রোদেলা লেখা: মাহাবুবা মিতু পর্ব: ৮

0
968

রোদেলা
লেখা: মাহাবুবা মিতু
পর্ব: ৮

কি করবে ভেবে পায়না রোদেলা। মায়ের ঘরে গিয়ে ডাকে তাকে। ঘুম ভাঙতে একটু ভয় হয় ওর। তবুও ডাকলো তাঁকে, মা…..
বিরক্ত মুখে ওর মা বললো –
: কি হইছে হ্যা, মাত্র চোখটা লেগেছে।
কে মরছে এত রাতে……?
: মা নোভেল……..
: কি হয়েছে নোভেলের….!
পুরো ঘটনা শুনে তিনি ছোট মামাকে কল দিলেন, ফোন বন্ধ। রোদেলা যে ফোন দিয়েছিল তা চেপে গেলো। কারণ এ কথা শুনলে তার মাথা গরম হয়ে যাবে। উপায় না দেখে ছোট মামীকে জিজ্ঞেস করলেন কি করবেন এখন….?
ছোট মামী তখন রেগে বলেন – আমরা এসবের কি জানি, ওর দায়-দায়িত্ব তো সব আপনার, ওর চোখে সবাইকে বিষ করে রাখছেন, নিজে সাধু সেজে বসে বসে ওর মাথাটা খাচ্ছেন, আর এখন আসছেন কি করবেন তা জানতে, আজ আটকে রাখছে, কাল পুলিশে নিবে, পরশু ও যে খুন করবে না তা কে জানে।

বড় মামা ঘর থেকে বের হয়ে মামীকে একটা ধমক দিলেন। মামী বললেন আজ আমি চুপ থাকবো না বড় ভাই, আপনি নিজেকে প্রশ্ন করেন আজকের এই পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী। আদর, শাসন সবই তো উনিই করেন। সবার থেকে আড়াল করে রাখে ওকে, আমি না হয় সৎ মা, আমাকে কেমন অপদস্ত করে কথায় কথায়, এমনকি বাপটাকে পর্যন্ত দাম দেয় না এ ছেলে। দুনিয়ার কাছে আমাকে খারাপ মায়ের তকমা দিয়ে বেরাচ্ছেন তিনি, আমি কি করিনি ওর জন্য। আর কি পেয়েছি….?
ওর জন্য রোদেলার মা আমার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছেন। কি ছিল আমার অপরাধ। সেদিন ও ছাদ থেকে থুতু ফেলেছিল, নিচে তখন মহারমের সিন্নি রান্না চলছিল। বাড়ি ভর্তি হয়ে গিয়েছিল লোকে, ছেলের বিচার নিয়ে…
আমি শাসন করে নাহয় ওকে মেরেই ছিলাম। আপনারা কি আপনাদের ছেলেমেয়েকে শাসন করেন না, মারেন না। আরেহ্ আমি তো সৎ মা, যতই করি আমার কোন নাম নাই… উনি যে এত বড় বড় কথা বলেন, এত কাহিনি করেন পরের ছেলে নিয়ে, উনি নিজেও তো এত বড় বড় মেয়েদের সবার সামনে চুলে ধরে মারেন। তখন…..! তখন তো কেউ বিচার করতে আসে না। অনেক সহ্য করেছি, বোকা ছিলাম তাই….
আর সহ্য করবো না….
এমন সময় রোদেলার মামা বাড়িতে এসে দেখে এ কান্ড। ছোট মামী বললেন – আসো তোমারই কমতি ছিলো…
তোমার গুনধর পুত্র কোথায় যেন কি করেছে, তাকে আটকে রেখেছে, ৫০ হাজার টাকা পাঠালে ছেড়ে দিবে। মামা উত্তরে বললো-
হ্যা তাতে তোমার চিৎকারের কি আছে…!
ওর গার্জিয়ান আছে না, চিন্তা কি, তুমি যাও ঘরে যাও। বলে রুমে চলে গেলো।

বড় মামা ডাকলেন ছোট…..!
এটা কোন ধরনের কথা, বিপদের সময় মাথা গরম করলে চলে……?
চল আমার সাথে দেখি কি কাহিনি।
না ভাই আমি যাবোও না কোন টাকাপয়সা ও দিবো না। আজকে ওর এই যে অধঃপতন এর জন্য যে দায়ী সেই যাক। ছেলেটার কাছে আমাকে জঘন্য বানিয়ে রেখেছে। আমাকে সহ্যই করতে পারে না। কথায় কথায় মানুষের সামনে অপমান করে। ছোট থেকেই আমি জানতাম ও একটু অন্য রকম, তাই ওকে হোস্টেলে পাঠিয়েছিলাম, হোস্টেল লাইফে এক-দু মাস থাকলেই মন এমনিই বসে যায়, আমি ওকে হাতে ধরে বলি নাই -আপা এখানে থাকলে ও নষ্ট হয়ে যাবে, হোস্টেলে গেলে ও শৃঙ্খল জীবণে অভ্যস্ত হবে৷ তখন ওর কান্নাকাটিতে ঘি কে ঢেলেছিলো….?
রোদেলার মা এতক্ষণ একটিও কথা বলো নি,
এখন তিনি মুখ খুললেন। আরে হারামজাদা বৌ পেয়ে জন্মের ছেলেকে ভুলে গেছিস। নতুন বিয়ে করে বৌ নিয়ে তুই ফুর্তি করবি আর ছেলেটা হোস্টেলে পঁচবে…..? ওই তো পালায়ে আসছিলো বাড়িতে এখন আমার দোষ না….?

মা এখনো বেঁচে আছেন, আমি বলবো তোমার সম্পদ তুমি নোভেলকে লিখে দাও,তারপর দেখি তোর লম্ফঝম্প কোথয় যায়। হারামী বৌয়ের মুরিদান হইছিস।

বড় মামা মাকে ধমক দিলেন, কিসের মধ্যে কি টেনে আনছিস….? এখন কি ঝগড়া করার সময়….?

ছোট চল..! আমি তৈরী হচ্ছি…. নাসিমা তুই ও চল….

বড় ভাই আমার এক কথা আমি এসবের আগে পিছে নাই, ও বললো না মাকে বলবে এসব লিখে দিতে, আমি মাকে বলবো নোভেলকে না ওকেই যেন মা সব লিখে দেয়। আমি এসবের বিনিময়ে হলেও শান্তি চাই…

নাসিমা মানে রোদেলার মা রেগে আগুন হয়ে গেলো। কত বড় সাহস তো আমাকে লোভী প্রমাণ করতে চাইছিস….

এই যে তোর মায়ের বাড়ি এটা আমারও মা, তবুও জিজ্ঞেস করতো আমি বাড়ি ভাড়ার টাকা কখনো হাতে নিই কি না। নিজে সংসারে বাদীর মতে খাটি, সেলাই করি, আমার মেয়ে সেই ছোট থেকে টিউশনি করে আয় করে। তোদের টাকায় আমি থুতু দেই। নিজের জোরে চলি। কারো কাছে হাত পাতি না।
ছোট মামী ঘর থেকে বেরিয়ে বললেন –
এত বড় বড় কথা আপনার মুখে সাজে না…
চোদ্দগুষ্টির কামাই খেয়ে বসে আছে আপনার স্বামী, আপনি মেয়েদের নিয়ে ভাইদের ঘারে বসে আছেন, আপনার লজ্জা করে না আবার মুখ তুলে কথা বলেন…! নিজে তো স্বামী সংসার করতে পারেন না, ভাইদের জীবণেও অশান্তি করেন। এজন্যই তো রেখে চলে গেছে। যেই চোপা আপনার…..!

নাসিমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মুহুর্তেই।
রোদেলা ঠিক এই ভয়টাই করছিলো। আবারো বাবার প্রসঙ্গ। এবার ওর মনে হচ্ছে পৃথিবীতে প্রলয় শুরু হয়ে যাক, কিংবা সবাই বোবা কি বধির হয়ে যাক। ঠিক এ প্রসঙ্গটা যখন আসে তখন রোদেলার আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয় না।
নিজেকে, নিজের শরীরের রক্তকে, নিজের জন্ম দেয়া বাবাকে ঘৃণা হয়। ইচ্ছে হয় শরীর ছিড়েখুঁড়ে সব রক্ত বের করে ফেলতে…..

বড় মামী নামাজে ছিলেন, তিনি এসে ছোট মামীকে ধমক দিয়ে চুপ করালেন, তাকে ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে ছোট মামাকে বললেন – যা ভাই এসব কথা বলার সময় অনেক পাবি, গিয়ে দেখ। নাতাশার বাবা যাও তুমি পাঞ্জাবি পরো, আর হ্যা টাকাটা নিয়ে নিও।

না ভাবি আমি যাবো না এটাই আমার ফাইনাল কথা। আমাকে অনুরোধ করে নিজেকে ছোট করবেন না আমার কাছে….

নাসিমা তৈরি হয়ে এসেছে। শেষে বড় মামা, রোদেলা, আর ওর মা নাসিমা গেলো নোভেলকে ছাড়িয়ে আনতে। ওরা যখন বের হলো তখন রাত দেড়টা……..

চলবে….

previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1487208481740338/
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1489827754811744/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here