অতিথি পর্ব:০২ লেখা:মিশু মনি .

0
931

অতিথি
পর্ব:০২
লেখা:মিশু মনি
.
হঠাত মিশুর খুব নাচতে ইচ্ছে করছে।ইচ্ছেটা কোথ থেকে উদয় হলো ও বুঝতে পারছে না।ইচ্ছে যখন হয়েছে তখন তো নাচা উচিৎ। কিন্তু বাসায় তো অতিথিরা এসেছেন। জোরে গান ছেড়ে দিলে তারা বিরক্ত হবেন হয়ত।
কিন্তু নাচতেই হবে।মিশু হিমুকে ওর রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। আস্তে গান ছেড়ে দিয়ে হিমুকে বলল,তুমি আমার ডান্স দেখো। ওকে?
হিমু মাথা নেড়ে হ্যা বলল।
অতঃপর মিশু নাচতে শুরু করে দিলো। উথাল পাথাল ডান্স। হিমু হা করে তাকিয়ে আছে।ও কস্মিনকালেও এমন নাচ দেখেনি।ওর বেশ মজাই লাগছে।
মিশুরও খুব মজা লাগছিল। কিন্তু হঠাত ও মুর্তির মত স্থির হয়ে গেল।তারপর অগ্নিমুর্তি ধারন করে বলল,এই যে আপনি এখানে কেন?
আংকেল আনটির মেজ ছেলে ফ্রেশ হওয়ার জন্য মিশুর রুমের বাথরুমে ঢুকেছিল।বের হয়েই মিশুকে নাচতে দেখে কিছু না বলে চুপচাপ বিনামুল্যে সার্কাস দেখার মত মিশুর নাচ দেখছিল। কিন্তু মিশুর এমন প্রশ্ন শুনে সে চমকে উঠল।
মিশু আবারো হুংকার দিলো, how dare you?
ছেলেটি বলল,আমিতো ওয়াশরুমে গেছিলাম। বের হয়ে দেখলাম তুমি ডান্স করছ তাই disturb করিনি।
– আপনি আমার পারসোনাল ওয়াশরুমে কেন? এ বাড়ি তে তো আরও বাথরুম ছিল।
– তোমার আম্মু বলল তাই।
– ওকে।কিছু বললাম না।কিন্তু নেক্সট টাইম যেতে হলে আমাকে বলবেন। আমি দেখিয়ে দেবো।
– তোমার কাজ বুঝি সবাইকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া?
মিশু রেগে হিমুকে বলল,তুমি বাইরে যাও।এই লোকটাকে এখন আমি বানাবো।
– কি বানাইবেন আপা?
– শুটকি বানাব।
– শুটকি তো রোইদে দিয়া বানাইতে হয়।
– চুপ করো।যেতে বলছি যাও।এক্ষুনি যাও।
হিমু বেড়িয়ে গেলে মিশু রাগে গজরাতে লাগল।
ছেলেটি বলল,এত রাগ করতে হবেনা।কিভাবে রাগ কমাতে পারি বলো?
মিশু বলল,আমি যা বলব তাই করবেন?
– অবশ্যই।তোমার রাগ কমানোটা এখন আমার নৈতিক দায়িত্ব। তুমি যদি বলো তোমার ওয়াশরুমে যা যা ত্যাগ করেছি সব তুলে বাইরে ফেলে দিয়ে আসতে তবে তাই করবো।
মিশু মজা পেল কথাটি শুনে।ওর রাগ কমে গেল।
দাত কেলিয়ে বলল,কি কি ত্যাগ করেছেন?
– মলমুত্র আর থু থু।
– এগুলা ফেলে দিবেন কিভাবে? হা হা হা…
– সেটাই তো। মলমুত্রের স্তুপ থেকে আমার মল তো খুজেই পাবো না।কাজেই পুরা বাথরুম টাই তুলে বাইরে ফেলে দিয়ে আসবো।
মিশু হো হো করে হেসে বলল,এত পচা কথা বলেন কেন?
– তুমি পচা কথা শুনতে ভালোবাসো তাই।
– কে বলেছে?
– পচা কথা শুনেই তো তখন থেকে হাসছ।
মিশু হাসি থামিয়ে বলল,হুম প্রচুর হেসেছি।রাগ শেষ।
– ধন্য হলাম।তা রাজকন্যার নাম কি?
– মিশু। আর আপনার?
– কাজী মর্ম।
– এমা! আপ্নিও কাজী?
– হ্যা।আমরা সবাই কাজী।
– সবাই বিয়ে পরাণ?
মর্ম হেসে বলল, বিয়ে পরাবো কেন? তোমার দাদুর নাম তো রিয়াজুদ্দিন ফকির। তিনি কি ভিক্ষা করেন?
মিশু কিছুক্ষণ ভেবে বলল,এটা তাহলে বিশেষন! এইবার বুঝলাম। কিন্তু আপনার ভাই তো বলেছে উনি বিয়ে পড়ান।
– হা হা হা।কোন ভাই?
– কাজী বিড়াল মৈত্রী।
– কি বললা! বিড়াল মৈত্রী? ভাইয়ার কিন্তু খুব রাগ। যদি জানতে পারে তাহলে কিন্তু খবর আছে মিশু।
– আপনার ভাই কিচ্ছু করতে পারবে না।বিদেশ ফেরত ডিগ্রী ধারী হয়েছে তাতে কি? আমি ভয় পাইনা।উনার সামনেই বলেছি আপনারা তিন ভাই বিড়ালের মত ফর্সা আর বিড়ালচোখী।
– তাই বলে নামের সাথে বিড়াল যোগ করবা?
– হ্যা করবো। আপনি কাজী বিড়াল মর্ম।
মর্ম হেসে বলল,বাবাগো! কি দস্যি মেয়ে! আমারা এত সুন্দর তিন টা ভাই আর বলে কিনা বিড়াল!
– জ্বি বিড়াল। বড় টা হুলো বিড়াল , আপনি মেনি বিড়াল, আর পিচ্চি টা পুষি বিড়াল।
মর্ম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মেয়েটির তো ভয়াবহ সাহস! মর্ম ওর কয়েক বছরের বড়, তার সাথে এভাবে কথা বলছে! তার বড় ভাইকেও নাকি এভাবে বলেছে!
মিশু বলল,আপনার ছোট ভাইয়ের নাম কি?
– কাজী মাত্রা.
– বাহ! দারুণ তো!! আপনাদের আর নাম নেই?
– আছে।
এমন সময় হিমু এসে বলল সবাইকে নাস্তা খেতে ডাকছে।যেতে যেতে মিশু ওদের তিন ভাইয়ের পুর্ন নাম জেনে নিলো।
খাবার টেবিলে বসে মিশু মাত্রার সাথে কথা বলল।কিন্তু মাত্রা খুবই শান্ত স্বভাবের।মিশু ভেবেছিল এই বাচ্চা টার সাথে হয়ত তার খুব ভাব হবে কিন্তু বাচ্চা টা তো কথাই বলে খুব কম।মিশু একাই বকবক করে চলেছে।
বাবা বললেন,মিশু তুমি থামলে আমরা একটু কথা বলতে পারি।
মিশু চুপ করে গেল।বাবা বললেন,কাল আমরা সকাল বেলাতেই ঘুরতে বের হচ্ছি।কাল তাজহাট জমিদার বাড়ি আর বেগম রোকেয়ার বাড়ি ঘুরে আসা যাক।
অতিথি আংকেল বললেন, আমার ছেলেরা আগে কখনো রংপুর আসেনি।আমি চাইছি এইবারই ওদের কে উত্তরবংগ ঘুরে দেখাতে।
মিশু লাফিয়ে উঠে বলল, আংকেল খুব ভালো হবে।আমি সব জায়গা দেখেছি।কাল রংপুরের সব উল্লেখযোগ্য জায়গা গুলা দেখে আমরা পরশু দিনাজপুর যেতে পারি।তিস্তা নদীতেও যাবো কিন্তু।তিস্তায় নৌকায় ঘুরবো।আব্বু আমাকে সব জায়গা দেখিয়েছে।আবার ঘুরতে যাবো! কি মজা!!
মিশুর আনন্দ দেখে সবাই খাওয়া বন্ধ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মৈত্রী ও মর্ম একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল।এমন মেয়ে ওরা কখনো দেখেনি।
ব্যাপার টা বুঝতে পেরে মিশু চুপ করল।
মৈত্রী বলল,আব্বু মিশু কথাটা খারাপ বলেনি।আমরা দিনাজপুর যাবো পরশুদিন। কয়লাখনি টা কিন্তু দেখতে হবে।
মিশু বলল,ভেবে বলছেন তো? কয়লাখনি তে সাদা বিড়াল ঢুকলে কিন্তু কালো বিড়াল হয়ে বের হয়।আপনি ও হতে পারেন। আপনার এমনিই অনেক বয়স হয়েছে,তারউপর যদি স্কিন ব্ল্যাক হয়ে যায় আপনার কিন্তু আর বিয়েই হবেনা।
মর্ম জিহ্বায় কামড় দিলো। কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবাহ! মৈত্রী ভাইয়ার সামনে এভাবে কথা বলার সাহস কারো নেই।আর এই মেয়ে যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছে! ও মৈত্রীর দিকে তাকাল।
কেউ কিছু বলছে না।
মিশু বলল,সরি বিদেশ ফেরত ডিগ্রীধারী কাজী সাহেব।
এবার কেউ না হেসে পারল না।কাজী মৈত্রীও মেয়েটির উদ্ভট কথা শুনে হেসে উঠল।
( চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here