Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
. Part – 12……………………..
★
গা গুলিয়ে আসতেই মুখে হাত চাপা দিল মায়া।। তার অদ্ভুদ অনুভুতি হতে লাগল।। চোখ মুখে খিচুনি আসতে লাগল।। শরীরে কাপুনি চলে আসলো।। অলোক মায়ার অবস্থা দেখে খানিক টা ঘাবড়ে গেল।। তাড়াতাড়ি পানির পাত্র এগিয়ে দিল।।
.
—— মা-মায়া পানি নাও!!!
.
মায়া পানি নিল।। কিন্তু খেতে পারলো না।। তার মনে হল পাত্রে কোনো পানি নেই।। সব রক্ত!! হাত থেকে ছুটে পড়ে পাত্রটা।। অলোক তাড়াতাড়ি আসন ছেড়ে মায়ার পাশে চলে এলো।।
.
—— মায়া কি হয়েছে??
.
ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে কাপতে কাপতে মায়া বলল
.
—– ও ওখানে স-সব রক্ত।। আ-আমার রক্ত কে ভ-ভয় লাগে!!!
.
—– রক্ত??
.
ভ্রু কুচকে অলোক পানির পাত্র টা হাতে নিল।। কিন্তু সেখানে রক্ত দেখলো না।। তাহলে কি মায়ার ভ্রম হচ্ছে নাকি তার রক্ত ভীতি আছে??
.
—– মায়া শান্ত হও!!! কোনো রক্ত নেই।। সব ঠিক আছে।।
.
দু হাতে শক্ত করে ধরে মায়ার কাপুনি থামানোর চেষ্টা করল অলোক।। এরপরও কাপুনি না থামলে অলোক মায়া কে বুকের মধ্যে চেপে ধরল।। তারপর পিঠের মধ্যে হালকা ভাবে হাত বুলাতে লাগল।। মায়াকে বুকের সাথে চেপে ধরতেই পরম শান্তি অনুভুত হল অলোকের।। সেই সাথে তার বুকের মধ্যে একটা সুক্ষ একটা ব্যাথাও হচ্ছে।। অলোক বুঝতে পারছেনা কেন এই ব্যাথা টা হচ্ছে?? এর ঔষুধ কি??
মায়া খানিকটা শান্ত হলে অলোক তাকে ধীরে ধীরে নিজের বাহু বন্ধন হতে মুক্ত করল।। তারপর সে খাবার গুলো সরিয়ে ফেলল সামনে থেকে।। এরপর ফলের ঝুড়ি টা নিয়ে সেখান থেকে কিছু ফল নিল।। নিজেই খঞ্জর দিয়ে টুকরো টুকরো করল।। তারপর মায়াকে খাওয়াতে লাগলো।। মায়া কিছু না বলে চুপ চাপ খেতে লাগলো।। হঠাৎ আপন মনে অলোক বলে উঠল
.
—— আমি জানি মায়া!! তুমি আমাকে পছন্দ কর না।। তোমার জন্য আমি একজন হত্যাকারি, খুনি, নিষ্টুর, বর্বর!! আমি জানি তুমি আমার উপর ভীষন রেগে আছো। হয়ত তোমার পিতা আমার হাতে মারা গেছে।। তোমার রাজ্যতে আমি আক্রমন চালিয়েছি।। তারপরও আমি বলব তুমি আমার উপর বিশ্বাস করতে পারো।। আমি অযৌক্তিক কোনো কাজ করি নি।।
.
মায়া নিশ্চুপ ভাবে অলোকের কথা শুনছে।। সে অলোকের দিকে বিন্দু মাত্রও তাকালো না।। তার এখানে বলার কিছু নাই। বললেও অলোক শুনবেনা।। অলোক অাবার বলল
.
——- এখানে তোমার কোনো কিছুর অভাব হবেনা।। তুমি দেখো মায়া!!! তুমি যা চাইবে তোমার জন্য হাজির হবে মায়া!!
এই কথায় মায়া অলোকের দিকে তাকালো।। অলোক মায়াকে বিশ্বাস করানোর জন্য বলল
.
—– সত্যি মায়া!!!
.
মায়া ধীরে ধীরে অলোকের দিকে দৃষ্টি রেখে শান্ত গলায় বলল
.
—— আমার পিতা কে এনে দাও!!!
.
.
রাতে ঘুমানোর সময় অলোক বিছানায় এদিক ওদিক করতে লাগল।। কিন্তু ঘুম চোখে ধরা দিচ্ছিল না।। তার মাথায় শুধু মায়ার বলা কথা টা ঘুরছে।।
.
“আমার পিতা কে এনে দাও”
.
তার মাথা টা যন্ত্রনা করে উঠল।। কেন মায়া তাকে সহজ ভাবে গ্রহন করতে পারছে না?? রাজারা প্রায় সময় যুদ্ধ ক্ষেত্রে মারা যায়।। এতে বিচলিত হওয়ার কি আছে।।
আগামী অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি আছে।। যেটা কাউকেই জানানো হয় নি।। জানানো হলে প্রাসাদে তোলপাড় শুরু হয়ে যাবে।। হলে হোক।। তাতে অলোকের সমস্যা নেই।। কেউ অলোকের উপর কথা বলতে পারবেনা।।
এরপর আপনা আপনিই চোখ মুদে এলো অলোকের।। চোখে শুধু সেদিনের প্রথম দেখার দৃ্শ্যটা ভাসছে।। মায়ার কথা ভাবতেই অলোকের একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হল।। মুখে আপনা আপনিই হাসি ফুটে উঠল।। অস্পষ্ট স্বরে সে বলে উঠল
.
—– মায়া!!!
.
সে মায়া কে কল্পনা করতে লাগলো।। ঠিক সে সময় একজন দাসী এসে অলোকের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটাল।। মাথা নিচু করে সম্মান জানিয়ে দাসী বলল
.
—– সম্রাটের বিশ্রামের ব্যাঘাত হওয়ায় মাফ চাইছি!!
.
—– কি হয়েছে??
.
—– সম্রাট রক্ষিতা সিরাত এসেছে।। তিনি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।।
.
চোখ বন্ধ অবস্থায় অলোক বলল
.
—– চলে যেতে বল ওকে।।
.
—– সম্রাট ওকে চলে যেতে বলা হয়েছে।। কিন্তু উনি জোর করে দাড়িয়ে আছেন।। তিনি বলছেন আপনার সাথে দেখা না করে যাবেন না।।
.
অলোক খানিকটা বিরক্তি বোধ করল।। কখন এই সিরাত এর কাছ থেকে কখন সে মুক্তি পাবে?? কেন সে পিছু ছাড়ছেনা?? সব দোষ অধরার।। যে তার সেহেলি কে তার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে।। আর মাতা তার সায় দিয়ে প্রধান রক্ষিতা বানিয়েছে। তার উপর স্বপ্ন দেখছে রাণী হওয়ার।। আশ্চর্য্য!!
.
—– সম্রাট!!!
.
—– আসতে দাও!!
.
রক্ষিতা সিরাত মুহূর্তে অলোকের কক্ষে প্রবেশ করল।। পরনে গোলাপের পাপরীর মত লম্বা জামা।। তাতে তার হাটুর উপরের কিছুটা অংশ আর কোমড়ের দিকটা হালকা ভাবে দেখা যাচ্ছে।। অলোক ফিরেও তাকালো না।। যেমন চোখ বন্ধ করে ছিল তেমনি চোখ বন্ধ করে রইল।। কিন্তু সিরাত আজকে অলোক কে তার সাথে রাত কাটাতে বাধ্য করবে বলে পণ করেছে।। সে কিছুতেই এই পণের ব্যাঘাত ঘটতে দিবে না।। সিরাত এসেই বুকের দিকের একটা ফিতা টান দিয়ে খুলে দিল।। তারপর ধীরে ধীরে অলোকের কাছে এগিয়ে এলো নিঃশব্দে।।
তারপর অলোকের পাশে বসতে যাবে ঠিক সে সময় অলোক কথা বলে উঠল।।
.
—– বসবে না আমার পাশে!!
.
সিরাত কিছুটা ভ্যাবাচাকা খেল অলোকের হঠাৎ কথা বলাতে। তারপর নিজেকে সামলিয়ে অলোক কে ডাকল
.
—- সম্রাট!!!
.
—– কি জন্য এসেছ সেটা বলে চলে যাও!!!
.
—- সম্রাট আমি আপনার সেবা করতে
চাই!!!
.
এই বলে অলোকের বুক স্পর্শ করার জন্য সিরাত তার হাত বাড়ালো।। কিন্তু স্পর্শ করার আগেই অলোক চোখ বন্ধ অবস্থায় বলে উঠল
.
—– আমাকে স্পর্শ করবেনা।। যা বলতে এসেছো তা বলে দ্রুত চলে যাও।। আমি এখন বিশ্রাম করতে চাই।।
.
সিরাতের চোখ ফেটে জল আসতে চাইলো কিন্তু নিজেকে সামলানোর অদ্ভুদ ক্ষমতা আছে তার।। তারপর ধীরে ধীরে বলল
.
—— সম্রাট!! আমি আপনার রক্ষিতা।। কেন আপনি আমাকে এভাবে দূর করে দিচ্ছেন?? আমি আজ রাত আপনার সেবা করতে চাই।। দয়া করে আমাকে সুযোগ দিন।।
.
অলোক এবার চোখ খুলল।। সামনে তাকিয়ে দেখল ঘোলাটে চোখের এক অপরুপ সুন্দরী নিজেকে নিবেদন করছে তার কাছে।। সৌন্দর্য্যের কোনো কমতি নেই তার মাঝে।। সৌষ্টব দেহ, লতার মত পেচানো চুল, গোলাপের পাপড়ির ন্যায় টসটসে ঠোট।। যে কোনো পুরুষের হৃদয় কাপিয়ে দিতে পারবে সিরাত।। কিন্তু তার প্রতি বিন্দু মাত্র আগ্রহ জন্মায় নি অলোকের।। কেন সেটা সে নিজেও জানে না।। বরং বিরক্তি জন্মায় সিরাতের ন্যাকামি পূর্ন কথা বার্তা শুনলে।। চোখ মুখ শক্ত করে অলোক সিরাত কে বলল
.
—– সিরাত তোমার সেহেলি কে??
.
—– সম্রাট সেটা কেন””””””
.
—– যেটা বলছি জবাব দাও।।
.
—– রাজকুমারী অধরা!!
.
—– তোমাকে আমার রক্ষিতা বানিয়েছে কে??
.
—– রাণী মা ইরাভ!!
.
—– তাহলে গিয়ে তাদের সেবা কর তাদের সাথে রাত যাপন কর!! আমার কাছে আর আসবেনা।। আমি তোমাকে আমার রক্ষিতা বানায় নি!!
—– সম্রাট!!!!!
.
গলা ধরে এল সিরাতের।। কিছুক্ষন চুপ থেকে ধীরে ধীরে বলল
.
—– সম্রাট আপনি আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন ওই ঈরানভা রাজকুমারী জন্য!! তাই না??
.
এতক্ষনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল অলোক।। নাহ!!! এই মেয়েটা তার রাত টাই বরবাদ করে দিবে।। ঝট করে সে বিছানা থেকে নেমে গেল।। তারপর রক্ত চক্ষু নিয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বলল
.
—– বাইরে কে আছো?? এক্ষুনি একে এখান থেকে নিয়ে যাও!!!
.
টল টল করা চোখ নিয়ে সিরাত অলোকের দিকে তাকালো।। তাতে বিন্দু মাত্র করুনার উদ্রেক হল না অলোকের।। কিন্নর সৈন্যরা এসে সিরাত কে নিয়ে গেল।। কিন্তু সাথে তার শান্তি টাই নিয়ে গেল।। অনেক ক্ষন ধরে এদিক ওদিক পায়চারী করল।। কিন্তু কিছুতেই অস্থিরতা যাচ্ছে না।। কেমন যেন বেড়ে যাচ্ছে।। তার বিশ্বস্থ কিন্নর দাসী দারাহ এগিয়ে এল।।
.
—– সম্রাট আপনার কিছু প্রয়োজন??
.
অলোক মুখ তুলে দারাহেরর দিকে তাকালো।। তারপর জবাব দিল
.
—– হুম!!
.
—– কি চাই সম্রাট আপনার?? বলুন!! আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি।।
.
—– পারবে এনে দিতে??
.
—– চেষ্টা করব!!! বলুন আপনার কি চাই??
.
—– মায়া কে চাই!!
.
দারাহ ভ্রু কুচকে কিছু ভাবল।। তারপর বলল
.
—- মায়া!! ওই ঈরানভা রাজকুমারী??
অলোক কোনো জবাব দিল না।। দারাহ সম্রাটের নিঃশব্দে বুঝে নিল তার কি চাই।। সে রাজকীয় সুরা সাজিয়ে পাত্র সহ অলোকের সামনে এগিয়ে দিল।। অলোক এক পলক সুরা পাত্রের দিকে তাকিয়ে দেখতেই তার ঠোটের কোণে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো।। তারপর পাত্রে সুরা ঢেলে নিতে নিতে দারাহের উদ্দেশ্যে বলে উঠল
.
—- তুমি সব সময় বুঝতে পার আমার কি চাই!
.
মাথা নিচু করে প্রশংসা টা গ্রহন করে দারাহ বলল
—- আপনার জন্য আমার প্রাণ টাও হাজির থাকবে সম্রাট!
.
অলোক সুরায় মত্ত হয়ে আছে।। দারাহ কোনো ভাবেই থামাতে পারছেনা।
.
—- সম্রাট এবার ছাড়ুন। আর পান করা আপনার শরীরের জন্য ভালো হবেনা।
.
অলোক দারাহের কথা অগ্রাহ্য করে বলল
.
—-দারাহ তোমার মনে আছে তোমাকে কি করতে বলেছি?
.
—- অবশ্যই সম্রাট আমার মনে আছে। কেউ টের পাবেনা।। আপনার সমস্ত আয়োজন কাল সকাল থেকে শুরু হয়ে যাবে।
.
একটু হেসে অলোক বলল
.
—- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হওয়া উচিত।
.
দারাহ দেখল অলোক কে কোনো ভাবে সুরাপান থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না। তাই সে মনে মনে বুদ্ধি এটে বেড়িয়ে গেল। আর এদিকে অলোক সুরা পানে ব্যস্ত ছিল।। সুরা পানে আসক্ত হলেও কখনো হুশ হারায় নি অলোক। কিন্তু রাজ বৈদ্য তাকে স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সব সময় সুরা পান থেকে অব্যাহতি নেয়ার কথা বলেন। কিন্তু অলোক কথা কানেও তুলে না। সে নিমগ্ন সুরা পানে। ঠিক সে সময় দারাহের কন্ঠ শোনা গেল পিছন থেকে।
.
—- সম্রাট দেখুন আপনার যা প্রয়োজন তা আমি নিয়ে এসেছি!
.
অলোক না তাকিয়েই বলল
.
—- কি এনেছো?
.
দারাহ কোনো জবাব দিল না। অলোক আবার জিজ্ঞেস করল
.
—- বল কি এনেছো??
.
এবার দারাহ একটু ইতস্থত করে জবাব দিল
.
—– ঈরানভা রাজকুমারীকে!!!!
.
—– কি????
.
সুরা টুকু মাত্র মুখে পুরেছিল অলোক।। দারাহের কথা শুনে সুরা তার তালুতে উঠে গেল।। সে পিচিক করে সুরা টা ফেলে দিল।।
ঝট করে উঠে দাড়ালো অলোক।। তাকিয়ে দেখল সত্যি দারাহ মায়া কে পাজকোলা করে নিয়ে এসেছে।।
হয়ত মায়া ঘুমন্ত।। কারন তার হাত নির্জিব ভাবে নিচে ঝুলছে!!
নাহলে এত সহজে তাকে এখানে আনা যেত না।। মায়াকে দেখে অলোকের চোখ কোটরা থেকে বের হওয়ার উপক্রম হল।।
.
(চলবে)