গল্প: ঠিকানা লেখা : মিশু মনি পর্ব:০৩

0
511

গল্প: ঠিকানা
লেখা : মিশু মনি

পর্ব:০৩
.
আয়নায় তাকিয়ে দেখি আমার পুরো মুখে কালি!
হাতেও কালি লেপ্টে আছে।বিকট একটা চিৎকার করলাম।
আমার চিৎকার শুনে বাসার সবাই এসে হাজির।
মা জিজ্ঞেস করলেন, কি হইছে মিশু?
ইফতি বলল,আম্মু মিশু মুখে লোশন দিচ্ছিল।কিন্তু আয়নায় তাকিয়ে দেখে লোশন আলকাতরা হয়ে গেছে।
সকলে হেসে উঠল। তারমানে এটা ইফতির কাজ।লোশনে কালি মিশিয়ে রেখেছে।এত দুষ্টু কেউ হয়?
আমি রেগে ওর দিকে তাকালাম। ইফতি শয়তান মার্কা হাসি দিয়ে চোখ টিপ মাড়ল। আমার আরো রাগ হচ্ছে।সবার সামনে কিছু বলতেও পারছি না।
আমার শ্বশুর মশাই বললেন,তোদেরকে নিয়ে কি যে করবো!
ইফতি জবাব দিলো, আব্বু আমি কি তোমার অফিসে বসবো নাকি নতুন চাকরী খুঁজবো?
– হঠাৎ চাকরী করার শখ জাগল কেন?
– সদ্য বিয়ে করেছি।কাজ না করলে বউকে খাওয়াবো কি?
বাবা বললেন, এমন ভাবে বলছিস যেন তোর বউ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খাদক।
উপস্থিত সকলে হেসে উঠল। আমি অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালাম।
ইফতি বলল,তাই ই তো আব্বু।কোনো বেকার বিয়ে করতে চাইলে সবাই বলে বিয়ে করে বউকে খাওয়াবি কি? তারমানে তো বউ ই সবচেয়ে বড় খাদক তাইনা?
– এভাবে বলিস না।মহিলারা ক্ষেপে যাবেন।তুই নতুন বিয়ে করেছিস।দুয়েক মাস যাক,তারপর কাজে যোগ দিস।
– ওকে আব্বু।আমরা কিন্তু হানিমুনে থাইল্যান্ড যাবো বলে দিলাম।
– আমাদের দেশে কি জায়গার অভাব? দেশের বাইরে যেতে হবে?
ইফতি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,আব্বু।এই ব্লাক বেংগল ছাগল টাকে নিয়ে দেশের মানুষ কে দেখাতে চাইনা।তাই বিদেশে যেতে চাইছি।
আমি চেঁচিয়ে বললাম,আমি ব্লাক বেংগল ছাগল?
– না,তুই ছাগলী। আয়নায় দেখতো তোকে ব্লাক বিউটি লাগছে কি না? দ্যাখ।
আমি রাগে গর্জে উঠলাম। নিজেই আমার লোশনে কালি মিশিয়েছে আবার আমাকে ব্লাক বিউটি বলা হচ্ছে?
বাবা বললেন,ইফতি।তোর মত বান্দরের কপালে ছাগল জুটেছে সেটা তোর ভাগ্য।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বাবার দিকে তাকালাম।বাবা আমাকে ছাগল বলল! কি হচ্ছে এসব!
সকলে হাসছে।ইফতি বলল,আব্বু আমি বান্দর এটা তুমি বলতে পারলা?
– হু,বান্দরের ছেলে তো বান্দর ই হবে।
এ কথা শুনে আমার শ্বাশুরি মা চেঁচিয়ে বাবাকে বললেন, খবরদার আমাকে বান্দর বলবা না।
– নাউজুবিল্লা, তোমাকে বান্দর বলি নাই তো।আমি নিজেই নিজেকে বললাম।
সবাই হো হো করে হেসে উঠল।এর চেয়ে মজার কথা যেন আর হতেই পারে না!
আমিও হাসছি।এদের পরিবার টা আসলেই অনেক সুন্দর!
মা বললেন, বাপ ও যেমন, ছেলে টাও তেমনি হইছে।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, মিশু মা,তুই মুখ হাত ধুয়ে আয়।দেরি হলে কালি তুলতে কষ্ট হবে।
আমি ইফতির দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙালাম।ছেলেটা এমন ক্যান!
.
ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলাম।রান্নাঘরে এসে দেখি ভাবি কি যেন রাঁধছে।
জিজ্ঞেস করলাম, কি রাঁধছ ভাবি?
– আর বোলো না মিশু।তোমার ভাইয়া কিছু খেতে পারছে না,ওর জন্য স্যুপ বানালাম।
স্যুপের কথা শুনে আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। ইফতি সারাক্ষণ ই আমাকে তেলাপোকার স্যুপ বলে ক্ষেপাতো।আজ ওকে তেলাপোকার স্যুপ খাইয়ে ছাড়ব।
ভাবিকে বললাম আমার জন্য এক বাটি স্যুপ রাখতে।তারপর তেলাপোকার খোঁজে স্টোর রুমে চলে আসলাম।
একটা পুরোনো কাঠের বাক্সে অনেক গুলি তেলাপোকা পেয়েও গেলাম।৪/৫ টা তেলাপোকা নিয়ে রান্নাঘরে চলে আসলাম।
এক বাটি স্যুপ নিয়ে তাতে তেলাপোকা গুলি দিলাম ছেড়ে।বাহ! স্যুপের সুইমিংপুলে তেলাপোকা সাতার কাটছে! কি সুন্দর দৃশ্য!!
.
স্যুপ নিয়ে রুমে চলে আসলাম। ইফতি বিছানার উপর অর্ধশোয়া অবস্থায় ফেসবুকিং করছে।
মিষ্টি কন্ঠে বললাম,ইফুউউউ..
– হ্যা বল
– তোর জন্য একটা খাবার এনেছি।হা কর খাইয়ে দিই?
– এখন কিছু খাবো না।
– প্লিজ ইফু,অনেক কষ্টে বানিয়ে আনলাম।
ইফতি একবার তাকালো আমার দিকে।আমার ইনোসেন্স মার্কা চেহারা দেখে বলল,আচ্ছা খাইয়ে দে।
আমি পুলকিত হয়ে ওর মুখে এক চামচ তুলে দিলাম।
ইফতি খেয়ে বলল,বাহ! ভালো ই বানিয়েছিস।
– হ্যা,তুই খা।
আবারো এক চামচ তুলে দিলাম ওর মুখে।
পরপর চার চামচ খাইয়ে দেয়ার পর বললাম,এবার তুই নিজে নিজে খা।
– তুই খাইয়ে দে।আমি ফেসবুক চালাচ্ছি।
– আরে আমার কাজ আছে।নিজে হাত দিয়ে খা না ইফু।
– আচ্ছা দে।
আমি সুপের বাটিটা ইফতির হাতে দিলাম।বাটির দিকে তাকিয়ে ইফতির চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে চার গুণ বড় হয়ে গেলো!
সুপের উপর মরা তেলাপোকা ভেসে বেড়াচ্ছে।
চেঁচিয়ে বলল,এইগুলা কি!!
– তেলাপোকার সুপ।
– কিহ!
ইফতি লাফিয়ে উঠে মুখ কেমন করতে লাগলো। ওর মুখের ভঙ্গি দেখে আমি হাসিতে ফেটে পড়লাম।
ইফতি ওয়াক করে উঠল। আমি বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে বললাম,বাথরুম এইদিকে।
ইফতি ছুটে বাথরুমে চলে গেলো। আমি কিছুতেই হাসি থামাতে পারছি না।একবার ও আমাকে ব্যাঙ রান্না করে খাইয়েছিল।আজ বুঝুক কেমন লাগে!
.
কিছুক্ষণ পর ইফতি এসে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল। ওকে খুব ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।
বললাম,কি রে কি হইছে?
– তুই কথা বলবি না ডাইনী।
– হি হি হি।সুপ ভালো হয়নি?
– হ্যা,যথেষ্ট ভালো হইছে।এতবেশি ভালো হইছে যে আমার হজমের চেয়েও বেশি কিছু হয়ে যাচ্ছে।
– এমা! কি হচ্ছে?
– বদহজম।
আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। প্রচুর মজা পাচ্ছি!
ইফতি বলল,অনেক বমি করছি রে মিশু।
– বমি করলি কেন? কোনো সুখবর? আমি বুঝি মা হবো?
ইফতি ক্ষেপে গিয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি এবার ওর স্টাইলে শয়তান মার্কা হাসি দিয়ে চোখ মারলাম।
ইফতি বলল,তুই একটা টেম্পু।
– হি হি,কেন?
– মা হবি তুই আর বমি করবো আমি?
– হি হি হি।
– দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।এর পেনাল্টি তোকে দিবো ই মিশুর বাচ্চা মিশু।
– আমি মিশু না,আমি ব্লাক বেংগল ছাগল।পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খাদক।
– যাবি এখান থেকে?
আমি হাসতে হাসতে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম।আজ খুব জব্দ হয়েছে বেচারা ইফতি!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here