এসো_করো_স্নান-03,04

0
310

#এসো_করো_স্নান-03,04
রোকেয়া পপি।
৩য় পর্ব

আচ্ছা ঠিক আছে যাবে যাও।
তুমি এ সংসারে একটা অপ্রয়োজনীয় আসবাবের মতো। থাকলেই কি? আর না থাকলেই কি?
যতোদিন ইচ্ছে থাকো বাবার বাড়ি।
ফিরে এসেই একটা চমক আছে তোমার জন্য।
অতএব চিন্তা করো
ফিরে এসে চমক পেতে চাও
নাকি আর ফিরে না আসতে চাও।

তোমাকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেন?

খুশি হবার মতো কারণ ঘটেছে তাই খুশি খুশি লাগছে।

আমার জন্য কি চমক অপেক্ষা করছে জানতে পারি?
অবশ্যই পারো। তার আগে আমার খুশির কারণটা শুনো।

আচ্ছা বলো।

আজ চমৎকার একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে।
গিয়েছিলাম মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য। এতো চমৎকার একটা মেয়ে। এক ঘন্টা গল্প করে তারপর আসলাম। সময় কোনদিক দিয়ে গেল টেরই পেলাম না।

ইফতি যখন চমৎকার একটা মেয়ের কথা বললো, ভালো করে জয়ীর মুখের দিকে তাকালে দেখতে পেতো জয়ী চমকে উঠেছে। ওর চেহারা কালো হয়ে গেছে। চোখ হালকা ভেজা।
কিন্তু ইফতি জয়ীর মুখের দিকে না তাকিয়ে নিজের মনে গল্প করে যাচ্ছে। করণ জয়ীর দিকে তাকানোর মত ফালতু সময় তার নেই।

বুঝছো জয়ী মেয়েটার বাপটা হলো হারামী নাম্বার টু।
আমার একটা ফাইল দীর্ঘ দিন ধরে আটকে রাখছে।
ভাবলাম কিছু ফলমুল আর মিষ্টি নিয়ে বাসায় গিয়ে ধরি। এতো এতো গিফট দেখলে গলেও যেতে পারে।
ব্যাটা কিপ্টুস নাম্বার থ্রি।

কিন্তু মেয়েটা নাম্বার ওয়ান কিউটের ডিব্বা।
এক দেখায় প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো মিষ্টি একটা মেয়ে। নামটাও দারুন মিষ্টি।
পরী।
খুব সুন্দর নাম না?

জয়ীর চোখ ছলছল করছে। যে কোন সময় চোখ দিয়ে টুপ করে পানি গড়িয়ে পরতে পারে।
জয়ী মুখ না তুলেই বললো হ্যা খুব মিষ্টি নাম।
তুমি চা খাবে?

দাও এক কাপ।
খুব কড়া লিকার করে বানিয়ে আনো। চা নিয়ে এসে বাকিটা শুনো। আমি হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে আসি ততোক্ষণে।

জয়ী রান্না ঘরে না গিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ কাঁদল।
তারপর চোখ মুছে কড়া করে চা নিয়ে বসার রুমে এসে দেখে ইফতি টিভি ছেড়ে দিয়ে মোবাইল টিপছে।
টিভিতে কি হচ্ছে সেদিকে কোন মনোযোগ নেই।
সমস্ত মনোযোগ মোবাইল স্কিনে।

তোমার চা।

ইফতি চা নিতে নিতে বললো। আমি ঠিক করেছি পরীকে বিয়ে করবো। মা অনেক দিন ধরে কান ঝালাপালা করে ফেলছে বিয়ের জন্য।
অনেক মেয়ে ও দেখলাম। কিন্তু মনে ধরে না কাউকে। পরীকে খুব মনে ধরেছে।
পরীও আমার ব্যাবহারে পটে গেছে বোঝা যায়।
হরেক রকম নাস্তার আয়োজন করে হুলস্থুল বাঁধিয়ে ফেললো অল্প সময়ের মধ্যে। তারপর নিজের হাতে কফি বানিয়ে খাওয়ালো।
সুইট, খুব সুইট।

কি হলো
তোমার মুখ এমন কালো করে রেখেছো কেন?

পরী কি আমার চেয়ে ও সুন্দর?

ইফতি হাসছে। খুব শব্দ করে হাসছে।
কিছুতেই তার হাসি থামতে চাইছে না।
হাসির দমকে চা ছলকে পরে ওর লুঙ্গিটা একটু ভিজে গেছে। সেদিকে কোন খেয়াল নেই।
ও হাসি না থামিয়েই তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, তুমি সুন্দরী নাকি?
তা নিজেকে খুব সুন্দরী ভাবো বুঝি?

পরীকে দেখতে চাও? নাও নিজের চোখে দেখো ওর রুপের ঝলক। ওকে দেখলে বুঝবে সুন্দরী কাকে বলে, কতো প্রকার ও কি কি।
হাজার হলেও তোমার সতীন হবে, তোমার ও তো পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে, তাই না?

ইফতি মোবাইলটা এগিয়ে দিলো এই নাও পরীকে দেখো, ভালো করে দেখো।
নাম যেমন পরী, দেখতে ও ঠিক পরীর মতন।

জয়ীর গলার কাছে সব কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে উঠছে।
ও প্রাণপণ চেষ্টা করছে চোখের পানি আটকাতে।
নিজেকে নিজেই মনে মনে ধমকাচ্ছে, তোর এতো কষ্ট পাওয়ার কি হলো! তুই মুক্তি পাবি।
আনন্দ কর জয়ী
আনন্দ কর।
তোর সাথে কি ইফতির কোন ভালো সম্পর্ক ছিল?
নাকি ইফতির পরিবারের কেউ তোকে এতো টুকু ভালোবাসে?
তবে তুই কেন চোখের পানি ফেলবি?
তোর চোখের পানি কি এতোই সস্তা !

জয়ী নিজেকে সামলে নিয়ে হাল্কা হেসে বললো,
অভিনন্দন ইফতি। নতুন জীবনে তুমি সুখী হও।

আমি ভোরে গ্রীন লাইন এ বরিশাল যাবো।
যদি পারো তবে গাড়িটা দিও লঞ্চ ঘাটে নামিয়ে দিয়ে আসার জন্য। ড্রাইভার চাচাকে একটু বলে দিলেই হবে।

সে দেওয়া যাবে।
তুমি টিকিট কাটছো?

না কাটিনি।
গিয়ে কেটে নিব। সমস্যা নেই।

সারারাত জয়ী ছটফট করলো। এক ফোঁটা ঘুমও হলো না।
ভেতর থেকে কেমন যেন একটা কষ্ট ওকে নীল করে দিচ্ছে।
ও বুঝতে পারছে না, বরিশাল গিয়ে কয়দিন থেকে আবার ফিরে আসবে। নাকি একবারে থেকে যাবে বাবার বাড়ি।

ওর এক মন বলছে,
বাবার বাড়ি থেকে গেলে লোকে কি বলবে?
আরেক মন বলছে, লোকের কথায় কি আসে যায়।
ফিরে এসেই বা সতীনের সংসার কিভাব করবি?
এখনি কোন দাম দেয় না কেউ।
বাড়ির কতৃত্ব যখন আরেক জনের হাতে পরবে তখন কি দাম থাকবে কোন?

সকালে রাস্তায় কোন জ্যাম না থাকায় পনেরো মিনিটের মধ্যে জয়ী লঞ্চ ঘাটে চলে এসেছে।
ড্রাইভার চাচা ব্যাগটা হাতে নিয়েছিল জয়ীকে লঞ্চে উঠায় দেওয়ার জন্য।

জয়ী হালকা হেসে বললো, কোন দরকার নেই চাচা।
আমি পারবো। আপনি চলে যান।

ওপরে ভি আই পি টিকিট কেটে জয়ী তার নিদৃষ্ট আসনে গিয়ে বসলো। ও বসার কিছুক্ষণ পর লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে।
জয়ী খেয়াল করে দেখলো তেমন ভিড় নেই।
প্রায় সিট খালি। রাতে ঘুম হয়নি জন্য চোখ দুটো খুব জ্বালা করছে। ও কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইল, যদি একটু ঘুম হয়।
কিন্তু না ঘুমের কোন লক্ষণ নেই। চোখ বন্ধ করা মাত্র ঘুম উধাও।

ও উঠে গিয়ে এক কাপ কফি কিনে নিয়ে পেছনটায় দাঁড়ালো। এক মনে নদীর ঢেউ গুলো দেখছে আর কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎ নিজের নামটা শুনে ও চমকে তাকালো।

জয়ী ভাবতেও পারেনি আজ ওর জন্য এতো বড়ো একটা সারপ্রাইজ এখানে অপেক্ষা করছিল।

নিজেকে ধাতস্থ করতে ওর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো।
তারপর নিজের হাতে নিজেই চিমটি কেটে দেখলো, ও কি জেগে আছে
নাকি স্বপ্ন দেখছে।

চলবে..

#এসো_করো_স্নান_(৪র্থ পর্ব)
রোকেয়া পপি।

জয়ী ভাবতেও পারেনি আজ ওর জন্য এতো বড়ো একটা সারপ্রাইজ এখানে অপেক্ষা করছিলো।

নিজেকে ধাতস্থ করতে ওর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো।
তারপর নিজের হাতে নিজেই চিমটি কেটে দেখলো, ও কি জেগে আছে
নাকি স্বপ্ন দেখছে।

রাজু বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে জয়ীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব আবেগীয় কন্ঠে বলে‌ উঠলো,
জয়ী তুমি!
তুমি এখানে?
কার সাথে বরিশাল যাচ্ছো?
কেমন আছো তুমি?
তোমার মুখটা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন?
তুমি ঠিক আছো তো?

জয়ী ফিক করে হেসে দিলো। রাজু ভাইয়া তুমি সেই আগের মতই ছেলে মানুষটি রয়ে গেলে। একটু ও চেন্জ নেই।
একসাথে এতো গুলো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে কোনটা থুয়ে কোনটার উত্তর দিব!

জয়ী জয়ী আমি ভাবতেই পারিনি তোমার সাথে আমার আর কখনো, কোনদিন দেখা হবে।
আমি ধরেই নিয়েছিলাম তোমাকে আমি চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছি।

তুমি দেখো আমার হাতের প্রতিটা লোম দাঁড়িয়ে গেছে। আমি যখন দূর থেকে তোমাকে পানির দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম।
আমি যারপর নাই অবাক হয়েছি। একবার মনে হলো আমি ভুল দেখছি। যে হেলুসিনেশনটা আমার সবসময়ই হয়।
তোমাকে হারিয়ে ফেলার পর থেকে কোন মেয়ে দেখলেই মনে হয় এটা আমার জয়ী।
আমি জয়ী জয়ী বলে ডাকতে ডাকতে ছুটে যাই তার পাশে।

মেয়েটা তখন অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়।
আমি সরি বলে সরে যাই।
বিশ্বাস করো, আমি আজ ও ঠিক তাই ভেবেছিলাম।
ভেবেছিলাম আমি কাছে এসে জয়ী বলে ডাকা মাত্র দেখবো অন্য কোন মেয়ে। আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নি়ক্ষেপ করে আমাকে ভস্ম করে দিবে।

জয়ী শব্দ করে হাসছে। আশপাশের সবাই ঘুরে তাকাচ্ছে জয়ীর দিকে। জয়ীর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।
হাসতে হাসতে তার চোখ পানিতে ভরে গেছে।
জয়ীর ধারণা ছিল ও হাসতে ভুলে গেছে।
অনেক দিন পর এমন মন খুলে হাসতে পেরে ওর খুব ভালো লাগছে।

ও হাসতে হাসতে বিষম খেয়ে বললো, রাজু ভাইয়া তুমি অনেক মজা করে কথা বলতে শিখে গেছো।
আগে কিন্তু খুব মুখচোরা ছিলে। আমি একা একা বকবক করতাম। আর তুমি মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে আমার বকবকানি শুনতে।

জয়ী হাতের তালুতে চোখের পানি মুছে, মৃদু হেসে বললো তারপর বলো। তোমার খবর কি?
তোমার সাথে আর কে কে আছে?
ভাবি বাচ্চারা কোথায়?
ডাক দাও।
নাকি আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আপত্তি আছে?

জয়ী কথা বলতে বলতে খেয়াল করলো, বউ, বাচ্চার প্রসঙ্গ আসা মাত্র রাজুর মুখটা অন্ধকার হয়ে গেছে।

রাজু ম্লান হেসে বললো, সে অনেক কথা।
বলবো তোমাকে সব।
তোমার কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে।

চলো সিটে বসে নতুন করে দুই কাপ কফি নিয়ে খেতে খেতে গল্প করি।

রাজু দু’জনের জন্য দুই কাপ কফি নিয়ে পাশাপাশি বসলো।
জয়ীর হাতে কফির কাপ দিয়ে চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ইশারায় জানতে চাইল, তোমার খবর কি?

জয়ী মিষ্টি হেসে কফিতে ছোট্ট চুমুক দিয়ে বললো, এই তো দেখতেই পাচ্ছো আমাকে। কেমন আছি মনে হচ্ছে?

রাজু বোকার মতো হেসে বললো, ঠিক বুঝতে পারছি না। শুনেছি খুব টাকা ওয়ালা ঘরে তোমার বিয়ে হয়েছে। তুমি খুব ভালো আছো।

কিন্তু ভালো থাকলে তোমার বর তোমাকে এভাবে একা ছেড়ে দিয়েছে কেন?
আর তোমাকে এতো শুকনো লাগছে কেন?
অবশ্য শুকনো লাগলেও তোমাকে ঠিক আগের মতই সুন্দর লাগছে।

তোমার পরনে এতো সাধারণ একটা থ্রিপিচ, শরীরে কোন গহনা পর্যন্ত নেই। আমি ঠিক মিলাতে পারছি না।

জয়ী আবারো শব্দ করে হাসছে। ওর মনে হয় আজ হাসির রোগ হয়েছে। ও হাসতে হাসতে বললো, আমি খুব ভালো আছি।
আমার খুব টাকা ওয়ালা বড়ো ঘরে বিয়ে দিয়েছে আমার বাবা। কেমন ভালো বর পেয়েছি, শুনবে?

আমার তখন নতুন বিয়ে হয়েছে।
ইফতি আমাকে কতোটুকু ভালোবাসে আমি তখনো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। প্রতিদিন রুটিন মাফিক জীবন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে বের হয়ে যায়।
রাতে বাসায় ফিরে খেয়ে কিছুক্ষণ মোবাইল টিপে।
এরপর বিছানায় এসে আমার শরীর নিয়ে কিছুক্ষণ খেলা করে। তারপর নাক ডেকে ঘুমায়।

আমি কেমন আছি, আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে কিনা বা আমার সারাটা দিন কিভাবে কাটে জানতে চাওয়া, এসবের ধারে কাছে ও নেই।

হঠাৎ করে সাহেব একদিন বলে বসলো, আজ তো শুক্রবার চলো বিকেলে বাইরে কফি খেয়ে আসি।

আমার মুখটা আনন্দে ঝলমল করে উঠল।
প্রায় মাস খানেক হলো এ বাড়িতে এসেছি। একদিনও ওর সাথে কোথাও ঘুরতে যাইনি।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করেই আমি সাজতে বসলাম।
পুরো আলমারি এলোমেলো করে ফেললাম কোন শাড়িটা পরবো। কোন শাড়িতে আমাকে বেশি মানাবে। শেষ পর্যন্ত একটা লাল পেড়ে কালো তাঁতের শাড়ি পরলাম।
সাথে বড়ো একটা কালো টিপ পরলাম কপালে। কানে বড়ো দেখে ঝুমকা। হাতে কালো রেশমী চুড়ি।
দুচোখ ভরে কাজল দিলাম। ঠোঁটে লিপগল্স।
আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হলাম।

ইফতি খাওয়া দাওয়া করে ওর মায়ের সাথে নিচে বসেই গল্প করছিলো।
ও রুমে এসে আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো, যেন আমি কোন চিড়িয়া খানা থেকে উঠে আসা প্রাণী।

তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, এতো সাজুগুজু করার দরকারটা কি শুনি? তুমি কি বিয়ের দাওয়াত খেতে যাচ্ছো?

আর কফি খেতে যাবো সন্ধ্যায়।
এই ভর দুপুরে তোমাকে সাজতে বসতে বলছে কে শুনি?

কথা গুলো বলেই সে শুয়ে পড়লো।

আমার চোখ ভিজে উঠছে লজ্জায়, অপমানে।
আমি দ্রুত ওয়াশ রুমে গিয়ে ইচ্ছে মতো চোখে পানি ছিটিয়ে সব সাজুগুজু ধুয়ে ফেললাম। সাথে চোখের নোনা জল ও।

শাড়ি চেঞ্জ করে সালোয়ার কামিজ পড়লাম।
ও দেখেও না দেখার ভান করে পাশ ফিরে শুয়ে নাক ডাকা শুরু করলো।
সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে বাবু সেজে, আমাকে তাড়া লাগালেন চলো চলো। অনেক দেরি করে ফেললাম।
আরো আগে ডাকবে না।

আমার তখন আর ইচ্ছে করছে না বাইরে বের হতে।
কিন্তু আমি জানি ইফতির রাগ খুব বেশি।
এখন না বললেই শুরু হবে অশান্তি।

আমি যেভাবে ছিলাম, সেভাবেই ওর সাথে বের হলাম।

বাসার কাছেই নতুন একটা রেস্টুরেন্ট খুলেছে।
খুব সুন্দর ডেকেরোশন করেছে। আমরা সেখানে গিয়ে বসলাম।
মেনু বইটা আমার হাতে দিয়ে বললো, কি খাবে জয়ী? পছন্দ করো।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম তুমি যা খাবে তাই খাবো।
ও থাই স্যুপ অর্ডার করলো।

ওয়েটার যখন বললো, স্যুপের সাথে কি অনথুন দিবো।

আমার দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি অনথুন খাবে?

আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওয়েটারকে বললো, না থাক তুমি শুধু স্যুপ দাও।

আমার এতো হাসি পাচ্ছিল, কি বলবো।
“না থাক” এই কথাটা বলার ভঙ্গিটা যদি তুমি দেখতে।
তাহলে তুমি ও হেসে গড়াগড়ি খেতে।

অনেক কষ্টে ঠোঁট চিপে হাসি আটকে রাখছি।

স্যুপ খাওয়ার মাঝে বলে জয়ী তুমি কি কফি খাবে?

আমি না বুঝেই বললাম, হ্যা খাবো তো।
কফি খেতেই তো আসলাম।

ও মুখ কালো করে বললো, কফি তো দেড়শো টাকা।
এখানে সবকিছুর দাম বেশি দেখছো। আবার ট্যাক্স ও ধরে।

আমি ভাবলাম আহারে বেচারা, মনে হয় টাকা পয়সার খুব ক্রাইসিস যাচ্ছে। ঘরে দামী দামী ফার্নিচার আছে। কিন্তু হয়তো আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো না। আমার খুব মায়া হলো।
আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে কফি খাওয়ার দরকার নেই।
আমরা বাইরে গিয়ে চা খেয়ে নিব।

বাইরে এসে বলে আমাদের এলাকায় সব দোকান ভি আই পি টাইপ।
এক কাপ চা। তাও পনেরো টাকা বুঝছো।

আমার এতো মায়া হলো।
আমি বললাম থাক ইফতি বাইরে চা খাওয়ার দরকার নেই। চলো বাসায় গিয়ে চা বানিয়ে খাবো।

আমার এই কথাটা তার খুব পছন্দ হলো।
সে খুশি হয়ে বললো, সেই ভালো।
খামাখা টাকা পয়সার অপচয় করে লাভ নেই।

বাসায় এসে চা খেতে খেতে বললাম, তোমার কি খুব টাকা পয়সার সমস্যা যাচ্ছে?

ও চা খাওয়া বন্ধ রেখে অবক হয়ে বললো, তা দিয়ে তোমার কি কাজ? মেয়ে মানুষের এতো কিছু জানার দরকার নেই।

আমি আমতা আমতা করে বললাম, না মানে তোমার যদি টাকার দরকার হয়, তাহলে আমার কাছে কিছু টাকা আছে। তুমি নিতে পারো।

ও অবাক হয়ে বললো, কতো টাকা?
তুমি টাকা পেলে কোথায়?

তেমন বেশি না, হাজার দশেক।
আমি এ বাড়িতে আসার সময় বাবা আমার ব্যাগে ভরে দিয়েছিলেন। হাত খরচের জন্য।

ও কাপটা নামিয়ে রেখে বললো, নিয়ে আসো।

আমি বোকার মত টাকা গুলো ওর হাতে তুলে দিলাম। ও প্রথমে খুব মনোযোগ দিয়ে টাকা গুলো গুনলো। তারপর পকেটে ঢুকিয়ে বললো, মেয়ে মানুষের কাছে এতো টাকা রাখতে নেই।
টাকা গুলো আমি রেখে দিলাম।
তোমার যখন লাগবে আমার কাছে চেয়ে নিও।

কিছু দিন পরেই আমার ভুল ভাঙলো।
ও ব্রিফকেস ভর্তি টাকা এনে আলমারিতে রাখে।
সব বিজনেসের টাকা। সাভারে একটা বিশাল বাংলো টাইপ বাড়ি কিনতেছে।

আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম, ওর টাকা পয়সার অভাব নেই। ও আসলে খুব কিপ্টা।

জয়ী হাসছে।
কিন্তু চোখ ভর্তি পানি টলমল করছে।
যেন একটু টোকা দিলেই গড়িয়ে পড়বে মুক্তোর দানা।

রাজুর কাছে মনে হলো এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য ও এর আগে কখনো দেখেনি।

ওর খুব ইচ্ছে করছে ঠোঁট দিয়ে জয়ীর চোখের পানি গুলো চুষে নিতে।
ও নিজেও অজান্তেই একটু একটু করে জয়ীর দিকে এগিয়ে আসছে..

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here