রোদেলা লেখা: মাহাবুবা মিতু পর্ব: ১৪

0
909

রোদেলা
লেখা: মাহাবুবা মিতু
পর্ব: ১৪

: কি ব্যাপার রোদেলা এসব কি হ্যাঁ, কেমন মেয়ে তুমি…? বললাম পনেরো মিনিট পর কল দিচ্ছি, তাতেই এত রাগ…
তোমাকে নিয়ে তে আমার অনেক জ্বালা আছে…
এখনি তুমি এমন করছো, বিয়ের পর….
কথাটা শেষ করতে দেয় না রোদেলা। ধমকের সুরে বলে-
: চুপ…! একদম চুপ, কি মনে করেন আপনি নিজেকে হ্যা…
আত্নীয় বলে এতদিন সহ্য করেছি, আর না। এভাবে কথা বলার মানে কি …
: তুমি জানো কল রিসিভ না করায় আমার কত কষ্ট হচ্ছিল। তুমি কলটা রিসিভ না করায় আমি এখন কোথায় পৌঁছে গেছি জানো…?
: আপনি যেখানেই হন, আমার লাইফ থেকে বিদায় হন। আমি এমনিতেই অনেক প্যারায় আছি, প্লিজ…!
আমি এসব আর নিতে পারছি না….

বলেই কলটা কেটে দেয় রোদেলা, মনে মনে বকে অশোভন ঐ লোকটাকে। কেমন ফাজিলের ফাজিল এমন একটা ভাব নিয়ে কথা বলে যেন কতদিনের সম্পর্ক ওদের… আচ্ছা ওকে কি এতই সস্তা মনে হয় শোভনের। যে এমন ফাইজলামি করছে ওর সাথে। এখনে ভালোবাসার কিছুই দেখছে না রোদেলা। জাস্ট মজা নেয়া। ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গী এমন না। দুম করে বললেই হয় না ভালোবাসি। অনেকসময় কিছু না বলেও বোঝানো যায় সেটা। মেয়েরা সেটা বুঝতে পারে । ইশ্বর তাদের এই বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।

অনেক কিছু করার বাকী জীবনের। প্রেম কিংবা বিয়ে এখনো ওর জীবণের ফার্স্ট প্রায়োরিটি না। ওর এখন জীবণের একটাই লক্ষ নিজের পায়ে দাঁড়ানো।

ম্যাসেজ আসে রোদেলার ফোনে, পাত্তা দেয় না ও,
বিছানায় ঘুমাতে চেষ্টা করে। ফোনটা সাইলেন্ট এখনো….

ঘরের বাতি নিভিয়ে শুয়ে পরে ও, নানান চিন্তা মাথয় ঘুরপাক খায়। কিভাবে এ সুযোগে এ বাড়ি ছাড়া যায় তা ভাবতে থাকে রোদেলা। এপাশ ওপাশ ফিরে ঘুম আর আসে না, হঠাৎ ওর শীত শীত লাগে। পায়ের কাছের কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে নেয়। এসব হাবিজাবি চিন্তা মন থেকে বের করে চোখ বন্ধ কর, টান হয়ে শুয়ে দু হাত পাশে রেখে লম্বা লম্বা নিশ্বাস নেয় ও। এ মেডিটেশনটা ও প্রায়ই করে। ঘুম আসতে আসতে ঠিক কত রাত হয় তার খেয়াল নেই ওর।

হঠাৎ বৃষ্টির ছটায় ওর ঘুম ভেঙে যায়। শীত শীত লাগায় ও বারান্দার দিকের জানালা দড়জা খুলে ঘুমায়, সেদিক থেকেই পানির ছাট আসে। গায়ের কাঁথা পাশে রেখে চুলগুলো খোঁপায় বাঁধতে বাঁধতে
সেগুলো বন্ধ করতে যায়। ল্যাম্প পোস্টের আলোয় সরু গলিটা শেষ পর্যন্ত দেখা যায়। কিছু একটা আবছা মতো দেখতে পায় ও। বোয়ালখালী ভঙ্গিতে জানালার শক্ত পাল্লগুলো ঠেলে দেয়। হঠাৎ শীতল একটা স্রেত ওর শিরদাঁড়া বরাবর বয়ে যায়। ওর মস্তিষ্ক ওকে বলছে আবছা মতো দেখা প্রতিচ্ছবিটি ওর চেনা । হঠাৎই পেছন ফিরে তাকায় ও। অন্ধকারে একটা অবয়ব এই বাড়ির দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে। ওর ভিতরে ভয়ের কম্পন সৃষ্টি হয় হঠাৎ।

জানালার কাঠের পাল্লা গুলো আলগা রেখেই দৌড়ে ঘরে আসে ও। বালিশের নিচ থেকে ফোন নিয়ে দ্রুত পাসওয়ার্ড দেয় ও। ওর নিজের ফোন নিজের পাসওয়ার্ড তবুও দু-দুবার ভুল করে ও। তৃতীয় বার দিতেই আবার রিং ঢুকে ওর ফোনে। ও কলটা রিসিভ করে ধরে চুপ করে থাকে। ওপাশ থেকে বলে
এইমাত্র কি তুমি ছিলে বারান্দায়…?

ওর সন্দেহটাই সত্যে পরিণত হয়। রেদেলা যেন বোবা হয়ে যায়। ওপাশ থেকে আবার বলে উঠে-
ম্যাসেজ গুলো চেক না করেই মনে হয় ঘুমিয়ে গিয়েছিলে তুমি। আমি তোমার বারান্দার ঠিক উল্টো দিকটাতে দাঁড়িয়ে।
রোদেলা এই রাত সাক্ষী – আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। জানি আমি একটু পাগলাটে ধরনের, আমার ভালোবাসা প্রকাশের পদ্ধতিটা হয়তো ঠিক না
তবে এ ভালোবাসা মিথ্যে নয়।

একবার তোমাকে দেখবার নেশা আজ আমাকে এত দেরী পর্যন্ত আটকে রেখেছে। তুমি জানালা আটকাতে না আসলে হয়তো সকালে উঠে বারান্দায় দাঁড়াতেই আমাকে দেখতে পেতে….

অনেক বেশী পাগলামি করে ফেলেছি এজন্য আমি সত্যিই লজ্জিত। পারলে আমায় তুমি আমায় ক্ষমা করো। তোমার দিক থেকে কোন অনুভূতি যদি
না থাকে আমি তোমাকে আর কখনো বিরক্ত করবো না প্রমিজ….

ওপাশ থেকে কলটা কেটে যায়। ত্রিশ সেকেন্ডের ও কম সময়ের ব্যাবধানে একটা বাইক এই গলি বরাবর অতিক্রম করে যায়। রোদেলার বুঝতে সমস্যা হয় না যে এটা শোভনের বাইকের শব্দ। একটু পরই আজান শুরু হয় চারদিকের মসজিদ গুলোতে। রোদেলার মন এবার যেন কেমন আর্দ্র হয়ে যায়। মানুষ তো….!

নামাজ পরে আল্লাহর কাছে সঠিক পথে থাকতে পারার দোয়া করে রোদেলা। সবকিছু মিলিয়ে জীবণটা কেমন যেন জটপাকানো অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। সমনের দিনগুলোতে পথচলা যেন সহজ হয় এই সাহায্য প্রার্থনা করে রোদেলা। ওর মায়ের জন্য হেদায়াত চায়, প্রতক্ষ্য কিংবা পরোক্ষভাবে ওর মা-ই এসব পরিস্থিতি তৈরীর জন্য একমাত্র দায়ী৷ ওর জায়গায় অন্য কেও থাকলে হয়তে এ জীবণ থেকে পালাতে চেষ্টা করতো, বিয়েশাদি করে এই বন্দী জীবণ থেকে মুক্ত হতো। কিন্তু ও এমন কিছু ভাবে না। আচ্ছা এটা কি ওর মায়ের কোন মানসিক সমস্যা….!

অবচেতন মন যখন আবেগে আর্দ্র, সচেতন মনের পাহারাদার তখন হাফ ছেড়ে বাঁচার কথা বলে। রোদেলা আবেগকে কখনো প্রশ্রয় দেয় না। লম্বা সময় নিয়ে গোসল করে। বের হয়ে ফুরফুরে একটা আমেজে নাশতা করে, সুন্দর একটা জামা বের করে পরে, চোখে হালাকা কাজল পরে, হালকা রঙের লিপস্টিক দেয় ঠোঁটে। একহাতে দুটো কাঠের চুড়ি আরেক হাতে ঘড়ি পরে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে লম্বা একটা শ্বাস নেয়। ফুল অফ এনার্জি একটা মুড নিয়ে আয়নাতে দেখে নিজেকে, হঠাৎ রোদেলার মা ওর ঘরে এসে দেখে বলল-
কিরে কই যাচ্ছিস….?
ওর মায়ের দিকে ঘুরে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললো
: কেন…! কলেজে…
: আমি তে ভাবছিলাম বিয়ে খাইতে যাচ্ছিস।
: শোন মা, বড় মামী যখন ছাদে যায়, এরচেয়েও বেশী সাজে… বলেই ডাইনিং রুমে গিয়ে নাশতা খেতে বসে। নাশতা খেতে খেতে ফোন করলো রিয়াকে…

ওর প্র্যাকটিক্যাল খাতাটা যেন নিয়ে আসে তা বলতে…
সাড়ে আটটার মধ্যে। ফোন থেকে রিড-আনরিড সব ম্যাসেজ ডিলিট করতে যায় রোদেলা, এমন সময়ই বড় মামী এসে বলে রোদেলা গত রাতে শোভন রোড এক্সিডেন্ট করেছে পোস্তগোলা ব্রিজের ঢালুতে, হসপিটালে ভর্তি। তোর মামা তো বাড়িতে নেই, তুই চল মা আমার সাথে। শুনে রোদেলা আৎকে উঠে।

মামী বোরকা পরতে পরতে বললো এত রাতে এই ছেলে এদিকে কি করে এলো বল দেখি। রোদেলা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে, কি বলবে বুঝতে পারছে না। ও মনে মন ভাবছে
আচ্ছা এ ঘটনার জন্য কি আমি দায়ী….!

চলবে….

(খুবই দুঃখিত দু’দিন পর তারউপর এত ছোট পর্ব তাই। আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী, সে উপলক্ষে ঘরোয়া আয়োজনে একটু ব্যাস্ত ছিলাম। বিশেষ দিন বলে কথা।)
Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1494590951002091/
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1497877100673476/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here