#Addicted_love
Part:55( ২য় খন্ড)
গোটা রাত পেরিয়ে ভোর প্রায় কিন্তু ইশফাক এখনো রুমে না আসায় এলার চিন্তা আরও দ্বিগুন বেড়েছে।।সারা রাত ঘুমায় নি এলা।
৪:৩০ বাজে চিন্তা করতে করতে হঠাৎ কেউ দরজা বারি দেয়ার আওয়াজ পেয়ে এলা হুড়মুড়িয়ে উঠে দরজা খুললো সে।
দরজার বাইরে একজন সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে আছে খুব চিন্তিত লাগছে তাকে।
ma’am sir😰😰(সার্ভেন্ট)
where is he?এলা চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
come with me ma’am(সার্ভেন্ট)
এলা কিছু না বলে মহিলার পিছু পিছু দৌড় দিলো।
ইশফাক কে ওভাবে নিচে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে এলা চমকে গেলো,, গোটা রুমের ফ্লোরে কাচের টুকরো ছড়িয়ে আছে, ইশফাক এর হাত পায়ের কিছু অংশ থেকে রক্ত পরছে। এলার চোখ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম ইশফাক এর অবস্থা দেখে।
এলা আর সার্ভেন্ট দুজন মিলে ইশফাক কে ধরে তার রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিল।
এলা ইশফাক এর রক্তাক্ত অংশ গুলো তে ব্যান্ডেজ করে দিলো।
ইশফাক এর মুখে রক্ত দেখে হাল্কা চমকে উঠলো সে,হয়তো কাটা অংশ গুলো থেকে লেগেছে।
রক্ত মুছে সব গুছিয়ে গাছিয়ে সে নিজেও ইশফাক এর পাশে শুয়ে পড়লো কারন সারা রাত ঘুমায় নি এলা,,ক্লান্ত লাগছে খুব।
সকাল সকাল ইশফাক এর মুখে সুরসুরি লাগছে চোখ মেলতেই সে নিজের পাশে এলাকে দেখতে পেলো এলার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে ইশফাক।
মুখ থেকে চুল সরিয়ে ইশফাক এলার চুলে মুখ গুজে দিয়ে চুলের ঘ্রাণ নিতে লাগলো।
কিছুক্ষন পর মাথা সরিয়ে এলার দিকে তাকালো ইশফাক।
কি ভাবে তোমার এমন ভয়ংকর মায়াবী চেহারা আমার নজরে এড়িয়ে গেলো?বদলার জগতে আমি এভাবে হারিয়ে গেছিলাম যেখান থেকে ফিরে আসতে একটু সময় লেগে গেছে।।তোমার মায়াজালে আমি এমন ভাবে জড়িয়ে গেছি যেখান থেকে বের হওয়ার আর কোন স্কুপ নেই।অনেক ভালবাসি তোমাকে,, তোমার জন্য আমি হাজার বার নিজেকে ধ্বংস করতে পারবো।তুমি ছাড়া আর কিছুর অস্তিত্ব নেই আমার কাছে।এখন ইশফাক চৌধুরী তোমাতে শুরু তোমাতেই শেষ। বলেই এলার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।আবার ইশফাক নিজের ঠোঁট এলার ঠোঁট এর সাথে ছোয়াতে যাবে এমন সময় এলার ঘুম ভেংগে গেলো।
এলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ইশফাক এর দিকে।এক ধাক্কায় ইশফাক কে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।
কি করছিলেন আপনি?সুযোগের ফায়েদা উঠাচ্ছিলেন?ছিইইইইইই।।।ওহ সরি সরি আমি তো ভুলে গেছিলাম আপনি ওয়েস্টার্ন কালচারের একজন বিজনেস আইকন।এগুলা তো আপনাদের জন্য কোন ব্যাপার ই না।যাই হোক ওভাবে ড্রিংকস্ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন কেন তা জিজ্ঞেস করে আপনাকে লজ্জা দিব না কারন ড্রিংকস্ করা আপনার পেশা তাই এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করাটাও হবে আমার বোকামি।যা ই করুন কিন্তু এভাবে হাত পা কেটে নিজেকে দেব দাস প্রমান করতে চাওয়ার কোন মানে হয় না,আপনি যা ই করুন আমি কখনোই আপনাকে ক্ষমা করতে পারবো না,তাই এইসব আজাইরা রঙ ঢং না করা টা ই দুজনের জন্য উত্তম হবে।সম্পর্ক বানানো অনেক সহজ কিন্তু নিভানো অনেক কঠিন যেটা যার তার পক্ষে সম্ভব না,যে সম্পর্ক টা ছিলো আপনার আর আমার মাঝে তা অনেক আগেই ছুটে গেছে,সেই সম্পর্কের গভীরতা আপনি গোড়া থেকে উখড়ে ফেলেছেন।তার চেয়ে ভালো এসব বন্ধ করুন পারলে আমাকে এই মিথ্যে সম্পর্ক থেকে মুক্তি দিয়ে নিজে ভালো থাকুন আর আমাকেও ভালো থাকতে দিন।(এলা)
ইশফাক এলাকে টান দিয়ে খাটে শুইয়ে দিয়ে নিজেও এলার উপর আধশোয়া হয়ে পড়লো।
চুপ একদম চুপ!অনেক বলেছো এবার শুনো,,ইশফাক চৌধুরী সুযোগে ফায়েদা উঠানোর মতো মানুষ না,আমি চাইলে যা করার সরাসরি করতে পারি কিন্তু তা আমি করি নি না কখনো করবো তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।আর আমার কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা তো তুমি এই জনমে ভুলে যাও,,,ভালবাসি বিধায় তোমার কঠিন থেকে কঠিনতম কথা শুনেছি যা ইচ্ছা বলো কিন্তু কখনো আমার থেকে মক্তি পাওয়ার কথা যদি আবার কখনও মুখে এনেছো তো দেখো কি করি,,তখন তুমি নিজেই দায় থাকবে।ভালবাসি বিধায় সহ্য করছি তাই বলে আমাকে অসহায় ভেবো না আমি চাই না তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করে আমি তোমার নজরে আরও নিচে নেমে যায়,,তআমাকে বাধ্য করো না এমন কিছু করার যেটা আমার নিজের কাছেও অপরাধ এর শামিল।ক্ষমা যতদিন করবে না ততদিন আমি এভাবেই থাকবো যদি এভাবেই আমার মৃত্যু হয় তবে তা ই হোক। দাঁতে দাঁত চেপে ইশফাক কথা গুলো বলছে।
এলা ইশফাক কে ধাক্কা দিয়ে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মাস খানেক কেটেছে যতই দিন যাচ্ছে ততই ইশফাকের মাতলামো বেড়েই চলেছে,,ইশফাক অনাবরত ড্রিংকস্ করেই যাচ্ছে তার কোন খেস্তি নেই।
এলা হল রুমের সোফায় বসে তাদের বিয়ের এলবামে তার মায়ের ছবি দেখছে।
ইশফাক বাইরে থেকে এসে এলাকে কাঁদতে দেখে তার সামনে এসে দাঁড়ালো।
কি হলো কাঁদছো কেন?কেউ খারাপ কিছু বলেছে?রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো ইশফাক।
না কেউ কিছু বলে নি,,আপনার সাথে একি ছাদের নিচে থাকতে হচ্ছে এর চেয়ে খারাপ কিছু আর কি হতে পারে?(এলা)
এলার কথার কোন তোয়াক্কা না করে ইশফাক এলবাম টা তার কাছ থেকে টেনে নিলো।
মা এর কথা মনে পড়ছে?(ইশাফাক)
এলা কথার কোন জবাব না দিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো।। ইশফাক এর দিকে তাকাতেই এলার কেমন জানি খটকা লাগলো ইশফাক কে কেমন জানি দেখাচ্ছে।
হঠাৎ ইশফাক এলার গায়ে ঢলে পড়লো গলা থেকে রক্ত আসছে,রক্তে এলার বুকের একপাশ ভিজে গেছে।
এলোমেলো চুলে আগুছালো অবস্থায় রক্তমাখা কাপড় এ পাগলের মতো আই সি ইউ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে এলা।
হাসপাতালের ওয়েটিং চেয়ারে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন ইশফাক এর বাবা,হাসপাতালের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে পয়রাচারি করছেন আন্টি।
এলা মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে,চোখের পলক ফেলছে না সে,,শুধু গাল বেয়ে অজস্র অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে তার।
চলবে।