Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
.. Part – 9……………………….
★
ভোর বেলা আবারো যাত্রা শুরু করার জন্য অলোক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।। কিন্তু মায়ার কোনো খবর পাচ্ছে না।। বাধ্য হয়ে অলোক অপেক্ষা করতে লাগলো।। দাসী দের দ্বারা খবর পাঠালো।। কিন্তু তারপরও মায়া আসল না।।
.
শেষে অলোক নিজেই আনতে গেল।। গিয়ে দেখল মায়া এখনো প্রচুন্ড ঘুমে।। সে আরেকটু কাছে এগিয়ে এলো।। কালকে রাতে মায়া কে যেভাবে দেখে গিয়েছিল মায়া এখনো ঠিক সেভাবেই আছে।। খানিকটা সন্ধিগ্ন হয়ে সে কপালে দুটো আঙ্গুলের পিঠ দিয়ে স্পর্শ করল।। আঙ্গুল রাখতেই সে চমকে উঠল।। তীর বেগে দাড়িয়ে চিৎকার করতে লাগল।।
—–দাসী!! দাসী!!
.
সম্রাপ অলোকের চিৎকার শুনে কয়েকজন দাসী দৌড়ে এল।। তারপর ভীত ভাবে নিচু মাথায় দাড়িয়ে গেল।।
ওরা উপস্থিত হলে অলোক ক্ষিপ্ত ভাবে বলে উঠল
.
—-রাজকুমারী মায়ার শরীর এত গরম কেন?? কেউ কি ওর খেয়াল রাখে নি?? যদি কিছু হয় তাহলে একটারও গর্দান থাকবেনা!!!
.
অলোকের কথা শুনে ভীত ভাবে দাসীরা বলে উঠল
.
—- দয়া করুন সম্রাট!! আমাদের মাফ করুন!! আমাদের ভুল হযে গেছে।।
.
এরপর সবাই মায়ার পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে গেল।। আর অলোক দুশ্চিন্তায় এদিক ওদিক পায়চারী করতে লাগল।। তাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।। এত দেরি করা তাদের জন্য মোটেও ঠিক হচ্ছে না।। কিন্তু অসুস্থ মায়া কে এই অবস্থায় নিয়ে যেতে তার মন সায় দিচ্ছে না।।
.
অবশেষে চিন্তিত সম্রাট কে তার সেনাপতি চিন্তা মুক্ত করল।। তিনি বললেন মায়া কে এভাবেই নিয়ে যেতে।। যত দ্রুত প্রাসাদে পৌছানো যাবে তত দ্রুত মায়ার চিকিৎসাও শুরু করা যাবে।। আর পথে দাসীরা তো আছে দেখা শোনা করার জন্য।। অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক হল এই মুহুর্তে যাত্রা শুরু হবে।। অসুস্থ মায়া কে নিয়ে।।
.
ঘোড়ার পিঠে উঠে মায়াকে তার সামনে বসালো অলোক।। এক হাতে মায়া কে খুব শক্ত করে ধরে আছে সে।। আর মায়া হুশ জ্ঞান হীন অবস্থায় অলোকের বুকে মাথা রেখে আছে।।
.
যাত্রা শুরু হল।। সবাই যথা সম্ভব বার্বান রাজ্যে যাওয়ার জন্য দ্রুত চেষ্টা করছে।। দ্রুত যাওয়ার চেষ্টা কালে মায়া বার বার অলোকের বুকের সাথা ধাক্কা খাচ্ছিলো।। আর তাতে অলোকের বুকে কাপুনি শুরু হয়ে যাচ্ছিলো।। খালি খালি অনুভব হতে লাগল।। এক প্রকার কষ্ট হতে লাগল তার।। এই কষ্টের সাথে অনেক আগে থেকে সে পরিচিত।। যে দিন মায়া কে প্রথম দেখেছিল সেদিন ঠিক এরকম ব্যাথা হয়েছিল।। আজ আবারো হচ্ছে।। তাই চোখ মুখ বন্ধ করে অলোক দ্রুত গতিতে চলার চেষ্টা করছে।। যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যে পৌছানো অতি জরুরি।।
.
মায়ার যখন চোখ খুলল তখন প্রায় সন্ধা হয়ে এসেছে।। তার পানির তৃষ্ণা পেয়েছিল অনেক।। কিন্তু সেটা বলার শক্তিও তার গলার মধ্যে ছিল না।। অথচ তৃষ্ণায় তার গলা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।। একটু করে উপরে তাকিয়ে ঝাপসা একটা চেহেরা দেখলো।।
.
অস্পষ্ট দৃষ্টিতে তার মনে হল এটা কালক।। তাই অনেক কষ্টে একটা হাত তুলে অলোক কে ধরল।।
অলোক তার হাতের মধ্যে চাপ অনুভব করতেই তাকিয়ে দেখলো মায়া তার হাতে ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে।। কিছু একটা বির বির করে বলছেও।। সাৎ করে অলোক ঘোড়া থামিয়ে ফেলল।। সাথে সাথে পুরো কাফেলা থেমে গেল।। অলোক মায়ার মুখের কাছে কান নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করল মায়া কি বলতে চাইছে।।
.
—–পা-পান-নি পা-পানিই!!
.
দুটো অক্ষরের শব্দ সে বুঝতে পেরে ঘোড়া থেকে নেমে গেল।। তারপর অালতো করে ধরে মায়াকে নামালো।। তারপর পাজকোলা করে একটা গাছের ছায়ায় বসালো।। তারপর দাসী দের নির্দেশ দিল পানির জন্য।।
.
পানি অানতেই অলোক দাসীর হাত থেকে পানির পাত্র ছিনিয়ে নিল।। তারপর নিজের হাতে পানি পান করাতে লাগলো মায়াকে।। মায়া তৃষ্ণাতুর হরিণীর মত চুক চুক করে অনেক খানি পানি খেয়ে ফেলল।। তারপর মায়া আবারো অলোকের দিকে তাকালো।। জ্বর কিছুটা কমে এসেছে কিন্তু পুরোটা সারে নি।। অলোক মায়া কে হালকা স্বরে ডাকতে লাগলো
.
—– মা-মায়া!! মায়া।।
.
অলোকের ডাকে হালকা করে মাথা নাড়িয়ে মায়া জবাব দিল।।
.
—– মায়া তোমার জন্য কি আনবো?? কি খাবে তুমি মায়া?? বল!!
.
মায়া জবাব দিল না।। চোখ টা আবারো মুদে এলো তার।।
রাত নেমে এসেছে।। অলোক এই স্থানে আবারো তাবু ফেলার নির্দেশ দিল।। তারপর সে অনেক ক্ষন মায়ার পাশে বসে ছিল।। কিন্তু বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলো না।। তার সেনাপতি জরুরি কোনো কাজে তাকে ডেকে নিয়ে গেল।।
.
এদিকে যে এলাকায় তারা তাবু গাড়ল সেটা আরেক দুধর্ষ জাতি লার্বিয়াদের বাসস্থান ছিল।। লুট পাট তাদের কাজ ছিল।। সুতরাং তারা কাফেলা দেখে আক্রমন করে বসল।। অলোক তখন কিছুটা দূরে ছিল।। আক্রমন হতেই তার কানে খবর পৌছালো।। খবর পৌছতেই সে দ্রুত গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে চলে এল।। ততক্ষণে ছোট খাট যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।। সবাই প্রাণপনে লড়ছে।।
.
অলোক ও লড়াই শুরু করল।। বার্বান রা যেমন দুধর্ষ জাতি তেমন হচ্ছে লার্বিয়ান রা।। তবে বার্বান রা প্রশিক্ষিত সৈন্য।। সম্রাট অলোকের বাহিনী।। সুদক্ষ ও সুচতুর।। যুদ্ধ বিদ্যায় পটিয়সী সবাই।। বিষম লড়াই চলছে।। লড়াই করতে করতে অলোকের নজর মায়ার তাবুতে গেল।। সে দেখল একজন শত্রু পক্ষের লোক সেখানে প্রবেশ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।।
.
অলোক ক্রুদ্ধ হয়ে গেল।। ঝন ঝনা ঝন তলোয়াড় চালিয়ে সামনে থাকা পাচ জন শত্রুকে নিমিষেই শেষ করে দিল।। তারপর ঘোড়া ছুটিয়ে মায়ার তাবুর দিকে এগিয়ে চলল।। ঠিক সে মুহুর্তে সামনে যেই পড়ছে সেই প্রাণ হারাচ্ছে।। এক অজানা ক্রোধ ভর করল অলোকের মাথায়।।
.
ঘোড়া থেকে নেমে দ্রুত গতিতে তাবুর ভিতর প্রবেশ করতেই দেখল লোকটা আশে পাশের দামী জিনিস গুলো হাতিয়ে নিচ্ছে।। এরপর সে ঘুমন্ত মায়ার হাতের বালার দিকে হাত বাড়ালো।। অলোক আর সুযোগ দিতে পারে না লোক টিকে।।
.
হাতের মধ্যে থাকা তলোয়াড় টিকে ছুড়ে মারল সে।। অব্যর্থ নিশানা অলোকের।। হাত থেকে কবজি টা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল লোকটির।। মুহুর্তে চিৎকারে তাবু টা ফেটে যাওয়ার মত উপক্রম।। চিৎকারে অসুস্থ মায়া জেগে উঠল।। তারপর ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে দেখছে।। কিন্তু কি হচ্ছে সে বুঝতে পারছিল না।।
.
তারপর অলোক এসে তলোয়াড় টা তুলে নিয়ে লোকটার পেটে আঘাত করল।। মর্মবেদী শেষ চিৎকার দিয়ে লোকটি লুটিয়ে পড়ল।। চারদিকে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।। মায়া আগেও অলোকের এই রুপ দেখেছিল।। তাই চুপচাপ দুর্বল শরীরে পিছে হটে গিয়ে মুখে হাত চাপা দিল যাতে শব্দ বের না হয়।। তারপর ঢোক গিলে অলোকের দিকে তাকালো।। অলোক ততক্ষণে খাপে তলোয়াড় ঢুকিয়ে ফেলল।। মায়া ধীরে ধীরে অলোকের দিকে তাকালো।।
.
তার চোখে মুখে রক্তের ছিটে ফোটা পড়ে রয়েছে।। তাকে দেখে মায়ার মনে হল সে যেন একটা রক্ত শোষক।। রক্ত শুষে নিয়ে মায়ার দিকে এগিয়ে আসছে।। মায়া আরেকটু পিছে হটল।। তার গলা শুকিয়ে আসছে।। হয়ত তলোয়াড়ের এক কোপে ধড় থেকে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে দেবে।।
.
অলোক এসে মায়ার পাশে বসল।। তারপর কোমড়ের ভাজ থেকে একটা সোনালি রুমাল বের করে মায়ার দিকে এগিয়ে নিল।। মায়া চোখ বন্ধ করে ফেলল।। অনুভব করল যে অলোক তার মুখের এক পার্শে রুমাল দিয়ে মুছে দিচ্ছে।। সে চোখ খুলে সামনে তাকালো।। এই মুহুর্তে সুস্থ থাকলে অলোক কে নিজেকে স্পর্শ করতে দিত না।। কিন্তু অসুস্থ শরীরে মায়ার তেমন কিছু করতে ইচ্ছা হল না।। এরপর মুছা শেষে অলোক আপনা আপনিই বলল
.
——নোংরা রক্ত লেগেছিল তোমার শরীরে!! শুধু রক্ত কেন!! আমি চাই না কারো ছায়াও তোমার উপর পড়ুক।। ওয়াদা করছি এরপর থেকে কেউ আমার ঐশ্বর্য্যে হাত বাড়াতে দিব না।।
.
এই বলে অলোক মায়ার কপালে চুমু খেল আস্তে করে।। মায়া কিছু বলতে পারল না।। যেন মুখে তালা লেগে গেছে।। এরপর অলোক উঠে দ্রুত বাইরে চলে গেল।।
.
(চলবে)
.
আমার পেইজে সব কি পাঠিকা?? একটা পাঠকও নাই??
Home “ধারাবাহিক গল্প” Every Thing Is Fair In Love And War Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer –...