রোদেলা লেখক: মাহাবুবা মিতু পর্ব: ৭

0
1011

রোদেলা
লেখক: মাহাবুবা মিতু
পর্ব: ৭

সকাল সকাল খুব তাড়া থাকে রোদেলার। নাশতাটা খেয়ে দিন শুরু করে তিনদিন স্টুডেন্ট পড়ায়, আর তিনদিন কোচিং । তারাহুরো করে বেরিয়ে পরতে হয় ওর। বাসা থেকে বেরুবার সময়ই ফোন আসে একটা, প্রথমে কলটা কেটে যায় ধরতে ধরতে। ফোন তাকিয়ে দেখে অপরিচিত নম্বর। ফোনটা সাইড পকেটে রাখতেই আবার বেজে ওঠে। রিসিভ করে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে বুঝবার জন্য কে ফোন করেছে….

: শুভ সকাল রোদেলা, কেমন আছো….?
: কে…?
: আমি…! এত দ্রুত ভুলে গেলে….?
: হেয়ালি রেখে পরিচয় দিন,
: তুমি কি ব্যাস্ত….? আমি শোভন…
: ওহ্…! হ্যা আমি কলেজে যাচ্ছি, গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি।
: কি ব্যাপার…! তুমি কি অন্য কাওকে এক্সপেক্ট করেছিলে….!
: আমি কাওকেই এক্সপেক্ট করিনি,
: ওহ্…! শোন তোমার কলেজ এরিয়াতে একটা কাজ আছে আমার, আমি আসলে একটু সময় দিতে পারবে…?
: আসলে আমি একটু ব্যাস্ত নিজের এবং স্টুডেন্টদের পরীক্ষা নিয়ে, নাহলে পারতাম…
: ও….
: হুম, আচ্ছা রাখি, আমার বাস এসে পরেছে রাখি। আর শুনুন আপনি আমাকে তুমি কেন বলছেন…?
আমি নাতাশার বড় বোন। দয়া করে আমাকে তুমি করে বলবেন না, আপনি বলবেন….

বলেই উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে রোদেলাই কলটা কেটে দেয়। মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হয় ও। কেমন অভদ্র ছেলে। গতকাল পরিচয় আজ বলে একটু সময় দিতে পরবে….
ফালতু পোলাপান…..

বাসে উঠে ও কিছু একটা নিয়ে একটু চিন্তিত থাকে। ভুলতে চাচ্ছে রোদেলা, বাসে বসে চারপাশ দেখতে থাকে। আজকের আকাশটা অন্য রকম। সত্যিই বলেছিলেন সুনীলের কাকাবাবু আকাশ কখনো পুরাতন হয় না,
রাতের স্বপ্নটাকে মনে করে ভুলতে ব্যাস্ত ও। এটা কেমন কথা প্রতিদিন স্বপ্নে আসো, সাহস দাও, পাশে থাকো, ভালোবাসো মুখটা কেন দেখাও না…..
হেডফোন খুঁজে গান ছাড়ে রেদেলা –
মাঝে মাঝে তবু দেখা পাই চিরদিন কেন পাই না…. জানালা দিয়ে একটা স্নিগ্ধ বাতাস রোদেলাকে আরো ডুবিয়ে দিলো গানটায়
চোখ বন্ধ করে অনুভব করে অর্ণবের গাওয়া এই রবীন্দ্র সঙ্গীতটা……

নানান ব্যাস্ততায় দিন কেটে যায় ওর, বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেতে খেতে বিকেল হয়ে যায় প্রায়ই, ওর মা অবশ্য ওকে বকা দেয় এজন্য। ও দূরের স্টুডেন্টটা পড়িয়ে একবারে আসে। ধকল একটু যায়, তবে কি আর করা…

বিকালে বড় মামা ফোন হাতে রোদেলাকে খুঁজে ওদের ঘরে আসে, নাতাশার ফোন।

: কিরে আপা তোর ফোন কেন বন্ধ…
: কি জানি চার্জ শেষ হয়তো…
কথা হয় নাতাশার সাথে। ওরা সেন্টমার্টিন যাচ্ছে সবাই মিলে। কল্লোল ভাই ফোন দিয়ে বড় মামাকে নাকি বলেছে তাদের সবাইকে যাওয়ার কথা। রোদেলা সেন্টমার্টিন শুনে একটু পুলকিত হলেও ওদের হানিমুনটা কেমন হজবরল হবে ভেবে কপট রাগ দেখায়। নাতাশা বললো
: আরে আপা এরা এত ফ্রি কি বলবো তোকে। আমার চাচী শ্বশুড়ি, ননদ গুলো এত বন্ধুত্বপূর্ণ যে তাদের রেখে কেমন যাই বল। তখন কল্লোল বললো আমাদের বাড়ির সবাই গেলে আরো ভালো হবে। চাচীরা সবাই বললো হুম তাদের ডেট জানিয়ে দে কল্লোল, বলবি তারা না গেলে
ট্যুর ক্যানসেল।
: হুম ভালো তো হবেই, দেখ যায় কি না। তোদের গুষ্টি লোকেদের যে বাহানা….
: আমার শ্বশুড়ি বলেছেন বাবাকে কল দিয়ে জানাবে। তার কথা তো আর ফেলতে পারবেন না… আর আমরা কবে যাচ্ছি জানিস আপা….
ফুল মুন ডে তে আমরা ওখানে থাকবো। কল্লোল বললো কক্সবাজার পঁচে গেছে। সেন্টমার্টিন ফ্রেশ একটা ফিল দিবে সবাইকে।

রোদেলা হাসে মনে মনে, পঁচে গেছে কক্সবাজার….!

শোভনের কথাটা বলতে গিয়েও চেপে গেলো রোদেলা। কথাটা এখন বলা অপ্রাসঙ্গিক মনে করলো। তাছাড়া ও যেমনই হোক নিজে ঠিক থাকলেই হবে। পাত্তা দেয়া যাবে না এসব ফালতু ছেলেদের।

ফোন খুঁজে ওপেন করে চার্জে লাগাতেই টুক করে একটা ম্যাসেজ আসে…
– শুভ সন্ধ্যা….

আচ্ছা এত স্মার্ট একটা ছেলে এত ক্ষেত কেন…
এখনকার দিনে গুডমর্নিং, গুড ইভিনিং, গুড নাইট এসবের চল আছে। আল্লাহ জানে এ ছেলের মনে কি আছে। বিরক্ত হয়ে রোদেলা নম্বর ব্লক করতে গিয়েও করে না। ব্যাপারটা খারাপ দেখায়, যত যাই হোক আত্নীয় মানুষ।

রাতের খাবার-দাবার গরম করা আর ভাত রান্নাটা রোদেলাই করে। ওর মাকে একটু স্বস্তি দিতে। পড়াশোনা গুছিয়ে খাবার খেতে বসে সবাই একসাথে। ছোট মামা আলাদা তার রুমে খায়, মামী অবশ্য সবার সাথেই খান। তখন আলাপ হয় সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গে। সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় তাদের সাথে যাবার। তবে বড় মামা নিজে গাড়ি ঠিক করে দিবেন তা আলাপ করেন। খরচ তো মোটামুটি কম হবে না এতগুলো লোকের। পরোক্ষ ভাবে একটু এডজাস্ট করা তাদের সাথে।

বড় মামা সব সময় বাইরে কোথাও গেলে বাবুর্চি নিয়ে যায় সাথে, সেখানকার বাজার থেকে কেনাকাটা করে রান্না হয় সবার জন্য। সেখানে এরকম কিছু করা গেলে ভালোই হবে।

সামনের দিন গুলোতে একটু ব্যাস্ততা থাকবে। এতদূর বেড়াতে যাবে কিছু কেনাকাটা তো করাই লাগবে….

বড় মামী রোদেলার মার ঘরে এসে বলে – আমরা ঘুরতে যাই আপনি বাড়ি পাহাড়া দেন, কোথাও তো যেতে চান না, এবার আপনি না করতে পারবেন না আপা, আমার মেয়ের জামাই কিন্তু কষ্ট পাবে। রোদোলার মা শুধু মুচকি হাসে কোন জবাব দেন না। রোদেলা তাকিয়ে দেখে ওর মায়ের হাসিটা, কত সুন্দর, কত রহস্যময় হাসি। অন্য কেও হলে এ হাসির অর্থ হতো সম্মতি, তার এ হাসির অর্থ তিনিই কেবল জানেন, আমার, প্রিসিলা, কিংবা বড় মামী কেওরই এ হাসির রহস্য উদ্ঘাটন করার সাধ্য নাই।

সারাদিনের ব্যাস্ততায় বিছানায় মাথা রাখতেই ঘুম ঘিরে ধরে ওকে। বালিশের নিচে থাকা ফোনটায় ম্যাসেজের শব্দ হয়। বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবে নিশ্চই এটা শোভনের কাজ। এবার একটু না ঝাড়লে হচ্ছে না।

ফোন হাতে নিয়ে দেখে নোভেল ম্যাসেজ দিয়েছে-
আপা ভীষণ বিপদে পরে তোক ম্যাসেজ দিয়েছি, ফুফুকে বল মোড়ের মাঠে একজন আসবে নাম আসাদ লম্বা আর হ্যাংলা , ওকে ৫০ হাজার টাকা দিতে বল। ওরা আমাকে আটকে রেখেছে। টাকা না দিলে ছাড়বে না, আমি বাসায় এসে বলবো ঘটনা…..

রাত বাজে সাড়ে বারোটা মা, ঘুমিয়ে আছেন। তাকে ডেকে জানালে কেঁদে কেটে বাড়ি একজায়গায় করবেন, ছোট মামা এখনো বাড়ি আসেন নি, তাকে কল দিয়ে জানালো রোদেলা,ছোট মামা বললো তোর মাকে বল, আমাকে কেন বলছিস, আমাকে দাম দেয় দুই পয়সার, আমি ওর কে…. ফোন রাখ আমি ব্যাস্ত আছি… এসব সমাধানের জন্য তোর মাই যথেষ্ট….

(অসুস্থ থাকায় গল্পটা দিতে দেরী হলো, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, আর আমার জন্য দোয়া করবেন। )
Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1479285415865978/
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1488433018284551/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here