অতিথি পর্ব:০৫

0
1119

অতিথি
পর্ব:০৫
লেখা:মিশু মনি
.
মৈত্রী ও মর্ম একসাথে বসে আডডা দিচ্ছিল।
ওদের বাবা এসে বললেন, তোমাদের চিঠি এসেছে।
দুভাই অবাক হয়ে বলল,চিঠি!
– হ্যা চিঠি।
মর্ম বলল,আব্বু কি ফাজলামো করছ?
– তোমার বাবা ফাজলামো করছে মনে হচ্ছে?
– না মানে চিঠি এসেছে ব্যাপার টা অবিশ্বাস্য। লাভ লেটার নয়ত?
– হতেও পারে।রংপুর থেকে এসেছে।
– রংপুর! মিশু নাকি?
– হয়তবা।যাও গিয়ে রিসিভ করো চিঠি টা।
মৈত্রী হেসে বলল,আব্বু দেখেছ মর্ম’র কি লাক! চিঠি এসেছে ওর নামে।ওকে তো জাদুঘরের লোক রা নিয়ে যাবে আব্বু।
বাবা বললেন, তাহলে তোমাকেও জাদুঘরের লোকরা নিয়ে যাবে।
– কেন? আমি তো প্রাগৈতিহাসিক কিছু করিনি।
– তোমার নামেও চিঠি এসেছে।
মর্ম হেসে উঠল। মৈত্রী মুখ ভেংচিয়ে চলে আসল।
চিঠি পড়ে দুভাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। বারবার পড়তে লাগল দুজনে।আর মৈত্রি মর্মকে রীতিমত ক্ষেপাতে শুরু করল।
– মর্ম রে,কাজ টা মোটেও ঠিক করিস নি।ও তোর উপর খুব ক্ষেপে আছে।তোর শার্ট এ বমি করে দিবে নাকি? হা হা হা.
মর্ম বলল,পাগলী কখনো চোখে দেখিনি।এইবার পাগলামো সহ দেখলাম।
– যাই বল,তোর সাথে ওর বিয়েটা হলে কিন্তু তোর ব্যান্ড বাজবে।
– হুম।ওকে ফোন দিই? খামের উপরে নাম্বার আছে।
– হুম দে।
.
মর্ম কল দিয়ে ফোনটা মৈত্রির দিকে এগিয়ে বলল,আগে তুই কথা বল ভাইয়া।
রিং হচ্ছে।মিশু রিসিভ করে চুপ করে আছে।মৈত্রি হ্যালো বলতেই ও রেডিওর মত বাজতে লাগল- এতদিনে মনে পড়ল? কি দরকার ছিল কল দেয়ার শুনি? বিদেশ ফেরত ডিগ্রিধারি বলে এত্ত ভাব? আপনার ভাবের নিকুচি করি আমি।কোনো কথা নাই।
– মিশু! সরি।
– সরি অন মাই ফুট। কিসের সরি শুনি? গুতো মেরে সরি বলার অভ্যাস কই থেকে শিখলেন? ওই বিদেশ থেকে?
– কথা বলার সুযোগ দাও।
– কেন দিবো? আমি আপনাদের কে? মিশু মনির সাথে কাউকে কথা বলতে হবে না,কাউকে না।
– কথা বলতে হবেনা?
– না।
– সিরিয়াসলি?
– হ্যা।
– ফোন রাখবো?
মিশু চেঁচিয়ে উঠল – রেখে দেখুন কত্ত বড় সাহস।এখান থেকে মাইর দিয়ে হাত ভেঙে দিবো।
– বাবাহ! তাই নাকি? এতদূর আসবে তোমার মাইর?
– না গেলে মোবাইল দিয়ে ঢিল মেড়ে মাথা ফাটিয়ে দিবো।
– ওরে বাবারে!
মিশু রাগ কমিয়ে বলল,কেমন আছেন?
– জ্বি ভালো। তুমি?
– মিশু কখনো খারাপ থাকেনা।
মৈত্রি হেসে বলল,হুম।তুমি হচ্ছ মিশু,মিশু এখনো শিশু… আই লাইক দিছু।
মিশু হেসে উঠল।
মৈত্রি বলল,আমার হ্যালো শুনেই তুমি চিনতে পেরেছ এটা আমি?
– হুম।মিশুকে কি ভাবেন শুনি?
– মহাপুরুষ।
– আমি পুরুষ?
– ওহ সরি।মিশু হচ্ছে মহামহিলা।
মিশু শব্দ করে হেসে বলল,মহামহিলা বলতে কিছু আছে?
– নেই?
– নাহ নাই।
– তাহলে তুমি মহিলা মহাপুরুষ।
মিশু আবারো হেসে উঠল।
মৈত্রি বলল,রাগ কমেছে?
– হ্যা কমেছে।বাসার সবাই কেমন আছেন?
– ভালো।
– সারমর্ম কেমন আছে?
– সারমর্ম মানে?
মিশু হেসে বলল,আপনার ভাই।মেজ বিড়াল।
– ও আবার সারমর্ম নাকি? ও শুধু মর্ম।ওর মাথায় সার টার কিছু নাই।
– হা হা হা।আমিও তাই ভাবী। তবে আপনার মাথায় আছে।
– কি আছে?
– সার।গোবর সার।হা হা হা।
মৈত্রি কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না।মেয়েটির হাসির শব্দ শুনতে ভালো লাগছে।
মিশু বলল,আবার কবে আসবেন বেড়াতে?
– যবে দাওয়াত দিবা।
– ইসস… যদি আজই আসতেন।আজ বিকেলে আমাদের একটা প্রোগ্রাম আছে।যাই হোক,সারমর্ম কোথায়?
– আমার পাশেই আছে।
– ওনাকে দুই কেজি ওজনের একটা ঘুষি লাগিয়ে দিন তো।
– ওমা! কেন?
– উনি আমাকে ফেসবুক আইডি খুলে দেননি কেন? আমাকে ফেসবুক চালানো শিখতে হবেনা? ইন্টারে পড়ছি।
– হ্যা তাই তো। ইন্টারে পড়ছ, ফেসবুক চালানো শেখা উচিৎ।
– আপনি বুঝেছেন। আপনি অনেক ভালো। আর ওই ব্যাটা মর্ম কোনোকিছুর মর্মই বুঝেনা।
– হুম।ওর সাথে কথা বলবা?
– না।রাগ কমলে বলবো।
– ওকে কি চিঠির উত্তর দিতে বলবো?
– দরকার নাই।এখন রাখি, টা টা।
মিশু ফোন কেটে দিলো।
মৈত্রি হেসে বলল,পাগলী বটে!
– আমার উপর খুব রেগে আছে না?
– হুম।পরে কল দিস।
.
মিশু কল কেটে দিয়ে ভাবছে,অতিথি রা আসলেই অনেক ভালো। আবার যদি অতিথি হয়ে আসত! এবার আসলে সারমর্ম কে ভাবসম্প্রসারন বানিয়ে দিবো।
.
রাতে খাবার টেবিল এ সকলে একসাথে বসেছে।
মৈত্রি বলল,আব্বু মিশু খুব হার্ট হয়েছে।ওকে বেড়াতে আসতে বলিনি বলে।
– জানি আমি।ওর আব্বু কল দিয়ে বলেছে আমাকে। সারাদিন না খেয়ে ছিল মেয়েটা।
মর্ম বলল,ওর কি মাথায় সমস্যা নাকি?
বাবা বললেন,আরে না।শিশু সুলভ মেয়ে।এখনো বাচ্চা স্বভাবের।
– হুম।মিশু এখনো শিশু।
দুভাই হাসতে লাগল।
বাবা বললেন,ওকে নিয়ে আসো গিয়ে মৈত্রি।কয়েকদিন থেকে যাক।ওর আব্বুর সাথে কথা বলেছি।তুমি গিয়ে নিয়ে আসো ওকে।
মৈত্রি বলল,আমি কেন আব্বু? মর্ম যাক।মিশুর সাথে ওর ভাব অনেক। তাছাড়া মর্ম’র বয়স কম।জার্নি ইনজয় করবে।
বাবা বললেন,সে জন্যই তুমি যাও।মর্মর বয়স কম।আনন্দে আত্মহারা হয়ে বাপের নাম টাই ভুলে যাবে।
– হা হা হা।আচ্ছা কবে যাবো?
– পরশু যেও।মিশু তোমার সাথে ভালভাবেই আসতে পারবে।মর্ম থাকলে প্রতি মিনিটে ঝগড়া করবে।
– তা ঠিক। আচ্ছা আমিই যাবো।
( চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here