অনুভূতিরা মৃত বিশ পর্ব

0
132

গল্প- অনুভূতিরা মৃত
বিশ পর্ব
.
বনলতা যতটা সহজ ভাবছে বিষয় তত জটিল। তারপরও আমি তার কথার সাথে তাল মিলিয়ে বললাম মেনে নিলেই হলো। মাঝেমধ্যে মনের বিরুদ্ধে যেয়েও বলতে হয়। প্রিয় মানুষকে আনন্দে দিতে কখনো আবার হাসাতে। এতে ভালো থাকে প্রিয়তমারা। ভালো থাকে প্রিয়রা। বনলতা নিজের ঢাল হিসেবে এক হাতে নিয়েছিল পিসিকে৷ পিসি বাবাকে বলবে। বাবা অমত করবে, পিসি তাকে বুঝাবে একটা সময় যেয়ে বাবা বুঝবে। মেয়ের সুখের কথা ভেবে, মেয়ের ভালোবাসার কথা ভেবে তুলে দিবে ভিন্ন ধর্মের একটি ছেলের হাতে। পূর্ণতা পাবে ভালোবাসা। জয় হবে ভালোবাসার৷ অন্য সকল সম্পর্কের মতো তাদের সম্পর্কে হানা দিবে না অজস্র ঢেউ। যে ঢেউয়ে ডুবে যায় সম্পর্কের মেরুদণ্ড। বনলতা এটাই চেয়েছিল, এটাই ভেবেছিল। পিসি সবটা সহজ করে তুলবে।
.
বাঙালি মধ্যবিত্ত মেয়েদের কলেজে ওঠার সাথে সাথেই প্রায় প্রপোজাল আসা শুরু হয়। মা বাবাও ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিতে চায়। আর একটি বিয়ের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। যা কখনো প্রকাশ করা হয়নি। বলা হয়নি কারো সাথে। বনলতা তখন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে। তার প্রস্তাব আসা স্বাভাবিক কিন্তু তার পরিবারের ইতিহাস বলে ডিগ্রি অর্জন করা না পর্যন্ত বিয়ে করেনি এই পরিবারের মেয়েরা। তাহলে বনলতার বেলায় ভিন্ন কেন? বনলতা কি এই পরিবারের মেয়ে না? না! বিষয়টি তা না। পিসি চাচ্ছে না বনলতার জয় হোক। তাই তো বনলতার অগোচরে পিসি নিয়ে আসে লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি পাত্র। লন্ডনের মাটিতে অঢেল সম্পদ তার। প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ফেলে সেন বাড়ির ছোট মেয়ে বনলতা সেনকে। বিষয়টা আচ করে বনলতা।
.
গভীর রাত৷ ছাদে বসে বনলতার সবচেয়ে অপছন্দের কাজ করছি। নিকোটিনে আগুন ধরিয়ে, সিগারেট টেনে যাচ্ছি। অনেকদিন পর তৃপ্তি করে সিগারেট ঠোঁট বুলাচ্ছি। সিগারেট তার পছন্দ না। কথা দিয়েছিলাম আর কখনো সিগারেট ধরাব না৷ যদি কখনো সিগারেট মুখে তুলি তাহলে হারিয়ে যাবে বনলতা। শুধু আমার জীবন থেকে নয় এই পৃথিবী থেকে। কথা রেখেছিলাম৷ আজ পারিনি কী এক অজানা কারণে পুরনো অভ্যাস আবার রূপ দিলাম। মূহুর্তেই বনলতার ফোন। তড়িহড়ি করে ফেলে দিলাম হাতে থাকা সিগারেট। ঘটনা খুলে বলে বনলতা। অজানা এক ভয় কাজ করছিল। তাকে হারানোর ভয়। যে ভয় আগে কখনো তাড়া করেনি। তাই তো এক মূহুর্ত দেরি করিনি। সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীকাল বিয়ে করব আমরা। বন্ধুদের জানিয়ে দিলাম। বিয়ের সকল প্রস্তুতি সেড়ে রাখলাম। ভয়াবহ একটি রাত কেটেছিল। মনের ভিতর থাকা গোপন ভয়। সবকিছু ঠিকঠাক হবে তো? সমাজ কি মেনে নিবে, পারব তো আমরা সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে বনলতাকে ঘরে তুলতে? মায়ের রিয়েক্টশন কী হবে। মা কি আমায় মেনে নিবে নাকি সমাজের কাছে হেরে আমায় তাড়িয়ে দিবে? পারব তো বনলতাকে নিজের করে পেতে?
.
আজকে সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। ডাইনিংয়ে খাবার সাজিয়ে বসে আছে মা। একবার চিল্লিয়ে বলে উঠছে আর কখন খাবি? একদম খেতে ইচ্ছে করছে না আমার। মায়ের সামনে যেতে পারছি না। যদি মায়ায় পড়ে যায়। মায়ের মন। মা যদি আটকে দেয় আমায়। তাহলে তো বনলতার সাথে প্রতারণা করা হবে। ধোকা দেওয়া হবে। মাকে কী এখন সবটা বলা ঠিক হবে? রাজ্যের টেনশন। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি বনলতার নাম্বার থেকে ফোন। ডাইনিংয়ে যাইনি আমি। মা কে এড়িয়ে বের হয়ে যায়। অপরাধবোধ কাজ করছে, বিয়ে করতে যাচ্ছি মাকে জানাব না। মায়ের দোয়া নিতে পারতাম। মায়ের নাম্বার ডায়াল করে জানিয়ে দিলাম। একটা কাজ করছি মা। ভুল হলে ক্ষমা করে দিয়ো। দোয়া করো তুমি। এই বলেই লাইন কেটে দিলাম।
.
সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। সবকিছু গোছানো ছিল। নতুন করে সমস্যা পোহাতে হয়নি। হাজির হলাম একজন ইসলামি বিশেষজ্ঞের কাছে, নিজ মুখে বনলতা জানাল– ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে সে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক যে কেউ নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বেলা তখন বিকেল তিনটা বেজে পনের মিনিট। বিয়ে করি আমরা। কনের নামের জায়গায় বনলতার নাম লেখা হয় আয়েশা হাসান। ধর্ম ত্যাগ করায় বনলতার নতুন নাম আয়েশা। বিয়ের পর মেয়েরা স্বামীর নাম যোগ করে। যার যের ধরে বনলতা সেন থেকে নতুন নাম আয়েশা হাসান।
.
বনলতার ইচ্ছে ছিল বিয়ের প্রথম রাত রিকশায় করে ঘুরবে। জোসনা রাতে মিটমিট করে আলো জ্বলবে। না আজ আকাশে জোসনা নেই, তবে আছে বৃষ্টি। কৃত্রিম আলোতে ঝলমল করছে শহর। রাতের শহরে রিকশায় করে ঘুরছি আমরা। কিছুক্ষণ পর পর বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে। ল্যাম্পপোস্টের নিচে সে আমার কাঁদে মাথা রেখে শক্ত করে হাতটি ধরে রাখে। আমি খুব যত্ন করে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছি। মিটমিট করে সে হাসছে, আনন্দে আমার মন নেচে উঠছে। মধ্যরাত বাসায় পৌঁছে দেওয়ার আগে, ওগো স্বামী বলে ডেকেছিল সে। কথাটি বলতে, লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে যাচ্ছিল। শুভ বিদায়।
.
আজ খুব আরাম লাগছে, তৃপ্তি লাগছে। আর কোন বাঁধা নেই। আনন্দে আত্মহারা মন। তখনি বনলতার ফোন। ফোন রিসিভ করতেই কেঁদে উঠে সে। সে কি কান্না। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে, দৌঁড়ে চলে যায় তার কাছে, সামনে বসে কান্না দেখি। কিছু মেয়ে খুব সুন্দর করে কাঁদে। কেউ কেউ হাউমাউ করে কাঁদে, কেউবা কাঁদতে যেয়ে চিৎকার করে উঠে। বনলতা অনেকটা মায়া আর আবেগ মিশিয়ে কাঁদে। ইচ্ছে করে নতুন করে প্রেমে পড়ি। প্রশ্ন করি আমি– কান্না করছো কেন? উত্তর নেই তার। সে কেঁদেই চলছে, অনবরত কান্না।
.
চলবে…………….
— সাকিব হাসান রুয়েল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here