প্রেমরোগ-৩,০৪,০৫

0
788

#প্রেমরোগ-৩,০৪,০৫
#তাসনিম_তামান্না
০৩

সময়টা দুপুর মেঘলা আকাশ শীতল হওয়া বইছে। মেঘের আড়ালে ক্ষনে ক্ষনে সূর্য উঁকি মারছে। তুষার কুয়াশাকে সেন্টারের বাইরে পুল সাইডে আনলো। এদিকটা ফাঁকা সকলে খাবারের, বর-কণের দিকে। তুষার পুলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসলো। কুয়াশা তখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। তুষারের মতিগতি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ও। কুয়াশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তুষার বলল
” কি হলো দাড়িয়ে আছো কেনো? ”
কুয়াশা বুঝতে না পেরে বলল
” তো কি করবো? ”
তুষার অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলল
” আমার মতো করে বসো ”
কুয়াশা বিনাবাক্যব্যয়ে জুতা খুলে প্যান্ট পাজামা উঁচু করে নিলো যাতে ভিজে না যায়। তুষারের থেকে বেশ দূরত্ব নিয়ে বসলো। তুষার সেটা আড়চোখে দেখেল কিছু বলল না।
চুপচাপ নিরবতা নিয়ে বসে আছে দুজন কুয়াশা আজ তুষারের সাথে গল্প করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু কিছু বলবে বলবে করেও বলতে পারছে না। কোনো এক অজানা অদৃশ্য হাত এসে গলা চেপে ধরেছে যেকোনো কথায় মুখ দিয়ে বের হতে চাইছে না। তুষার ফোনে কি জানি করছে আর কুয়াশা চুপচাপ বসে পা দিয়ে পানি নাড়াচাড়া করছে। কুয়াশা দম দিনে হুট করে প্রশ্ন করলো
” আপনি কবে চলে যাবেন? ”
তুষার ফোনে চোখ রেখে ভ্রু কুঁচকে বলল
” কেনো আমি চলে গেলেই বেঁচে যাবে আমার দৃষ্টির সীমানার বাইরে। সেটা তোমার সম্পূর্ন ভুল ধারণা ”
তুষারের কথায় কুয়াশা টাস্কি খেলো যেনো। সে একটা সাধারণ কথা জিজ্ঞেসা করলো। তার কথায় তাকে পেচিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলল। কুয়াশার প্রচন্ড রাগ লাগল। রাগ নিয়ে ঝাঁজ মেশানো গলায় বলল
” আপনি আমার কথার উলটো পালটা মিনিং বের করছেন কেনো? আমি তো জাস্ট সাধারণ একটা কথা জিজ্ঞাসা করলাম আর আপনি… ”
তুষার ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো বলল
” ভুল তো কিছু বলেছি বলে আমার মনে হয় না। আমি না থাকলে তোমার পাখা গজায় আজকাল আমার সামনেই আবার তোমার পাখা গজাচ্ছে ”
কুয়াশা তুষারের খোঁচা মারা কথায় মেজাজ গরম হতে লাগলো। কথায় কথা বাড়বে কুয়াশা উল্টো পাল্টা কিছু বললে তুষার নিশ্চয়ই ছেড়ে দিবে না উল্টো থা’প্প’ড় বসিয়ে দিবে। কুয়াশা শান্ত কন্ঠে বলল
” আপনার কি আমাকে কিছু বলার আছে? না থাকলে আমি যাচ্ছি। এখানে বসে মেজাজ গরম করার কোনো মানে দেখছি না ”
” বাবাহ। তোমার আবার মেজাজ ও আছে না-কি? ”
কুয়াশার রাগে কান্না পেলো উঠে যেতে নিলে তুষার কুয়াশার হাত ধরে আটকে দিলো। কুয়াশা তুষারের দিকে না তাকিয়ে-ই বলল
” ছাড়ুন আমার হাত ব্যথা পাচ্ছি ”
” ভালো ”
” আমাকে কষ্ট দিয়ে আপনি শান্তি পান ”
” তুমি নিজের কষ্ট নিজেই ডেকে আনো এতে আমার কোনো হাত নেই ”
কুয়াশা শক্ত চোখে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল
” কাল রাতে আপনি আমার রুমে এসেছিলেন তাই না? ”
তুষার হাসলো কুয়াশা সেই হাসির দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না চোখ সরিয়ে নিলো। হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পারলো না। হাতে খামছি দিলো, চিমটি দিলো তবুও তুষার ছাড়লো না হাতে দাগ হয়ে গেলো। শক্ত কন্ঠে বলল
” জঘন্য নিকৃষ্ট মানুষ হয়ে যাচ্ছেন আপনি। বিদেশে গিয়ে মেয়েদের সম্মান করতে ভুলে গেছেন? ছিঃ আপনার প্রতি আমার… ”
তুষার শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল
” কথাটা শেষ কর ”
কুয়াশা দমে না গিয়ে বলল
” আপনার প্রতি আমার ঘৃণ্য আসছে ”
তুষার কুয়াশার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল
” আর চোখের সামনে থেকে যা ”
তুষারের তুইতোকারিতে কুয়াশার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো। ওখানে আর না দাঁড়িয়ে দৌড়ে চলে আসলো। পুরো অনুষ্ঠান কুয়াশা আর তুষারের ধরে কাছেও যায় নি। অবশ্য দু’জনের চোক্ষাচোক্ষি হয়েছে বেশ কয়েকবার।
তুতুলে বিদায়ের সময় এই প্রথম কুয়াশা তুষারের চোখে পানি দেখেছে। নিজেরও কষ্ট হচ্ছিল তুতুল তুষারের কান্না দেখে। তাকেও তো এভাবে পরিবারের সকলকে ছেড়ে যেতে হবে তখন কি সে এভাবে এতো ভালোবাসা মানুষ গুলোকে ছেড়ে থাকতে পারবে? বিদায়ের পর সকল নিয়ম-কানুন এর পর সব কাজিন আর মেঘের ফেন্ডরা মিলে মেঘের বাসর রাতের দরজা ধরলো টাকা বা দিলে মেঘকে ডুকতে দেবে না মানে দেবেই না। মেঘা লজ্জায় লাল নীল হয়ে কোনো কথায় বলতে পারছে না কুয়াশা এটাতে বেশ মজা নিচ্ছে। অবশেষে টাকা দিয়ে রুমে ডুকে দরাম করে দরজস লাগিয়ে দিলো। মেঘের ফেন্ডরা বলল
” শা’লা এতো তারাহুরোর কি আছে? এখনো অনেক সময় আছে ”
মেঘের দেওয়া টাকা নিয়ে সকলে গোল হয়ে বসে বলল
” এই টাকা নিয়ে কি করা যায়? ”
” আজ রাতে সাদে পার্টি ”
রিদ বলল
” উহুম এমনিতেই সকলের ওপর ধকল গিয়েছে রেস্ট নেওয়ার সময় পাই নি কেউ রাত জাগা ঠিক হবে না ”
” তাহলে কি করবি? ”
রিদ ভেবে বলল
” কাল যেহেতু সকলে এখানে আছিস কাল সকলে মিলে বাইরে খেতে গেলাম। মেঘ, তুতুল কেউ সাথে নিলাম আর তুষার কেউ সাথে নিলাম কি বলিস তোরা ”
কুয়াশা দূর্বল কন্ঠে বলল
” ঠিক বলেছেন ভাইয়া আজ প্রচুর টায়ার্ড লাগছে। যা কারার কাল করা হোক ”
সকলে সহমত পোষণ করলো। সিদ্ধান্ত হলো পৌশু যেহেতু বৌভাত তাই কাল সকলে মিলে বাইরে খেতে গেলো আর টাকা যা কম পড়বে রিদ দিবে।
টায়ার্ড হয়ে রুমে আসলো কুয়াশা আর মেঘা আজ একসাথে ঘুমাবে। মেঘা মুখ ফুলিয়ে আছে তার রুম ছেড়ে আসছে ইচ্ছেই করছিল না কিন্তু কালকের তুলনায় আজ আত্নীয় স্বজন বেশি হওয়ায় রুম ছাড়তেই হলো। কুয়াশা মেঘার কষ্টে কষ্টিত না হয়ে তাতে ঘি ডেলে বলল
” আহারে কষ্ট হচ্ছে না-কি মেঘুবেবি ”
” এই একদম আমার সাথে কথা বলবি না ”
” বললাম না হুহ্ তোর সাথে না কথা বললেও আমার দিন যাবে ”
” হুহ্ ঢং ”
” হ্যাঁ জানি তুই ঢংগি তাই ঘুমা জ্বালাস না খুব টায়ার্ড ”
মেঘাও আর কথা বা বাড়িয়ে শুয়ে পড়লো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#প্রেমরোগ-৪+৫
#তাসনিম_তামান্না

সকাল ঘুম ভাঙলো দেরিতে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে সাড়ে আটটা বেজে গেলো কুয়াশা নিচে আসার সময় মেঘাকে জাগিয়ে দিয়ে আসছে। বয়স্করা নতুন বউ মাঝখানে বসিয়ে গল্প করছে। কুয়াশার এই ব্যপারটা খুব বিরক্ত হলো। কই নতুন বউ এতো ধকলের পর রেস্ট নিবে তা না। কিন্তু এদেরকে কিছু বলতে গেলে উলটো কুয়াশাকে বিয়াদপ উপাধি দিয়ে দিবে। রান্নাঘরে কেয়া আর মুন্নি ছাড়া কেউ নেই দেখেই বোঝা যাচ্ছে এতো জনের সকালের রান্না ফুল দমে তারা করছে। এখানে এতো লোক বসে গল্প না করে তো কাজে হেল্প করে দিতে পারে কিন্তু তাদের সে বিবেক আছে নাকি। পাখি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে কাটাকুটির কাজ করছে। দুপুর আর রাতেরটা অবশ্য বাবুর্চি দিয়ে করিয়ে নিবে। কুয়াশা রান্নাঘরে গিয়ে বলল
” সকালের রান্নাটাও বাবুর্চি দিয়ে করিয়ে নিলে আর এতো কষ্ট করতে হতো না তোমাদের ”
পাখি বলল
” হ্যাঁ বলেছিল অবশ্য কিন্তু তারা সকালে আসতে পারবে না বলে দিয়েছে ”
” ওহ। আচ্ছা মাম্মা এখানে নতুন বউকে মাঝখানে বসিয়ে তাকে অস্বস্তিতে না ফেললে কি হতো না মামনি তুমি ও কিছু বলছ না ”
মুন্নি কাজের ফাঁকে বলল
” কি বলবো? ”
” কি বলবে মানে দেখছ না ভাবির চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। সকালে কিছু খেতে দিয়েছিলে? ”
” চা আর বিস্কুট খেয়েছে ”
” তাতে কি পেট ভরে না-কি ”
কেয়া মেয়ের ওপর বিরক্ত হয়ে বলল
” কাজের মধ্যে বা হাত ঢোকাস না যা তো তুতুলকে ওপরে নিয়ে যা ওর একটু রেস্টের দরকার ”
কেয়ার কথাটা জোরে-ই বলল যাতে ড্রাইয়ংরুমে বসে থাকা মানুষ গুলোর কানে যায়। কুয়াশাও মায়ের কান্ডে হেসে ফেললো। মুন্নি বলল
” আরেকটা নবাবজাদি কই? ”
” আসছে ”
” তুই তুতুল কে নিয়ে ওপরে যা আর মেঘা কে এসে ওদের খাবার ওপরে নিয়ে যেতে বল তোরা ওপরে বসে খা তাতে তুতুলটাও একটু ভালো করে খেতে পারবে ”
” আচ্ছা মামনি ”
কুয়াশা তুতুল কে নিয়ে ওপরে চলে গেলো। কালকের প্লান অনুযায়ী সকলে সকালে খেয়ে কেয়া মুন্নি থেকে পারমিশন নিয়ে দুপুরের দিকে বেরিয়ে পড়লো। কেয়া মুন্নি অবশ্য তুতুলকে যেতে দিতে চাই নি কিন্তু ছোটদের জোড়া-জাড়ি রাজি হতেই হলো। এতে যে আত্মীয় স্বজনরা ভালো চোখে দেখে নি সেটা তাদের এক এক জনের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
তুষার বাসা থেকে রেডি হয়ে বের হওয়ার সময় তিশাকে বলল
” আম্মু আমি বের হচ্ছি দুপুরে বাইরে খেয়ে নিবো ও বাড়ি থেকে ওরাও আসছে ”
তিশা ভাইয়ের বউদের সাথে কথা বলছিলো। উঠে তুষারকে সাইডে এনে বলল
” শোন কাল কিন্তু আমি কুয়াশার চোখে পানি দেখেছি। আর এটাও জানি তার কারণ টা তুই। আমি চাই না বাচ্চা মেয়েটা কষ্ট পাক এমনিতেই তুই ওকে কম জ্বালাস নি ”
তুষার ভ্রু যুগল কুচকে বলল ” তোমাকে এসব কে বলেছে আম্মু? ঔ মেয়ে? ”
” ঔ মেয়ে কাকে বলছিস তুই? তুই কি ভুলে গেছিস সি ইজ ইউর… ”
তিশার পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে তুষার বলল
” আম্মু স্টপ এখানে থেমে যাও যে এই সম্পর্ক মানে না সেই সম্পর্ক তার কাছে কোনো মূল্য নেই সম্পর্কে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না যে দিন সে এই সম্পর্ক মানবে সেদিন আমিও এই সম্পর্ক টা মেনে নিবো ”
” তাহলে এই সম্পর্ক টা জোর করে কেনো বাঁধতে আমাদের বাদ্ধ্য করছিলি? মেয়ে ছোট সময় দে ভালো ভাবে কথা বল ঠিক মানবে ও ”
” আম্মু আমার এসব কথা বলতে বা শুনতে মোটেও ইচ্ছে করছে না ”
তুষার চলে যেতেই তিশা একটা হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করলো।
সকলে মিলে পুরান ঢাকা আসলো এখানে এসে তুষারও সাথে মিলিত হলো। খাওয়া-দাওয়া জন্য পুরান ঢাকা বেস্ট। সকলে একটা রেস্টুরেন্টে ডুকলো সকলে মিলে ১৭ জন আরও কয়েকজনের আসার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে আসতে পারে নি। ঈশান, অনু, রাহুল ও বাদ পড়ে নি। সবচেয়ে বড় টেবিলটায় ওরা বসলো। দু এক জনের জায়গা না হলেও অন্য টেবিল থেকে চেয়ার টেনে বসেছে। সকলে তার পছন্দ মতো খাবারের নাম বলল তার মধ্যে থেকে বাছায় করে মোমোস, চিকেন, পাস্তা, পিৎজা, বার্গার, কোক, জুস অর্ডার করলো। কুয়াশা তুষারের মুখোমুখি বসেছে। শুধু চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছে তাতে অবশ্য তুষারের কোনো যায় আসছে না পাশে বসা মেঘার খালাতো বোন পায়েলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। এতে কুয়াশা মনে মনে ফুঁসে উঠছে। কুয়াশা মনে মনে তুষারকে বকতে লাগলো ” ইই শ’য়’তা’ন একটা আমি অন্য ছেলেদের সাথে নাচলে কথা বললে বাবুর খুব জ্বলে এখন যে দিব্বি অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছিস তাতে কিছু না আমি বললেই দোষ হুহ্ ঢং। আবার আমি কিছু বলতে গেলো আমাকে রোস্ট বানিয়ে ছেড়ে দিবে। হুহ্ আমিও অন্য ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলবো দাঁড়া ”
তখন-ই কুয়াশার ফোনে ফোন আসলো সকলে যে যার মতো কথা বলছে কুয়াশা উঠে গিয়ে ফোনটা ধরলো উমা ফোন দিয়েছে। সালাম বিনিময় করে।
” উমা কি হয়েছে? তোমার গলাটা কেমন লাগছে? শরীর খারাপ নাকি কান্না করছ? ”
” মন খারাপ আপু। ঈশান কি আমার প্রতি কখনো একটু সিরিয়াস হবে না? আমার বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করছে আপু। ঈশান কি আমাকে ভালোবাসে না আপু? ”
বলে কাঁদতে লাগলো। কুয়াশা উমাকে শান্ত হতে বলল। কিন্তু উমা কেঁদেই চলেছে।
” দেখ উমা কেঁদো না কাঁদলেই কি সমাধান মিলবে? আর তোমাদের তো প্রতি বার ঝগড়া হয় আমার রিলেশনে যাও এবার এমন কি হলো যার জন্য দু’জন দু-জনের সাথে কথায় বলছ না অথচ কষ্ট পাচ্ছো। ”
” আপু আমি কিছু জানি না তুমি ঈশান কে বললো চাকরি জোগার করতে বেকার ছেলের হাতে নিশ্চয়ই আমার বাবা তার মেয়েকে তুলে দিবে না ”
” এভাবে কেনো বলছ উমা চাকরি টা মুখের কথা নয় এখন অনেকে পড়াশোনা শেষ করে ও চাকরি করছে না সেখানে ঈশান এখনো অর্নাস শেষ করতে পারলো না। তোমার আব্বু আম্মু কে বোঝাও আর কয় মাস পর ই তো আমাদের এক্সাম তার মধ্যে আমি ঈশানকে জবের জন্য বলবো আমি তোমার ব্যপারটাও বুঝতে পারছি ”
” আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করছি আপু তুমি একটু ঈশানকে সিরিয়াস হতে বলো না হলে আমাকে হারাতে হবে বলে দিলাম ”
উমা ফোন রেখে দিলো কুয়াশা চিন্তিত হয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে ঈশানের দিকে তাকলো। ঈশান সকলের সাথে মজা করছে হাসিমজায় মেতে আছে। কুয়াশা ঠিক করলো ঈশান চলে যাবার আগে কোনো একসময় ফাঁক করে ঈশানকে বোঝাবে। মেঘা কুয়াশার পাশে বসে ফিসফিস করে বলল
” কে ফোন দিয়েছিল? ”
কুয়াশা ও ফিসফিস করে বলল
” উমা ”
” কেনো কি হয়েছে? ”
” ওর বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে। ”
” তাহলে এখন কি হবে? “।
” জানি না দেখা যাক কি হয় ”
রিদ বলল ” কুয়াশা মেঘা কি ফিসফিস করছ আমাদের কেও বলো আমরাও শুনি ”
কুয়াশা বলল ” তেমন কিছু না ভাইয়া ”
রিদ বলল ” তো তোমরা কবে বিয়ে করছো? ”
মেঘা নিজ মনে বিরবির করে বলল ” আপনি রাজি থাকলে এখনি ”
কেউ না শুনলেও কুয়াশা শুনে ফিক করে হেসে রিদ কে বলল ” আপনি বড় আপনার বিয়ে তে মজা করে নি আগে ”
” তাহলে তো আমার বিয়ে আগে করতেই হয় শুভ কাজে দেরি কিসের? ”
” আমাদের ভাবি কি ঠিক করা আছে না-কি? ”
” নাহ। সেটা খোঁজার দায়িত্ব তোমাদের দিলাম ”
মেঘা আবার বিরবির করে বলল ” খোঁজার কি দরকার সামনেই তো আছে চোখে কি নেবা হয়েছে কানা কোথাকার ”
চলবে ইনশাআল্লাহ

#প্রেমরোগ-৫
#তাসনিম_তামান্না

সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই। রিদ বলল
” গাইস তোমাদের জন্য একটা ফ্যান্টাস্টিক সারপ্রাইজ আছে তোমরা কি সেই সারপ্রাইজটা পেতে রাজি আছো? ”
মেঘা ভ্রু কুঁচকে বলল ” হ্যাঁ কিন্তু কি সারপ্রাইজ? ”
” সারপ্রাইজ বলে দিলে সারপ্রাইজের কোনো মানে হয়? তাহলে চলো বের হওয়া যাক ”
” কোথায় যাবো আমরা? ”
” গেলেই দেখতে পাবে ”
মাইক্রোতে একে একে সকলে উঠে বসলো। কুয়াশা উঠে বসতে গেলে দেখলো জায়গা হচ্ছে না। কুয়াশার ভ্রুকুঁচকে গেলো আসার সময়ই তো সকলে একসাথে এলো এখনো জায়গা হচ্ছে না কেনো? খেয়াল করে দেখলো ঈশান পরে আসছে। কুয়াশা কি করবে ভেবে পেলো না। রিদ বলল
” কুয়াশা জায়গা নাই তো তুমি তাহলে তুষারের সাথে বাইকে আসো তুষার বাইক নিয়ে এসেছে তো ”
কুয়াশা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো না ও বলতে পারছে না তুষার কুয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে। মাইক্রো কুয়াশা তুষারকে ফেলে চলতে। কুয়াশা ধীর পায়ে তুষারের পিছনে গিয়ে বসলো। তুষার চালালো না চুপ করে বসে রইলো। কুয়াশা উসখুস করতে করতে তুষারের গাড়ে হাত রাখলো। তুষার ও স্টার্ট দিয়ে চালানো শুরু করলো। বেশ স্প্রিডে চালাচ্ছে। কুয়াশা অন্য হাত দিয়ে তুষারের শার্ট খামছি ধরলো।
মাইক্রো আগে তুষার কুয়াশাকে নিয়ে ফ্যান্টাসি কিংডমে এসে পৌঁছালো। এখানে আসতে দেখে কুয়াশা ভয়ার্ত চোখে তাকালো তুষারের দিকে এতোক্ষণ একটাও কথা না বলেও এখন বলতেই হলো
” আমাকে এখানে কেনো আনলেন? ”
তুষার নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল
” ওরাও এখানেই আসছে ”
” আমি বাসায় যাবো ”
তুষার প্রতিউত্তর করলো না। কুয়াশার দিকে একপলক তাকিয়ে টিকিট কাউন্টারের দিকে গেলো। কুয়াশা পারলে এখনি কেঁদে দেয়। তার মধ্যে সকলে চলে এলো কুয়াশা রেগে রিদের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়ে বলল
” এই আপনার সারপ্রাইজের নমুনা ভাইয়া? আমি যাবো না ”
রিদ হেসে যাচ্ছে। বলল
” সারপ্রাইজ টা জোস না? কুয়াশা রেগ না তুষারের ই প্লান কিন্তু এটা তাই আমার ওপরে রাগ দেখিয়ে লাভ নাই ”
মেঘা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল
” আমি বাসায় যাবো ”
” সেটা বললে তো হবে না মেঘা। টিকিট কাটা হয়ে গেছে লেটস গো ”
মেঘ কুয়াশা, মেঘা আর তুতুল কে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেলো। এক এক জন যে রাইডে ওঠার আগেই ভয়ে জমে যাচ্ছে তা তাদের মুখশ্রী দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
সানটা মারিয়া রাইডে উঠেই সব মেয়েরা চিৎকার চেচামেচি করতে লাগলো। মেঘ, রিদ, তুষার এটাতে বেশ মজা পাচ্ছে। ফাস্ট রাইড শেষ করে মেঘার বমি করতে লাগলো। মেঘাকে সামলে রিদ আর মেঘ গেলো। কুয়াশার বসা থেকে উঠলেই মাথা ঘুরছে তাই সিটে মথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। তুষার ঠান্ডা পানি এনে কুয়াশা কে সহ সকলকে দিলো। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রিদ বলল
” মেঘা অসুস্থ হয়ে গেছে একটু রেস্ট নিক ও চলো আমরা ম্যাজিক কার্পেটে চলো ”
কুয়াশা চমকে লাফিয়ে উঠে বলল
” আমি আর কোথাও যাবো না কোনো রাইড করবো না ”
তুতুল ও কাঁদো কাঁদো গলায় বলল
” তোমরা রীতি মতো আমাদের ওপর অত্যাচার করছ। আমরা আর কথাও যাবো না একটাতেই উঠে ভয় লেগে গেছে ”
রিদ হেসে বলল
” তাহলে বোঝো তোমরা কত ভীতু ”
কুয়াশা রেগে বলল
” রিদ ভাইয়া আপনাকে ভালো ভাবছিলাম কিন্তু আপনি খুব খারাপ কষ্ট পাইলাম ”
” আচ্ছা এখন কষ্ট পেয়ে নাও পড়ে চকলেট দিয়ে কষ্ট কমিয়ে দিবো চল এবার কথা না বাড়িয়ে এনজয় করে আছি ”
মেঘা পানিটা খেয়ে বিরবির করে বলল
” এনজয় না ছাই শ’য়’তা’ন গুলো আগে জানলো কখনো আসতাম না ”
ম্যাজিক কার্পেটে দু’জন দু’জন করে বসলো। কুয়াশার পাশে তুষার বসেছে আগের টায় মেঘা আর কুয়াশা বসেছিল এবার মেঘা না থাকায় তুষার বসলো। রাইড চলতে শুরু করতেই আবারও চিৎকার চেচামেচি করতে লাগলো। কুয়াশা ভয়ের চোটে একহাতে তুষারকে জড়িয়ে ধরলো আরেক হাতে তুষারের হাত চেপে ধরলো। এতোই জোরে চেপে ধরেছে যে হাতে নক বসে গেলো। তুষার দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করে নিলো।
রাইড থামতেই কুয়াশার খেয়াল হলো তুষারের অনেক কাছে ঝটপট দূরে সরে বসলো। তুষারের হাতের দিকে খেয়াল হতেই অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল ” সরি আসলে আমি বুঝতে পারি নি আপনি কি খুব ব্যথা পাইছেন? ”
তুষার তাচ্ছিল্যে হেসে বলল ” আমার ব্যথায় তুমি ব্যথিত হও? কষ্ট পা-ও নাকি? কি আমি তো দেখি না ”
কুয়াশা থমকানো চোখে তাকিয়ে রইলো তুষারের দিকে তুষার নেমে গেলো। কুয়াশাও আর কিছু না ভেবে নেমে গেলো।
পরের রাইড গুলো একপ্রকার জেদ ধরে গেলো না কুয়াশা বসে রইলো মেঘার পাশে। কুয়াশা যায় নি দেখে তুষার ও যায় নি বসে রইলো। তুষারকে বসে থাকতে দেখে মেঘা চোখ টিপ দিয়ে বলল
” হুম হুম কি ব্যাপার ভাইয়া আজকাল দেখি তাকে ছাড়া চলেই না আপনার। প্রেমে বুঝি ডুব দিয়েছেন? ”
তুষার হেসে বলল ” কি দুঃখের কথা আর কি বলবো? যার বোঝার কথা সে-ই বোঝে না অন্য রা ঠিক-ই বোঝে ”
কুয়াশা ওদের কথায় কান না দিয়ে ব্যাগ থেকে স্যাভলন ক্রিম আর ব্যান্ডেজ বের করে। তুষারের পাশে বসে তুষারের দিকে একপলক তাকিয়ে তুষারের হাতটা নিজের কাছে নিয়ে হাতে স্যাভলন লাগিয়ে দিলো তুষার কুয়াশার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ব্যান্ডেজ দিলে গেলে তুষার বলল
” এতো টুকু ক্ষ’ত ব্যান্ডেজ লাগবে না। আমার মনের ক্ষ’ত ব্যান্ডেজ লাগাতে পারবে কি? ”
কুয়াশা প্রতি উত্তর করলো না। রাইড শেষ করে সকলে ফিরতেই রিদ বলল
” তুষার, কুয়াশা, মেঘা তোমাদের আর কোনো না শুনবো না ওয়াটার কিংডমে যেতেই হবে ”
কুয়াশা মেঘা আঁতকে ওঠে বলল
” পাগল তোমরা এক্সাটা ড্রেস আনি না-ই ভেজা কাপড়ে বাসায় গেলে আম্মু বকবে ”
” ডোন্ট ওয়ারি আমি আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছি ড্রেস আছে সকলে দুই জন দুইজন করে যাবে ”
মেঘা মুক গোমড়া করে বলল
” এসব ঝামেলার কি দরকার ”
রিদ শান্ত কন্ঠে বলল
” দরকার আছে ”
রিদের এমন দৃষ্টিতে মেঘা ভড়কে গেলো। কুয়াশা বলল
” আমি আর মেঘা যাবো ”
” নো ওয়ে ”
” মানে কি? ”
” মানে তোমরা ফাঁকি বাজ দেখা গেলো ভয়ে রাইড না করে এক জায়গায় বসে আছো দুজন মিলে। তাই আমি ভেবে রাখছি প্রতিটা মেয়ের সাথে একটা করে ছেলে থাকবে যেমনঃ কুয়াশা+তুষার, মেঘ+তুতুল, আমি+মেঘা….. ”
মেঘা নিজের কান কে-ই যেনো বিশ্বাস করতে পারলো না। রিদ তার সাথে যাবে? মনে মনে নাচানাচি করতে লাগলো। তাহলে কি তার স্বপ্ন সত্যি হতে যাবে? রিদের মনেও কি তার জন্য অনুভূতি কাজ করে? খুব শীগ্রই তাকে তার মনের কথা রিদ কে জানানো উচিত।
চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here