Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera . . Part – 10.

0
581

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
. . Part – 10………………………

সেই দিন রাতেই অলোক তাবু ঘুটানোর নির্দেশ দিল।। সে আর এক মুহুর্ত ও অপেক্ষা করতে চাই না।। যথা সম্ভব তার রাজ্যে পৌছাতে চাই।। লার্বিয়ান দের খন্ড যুদ্ধে লার্বিয়ান রা হেরে গিয়েছিল।। কিছু মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল আর বাকিরা পালিয়ে গেল।। এরপর অলোকের নির্দেশে যাত্রা শুরু হল।। তারপর এক নাগাড়ে নিরবচ্ছিন্ন চলার কারনে খুব দ্রুত তারা বার্বান সাম্রাজ্যে পৌছে গেল।। অবশ্য খাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে কাফেলা থামানো হত।।
.
মায়া খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিল।। কিন্তু তারপরও সারাদিন ঘুমাত।। বিষন্নতা চারপাশে ঘিরে ছিল তার।। বুঝতেই পারছিল না কি হচ্ছে।। অলোক সময় পেলেই মায়া কে দেখে যেত।। কিন্তু সব সময় দেখত মায়া ঘুমিয়ে আছে।। ঘুমন্ত দেখে অলোক কিছু না বলে চুপচাপ কিছু সময় মায়ার পাশে বসে কাটাত।। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে নিঃশব্দে কেটে পড়ত।।
.
অবশেষে দীর্ঘদিন পর বার্বান রা তাদের রাজ্যে পৌছালো।। তাদের কে সবাই সদর দরজায় সাদরে অভিনন্দন জানালো।। নতুন রাজ্যে বিজয়ে চারদিকে আনন্দ উৎসব চলতে লাগল।। সানাই, ঢোল, বাশি তে চারদিকে মুখরিত হয়ে উঠল।। স্থানে স্থানে আনন্দ মিছিল হতে লাগল।। রাজ প্রাসাধ থেকে মণি মুক্তা হীরা জহরত ছড়ানো হল।। প্রায় ৩/৪ দিন ধরে উৎসব চলার পর ৫ দিনের দিন থেকে উৎসব ঝিমিয়ে পড়ল।। চারদিক স্বাভাবিক হতে লাগল।।
পাঁচ দিনের দিন মায়া চোখ খুলল।। চোখ খুলেই সে চারদিকে টিপ টিপ করে তাকালো।। তার শরীর অনেকটা ক্লান্ত আর অবশ হয়ে আছে।। যেন অনেক দিন মায়ার গোসল করা হয় নি।। মায়া উঠে বসে চারদিকে তাকিয়ে দেখল।। চারপাশে দাস দাসীরা মনোযোগ দিয়ে যে যার যার কাজ করছে।। মায়ার খানিকটা সন্দেহ লাগল।। সে কি বার্বান রাজ্যে চলে এসেছে?? তাহলে এত দিন যা দেখে আসছিল সেগুলা স্বপ্ন না, সেগুলা মিথ্যা না, সেগুলো বাস্তব!! সে বার্বান রাজ্যে…. না নাহ!!! সে বার্বান রাজ্যের রাজ প্রাসাদে অবস্থান করছে!!
কাপা কাপা শরীরে মায়া বিছানা থেকে নামতে লাগল।। সে এখানে থাকবেনা, কিছুতেই এখানে সে থাকতে চাইনা।। তাকে নামতে দেখে দাসীরা সবাই দৌড়ে এল।।
.
—– রাজকুমারী আপনার কিছু প্রয়োজন??
.
মায়া কিছুটা পিছিয়ে গেল দাসী দের দেখে।। তারপর দাসী দের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বলতে লাগল
.
—– আ-আমি চলে যাব!! থাকবো না এখানে!! দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে।।
.
এই বলে মায়া বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য এগুলো।। তার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।। এক মুহুর্ত ও সে এখানে থাকতে চাইনা।। এখানে সব তার আপন জনের রক্তের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে।। এথানে সে নিশ্বাস নিতে পারবেনা।।
দরজায় হাত লাগানোর পূর্বেই দাসীরা তাকে জাপটে ধরে ফেলল
.
—– ছেড়ে দাও বলছি!! তোমাদের এত বড় সাহস!! তোমরা জান আমি কে?? একজন রাজকুমারীর সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তোমরা জানা না!! সবটাকে আমি দেখে নিব।।
.
সবাই মিলে মায়া কে রেখে বেড়িয়ে গেল।। শুধু দুজন দাসীকে রাখা হল মায়ার দেখা শুনা করার জন্য।। তারা চুপচাপ মায়ার পাশে দাড়িয়ে রইল।। বাইরে বেরুতে না পেরে মায়া হাতের কাছে যা পেল তাই আছড়ে মারতে লাগল।। চার পাশের দামী দামী সব জিনিস পত্র ছুড়ে ফেলতে লাগল।। তার জন্য আনিত সব খাবার ফেলে দিতে লাগল।। দাসী দুজন ভয়ে কাপতে লাগল।। তারা মায়া কে বুঝানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু মায়া বুঝতে চাইছিল না।।
.
সে মুহুর্তে অলোক প্রাসাদে ছিল না।। জরুরী কাজে সে তার সেনাপতি কে নিয়ে তার প্রদেশে গিয়েছিল।। কোনো বিচার কার্যের উদ্দেশ্যে।। সন্ধায় যখন ফেরত আসল তখন সব কিছু চুপচাপ।। দাস দাসীরা ভয়ে টু শব্দ ও করতে পারছেনা।। অলোক রাজকীয় গোসলখানায় গোসল সেরে খেতে বসল।। হরেক রকম খাবার সামনে সাজানে।। আর পাশেই আদেশের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে দাসী দের প্রধান কিন্নর দাসী আরবাগী।। মুখে দিতে গিয়েই তার মায়ার কথা মনে পড়ল।। মুখ তুলেই দাসী আরবাগীর কাছে সে মায়ার কথা জিজ্ঞেস করল
.
—–মায়া খেয়েছে??
.
—– স-সম্রাট রা-রাজকুমারী মায়া””””””
.
—– কি হয়েছে জলদি বলবে??
.
ধমক খেয়ে কাচুমাচু ভাবে আরবাগী বলল
.
—– স-সম্রাট রাজকুমারী মায়া কিছু খাচ্ছে না।। সব ফেলে দিচ্ছে, ভেঙে ফেলছে।। তাই তাকে বেধে রাখা হয়েছে।।
.
—– কি বলছো এসব??
.
—– জি সম্রাট সত্য বলছি!!
.
—– এত বড় সাহস তোমার আরবাগী!!! কে আছো বাইরে!! একে নিয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে।। বেধে রেখে ততক্ষণ চাবুক পিটাও যতক্ষণ না তার মরন না আসে।।
.
সাথে সাথে দুজন সৈন্য এসে তার প্রধান দাসী আরবাগী কে ধরে ফেলেল।। দাসী আরবাগী চিৎকার করে বলতে লাগল
.
…… দয়া করুন সম্রাট।। আমার কোনো দোষ নেই।। আমাকে মাফ করুন।। রাজকুমারী মায়া পালিয়ে যেতে চাইছিল তাই তাকে বেধে রাখা হয়েছে।।
.
যেতে যেতে ও আরবাগীর কথা শুনে থমকে দাড়ালে অলোক।।
তারপর সৈন্য দুজন তে ইশারা করেই সে মায়ার কামরা দিকে চলল।। পথিমধ্যে তার মুখোমুখি দাড়ালো বার্বান রাণী ইরাভ।। সম্রাট অলোকের মাতা।। রাণী ইরাভ কে দেখে অলোক থমকে দাড়ালো।।
.
—— মা!! আপনি এখানে কি করছেন??
.
রাণী ইরাভ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পুত্রের দিকে তাকালেন।। অলোক দেখতে পুরোটাই তার পিতার মত হয়েছে।। সৌম্য রুপ তার।। চওড়া বুক।। বাদামী আর কালো মিশেলে এক মাথা চুল।। কপালের মধ্যে পানির ফোটা দেখা যাচ্ছে।। হয়ত এই মুহুর্তে গোসল সেরে এসেছে।। যে কোনো মেয়ে তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে পায়ে লুটিয়ে পড়বে কোনো সন্দেহ নেই।।
.
কিন্তু চোখে মুখে একরাশ দুশ্চিন্তা। তার চোখ দুটোর চঞ্চলতা রাণী ইরাভ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।। এও জানে এই চঞ্চলতা আর দুশ্চিন্তা কিসের।।
.
—– মা আপনি কিছু বলবেন!!
.
—– হুম।।
.
—– তাহলে বলেন
.
—– কোথায় যাচ্ছো!!
.
—– মায়ার কাছে।।
.
—– আগে খেয়ে নাও, বিশ্রাম করে নাও তারপর যাও।। এত কিসের তাড়া তোমার অলোক।।
.
—– মা।। আরবাগী মায়া কে বন্দী করে রেখেছে।। ও এখনো উপোস, অসুস্থ!! সে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে।।
.
—– আরবাগী দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র।। যে কেউ মহলের সবকিছু তছনছ করতে পারে না।। আর ঈরানভা রাজকুমারী সব তছনছ করেছিল।। তাই তাকে কামরা থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না।। কিন্তু বন্দী করা হয় নি।।
.
রাণী ইরাভের কথায় অলোকের প্রচুন্ড রাগ হল।। তারপরও তা প্রকাশ না করে বলল
.
—— মা আপনি ভালো করে জানেন মায়া আমার জন্য কি।। তারপরও আপনি কিছু বলেন নি।। আর আমি এটা কখনো সহ্য করবনা।। আর মায়ার একটা চুল ও কাউকে স্পর্শ করতে দিব না।। যে আসবে পথে তাকে আমার মোকাবেলা করতে হবে।।
.
এই বলে অলোক রাণী ইরাভের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।। ও চলে যেতেই রাণী ইরাভ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।। তার পুত্র আগে এমন ছিল না।। কিন্তু তার ২য় বিবাহের পর থেকে কেমন জানি হয়ে গিয়েছিল।। কারো সাথে ভালো করে কথাও বলতো না।। চুপচাপ থাকত।। নিজের দুনিয়ায় নিজে থাকত।। তারপর অলোক আগ্রহ দেখালো অস্ত্র বিদ্যায়।। তাও খুব অল্প বয়সে।। মানা করলাম না।। নিজের সৎ ভাই বোন দের প্রতি তেমন স্নেহ না দেখালো নিষ্টুরতাও কখনো দেখায় নি।।
.
কিন্তু বলা যায় না যে নিজের ভাই বোনের প্রতি নিষ্টুরতা দেখাবেনা।। সৎ পিতা যখন তারই সিংহাসন পাওয়ার পথে দাড়ালো তখন অল্প বয়সে তার সৎ পিতা কে দমন করল।। তাকে শাস্তি দিল।। পুরো রাজ্যের ক্ষমতা হাতে তুলে নিল।। বার্বান রাজ্য কে সাম্রাজ্যে পরিণত করল।।
.
মাতা হিসেবে কিছু বলতে পারি নি।। আর এখনো পারি না।। কারন ও সব সময় সঠিক ছিল।। পার্থিব কোনো বস্তুর মধ্যে তার আগ্রহ দেখি নি।। সেটা একমাত্র ঈরানভা রাজকুমারী ছাড়া।।
.
দুনিয়াতে অলোক কারো প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে থাকলে ওটা হচ্ছে ঈরানভার রাজকুমারী মায়া।। কোন অলক্ষুনে তিনি গুপ্তচর বৃত্তির জন্য অলোক কে ঈরানভা পাঠিয়েছিলেন।। দিনে দিনে তার ফল দেখতে পাচ্ছেন।।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে আরো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।।
.
মায়ার কামরায় প্রবেশ করার পূর্বে অলোক পাহারাদার দের চুপ থাকতে ইশারা করলো।। তারপর চুপচাপ কামরায় প্রবেশ করে অলোক থমকে দাড়ালো।। চারদিকে একি অবস্থা!! সব কিছু ভেঙে চুরে রেখেছে মায়া।। এক দিনেই তার প্রাসাদের এই অবস্থা!!! দেখে কোনো প্রাসাদের কক্ষ বলে মনে হচ্ছে না।। দাসী দুজন এক কোনে দাড়িয়ে থর থর কাপছে।। তাদের ধারনা হয়ত এই অবস্থার জন্য তাদের শাস্তি হবে।। এসব কি মায়ার কাজ?? কোথায় মায়া!!
সে মায়া কে ভালো করে খুজতেই এক কোনে পেয়ে গেল।। সে একটা কক্ষের মেঝেতে বসে রাজকীয় কেদারায় মাথা রেখে নিশ্চুপ ছিল।। হয়ত ঘুমিয়ে গেছে।। অলোক প্রথমে ডাক দিল
.
—— মায়া!!
.
মায়া শুনল না।। অলোক আরেকবার ডাকতে গিয়েও থেমে গেল।। নাহ্!! এভাবে না।। তারপর আশ পাশে ভালো করে তাকিয়ে বড় একটা চীনা মাটির পাত্র দেখল।। সেটা নিয়ে আচড়ে ফেলল।। মুহুর্তে সেটা ঝন ঝন শব্দ করে ভেঙ্গে চুর চুর হয়ে গেল।। ভেঙে ফেলার শব্দ পেয়ে মায়া তড়াক করে লাফিয়ে উঠল।। ভয় পেয়েছে সে ভীষন।।
.
(চলবে)
.
পাঠক মাত্র একজন আছে 🙁 এটা অতীব দুঃখের কথা!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here