অনুভূতিরা মৃত একুশ পর্ব

0
199

গল্প- অনুভূতিরা মৃত
একুশ পর্ব
.
বনলতা অনেকটা মায়া আর আবেগ মিশিয়ে কাঁদে। ইচ্ছে করে নতুন করে প্রেমে পড়ি। প্রশ্ন করি আমি– কান্না করছো কেন? উত্তর নেই তার। সে কেঁদেই চলছে, অনবরত কান্না। যে কান্নার ভাষা আমার স্পষ্ট। পৃথিবীতে এই একটি মানুষের কান্নার শব্দ আমার সহ্য হয় না। মেনে নিতে পারি না। বুকের বাম পাশে চিনচিন ব্যথা হয়। মূহুর্তেই, বলে উঠলাম- পাগল মেয়ে কাঁদছো কেন? সে এবার কিছুটা শান্ত, কিছুটা শীতল কণ্ঠে বলে উঠল।
— আগামী তিনটি দিন আমাকে দিবে? আমার সাথে কাটাবে, শুধুই আমার সাথে। আমি নিজ হাতে রান্না করব সেই খাবার দুজন মিলে খাবো।
আমি হ্যাঁ বলে দিলাম। বিয়ের পর বউয়ের প্রথম আবদার। এমন আদর মাখা গলায় আমি শীতল হয়ে যাই।
.
বাঙ্গালী নারী রান্না, বায়না আর কান্না এই তিনটি কাজ খুব ভালো করে। আবার কেউ কেউ বলেন, লাজুক ঘোমটা টানা কাজল দেয়া মমতাময়ী বাঙালি নারী নিজের আদর, ভালোবাসা দিয়ে খুব সহজে জয় করে নিতে পারেন পুরুষের মন। বনলতা তাদের একজন। বনলতা রান্না করে, আবার বায়না করে কখনো কখনো আবার কান্না করে। গরুর গোশত দিয়ে ভুনা খিচুড়ি শুনতেই মুখে জল চলে আসে। এমন একটি মজাদার খাবার রান্না করেছে বনলতা। খাবার নিয়ে সামনে বসে আছে আমার। কোন পার্ক নয়, কোন রেস্টুরেন্ট নয়, আমরা বসে আছি টয়োটা করোলা কোম্পানির কালো রঙের গাড়িতে, ডাইভিং শিখার পর থেকে বনলতা প্রায় পিসির গাড়ি নিয়ে বের হয়। টয়োটা করোলা গাড়িটি এদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এক তথ্যে উঠে এসেছে গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গাড়ি টয়োটা করোলা।
.
নিজ হাতে নালা বানিয়ে আমার মুখে তুলে দিচ্ছে। অদ্ভুত লাগছে তাকে, এমন বাচ্চামি করছে কেন? মনে হচ্ছে আমায় খাওয়ানোর সময় খুব কম। কেন এত তাড়াহুড়ো? খাওয়ার এক ফাঁকে প্রশ্ন করে, আচ্ছা আমি হারিয়ে গেলে কোথায় খুঁজবে? অবাক হই আমি। এই প্রশ্নের জন্য কখনো প্রস্তুত ছিলাম না। বনলতার প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম, তুমি কখনো হারাতে পারো না। যদি কখনো হারিয়ে যাও তন্নতন্ন করে পৃথিবীর শেষ প্রান্তে খুঁজব। চোখ ভিজে যায় তার। মূহুর্তেই বলে উঠে এই কান্না আনন্দের। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে, পৃথিবীর বুকে অন্ধকার নেমে আসে। বাসার গেইটে আমাকে নামিয়ে দেওয়ার পর বিদায় জানায়। বিদায় বেলায় করুণ চোখে তাকায় সে। বিষাদে ছেঁয়ে গেছে চোখ মুখ। আবার তো দেখা হচ্ছে, এই বলে বিদায় নেয়। মূহুর্তেই, অন্ধকারে মিলিয়ে যায় কালো রঙের টয়োটা করোলা গাড়িটি।
.
রাত যত গভীর হয়, একাকিত্ব, বিষণ্নতা, বিরহ কাতরতা তত পেয়ে বসে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, ইচ্ছে হচ্ছে বৃষ্টিতে নিজেকে ছুঁয়ে দিই৷ তার আগে বনলতাকে ফোন করা যায়৷ মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে বনলতার নাম্বার ডায়াল করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে নাম্বার বন্ধ। এই সময় নাম্বার বন্ধ থাকার কথা না। ফিরতি কলেও নাম্বার বন্ধ। সে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে, এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়ি। রাতের আঁধার নিভে সকাল হয়। পূর্বের আকাশে সূর্যের দেখা নেই, আছে শুধু বিরহ বিষন্নতা ভরপুর কালো মেঘে ঢাকা এক আকাশ। বনলতা কে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি৷ বারবার নাম্বার বন্ধ বলছে। বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টি ভেজা সকাল। বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই। টানা বৃষ্টি হচ্ছে, থামার কোন লক্ষ্মণ নেই। আকাশের বুঝি আজ মন খারাপ? নয়তো কারো বিরহে আকাশ বড্ড অভিমান করছে, সেই অভিমান থেকে নিজেকে ঝরাচ্ছে।
.
সকাল, দুপুর, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে অাসে। সন্ধ্যার সাথে সাথে আকাশের মন খারাপ বেড়েছে, বেড়েছে বৃষ্টির পরিমাণ। না! বনলতার নাম্বারে কল করে পাওয়া যায়নি। কিছু সময় পার হতেই খবর এলো বনলতার এলাকায় বিদ্যুৎ সমস্যা। এই সমস্যা থাকবে কয়েকদিন। তার মানে এই কয়েকদিন কথা হবে না। কষ্ট হয়, সান্ত্বনা দেই নিজেকে, দেখা হবে, কথা হবে৷ আবারও কোন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে উঠব ভালোবাসি কিংবা নদীর বুকে ভাসতে ভাসতে কপালে একে দিব ঠোটের ছোঁয়া।
.
আজকে তিনদিন বনলতার দেখা নেই, কথা নেই৷ এখন আর বৃষ্টি নেই, আকাশের মন বড্ড ফকফকা। ঝলমলে রোদ্দুরে ভাসাচ্ছে সে। আকাশের মন ভালো হওয়ার সাথে সাথে আমার মনে জমেছে শ্রাবণের মেঘ। একবার ঝরে পরে কখনো আবার ঝুম বৃষ্টির মতো ঝরে কখনো আবার হালকা করে ঝরে। বনলতার দেখা নেই, কথা নেই। এভাবেই কেটে গেলো সাতদিন। মন আর মানেনি। বেরিয়ে পড়ি আমি চলে যাই তার বাসার সামনে সেখানও হতাশ। তার বাসার দরজায় তালা ঝুলানো বড্ড অবাক করে আমায়৷ চিন্তায় পড়ে যায় আমি। সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে ছেড়ে আক্ষেপ মেটায়। যতদূর চোখ যায় এক অসহায় বালকের মতো চেয়ে থাকি। আহা সে কী চাহনি। এক নিরুপায় চাহনি। যে চাহনি বনলতাকে খুঁজে বেড়ায়।
.
এতটুকুই বলতেই থেমে যায় রুয়েল। সামনে রাখা পানির বোতল থেকে পানি খাই। চোখেমুখে তার বেদনার ছাপ। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তা দেখে মায়া হয় মিহির। ভিতরে থাকা হৃদয়ে বিরহের গান হয়৷ ঘড়ির কাটা দেড়টা অতিক্রম করেছে, রুয়েল শোনাচ্ছে অনুভূতিরা মৃত গল্প। যার একমাত্র শ্রোতা মিহি। এখনো গল্পের টুইস্ট বাকি মিহি যা জানতে চাই, কী হয়েছিল বনলতার? কোথায় গিয়েছিল সে, বনলতার কি খুঁজ পেয়েছিল? প্রশ্ন করে। রুয়েল বলতে শুরু করে, বনলতার সাথে দেখা হয় পঁচিশ দিন আগে৷ এরপর থেকে সে নিখোঁজ। পঁচিশতম দিনে দৌঁড়ে চলে যাই তার পিসির কাছে, হসপিটালের বারান্দায় পায়চারি করছি, পিসি এখনো আসেনি৷ পিসি আসতেই বলে উঠলাম, বনলতা কোথায়? নিশ্চুপ পিসি৷ কোন উত্তর নেই তার। নিরবতা সহ্য হচ্ছে না আর৷ পিসিকে আবার প্রশ্ন করি৷ পিসি একটা চিঠি দিয়ে বলে, এই চিঠিতেই লেখা আছে বনলতার ঠিকানা৷
.
চলবে………………….
— সাকিব হাসান রুয়েল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here