রোদেলা লেখা: মাহাবুবা মিতু পর্ব: ১৩

0
893

রোদেলা
লেখা: মাহাবুবা মিতু
পর্ব: ১৩

বড় মামার মাথা খারাপ অবস্থা। মা তার পাওনা বুঝিয়ে দিতে বলেছেন। যদিও এটা তার জন্য সুযোগও বটে। বাড়ি দাড়িয়ে গেছে, টাকাটা দিয়ে দিলে বাড়িতে মায়ের অধিকারটা থাকবে না। কিন্তু এত বছরের হিসেব তিনি কিভাবে এ মুহুর্তে দিবেন এটাও একটা চিন্তার বিষয়। ঘটনাটা ঘটে ভালোই হলো, এবার তার ভালো মানুষী রূপটা বের হবে। রোদেলা জানে তিনি এখন ওদের এ বাড়ি ছেড়ে যেতে দিবে না। দোহাই হিসেবে ওদের দু-বোনের বিয়েটাকে টেনে আনবেন।

এদিকে রোদেলার মা নাসিমা বাসা খুঁজতে বের হয়েছেন। রোদেলা এসবে কোন গা করে না। কারন ও জানে শেষ পর্যন্ত বড় মামা ওদের যেতে দিবেন না। এ পরিস্থিতিতে ও কি করবে বুঝতে পারছে না। কারো সাথে যে একটু পরামর্শ করবে তাও পারছে না। একটু একলা সময় দরকার। ভাববার জন্য,
বুঝবার জন্য। কিন্তু সেই রাত ছাড়া ওর একলা সময় নেই….

শুক্রবার নাতাশারা আসবে। এর আগে আগে শাড়ি গুলো আনতে পারলে ওদের কাছেই দিয়ে দেয়া যেত। তা না হলে এ শাড়ি নিয়ে ওকে যেতে হবে। কিন্তু এতগুলো শাড়ি শুক্রবারের মধ্যে হবেও না। ও তাও ফোন করে বলে দিয়েছে অন্ততঃ নয়টা যেন দেন। তাহলে ওদের আগে দিয়ে দেয়া যাবে। গতদিন অশোভন লোকটা তিনটা ম্যাসেজ দিয়েছে, কলও করেছে বেশ কয়েকবার। ম্যাসেজ গুলো ছিলো ওর প্রশ্নের উত্তর চেয়। বাড়ির এসব ঘটনায় মন বিক্ষিপ্ত হওয়ায় এসবে মন দেয় নি। রোদেলা ভাবে এসব ছেলেমানুষী বয়স কম ছেলেপুলেদের মানায়। তিনি কল্লোল ভাইয়ার কয়েক মাসের ছোট। কল্লোল ভাই কত ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন একটা মানুষ, কথা বলে মেপে মেপে। পুরুষ মানুষের ব্যাক্তিত্বটাই তো আসল। হড়বড় করে কথা বলা এমন ছেলেমানুষী স্বভাবের ছেলে রোদেলার একদম পছন্দ না। রোদেলা এক কোচিং-এ ইংরেজি পড়তো। স্যার এত বেশী অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন যে খুব ভালো পড়ানো সত্বেও ও দুদিন পড়ে আর যায় নি।

একটু আগে অশোভন লোকটা যে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে তাতে রোদেলার বিরক্তর সীমা পার হয়ে গেছে। এবার কিছু না বললেই নয়। উনি লিখেছেন –
“দুই দিন পার হয়ে গেলো উত্তর পেলাম না। নিরবতা নাকি সম্মতির লক্ষণ। আমি কি তাহলে উত্তর হ্যাঁ ধরে নিবো….!”
যন্ত্রণা কি কম হয়ে গিয়েছিলো ওর জীবণে। ও ভাবে বিকেলে কল দিবে। এ যন্ত্রণার একটা শেষ হওয়া উচিত। কথা নাই বার্তা নাই, এই মাস তিনেকের জানাশোনায় দুম করে কেও কাওকে বলতে পারে না ” উইল ইউ বি মাইন…?”

এটা কি এত সহজ সিদ্ধান্ত, আলু পটল কেনা…?
চিনলো না, জানলো না, হুট করে বললো আর হয়ে গেলো। এসব ওর কাছে ফাতরামি লাগে। এ ছেলেটাকে এত সাহস কে দিলো। ও মনে মনে ভাবে এমন কি কোন আচরণ ও করেছে নিজের অজান্তে যা ওর এই সাহসের উদ্ভব ঘটিয়েছে….!?
নাহ….
এমন কিছু তো মনে পরে না…
সব মিলিয়ে ওদের সাত দিন ও দেখা হয় নি। যত বারই দেখা হয়েছে ফ্যামেলী গ্যাদারিং এ। এসব ছেলেদের জীবণে প্রেম আসতেও সময় লাগে না, যেতে তো আরো সময় লাগে না। তাছাড়া এত বড় একটা ছেলে যার বিয়ের বয়স দেশের আইন হিসেবে পার হয়ে গেছে সাত-আট বছর আগে, সে ছেলে এখনো কারো সাথে সম্পর্কে জড়ায় নি, কাওকে ভালো বাসে নি একথাও ওকে বিশ্বাস করতে হবে……?

শক্ত করে একটা ধোয়া দিলেই এসব প্রেম পালানোর রাস্তা খুঁজে পাবে না। একটু খোঁজ খবর নিলেই জানা যাবে তার প্রেমের সংখ্যা হয়তো হাতের আঙুলে হিসাব হবে না। ওর এত খোঁজ নেয়ার দায় নেই। এ ছেলে যদি দুধে ধোঁয়া তুলসীপাতাও হয় তাও ওর একে নিয়ে কিছু ভাবা সামনে এগুনো সম্ভব না। এমনিতেই দোষ হয়ে আছে ও নাকি নাতাশার বিয়ে ভাঙতে চেয়েছে। এসব কিছু হলে হয়তো শুনতে হবে ও এখন নাতাশার সংসার ভাঙতে চায়। উফ এসব ভেবে রোদেলার ভয় হয়।

অন্য কেও হলে হয়তো এত হিসাব করতো না। রোদেলার প্রতিটি কদম ফেলতে হয় হিসেব করে ৷ কারণ ওদের জীবণটা অন্য আট-দশ জনের মতো না। পান থেকে চুন খসলেই ওর মা-ই ঢাক ঢোল পিটিয়ে মানুষকে জানাবেন।

রোদেলা সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় কল করে শোভনের ফোনে, তৃতীয় বার রিং হতেই কল রিসিভ করে বললো
: রোদেলা আমি একটা জরুরি কাজে ব্যস্ত আছি, তোমাকে ঠিক পনেরো মিনিট পর আমি কল করছি….
বলেই কলটা মুখের উপর কেটে দিলো।

কি অভদ্র ছেলে। সারাদিন কল দিয়ে আমাকে পায় না, এখন আমি কল দিলাম ভাব দেখালো…
মহা ফাজিল তো…

পনেরো মিনিট কেন, ওর কলই আর কখোনই ধরবো না, মনে মনে বলে ফোনটাকে সাইলেন্ট করে ওর ডেস্কে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ওর মাথাটা এখন রাফ খাতার মতো হাবিজাবি বিষয়ে দিয়ে ভরা। কেমন যেন দম বন্ধ লাগছে সবকিছু মিলিয়ে। কি হবে.., কি হতে যাচ্ছে তা ভেবে একটু চিন্তিত সবাই। ছোটমামী মায়ের এই ঘোষণার পর থেকে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছেন। তিনি কি চাচ্ছেন, তার মনে কি চলছে তা বুঝতে পারছে না ও। এতদিন রোদেলা ভাবতো ওরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাক এটাই উনি মনে প্রাণে চান, কিন্তু এ কথার পর হতে তাকে কেমন আহত মনে হচ্ছে। এটা তার ভাব নাকি সত্যি চেহারা কে জানে।

বড় মামীকে দেখা গেলো নিরপেক্ষ। তিনি এসব নিয়ে তেমন চিন্তিত নন। হয়তো তিনিও জানেন শেষ পর্যন্ত ওদের যাওয়া হবে না। মাকে রোদেলা যতটুকু চিনে তাতে ও জানে তিনি কারো কথা শুনবার মেয়ে নন। তবে বড় মামা এ সমস্যাটার একটা বড় প্রভাবক। একমাত্র তিনিই পারেন মায়ের সিদ্ধান্তকে টলাতে। ওদের দু-বোনের বিয়ের ব্যাপারটা
যতটা না তার যাওয়া দমন করবে। তারচেয়েও বড় অস্ত্র চেনা আছে বড় মামার। নোভেল….!

রোদেলা আর এসব ভবাতে চায় না। এসব ভেবে কি হবে…
যা হবার তাই হবে, আল্লাহ নিশ্চয়ই উত্তম পরিকল্পনাকারী..
এই মুহুর্তে এর চেয়ে বড় কোন সান্ত্বনা ওর জানা নেই।

খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হতে সাড়ে এগারোটা বাজলো। ছোট মামী খেতে এলেন না। বড় মামী তার খাবার রুমে দিয়ে এসেছেন। অন্য সময় হলে রোদেলা যেত এই খাবার নিয়ে। ওর নিজের ও যেতে ইচ্ছে করেছিলোনা, বড় মামী ও ওকে বলে নি দিয়ে আসতে। আসলে ঐদিন কার ঘটনার পর এখনো সব স্বাভাবিক হয় নি। মামী অবশ্য স্বাভাবিকই, কিন্তু রোদেলা উত্তর দিচ্ছে হ্যা, না, আচ্ছা, এসব ছোট ছোট বাক্যে। রোদেলা ঐদিনের ব্যাবহারে সত্যিই কষ্ট পেয়েছে।

সব কাজ শেষে রোদেলা ঘরে এসে শুয়ে পরে ফোনটা হাতে নিয়ে। ফোনের পওয়ার বাটন প্রেস করতেই ওর চোখ কপালে। একশো সতেরোটা মিসড কল…..!
ম্যাসেজ এসেছে তেইশটা….!

শোয়া থেকে উঠে বসলো রোদেলা। এক এক করে ম্যাসেজ গুলো চোক করতে লাগলো। ম্যাসেজ বক্স ফুল হওয়ায় কিছু ম্যাসেজ পোন্ডিং। ওর কান দুটো হঠাৎই গরম হয়ে গেলো। ম্যাসেজ চেক করা অবস্থায়ই একটা কল আসলো শোভনের।
রিসিভ করতেই হড়বড় করে বললো……

চলবে…

(একটু ছোট হয়ে গেলো, আমার কইন্যা এখনো ঘুমায় নি তাই)
Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1493116191149567/
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1496537807474072/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here