ঠিকানা লেখা : মিশু মনি পর্ব:০২

0
369

গল্প: ঠিকানা
লেখা : মিশু মনি

পর্ব:০২

.
ইফতির চুল টানতে গিয়ে হাতে অনেক চুল উঠে আসল।বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
– এখন মাথায় কোনো আইডিয়া আসছে না।কিন্তু এর পেনাল্টি তোক আমি দিবো ই।
ইফতি দাত বের করে হেসে বলল,তোর ব্রেইনে মরিচা ধরেছে।এক মিনিট দাড়া।
কথাটা বলেই একটা চুইংগাম নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়ে বলল,এটা চিবোতে থাক।মস্তিষ্ক সচল হবে আর ভালো ভালো আইডিয়া আসবে।
বলেই চোখ মাড়ল। আমি হাসবো না রাগ করবো বুঝতে পারলাম না।চুইংগাম মুখে দিয়ে চিবোতে লাগলাম।
ইফতি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে।আমার রাগ কমে গেছে।ভাবলাম বিছানায় গিয়ে আমিও শুয়ে পড়ি।
কিন্তু সেটা আর হলোনা।বিছানাত কাছে যেতেই ইফতি বলল,থাম বলছি।বিছানায় উঠবি না।
– কেন?
– দাত ব্রাশ করে এসে শুবি।তোর মুখে বিশ্রী গন্ধ বলেছি না?
আমার আবারো রাগ উঠে গেলো। হনহন করে এগিয়ে এসে মুখ থেকে চুইংগাম টা বের করে ওর চুলে লাগিয়ে দিলাম।
এবার বুঝুক কেমন লাগে?
ইফতি চেঁচিয়ে বলল,এভাবে পেনাল্টি দিলি? ওকে,ইফতির ডাবল পেনাল্টি খাবি তুই।
– কি করবি শুনি?
– দেখতেই পাবি।মহিলা ফেরাউন কোথাকার।
– খবর দার,উলটা পাল্টা গালি দিবি না বলে দিচ্ছি।
– একশবার দিবো,
এরপর আরো কিছু বলতে গিয়েও কি যেন ভেবে ইফতি থেমে গেলো। মিষ্টি সুরে বলল,আচ্ছা বাদ দে এসব। আমরা তো স্বামী স্ত্রী তাইনা? আজ আমাদের বিয়ের রাত।আজকের রাতে ঝগড়া করাটা অশুভ।
আমি মুখ বাকা করে তাকিয়ে আছি।ওর কথায় এত মধু ঢালছে কেন? নিশ্চয় ই নতুন কোনো ফন্দি আটছে।
কিছু বললাম না।চুপচাপ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
ইফতি বলল,ব্রাশ করলি না?
আমি অগ্নি দৃস্টিতে তাকাতেই আর কিছু বলল না।মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল।
.
বাকি রাত টা ঝগড়া ছাড়া ই সিনেম্যাটিক ভাবে কেটে গেলো।
.
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলাম।ইফতিকে ও জোর করে ডেকে তুলে নামাজ পড়তে বললাম।ও নামাজ আদায় করেই আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
.
নাস্তার টেবিলে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটু সাজগোজ ঠিক আছে কিনা দেখছিলাম। ইফতি পিছনে দাঁড়িয়ে আমার পিঠে কি যেন করছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি করছিস?
– তোর পিঠে শাড়ি টা একটু কেমন ভাজ হয়ে গেছে।ঠিক করে দিচ্ছি।
– আচ্ছা,থ্যাংকু।
ইফতির দিকে তাকাতেই ও মিষ্টি করে হাসি দিলো। আমি বের হয়ে রান্নাঘরে চলে আসলাম।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে,সবাই আমাকে দেখে খিলখিল করে হাসছে।হাসির কারণ টা ঠিক বুঝতে পারছিনা।আমি তো আয়নায় নিজেকে দেখেই বের হলাম।তাহলে সমস্যা টা কোথায়?
অনেক্ষন ধরেই খেয়াল করলাম সবাই আমাকে দেখার পর মুখ টিপে হাসছে।সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে শ্বাশুরি মাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে গেলাম।
উনি হেসে বললেন, তোমাকে কোনো কাজ করতে হবেনা।
– দিন না আন্টি আমি ও একটু করি?
– আন্টি না,মা বলবা।
– আচ্ছা বলবো কিন্তু একটু হেল্প করি আপনাকে?
– না,তুমি টেবিলে গিয়ে বসো।
এমন সময় ইফতির ভাবী এসে হাতে দুটো প্লেট নিয়ে বলল,মা এগুলা টেবিলে নিয়ে যাই?
আমিও উৎসুক হয়ে বললাম,ভাবী আমাকে দিন।
ভাবী হেসে বলল,তোমাকে কাজ করতে হবেনা।
ভাবীর হাসি দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।সবাই হাসছে কেন আমাকে দেখে? সন্দেহ জাগছে,নিশ্চয় ই ইফতি বাসায় কিছু একটা বলেছে।আমাকে জব্দ করতে তো ওর জুড়ি নেই।মুখ কাচুমাচু করে খাবার টেবিলে আসলাম।
আমার শ্বশুর মশাই হেসে বললেন, মিশু মা তোমাকে আমরা কোনো কাজ করতে দিবো না।
– কেন আব্বু?
উত্তরে আব্বু শুধু হাসলেন।আমার মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে।এ কেমন মুশকিলে পড়া গেলো!
ইফতি এসে খাবার টেবিলে আমার মুখোমুখি বসে পড়ল।আমি জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে যাবো এমন সময় মা বললেন, আমি ঢেলে দিচ্ছি।
আমি একেবারে হতভম্ব!
কেউ আমাকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না।আবার হাসাহাসি ও করছে।ইফতির উপর রাগ গর্জে উঠছে।নিশ্চয় ই কোনো ঘাপলা আছে!
আমি ইফতির দিকে তাকালাম। ও একবার শয়তান মার্কা হাসি দিয়ে চোখ মাড়ল।
এবার আমি পুরোপুরি নিশ্চিত, একটা গোল বাধিয়ে ফেলেছে ইফতি।কোনোমতে খাওয়া শেষ করে ভাবিকে ডেকে নিয়ে এসে কারণ জিজ্ঞেস করলাম।
উত্তরে ভাবি হেসে বলল,মিশু,তোমার পিঠে একটা কাগজ ঝুলছে।তাতে লেখা “আমি খুব অলস,দয়া করে আমাকে কেউ কোনো কাজের কথা বলবেন না”
বলেই ভাবী ফিক করে হেসে ফেললো। আমি তো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলাম।এত বড় পেনাল্টি দিয়ে দিলো!!
ভাবি কাগজ টা খুলে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,দুনিয়ায় এত ছেলে থাকতে এই বান্দর টার লেজে ঝুলে পরলা কেন?
আমি কিছু বললাম না।ভয়াবহ রাগ হচ্ছে।
ঘরে পায়চারি করতে করতে চিন্তা করতে লাগলাম কিভাবে এর বদলা নিবো?
কিছুতেই রাগ কমছে না।প্রতিবেশিরা নতুন বউকে দেখার জন্য এসেছে।তাদের সামনে পুতুল সেজে বসে আছি আর ভাবছি কিভাবে ওকে নাচানো যাবে!
মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এসে গেলো।আজ বিকেলবেলা হবে আসল খেলা,কে কাকে কয়টা গোল দেয় সেটা ই দেখা যাবে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ইফতির মুখের অবস্থা কেমন হবে সেটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে!
.
রুমে এসে দেখি ইফতি মশাই ছবি ইডিট করছে।
ওকে দেখে রাগে ফুঁসতে লাগলাম।
ইফতি বলল,কিরে লেডি কুত্তা।দেখছিস আর জ্বলছিস, লুচির মত ফুলছিস।ব্যাপার কি?
– হারামি,তোকে মজা দেখাবো।
– হি হি,কচু করবি তুই।মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত।
– কি বললি? আমি মোল্লা?
– মোল্লা হয় ছেলেরা।তুই হচ্ছিস ফিমেল মোল্লা।
– ইফু,ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
– খারাপ ও হবেনা।এখন চোখের সামনে থেকে দূর হ,কাজ করছি।

এই কথা শুনে রাগের মাত্রা আরো বেড়ে যাচ্ছে।কিন্তু আগের মত বাকযুদ্ধ ও করতে পারছি না,আবার ওকে জব্দ করতে ও পারছিনা।আগে এসব ব্যাপারে অনেক এক্সপার্ট ছিলাম।বিয়ের পর মগজে সত্যিই মরিচা ধরল না তো?
ইফতি আমার হাতে একটা চাটনি দিয়ে বলল,নে খা।
ইফতির প্রতি অনেক রাগ থাকলে ও চাটনির লোভ এড়ানো গেলো না।চাটনি টা নিয়েই মুখে দিলাম।কিন্তু মুখে লাগানোর সাথে সাথেই দুই ঠোট কেমন যেন জোড়া লেগে গেলো।কথা বলার চেষ্টা করেও বলতে পারছি না।মুখ খোলাই যাচ্ছেনা।চাটনি টার দিকে তাকিয়ে দেখি আঠা লাগানো!
সর্বনাশ! আমার মুখ সেলাই করে দিলো আঠা দিয়ে! এবার কথা বলবো কি করে!
অগ্নিদৃস্টিতে তাকালাম ইফতির দিকে।
ইফতি বলল,কথা বলতে পারবি না।দেখবি আর জ্বলবি,লুচির মত ফুলবি।হা হা হা..
ইফতি হা হা করে হেসেই চলেছে।আমি এক ছুটে বাথরুমে এসে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে ফেললাম।তবুও আঠা যাচ্ছেনা।সুপার গ্লু লাগিয়ে দিয়েছে কিনা কে জানে!
.
হতভম্ব হয়ে রুমে আসলাম। ইফতি আমাকে দেখে চোখ মাড়ল, দ্যাখ কেমন লাগে?
– চুপ থাক কুত্তা।
– তুই লেডি কুত্তা।আমার চুলের চুইংগাম এখনো ছারে নাই।বদলা নিবো না?
– সকালে আমার পিঠে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছিলি কেন?
– যাতে আমার বউ টাকে দিয়ে কেউ কোনো কাজ করিয়ে না নেয়।
বলেই চোখ মাড়ল।আমাকে রীতিমত সবার চোখে হাসির পাত্র বানিয়ে দিয়েছে।এখন আবার ঢপ মাড়া হচ্ছে?
আজ বিকেলে তোকেও নাচাবো ইফতি।বুঝবি কত পানিতে কত জল!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here