Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera . Part – 11

0
544

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
. Part – 11……………………..

মায়া বুঝতে পারছেনা কি হল।। অলোক কেন এটা ভাঙল সেটা তার মাথায় আসছেনা।। অথচ ভাঙার কথা তো তার।। সে ড্যাব ড্যাব করে ভয় মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে আছে অলোকের দিকে।। আর ঢোক গিলছে।। অলোক আরেকটু এগিয়ে এলো মায়ার দিকে।। তারপর নির্বিকার ভঙিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল
.
—– মায়া!!!
.
জবাবে মায়া শুধু চোখের পাতা টিপ টিপ করে নাড়লো।। হাত দুটো একসাথে মুটো বেধে আছে।। কি বলবে বুঝতে পারছেনা।। তার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।। অলোক আবারো খুব নরম গলায় আদবের সাথে বলল
.
—– মায়া এটা কেন বাকি রেখেছো?? হয়ত ভুলে গেছো ভাঙতে।। সমস্যা নাই।। আমি ভেঙে দিলাম তোমার হয়ে।। ঠিক আছে!!
.
মায়া হালকা ভাবে মাথা নাড়ল।। অলোকের এরুপ নরম ভাবে কথা বলা তার ভয় কে বাড়িয়ে দিচ্ছে।। না জানি কখন খাপ থেকে তলোয়াড় টা বের করে সাৎ করে দু টুকরা করে দেবে মায়া কে।। উল্টা পাল্টা কথায় ভাবছিল মায়া।। অলোকের কথায় চমক ভাঙলো।। জজ
.
—– মায়া তুমি ক্ষুদার্থ!! যাও গোসল করে আস।। তারপর একসাথে খাবো।।
.
তারপর পিছন ফিরে দাসী দের ডাকলেন
.
—– দাসী!!!
.
—— জি সম্রাট!!!
.
—— রাজকুমারীর কে গোসলের আয়োজন কর।।
.
—— যথা আজ্ঞা সম্রাট।।
.
এরপর দাসী দুজন দৌড়ে গোসলেরর আয়োজন করতে লাগল।। আর অলোক হাসি মুখে মায়ার দিকে তাকালো।। তারপর বলল
.
—— ঠিক আছে জলদি গোসল করে নাও।। আমি অপেক্ষা করছি।। হুম??
.
মায়া নিঃশব্দে মাথা নাড়ল।। ঠিক আছে।। এরপর সে সুড় সুড় করে দাসী দের পিছন পিছন গোসল খানায় চলে গেল।। যে দাসী দের সামান্য মায়া কে সামলাতে গিয়ে পুরো কক্ষ তছনছ হয়ে গিয়েছিল, তারা হা করে তাকিয়ে থাকল যে কিভাবে মায়া অলোকের এক কথায় চুপচাপ গোসল করতে চলে গেল।। কোনো উচ্চ বাচ্চ্য করল না।। দেখে অলোকের খুব ভালো লাগল।। শুধু শুধু সবাই মিথ্যা কথা বলতেছে।। অলোক কে গোমরাহ করার জন্য।।
.
বেশ কিছুক্ষনেরর মধ্যে মায়া গোসল খানা থেকে বেড়িয়ে আসল।। সে নিজের আচরনে নিজেই অবাক হয়েছে।। কিভাবে সে ওই হত্যাকারির কথা মানতে পারলো?? কিভাকে টু শব্দও করল না? কেন তার শরীর কাপলো?? এর উত্তর একটায়।। মায়া অলোক কে ভীষন ভয় পাই।। অলোকের সামনে দাড়িয়ে যেন মায়া বাক শক্তি হীন হয়ে যায়।। তার উপস্থিতি এতই দুর্বল করে দেয় মায়া কে।। উফফফ্!!! আর কিছু ভাবতে পারলো না মায়া।। তাকে এই নরক পুরী থেকে বের হতে হবে।। এখানে সে কিছুতেই থাকবেনা।। কিন্তু কিভাবে??
ভাবতে ভাবতে অন্য মনস্ক হয়ে পড়ল মায়া।। দাসীরা তার চুল আর পোশাক তৈরি করে দিচ্ছে।। এমন সময় কামরার বাইরে শোরগোলের আওয়াজ পেল।। কি হচ্ছে বাইরে??
.
—— কি হচ্ছে বাইরে?? কিসের শব্দ এত??
.
একজন দাসী বলল
.
—— জানিনা রাজকুমারী!! দেখে আসব??
.
—— হুম।। যাও।।
.
দাসী চলে গেল দেখতে।। তবে কিছুক্ষন পরেই ফিরে এলো।।
.
—— রাজকুমারী সম্রাটের প্রধান রক্ষিতা সিরাত এসেছেন!!
.
—— রক্ষিতা ?? তোমার সম্রাটের আছে??

.
—— জি রাজকুমারী!! এখানে প্রত্যেক রাজপুত্রের রক্ষিতা আছে।। আর রক্ষিতা সিরাত হল ছোট রাজকুমারীর সাথী আর সম্রাট অলোকের প্রধান রক্ষিতা!!!
.
মায়া মনে মনে ব্যঙ্গ ভাবে হাসলো!!! এতদিন জানতো সে নিষ্টুর এখন জানলো সে চরিত্র হীন ও!!!
.
—— রক্ষিতা!!! কোথায়!! আসতে দাও!!
.
মায়ার হুকুম পেয়ে কিন্নর পাহারাদার রক্ষিতা সিরাত কে ভিতরে আসতে দিল। রক্ষিতা সিরাত হুর মুর করে একজন সঙ্গীকে নিয়েই ঢুকে পড়লো।। মায়া ওদিকে তাকালো না।।
.
—– তুমিই তাহলে মায়া!!!
.
মায়া একটু মাথা নেড়ে জবাব দিল
.
—– উহু!! রাজকুমারী মায়া!!! এই প্রাসাদে কেউ তোমাকে শিখায় নি যে একজন রক্ষিতা হিসেবে কিভাবে একজন রাজকুমারীর সাথে কথা বলতে হয়??
.
সিরাত অস্পষ্ট গলায় হাসল।। তারপর বলল
.
—– আমি সম্রাট অলোকের প্রধান রক্ষিতা…… সিরাত।। ভবিষ্যতের রাণী।। সুতরাং আমার অলোক থেকে দূরে থাকবে।।
.
এবার মায়া সিরাতের দিকে তাকালো।। ছিপছিপে গড়নের চিকন কটিওয়ালা মেয়ে। সাজগোজের কোনো কমতি নেই।। চেহেরা দেখেই ভ্যাবাচাকা খেলো মায়া।। এত সুন্দর মহিলা সে আজ পর্যন্ত দেখেনি।। ঢেউ খেলানো চুল, কাজল টানা আখি, কাচা সোনার মত গায়ের রং!! ভরা যৌবন!! বাহ্!! এর থেকে তো সম্রাট এমনিই নজর ফেরাতে পারবেনা।।
এতকিছু ভেবেও মুখে বলল
.
—– আমি জানি না তুমি কি বলছো।। আর তোমার সম্রাটের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই।। উনিই আমাকে এখানে জোর করে নিয়ে এসেছেন।।
.
—— আগ্রহ না থাকলেই ভালো।।
.
আর কোনো কথা হল না দুজনের মধ্যে।। কারন এক কিন্নর দাসী এসে নত হয়ে সম্মান জানালো।। তারপর মাথা নিচু করে বলল
.
—– রাজকুমারী সম্রাট অাপনাকে তার কামরায় খাওয়ার জন্য ডেকেছেন।। আপনাকে এক্ষুনি যেতে হবে।।
.
এই কথায় রক্ষিতা সিরাত চোখ মুখ শক্ত করে মায়ার দিকে তাকালো।। তারপর বলল
.
—– দেখ আমি যা বলেছি তা যেন ইয়াদ থাকে।।
.
মায়া কিছু বলল না।। তবে খানিকটা অাশ্চর্য্য বোধ করল।। কারন এত রুপ যৌবন নিয়েও কিসের এত ভয়!!! যে কোনো পুরুষ তার এক ইশারায় পায়ের নিচে পড়বে।। তার তো কোনো চিন্তা থাকার কথা না।। তবুও এত চিন্তা!!!
মায়া আর ভাবতে পারলো না।। সামনে রাখা হাতের দাতের চিরুনি নিয়ে মাথা পরিপাটি করতে লাগলো।।
—— রাজকুমারী আপনাকে এক্ষুনি যেতে হবে।।
.
কিন্নর দাসীর কথায় মায়া চমকে উঠল।। সে ভুলেই গিয়েছিল যে তাকে খেতে ডাকা হয়েছে।। সে দাসীর দিকে তাকালো।। তারপর বলল
.
—— আমার খিদা নাই!!! যাও এখান থেকে।।
.
এই বলে মায়া আবার মাথা পরিপাটি করতে লাগলো।। কিন্তু নাছোড়বান্দা দাসী বলল
.
—— রাজকুমারী আপনি না গেলে সম্রাট খুব রাগ করবেন।। উনি আপনার জন্য অপেক্ষা”””””””
.
—— বলেছি তো যাবো না।। যাও এখান থেকে।। আমাকে বিরক্ত করো না।।
.
মায়ার ধমকে দাসী মাথা নিচু করে চলে গেল।।
দাসী কে মিথ্যা বললেও মায়ার পেট মিথ্যা বলছিল না।। খিদায় তার পেট চো চো করছিল।। কিন্তু এখানে সে কিভাবে খাবে?? তাও খুনী রাজ্যে?? নাহ্ সে কিছুতেই খাবে না।।
খুব কষ্ট হতে লাগল মায়ার।। আজ শুধু মাত্র তার জন্যই তার রাজ্য পরাধীনতার শৃঙ্কলে। না জানি কত অত্যাচার তারা সহ্য করছে।। বিভীষা অার মা কেমন আছে তাও জানে না মায়া।। ওহ্ বিভীষা!!! তুমি কোথায়?? তোমাকে অনেক মনে পড়ছে!!! এতকিছু ভাবতেই মায়ার চোখ ফেটে পানি বেড়িয়ে আসতে চাইছে।।
.
—— রাজকুমারী!!!
.
চোখ মেলে তাকালো মায়া।। তার জন্য রাখা একজন দাসী তাকে ডাকলো।।
.
—– বল!!
.
—– আপনি অসুস্থ বোধ করছেন?? আমি কি রাজ বৈদ্য কে খবর পাঠাবো??
.
—– দরকার নেই।। আমি সুস্থ আছি।।
.
—- তাহলে আপনি কান্না করছেন কেন??
.
চোখ মেলে আবারো দাসী টার দিকে তাকালো মায়া।। প্রায় তার বয়সী মেয়েটি।। সব বার্বান দের মত এও মায়ার চাইতে খানিকটা লম্বা।। উজ্জল শ্যামলা রংয়ের।। মায়া এবার দাসী টাকে জিজ্ঞেস করল
.
—— তোমার নাম কি??
.
এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে গেল মেয়েটি।। সে হয়ত ভাবে নি তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করবে মায়া।। তাই খানিকটা ইতস্থত করে লাজুক ভাবে মেয়েটি জবাব দিল
.
—— লিয়া!!
.
—— তো লিয়া!!! তোমার মাতা পিতা জীবিত আছেন??
.
—— জি রাজকুমারী।। আমার মাতা প্রাসাদের রাধুনী আর পিতা পাহারাদার।।
.
—— তাহলে তুমি কিভাবে বুঝবে আমার কষ্ট কোথায়?? তুমি তো আর তোমার পিতা মাতাকে হারাও নি।। তোমার আপন জনকে হারাও নি।।
.
এমন কথায় লিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেল।। সে হয়ত এরকম উত্তর আশা করে নি মায়ার কাছ থেকে।। কিছুটা কষ্ট পেল হয়ত।। তারপর বলল
.
—— আমি দুঃখিত রাজকুমারী!!
.
মায়া আবারো চোখ বন্ধ করে বলল
.
—— তোমার সম্রাট আমার পিতা কে খুন করেছে, আমার হবু স্বামী কে হত্যা করেছে।।
.
লিয়া এবার নিশ্চুপ।। কোনো কথা না বলে মায়ার চুল ঠিক করছে।। হয়ত তার কাছে কোনো জবাব নেই।।
.
—— লিয়া!! আমি এখান থেকে পালাতে চাই।। আর তুমি আমাকে সাহায্য করবে।।
.
——- হে ঈশ্বর!!!
.
লিয়া চমকে পিছিয়ে গেল।। তার হাত থেকে চিরুনী পড়ে গেল।।
.
——- রাজকুমারী এমন কথা বলবেন না।। সম্রাট জানতে পারলে কানো গর্দান রাখবেনা।।
.
মায়া একটু হেসে বলল
.
——- তুমি কি মনে কর আমি তোমার সম্রাট কে ভয় পাই???
.
এই কথার সাথে সাথে দড়াম করে দরজা খোলার শব্দ হল।। মায়া ভীষন ভাবে চমকে গেল।। তারপর সাথে সাথে দাড়িয়ে গেল।। সম্রাট অলোক তার কামরায় প্রবেশ করেছে।। তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে।। যেন কারো গর্দান নিয়ে এসেছে।। মায়ার প্রচুন্ড ভয় করছিল।। যদিও বা সে লিয়া কে বলেছিল যে সে সম্রাট অলোক কে ভয় করে না।। কিন্তু এই মুহুর্তে তার মনে হল সে ভীষন ভয় করে অলোক কে।। লিয়া অলোক কে মাথা নিচু করে সম্মান করে ধীরে ধীরে পিছিয়ে গেল।। অলোক মায়ার কাছে এগিয়ে আসল।। মায়া একটু পিছিয়ে গেল।। ভয়ে হাতের আঙ্গুল মটকাতে লাগল আর মনে মনে বলতে লাগল….. ওহ বিভীষা তুমি কোথায়?? আমাকে বাচাও এই রাক্ষস থেকে!! আমার খুব ভয় করছে বিভীষা!!!!
.
—– মায়া!!!
.
—– জি-জি স-সম্রাট??
.
—– তুমি আসলে না কেন??
.
—– ও ও ও স-স-সম্রাট আ-আমার খিদা ছি-ছিল না তা-তাই আ-আমমি””””””
.
সন্দিগ্ন চোখে কটমট করে অলোক বলল
.
—– তুমি কয়দিন ধরে উপোস তুমি জানো?? অথচ তুমি বলছো তোমার খিদা নেই???
.
—— আ-আম মি”””””””
.
—– দাসী!!!
.
এক ডাকে লিয়া ছুটে এলো।।
.
—– জি-জি সম্রাট আমাদের দুজনের খাবার এখানে আনার ব্যবস্থা কর!!
.
—— জি সম্রাট!!
.
লিয়া দৌড়ে চলে গেল।। মায়া কি করবে বুঝতে পারছিলনা।। হিম ঠান্ডা পানিতে গোসল করে এসেও তার গরম লাগছে।। কেন লাগছে তা সে নিজেও জানে না।। অলোক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।। এমন কি চোখের পাতা ফেলছে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না।।
খাবারের আয়োজন শেষ হলে অলোক মায়ার দিকে ইশারা করে বলল
.
—— মায়া বস!!
.
মায়া কি বলবে বুঝতে পারলো না।। অগত্য দাড়িয়ে রইল!! মায়া কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অলোক চোখ বড় বড় করে আবার ডাকলো
.
—– মায়া!!!!!
.
মায়া এবার দেরি করল না।। চুপচাপ বসে গেল খেতে।। মায়া বসতেই মায়ার বিপরীতে অলোক ও বসে গেল খেতে।।
সামনে হরেক রকমের খাবার সাজানো।। খাবারের সুগন্ধ মায়ার নাকে সুড় সুড়ি দিচ্ছে।। কিন্তু তার মোটেও খেতে ইচ্ছা করছেনা।। অলোক রুপার থালায় মায়ার খাবার পরিবেশন করতে লাগল।। আর মায়া চুপচাপ দেখতে লাগলো।। পরিবেশন শেষ হলে অলোক বলল
.
—— খাও।।
.
তারপর মায়া কোনো কথা না বলে ধীরে ধীরে চুপচাপ খেতে লাগল।। তার খুব কষ্ট হচ্ছে।। জানে না এই কষ্ট কিভাবে লুকাবে।। খাবার গুলো কিভাবে তার পেটে হজম হবে তাও জানে না।। হাত কাপছে তার।। কাপা কাপা হাতে খেতে লাগলো মায়া।। মনে হল যেন সব খাবার রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে।। আর সে সেই সব রক্ত রঞ্জিত খাবার খাচ্ছে।। যেন তার পিতার রক্ত খাচ্ছে।। গা গুলিয়ে আসলো মায়ার।। আর কিছু ভাবতে পারছেনা সে।।
.
(চলবে)
.
যে কোনো গ্রুপে আমি আমার গল্প দিয়ে দেখছি।। প্রায় গ্রুপে ১০ টার বেশি লাইক আসে না। ১০ টা লাইক তাদের কাছ থেকে পরে যারা গল্পটা পড়েছে। আমি জানি না কেন অন্য কোনো গ্রুপে কেন ভালো রেসপন্স পাই না।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here