি ঘুমাবো।
জুবায়েরের মেজাজ খারাপ হলো। ছেলেদের সঙ্গে কি মেয়েদের তুলনা চলে? জীবনে প্রথমবার ভুল করেছিল তাও আবার বউয়ের চোখের সামনে। জীবনদশাতে কতবার যে খোঁটা শুনতে হবে আল্লাহ্ ভালো জানে। যে যাইহোক যত ইচ্ছা বলুন সমস্যা নেই কিন্তু তাই বলে আরেক ছেলের সঙ্গে বিয়ে করবে আবার চুমুও খাবে এটা অতিরিক্ত। জুবায়ের একদম মানবে না। ও দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> যা খাওয়ার আমার সঙ্গে খেতে পারো বাইরের লোকদের দরকার কি। ছেলের নাম ঠিকানা দাও। আমি বের হবো। একদম খু*ন করে ফেলবো ।
অধরা বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে হামি ছেড়ে বলল,
> পুরাতন জিনিসের প্রতি আমার আবার আগ্রহ কম। এই জানতো আমি একটু ঘুমাবো। বহুকাজ আছে। বাইরে যাবেন বললেই তো হয়ে যাবে না। এই যে আপনি আর আপনার ভাই টুইন অথচ আপনার সঙ্গে উনার কতো পার্থক্য। উনি রাতে ঘুরাঘুরি করেন দিনে মাটির নিচে।উনার সমস্যাগুলো আপনার হলো না কেনো? দ্রুত খোঁজ নিন। বিষয়টা ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে দরকার হলে ডি এন এ টেস্ট করুন।
জুবায়ের মুখ ভার করলো অধরার কথা শুনে। ও যতই মেয়েটাকে অধিকার দেখিয়ে কথা বলছে মেয়েটা ওকে তত ইগনোর করছে। কাছাকাছি আসার কোনো সুযোগ নেই। মেয়েরা বুঝি এমনিই হয়। ভালোবাসলে মন দিয়ে বাসে আবার ঘৃণা করলে মনেপ্রাণ ভরে ঘৃণা করে। জুবায়ের দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। চুপচাপ ফ্রেস হয়ে টাওয়েল রেখে বলল,
> আমি যাচ্ছি কোনো দরকার হলে মারিয়াকে বলবে। নিজের বদ বুদ্ধি খরচ করে কিছু করতে যাবে না। তোমাকে নিয়ে আমার চিন্তার শেষ নেই।
অধরা উত্তর দিলো না। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। জুবায়ের হতাশ হলো। কম্বলটা ওর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসলো। এতদিন প্রশ্নটা যে ওর মনে আসেনি এমনটা না। কিন্তু কখনও জানার চেষ্টা করেনি। এবার করতে হবে।
☆☆☆☆
সন্ধ্যার আগ মূহুর্তে ঘুম ভাঙলো অধরার। দুবার কেউ ডেকেছিল কিন্তু এখন সেটা মনে পড়ছে না। অধরা দ্রুত ফ্রেস হয়ে ট্রি টেবিলে রাখা খাবারটা খেয়ে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। লম্বা বারান্দা দিয়ে হাটতে হাটতে সামনে গিয়ে বারান্দার শেষ প্রান্ত দেখতে পেলো। পশ্চিম দিকে জঙ্গলটা দৃশ্যমান। হঠাৎ সাদা পোশাকে একজন লোকটাকে ও জঙ্গলের ভেতরে ঢুকতে দেখলো। লোকটা চোরের মতো ডানে বামে তাকাচ্ছে। অধরার সন্দেহ হলো তাই ফট করে পেছনের দরজা দিয়ে নেমে আসলো আর লোকটার পিছু নিলো। চারদিকে যে সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষণের মধ্যে সূর্যমামা পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে এটা ওর খেয়াল হলো না। জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেলো। কিছুদূর এসে লোকটাকে আর পেলো না। দূরে একটা আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। গাছের ফোকর দিয়ে আলো এসে এখানে ওখানে অন্ধকার কেটে আলো তৈরী করছে। অধরার পা চলছে না। মাঝেমধ্যে হোচট খেলো তবুও হাটা থামলো না। আলোর কাছাকাছি আসতেই দেখলো লোকটা হামু হয়ে কিছু একটা খাচ্ছে। অধরা নিজেকে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে ফেলল। লোকটা পেছনে ঘুরে ছিল এবার সামনে ঘুরলো। অধরার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। এই লোকটাকে ও ওই বাড়িতে দেখেছিল। সে যাইহোক লোকটার মুখে আর সাদা পোশাকে র*ক্তের ছোপ ছোপ দাঁগ। সামনে কাচা মাংস আর হাড্ডি চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। অধরা দৃশ্যটা দেখে বমি করে ফেলল। কি জঘন্য লাগছে। শীতের মধ্যেও কুলকুল করে ঘামছে। হঠাৎ পেছন থেকে ঠান্ডা একটা হাত ওর কাঁধ স্পর্শ করলো। অধরা কেপে উঠে পেছনে তাঁকিয়ে হতভম্ব। জুবায়ের ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওর দৃষ্টিও সামনের লোকটার দিকে। হয়তো এরকম অবিশ্বাস্য দৃশ্য বিশ্বাস করতে পারছে না। অধরা কথা বলতে চাইলো কিন্তু তাঁর আগেই জুবায়ের ধুপ করে হাটু ভেঙে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারালো। অধরা বিপদ ভূলে গিয়ে জুবায়েরের পাশে গিয়ে বসে পড়লো। ফিসফিস করে বলল,
> এই যে শুনছেন? কি হলো আপনার? কথা বলুন। আরে ভয় পাচ্ছেন কেনো আমি আছি তো।
অধরা একদমে কথাগুলো বলে থামলো।জুবায়ের কথা বলতে পারলো না। অধরার কান্না পাচ্ছে। কি একটা বর জুটেছে কপালে। সারাক্ষণ খু*ন করবো এটা করবো ওটা করবো ডাইলগ মারে এখন কাজের বেলা ভীমড়ি খেয়ে বিপদ আরও বাড়িয়ে দিলো। মেজাজ খারাপ সঙ্গে টেনশন। কিভাবে একে বাড়িতে নিয়ে যাবে ভাবতেই বুক কাঁপছে। এদিকে আধার নেমে এসেছে। জুবায়েরের মাথা নিজের কোলে নিয়ে কেঁদে ফেলল ভয়ে। বিড়বিড় করলো বর না বর্বর। কোথায় বউকে সাহায্য করবে তানা নিজেই ভয়ে অজ্ঞান হয়েছে। আশেপাশের কোথাও পানি থাকলে ঝামেলা ছিল না। বেশ কিছুক্ষণ পর জুবায়েরের জ্ঞান ফিরলো। অধরা গাছের ফোকর দিয়ে সামনে তাঁকিয়ে দেখলো সেখানে থাকা লোকটা নেই। এমনকি সেখানে কোনো তাঁর চিহ্ন পযর্ন্ত নেই। জুবায়েরের মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসলো। মাথা ভার ভার লাগছে। অধরা ভ্রু কুচকে বলল,
> আপনি ঠিক আছেন?
জুবায়ের ঠোঁট উল্টে বলল,
> সরি আমি এরকম দৃশ্য কখনও দেখিনি । বাসা থেকে তোমার পিছু পিছু এসেছি। কতবার ডাকলাম তুমি শুনলে না। তারপর এখানে এসে দেখি এই দৃশ্য। আসলে হঠাৎ দেখেছি তো তাঁই সহ্য হয়নি। সারাদিন খালি পেটে।
জুবায়ের একদমে কথাগুলো বলে থামলো। অধরা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
> এবার থেকে চাপাবাজি কম করবেন। আমি আপনাকে হিরো ভাবতাম এখন দেখি আপনি জিরো। হিরো না হয়ে ভিলেন হতেন তাঁতেও আমি গর্ববোধ করতাম। বাড়িতে চলুন আর একটু হলে লোকটাকে হাতেনাতে ধরতে পারতাম। পরেরবার যদি দেখিনা আমার পিছু নিয়ে ঝামেলা করেছেন তো খু*ন করে ফেলবো। হাঁটতে পারবেন নাকি কোলে নিতে হবে।
জুবায়েরের মুখটা দেখার মতো হলো। কিভাবে কি হয়েছিল কিছুই বুঝতে পারেনি। জীবনে যা কিছু লজ্জাজনক প্রথমবার ঘটছে সবটা বউয়ের সামনে ঘটতে হচ্ছে। আফসোসের শেষ নেই।এমন বেদনা ভরা জীবন নিয়ে সামনে এগোতে হবে কি দুঃখ! জুবায়েরের ধ্যান ভাঙলো অধরার কথা শুনে,
> আসুন কোলে নিচ্ছি। মাটিতে আর কতক্ষণ লুটিয়ে পড়ে থাকবেন?
জুবায়ের দ্রুত উঠে অধরাকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির পথে হাটা ধরলো। অধরা হতভম্ব হয়ে জুবায়েরের কাজকর্ম দেখছে। ভ্রু কুচকে বলল,
> হঠাৎ জ্ঞান হারালেন কেনো বলুন তো? ভয়ে নাকি কোনো রহস্য আছে?
> কিসের রহস্য? কোনো রহস্য নেই। শরীর খারাপ নিয়ে বর তোমাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে কোথায় একটু আদর করবে, রোমান্টিক কথাবার্তা বলবে তানা জেরা করছো মেয়ে? আমি সত্যি বলছি জানিনা তখন কি হলো। চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসলো। তোমার কথা মতো হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আগামীকাল রিপোর্ট আসবে। তাছাড়া একটা ঝামেলা হয়েছে তোমাকে বলার সুযোগ পাইনি। আমার উপরে আবারও আক্রমণ করা হয়েছিল। গাড়ি চাপা দেওয়ার চেষ্টা। তেমন কিছু হয়নি। পায়ে আর হাতে লেগেছে। হাসপাতালে দুঘন্টা অচেতন ছিলাম।
জুবায়েরের কথা শুনে অধরা উতলা হয়ে উঠলো। জোর করে কোল থেকে নামতে চাইলো কিন্তু জুবায়ের নামালো না। অধরা বিরক্ত হয়ে বলল,
> বাচ্চাদের মতো বুদ্ধি নিয়ে আপনি গোয়েন্দা হবেন? বলেছিলাম নিজের খেয়াল রাখবেন কিন্তু না সব উল্টে দিয়েছেন। আগামীকাল থেকে কাছে সব সময় ক্যামেরা রাখবেন। আমি আপনার পোশাকে ক্যামেরা লুকিয়ে দিবো। আর আশেপাশে গার্ড রাখবেন। আপনি তো আমার কথায় শুনছেন না।
> বুঝতে পারিনি হঠাৎ এরকম ঝামেলা হবে। যাইহোক আগামীকাল থেকে সর্তক থাকবো। শুনো রাতে স্টোর রুম চেক করতে হবে। শরীর খারাপ বা ভয় পেলে কিন্তু সব খতম।
> জানিনা আপনাদের স্টোর রুমে আবার কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। নামিয়ে দিন আমি হাঁটতে পারবো। আপনার শরীর খারাপ। সুস্থ হয়ে উঠুন তারপর না হয় আপনার কোলে চড়েই বিশ্ব ভ্রমণে বের হবো। এখন নামবো।
জুবায়ের ওকে নামালো না। পেছনের দরজা দিয়ে কক্ষে ফিরে একে বিছানায় রেখে নিজেও বসে পড়লো। আঘাত পাওয়া জায়গা থেকে র*ক্ত বের হচ্ছে। অধরা সেটা পরিস্কার করে ওষুধ লাগিয়ে দিলো। টেনশন হচ্ছে সামনে কি অপেক্ষা করছে কে জানে।
(চলবে )
#কহিনুর
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৩
সময় চলে যায় কিন্তু হৃদয়ে আঘাতের চিহ্ন গুলো রয়ে যায়। কখনও তা ভোলা যায় না। কথায় বলে বাক্য দ্বারা মানুষকে জান্ত দাফন করা যায় কথাটা একদম সত্য। জুবায়েরের ক্ষত জায়গাই ওষুধ লাগাতে গিয়ে ওর পূর্বের করা ব্যবহারগুলো বারবার মনে পড়েছে অধরার। লোকটা কারণ অকারণে ওকে আঘাত করেছে। চোখের পানি ঝরিয়েছে। ক্ষমা মহৎ গুণ তবুও হৃদয় কথা শুনছে না। অধরার এখন কাঁদতে মন চাইছে। পরিস্থিতি কখন কিভাবে বদলে গেলো বুঝতে পারেনি। জুবায়েরকে ও ক্ষমা করুক বা না করুক লোকটাকে রক্ষা করা ওর কর্তব্য। যেকোন সময় ওর জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। কিভাবে ওকে সেভ করা যায় মাথায় আসছে না। বাবা হয়ে নিজের সন্তানের ক্ষতি করতে লোকটার বিবেকে বাঁধছে না। কথাগুলো আনমনে ভেবে চলেছে অধরা। জুবায়েরের যন্ত্রণায় চোখ বন্ধ করে আছে। ওষুধ লাগানো শেষে অধরা জুবায়েরের পাশে বসতে বসতে বলল,
> জ্বর আসতে পারে ওষুধ খাওয়া জরুরী। স্টোর রুমে আজ না গেলে হয়না? আপনার শরীরের যে অবস্থা কিছুক্ষণ পরে বিছানা নিবেন।
জুবায়ের অধরার মুখের সামনে আসা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলল,
> আমি ঠিক আছি চিন্তা করো না। এইটুকুতে আমার কিছু হবে না। স্টোর রুমের চাবি চুরি করেছি বিষয়টা ধরা পড়ার আগে চেক করে নিতে হবে। আগামীকাল থেকে তুমি দাদুর আশেপাশে ঘুরবে। ভাব জমানোর চেষ্টা করবে।
> আমিও ভেবেছিলাম। তবে লোকটা খুব চতুর সহজে কিছু বলবে বলে মনে হয়না।
> আরে বলবে বলবে,পেটে মাল পানি পড়লে সব বলবে।তুমি এতো ভেবো নাতো। না বললে এমন জিনিস খাওয়াবো না হজম হয়ে যাওয়া বহুকাল আগের খাদ্য পযর্ন্ত বেরিয়ে আসবে।
অধরা ভ্রু কুচকে ফেলল জুবায়েরের কথা শুনে। কথাবার্তার কি হাল। ওকে অপমান করে সেদিন দু’টাকার মেয়ে বলেছিল অথচ নিজের কথাবার্তা একদম জাত মাতালদের মতো। অধরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> মুরব্বি মানুষের সঙ্গে একদম আজেবাজে কিছু করার চেষ্টাও করবেন না। বেয়ার টেয়ারে কাজ নেই। বন্ধুত্ব করবো। আপনার মাথায় সত্যিই কিছু নেই।
জুবায়ের নিভে যাওয়া মন নিয়ে বলল,
> আমার ধৈর্য্য কম। হুটহাট কাজকর্ম করে অভ্যাস। তাছাড়া আমি কিন্তু ভালো বুদ্ধি দিয়েছি। বন্ধুত্ব করে সময় কষ্ট করা হবে। তারচেয়ে এক প্যাক সুন্দর মতো পেটে চালান করিয়ে দিবো তখন দেখবে গড়গড় করে সব বেরিয়ে আসছে। শুনো আমি তোমার বয়সে অনেক বড় বুদ্ধিও বেশি আমার উপরে কথা বলবে না।
অধরা চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলো। দিনদিন লোকটার বুদ্ধি কমছে নাকি প্রথম থেকেই একরকম কে জানে। আগে ভাবতো জুবায়ের লোকটা খুব বুদ্ধিমান আর গম্ভীর টাইপের কিন্তু না এতো পুরোপুরি তার ছেড়া। অধরা কিছু বলতে চাইলো কিন্তু হলো না তাঁর আগেই আয়াত ভেতরে প্রবেশ করলো। ছেলেটা চোখেমুখে লজ্জা। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছে হয়তো। অধরা বিছানা থেকে নেমে গিয়ে ওকে বসতে দিয়ে বলল,
> ভাই তোর কোনো অসুবিধা হচ্ছে? সরি ভাই আমি ক্লান্ত ছিলাম তোর খোঁজ নিতে পারিনি। খুব সরি রে।
আয়াত লাজুক হাসলো। ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলল,
> না না আপু আমি ঠিক আছি। তোমার শশুর বাড়ির লোকজনগুলো সত্যিই চমৎকার। আমি তো সেদিন না জেনেই আজেবাজে কথা বলেছিলাম। জুবায়ের ভাইয়ার কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। রাগের মাথায় সেদিন অনেক খারাপ আচরণ করেছি। আমি সত্যি লজ্জিত।
জুবায়ের বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
> কিছু মনে করিনি এটা স্বাভাবিক ছিল।
কয়েকটা কথা বলে আয়াত বিদায় নিলো। জুবায়ের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেলো। অধরা ওর পাশে বসে আছে। মনের মধ্যে হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। জুবায়েরের উপরে পরপর দুবার হামলা হয়েছে। কতদিন এভাবে বাঁচতে পারবে? একটা সাধারণ ডাইরি করা উচিত ছিল। অধরা দ্রুত উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। ঘরে বসে থেকে কাজ নেই। কিচেনে নিশ্চয়ই রান্না চলছে। অধরা সিদ্ধান্ত নিলো এবার থেকে রান্নাঘর কব্জা করতে হবে। রান্নাঘরে ঢুকতে পারলে বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা বলার সুযোগ পাবে। কিছু না কিছু তো তখন জানতে পারবে। তাছাড়া আরও একটা ঝামেলা আছে। জুবায়েরকে এই বাড়ির কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না। ওকে অধরা নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে।না পারলে বাইরে থেকে অর্ডার করবে। জুবায়েরের আচরণ পরিবর্তন হওয়ার পিছনে খাবারের ভেতরে ওষুধ মেশানো থাকতে পারে। শুধু সন্দেহর বসে কিছু করা উচিত না তবুও অধরা ফেলে দিতে পারছে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও ডাইনিং রুমে এসে থামলো। রান্নাঘরে ফুপি শাশুড়ি কাজের মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে রান্না করছে। অধরাকে দেখে মারিয়া এগিয়ে আসলো। ওর সঙ্গে আছে জুবায়েরের ফুপি লতিফা ফারুকীর মেয়েটা। অধরা মেয়েটার নাম জানেনা। মারিয়া ওকে ইশারা করে বসতে বললো। অধরা ওষ্ঠে হাসি নিয়ে বলল,
> আসলে মারিয়া তোমার ভাইয়ার একটূ জ্বর এসেছে। আমার হাতে তৈরী সুপ খেতে চেয়ছে। আমি ওর জন্য সুপ তৈরী করতে এসেছি। তুমি বসো আমি পরে আসছি।
অধরা মোটামুটি মিথ্যে বলে দিয়ে কেটে পড়লো। ডাইনিং রুমের শব্দ কিচেন পযর্ন্ত অনায়াসে যায়। অধরাকে দেখে লতিফা ফারুকী ব্যস্ত হলেন। দুঃখজনক বিষয় উনিও কথা বলতে পারেন না। অধরা উনার আকার ইঙ্গিত দেখেই বুঝে গেলো এই বাড়ির মেয়েরা সব বোবা কিন্তু ছেলেরা সবাই কথা বলতে জানে। কি অদ্ভুত মেয়েদের কথা বলার শক্তি নেই কিন্তু কেনো? শাশুড়ি মায়েরা পরের বাড়ির মেয়ে বলে তাঁরা বলতে পারে। অভিশাপ টা হচ্ছে সুলতান পরিবারের উপরে। যেটা কাটাতে এরা কহিনুরের গল্প ফেদেছে। কিন্তু জুবায়েরেকে মারার পিছনে কি থাকতে পারে? মাথা কাজ করছে না। প্রশ্নের পর প্রশ্ন এসে ভর করছে মাথায়। অধরা কোনরকম নিজেকে স্বাভাবিক করে মলিন হাসলো। হাসিটা বড্ড বেশি দরকার। সহজে ভড়কে গেলে বিপদ ঝপাং করে ঘাড় মটকে ধরবে। স্বাভাবিক থেকে কাজ করতে হবে। অধরা কাজের মেয়েটার সামনে বলল,
> ফুপিকে বলে দিবেন আমি জুবায়েরের জন্য রান্না করতে চাই। ওর জ্বর এসেছে।
মেয়েটা লতিফাকে বুঝিয়ে দিলো। ভদ্রমহিলা বিনিময়ে হাসলো। দরকারী জিনিসপত্র সব ওর সামনে এগিয়ে দিলো। অধরা সময় নষ্ট করলো না। দ্রুত রান্না বসিয়ে দিলো। কাজের মেয়েটা ওকে সাহায্য করছে। অধরা বারবার ফুপিকে দেখছে। ভদ্রমহিলা এক ভাবে ওকে দেখছে কেমন অস্বস্তিকর বিষয়। ওকে এভাবে দেখার কি হলো বুঝতে পারছে না। অধরা দ্রুত চিকেন সুপ করে নিয়ে চলে আসলো। দাদু কোথায় আছে দেখার জন্য আশেপাশের তাকালো, ভদ্রলোক কোথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে কে জানে। অধরা রুমে আসতেই জুবায়ের চোখ খুলে তাঁকালো। ওর হাতে খাবার দেখে ভ্রু কুচকে ফেলল। অধরা সেসব পাত্তা দিলো না। একেবারে জুবায়েরের সামনে গিয়ে বসে পড়লো। জুবায়ের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল,
> তুমি কেনো খাবার আনতে গেলে! আমি যেতাম, তাছাড়া এটা তুমি কি এনেছো? এতবড় হাতির মতো যুবকের জন্য এইটুকু সুপ?এতো পেটের কোনে পড়ে থাকবে।
অধরা বিরক্ত হলো। যথেষ্ট পরিমাণ খাবার এনেছে তবুও পেটুক লোকটা আরও খাওয়ার বায়না করছে। অধরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> ঢং করবেন না চুপচাপ খাবেন। আজ থেকে আমি যা খেতে দিবো তাই খাবেন। অন্য কারো হাতে খাওয়া চলবে না। দ্রুত শেষ করুণ। ওষুধ খেতে হবে। শরীর ঠিকঠাক না হলে স্টোর রুমে আবারও জ্ঞান হারাবেন তখন ঝামেলা।
জুবায়ের মিনমিন করে বলল,
> নিজের হাতেই খেতে হবে নাকি?
> তো আপনাকে হাত ধার দিবে কে? নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে না করলে লোক রাখুন। জুবায়ের ফারুকী আপনাদের বাড়ির মেয়েরা বোবা বিষয়টা কেমন রহস্যজনক না? কারণ জানতে পারলেই রহস্যের অর্ধেক বুঝে যাবো।
জুবায়ের খেতে খেতে বলল,
> বংশগতির ধারা বলতে পারো। আমাদের বংশের মেয়রা কথা বলতে পারেনা। তাপপর আরও একটা বিষয় তুমি জানো না। লতিফা ফুপির জামাইটা কিন্তু স্বাভাবিক না। বছরে একবার এখানে আসেন সাতদিন থাকেন তারপর কোথায় যে গায়েব হয়ে যায় জানিনা। বাড়ির কেউ কিন্তু এটা নিয়ে চিন্তিত না। ভদ্রলোকের চেহারার কোনো পরিবর্তন নেই। ছোট থেকেই যেমন দেখি বড় হয়েও তেমনি।
> কথা বলেছেন উনার সঙ্গে? নাম কি উনার? বাসা কোথায়?
> এক সঙ্গে এতো প্রশ্ন? আঙ্কেল বেশ গম্ভীর টাইপের, কথাবার্তা বিশেষ হয়নি টুকটাক আলাপ হয়েছে। উনার নাম সুলাইমান হক। দেখবে কয়েকদিনের মধ্যে আসবে। উনার আসার সময় হয়ে গেছে। ভদ্রলোকের বাসা কোথায় জানিনা। কেউ বলেনি আর আমারও আগ্রহ নেই।
> আপনাদের বাড়ির সবাই একটু এলিয়েন টাইপের। বাবা কেনো যে এই ঘরে আমার বিয়ে দিলেন এখন আফসোস করতে হচ্ছে। না পেলাম ভালো বর না পলাম ভালো ঘর। আমি পরের বার এমন ভূল করবো না বুঝলেন? দেখেশুনে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করবো।
অধরার কথা শুনে জুবায়েরের রাগ হলো। হাতের চামুচটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বাটিতে চুমুক দিয়ে সুপের বাটি খালি করে বলল,
> ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসো। বিয়ে বিয়ে করো কেনো? একবারে সখ মিটেনি? যেটুকু খায়েশ আছে আমি পুরণ করে দিবো ইনশাআল্লাহ। দ্রুত চলো।
জুবায়ের তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে পড়লো। ঘরে বেশ সময় পার করে ফেলেছে। বাইরে এতক্ষণে খাওয়া দাও শেষ করে যে যার রুমে নয়তো পার্টির উদ্দেশে বেরিয়ে গেছে। সুযোগ বারবার আসবে না। জুবায়ের অধরার হাতে ধরে কক্ষ ত্যাগ করলো। স্টোর রুমটা বাড়ির গোপনীয় জায়গাই। অধরা জুবায়েরের পেছনে পেছনে হাটছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িটা কেমন ভুতুড়ে হয়ে উঠেছে। স্টোর রুম সিঁড়ি রুমের নিচে অবস্থিত। হঠাৎ করে কেউ বুঝতে পারবে না সিঁড়ির নিচে কোনো রুম আছে। বাইরে থেকে দেখে চেনা বা বোঝা বেশ কঠিন। জবাব ওকে নিয়ে দেয়ালে থাকা সামান্য ছিদ্রে চাবি লাগিয়ে দরজা খুঁলে ফেলল। রঙ দিয়ে সব এক রকম করে রাখা হয়েছে। অধরা অবাক নয়নে জুবায়েরের পেছনে পেছনে ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। বিশালাকার রুমটা বিভিন্ন পুরাতন আসবাবপত্র দিয়ে বোঝাই করা। ধুলাবালি পূর্ণ আলমারির ভেতরে কিছু কাগজপত্র পেলো। ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। জুবায়ের সেসব চেক করছে। অধরা সামনে এগিয়ে গিয়ে হালকা চিৎকার করে উঠলো। জুবায়ের দ্রুত এসে ওর মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,
> আরে চিৎকার করছো কেনো?
অধরা উত্তর দিলো না। আঙ্গুল উচু করে সামনে ইশারা করলো। জুবায়ের সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে ঝটিকা খেলো। সামনে একটা মাথার খু*লি পড়ে আছে। খুঁ*লিটা একদম টাটকা। ফোঁটা ফোঁটা র*ক্ত লেগে আছে তাঁতে। অধরা ধরা গলাই বলল,
> এরকম একটা দৃশ্য মায়ের রুমে দেখেছিলাম। জুবায়ের খোঁজ নিন নিকটবর্তী কেউ মা*রা গেছে কিনা। চলুন খু*লিটা উঠিয়ে নিয়ে যায়। ডিএনএ টেস্ট করলে খু*লির মালিককে সন্ধান পাওয়া যাবে।
> একদম না। এটা কি কাজে ব্যবহিত হয়েছে না জেনে ঘরে নিলে যদি উল্টোপাল্টা কিছু হয়? কাজটা ঠিক হবে না। একটা ছবি তুলে নিয়ে যেতে পারি।
অধরা কাঁপছে। এই বাড়িতে যা হচ্ছে সেম ওই বাড়িতেও হয়েছিল। হঠাৎ একটা ছায়া আলমারির পেছনে সরতে দেখে অধরা জুবায়েরের হাতটা ধরে ফেলল। বলল,
> আজ চলুন পরে আবার আসবো। আমাদের কেউ ফলো করছে।
জুবায়ের ছায়াটা দেখেছে। ওরা আর সময় নষ্ট করলো না। দ্রুত বেরিয়ে আসলো। রহস্য জানা তো গেলোই না উল্টোপাল্টা দৃশ্য দেখে হয়রানি।
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
জুবায়ের হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট। আসার সময় যতটা আগ্রহ নিয়ে এসেছিল যাওয়ার সময় ততটাই কষ্ট যন্ত্রণা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। কঠিন এক সত্যি ওর সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে। হাউমাউ করে কান্না করতে মন চাইছে কিন্তু ইচ্ছা করলেই তো আর হয়না। এমন কেনো হলো কার জন্য হলো কিছুই মাথায় আসছে না। এতদিনের বিশ্বাস ভরসা ভালোবাসা সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো চোখের নিমিষে। ওর চোখদু’টো জ্বলে উঠলো। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলো। বাড়িতে পৌছাতে মিনিট দশেক টাইম লাগলো। অধরা বিছানায় হেলান দিয়ে তখন বই পড়ছিল। জুবায়ের হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। অধরা দরজা বন্ধের শব্দ শুনে চমকে উঠলো। ছেলেটার চোখে আগুন। কিছু বুঝে উঠার আগেই ও অধরার গলা চেপে ধরে বলল,
> সব আগে জানতে তাইনা? আমাকে কষ্ট দিতে তোমার মজা লাগে? আমি ম*রে গেলে শান্তি তো? তবে আমি ম*রেই যায়।
অধরা জোরকরে নিজের ছাড়িয়ে নিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,
> আজেবাজে বকছেন কেনো? কি হয়েছে না বলে গলা টিপে দিলেন। ম*রে আপনি না আমি যেতাম।
জুবায়ের থম মেরে বসে থেকে হুট করে অধরাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে দিয়ে বলল,
> তুমি জানতে বলো আরমান ফারুকী আমার কেউ হয়না? ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার ডিএনএ মিলেনি কেন?
অধরা জুবায়েরের পিটে হাত রেখে ওকে সামনে টেনে নিয়ে বিস্মিত হলো। ছেলেটার চোখ লাল হয়ে উঠেছে। ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। বোকার মতো বলল,
> উনি তোমার বাবা না?
(চলবে )
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।