Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera ………………… Part – 6

0
590

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
………………… Part – 6………………………..

—————-ঈরানভা রাজপ্রাসাদ————–
.
…… ঈশ্বরের আশীর্বাদ তোমার সাথে থাকুক।।
এই বলে রাণী অমরা মায়ার কপালে একটা চুমু খেল।। মায়ার চোখের পানি টল টল করছে।। বিভীষা পাশে দাড়িয়ে নিরবে অশ্রু বিসর্জন করছে।। মায়া এসব দেখে বলল
…… মা আমি তোমাদের ছেড়ে কিভাবে থাকবো?? আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।।
….. এই মুহুর্তে তোমাকে যেতে হবে মায়া।। তোমার নিজের খাতিরে!!
…..কিন্তু মা”””””
….. কোন কিন্তু না!!
….. বিভীষা মা কে বোঝাও!! আমি তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না।।
….. মায়াজান!! রাণী মা ঠিক বলছেন!! আপনার এখন যাওয়া উচিত।।
….. বিভীষা তুমিও!!
.
সবাই মায়া কে বিদায় দিতে লাগল।। কারন এই মুহুর্তে ঈরানভা রাজ্যে বিপদ জনক অবস্থায় রয়েছে।। যেকোনো মুহুর্তে বার্বান সৈন্যরা প্রাসাদে ঢুকে আক্রমন করতে পারে।। ঈরানভা রাজ্যের পরাজয় সুনিশ্চিত।। তাই তার আগে রাজ কুমারী মায়া কে ছদ্মবেশ ধারন করিয়ে মহল থেকে গুপ্ত রাস্তা দিয়ে পালাতে সাহায্য করছে রাণী অমরা আর বিভীষা।।
.
সবাই কে অশ্রু সজলে বিদায় জানালো মায়া তারপর ঘোড়া নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।। পিছন ফিরে তাকালো না মায়া।। এক নাগাড়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলেছে মায়া। কোথাও বিন্দু মাত্র থামে নি সে।। এমন কি ঘোড়া কেও দেয় নি এতটুকু বিশ্রাম।। গন্তব্য উত্তর বৃন্দা হয়ে পাশের রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত অপরুপ সৌন্দর্য্যে মন্ডিত নগর সুরাভ নগর।। এখানে তার আপন বলতে কেউ নেই। তবে তার পিতার একজন বিশ্বস্ত মানুষ থাকে।।
.
কুহর!! একসময় সে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করত সে।। কিন্তু অবসর প্রাপ্ত হওয়ায় রাজা মৈনাক তাকে এখানে আবাস করার অনুমতি দেন।। তাই মায়ার গন্তব্য ওখানে।। একদম নিরাপদ জায়গা।। কেউ টেরও পাবেনা।।
যেতে যেতে রাত হয়ে এলো।। অন্ধকারে পথ চেনা দুষ্কর।। তাই মায়া থামল।। কিন্তু তার অনেক ভয় হতে লাগল।।
.
সে কখনো এরকম নির্জনে থাকেনি।। এমনকি শিকারেও না।। কিন্তু মনে মনে ঈশ্বর কে ডেকে কোনো মতে রাত পার করতে লাগল।। কিন্তু মাঝ রাতেই ঘোড়ার খুরের শব্দ পেল সে।। চোখ ছুটে গেল মায়ার।। আশে পাশে অনেক ঘোড়ার খুরের শব্দ।। মায়া বুঝে গেল তার বিপদ অতি সন্নিকট।। তাই সে একটা কাটা নিয়ে আস্তে করে ঘোড়ার পায়ে লাগিয়ে ফেলে দিল। অমনি ঘোড়া উল্টা দিকে দৌড়াতে লাগল।।।
.
আর মায়া তার গন্তব্যর দিকে।। সবাই মায়া ভেবে ঘোড়ার পিছন পিছন ছুটবে।। এভাবে মায়া নিজেকে আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করল।। তারপর আবার পথ চলা।। এবার আর এক মুহুর্তের জন্য সে থামল না।। সকাল হয়ে এলো। কিন্তু পথ ফুরালো না।।
.
চলতে চলতে মায়ার খুব পানির পিপাসা পেল।। তাই সে পাশের একটা জলায় পানি খেতে নামল।। পানি খেতে নেমে মায়া দু জন মানুষের কথোপকথন শুনল।। তারা বলাবলি করছিল
…… শুনেছি রাজা মৈনাক নাকি যুদ্ধে হেরে গেছেন??
….. সম্রাট অলোকের সাথে পেরে উঠা সহজ কথা নাকি??
….. সবই কপাল।। যদি রাজা মৈনাক ভালোয় ভালোয় রাজকুমারী মায়া কে সম্রাটের হাতে তুলে দিত তাহলে এত মানুষেরর জান আজকে বাচত।। বেকুব রাজা।।
.
এই বলে লোক দুজন খিক খিক করে হাসতে লাগল আর মায়ার দু চোখ পানিতে টল টল করতে লাগল।। তার জন্য এসব কিছুই হচ্ছে।।
সেখানে দাড়িয়ে মায়া প্রতিজ্ঞা করল তার ঈরানভা রাজ্যের যতজন মানুষের চোখের পানি ঝরেছে তার দ্বিগুণ সম্রাট অলোকের চোখ সে ঝরাবে।। নিজের কাছে নিজেকে ওয়াদা করল।।
.
অবশেষে মায়া সুরাভ নগর পৌছাল।। সেখানে সে কুহর কে ও খুজে পেল।। কুহুর তার স্ত্রী কে সুখে বসবাস করছিল।। মায়া কে পেয়ে ধন্য হয়ে গেল।। মায়ার সেবা যত্নের কোনো ত্রুটি রাখল না। সব শুনে তারা স্বামী স্ত্রী মায়া কে প্রতিজ্ঞা করল যে যেকোন মূল্যে তারা মায়া কে রক্ষা করবে।। মায়া ও খানিকটা নিরাপদ বোধ করল।।
.
এখানে এসে ছদ্মবেশে থাকতে হল।। কুহর মায়া কে জানালো যে এখানে বার্বান সৈন্যদের আসার সম্ভবনা না থাকলেও আগে থেকে মোকাবিলা করার জন্য তৈরি থাকা ভালো। সুতরাং কুহর মায়া কে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিল দূর সম্পর্কের ভাতি জি হিসেবে।।। আর মায়া সেভাবে চলতে লাগল।।কিন্তু বিপদ দেখা দিল দুই দিন পরেই।। দুই দিন পর সুরাভ নগরীতে বার্বান সৈন্যদের দেখা গেল।। তারা নানা ভাবে মায়ার খোজ খবর নিতে লাগল।।
.
সবাইকে বিভিন্ন ভাবে পুরষ্কারের লোভ দেখাতে লাগল।। এসব দেখে কুহর মায়া কে সাবধান করে দিল। এবং অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করে দিল।। এরপর ও বার্বান সৈন্যরা সফল না হলে গুপ্তচর লাগিয়ে দিল।। অবস্থা বেগতিক দেখে কুহর মায়া কে পরামর্শ দিল এই জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার। কারন এই জায়গা মায়ার জন্য নিরাপদ না।।
.
তাই তিনি মায়া কে দূরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে লাগলেন।। ঠিক হল পরদিন কাক ডাকা ভোরে মায়া এখান থেকে চলে যাবে।। কিন্তু বিধি বাম।। সেই দিন মধ্য রাতেই বার্বান সৈন্যরা সুরাভ নগরে হামলা চালাল।। বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দিল।।
প্রত্যেকটা ঘর থেকে যুবতি মহিলাদের জোর করে ধরে লাইনে দাড় করাতে লাগল।। আর বাকি দের নয়তো মেরে ফেলছিল না হলে বন্দি করে ফেলছিল।।
.
এই অবস্থা দেখে কুহর তাড়াতাড়ি মায়াকে পিছন দরজা দিয়ে বের করে দিল। এবং বলে দিল সে কোন দিকে যাবে।। এভাবে গেলে বার্বান সৈন্যরা জীবনেও মায়ারর নাগাল পাবে না তাও বলে দিল।।
সুতরাং তাড়াতাড়ি মায়া ঘরে হতে বেড়িয়ে এলো।। এদিকে চারদিকে চিৎকারর চেচামেচিতে সুরাভ ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করল।। যে যেদিক পারছিল পালিয়ে যাচ্ছিল।।
.
মায়া পিছন দরজা দিয়ে বেড়িয়ে ঝোপের আড়াল দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল।। এতকিছু কখনো মায়া নিজের চোখে দেখে নি।। কিন্তু আজ যুদ্ধের বিভীষিকাময় কিছু রুপ সে দেখল।। কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সবকিছু।। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ কিছু আওয়াজ আর শোরগোলে মায়া থমকে দাড়ালো।। সে দেখার চেষ্টা করল কি হচ্ছে।। কিন্তু ভালো ভাবে দেখতে পেলনা।।
.
তাই সে আড়াল ছেড়ে সামনে ঘোড়া বাধার অস্থায়ী আস্তাবলের দিকে এগিয়ে গেল।। সেখানে ঘোড়ার জন্য রাখা ঘাসের স্থুপে লুকিয়ে দেখতে লাগল কি হচ্ছে।।।
সে দেখলো সামনে সারি সারি যুবতি মেয়েদের ধরে রাখা হয়েছে!! আশ্চর্য্য!! ওদের কেন ধরে রাখা হয়েছে?? ওদের মেরে ফেলবে নাতো?? কিছুক্ষন পর ঘোড়ার খুরের শব্দ পাওয়া গেল।। কিছুক্ষন পর সেখানে কালো ঘোড়ায় করে কালো পোশাকে কেউ একজন আসল।। সবাই তাকে সম্মান জানিয়ে মাথা নিচু করে রইল।। এবং যতক্ষণ ওই লোকটি না নির্দেশ করল মাথা তুলতে ততক্ষণ কেউ মাথা তুলল না।।
.
এরপর উনার নির্দেশে সবাই মাথা তুললে উনি জিজ্ঞেস করলেন
……. এখানে সবাই কে ধরে আনা হয়েছে??
…… জি সম্রাট!! আমরা প্রত্যেক ঘর তল্লাশী চালিয়ে সবাই কে বন্দি করেছি।।
….. আপনার কি মনে হয়!! আপনার অনুমান সঠিক যে সে এখানে আছে?
….. অবশ্যই সম্রাট!! আমি খোজ পেয়েছি যে এখানে দু দিন আগে এক মেয়ে এসেছে।। এবং বর্ণনা অনুযায়ী সেই রাজকুমারী মায়া!!
.
মায়ার কলিজা ধক করে কেপে উঠল নিজের নাম শুনে।। এরা এভাবে তাকে খুজছে ছন্ন বিছন্ন হয়ে।। আ-আর এ নিশ্চয় সম্রাট অলোক!! পাষন্ড, হত্যাকারি, নিষ্টুর এক সম্রাট!! যার ভয়ে মায়া পালিয়ে বেড়াচ্ছে।।। মায়া সামনে তাকিয়ে দেখল সম্রাট অলোক একে একে সব মেয়েকে চেক করে দেখছে।। মায়া বুঝতে পারল তাকেই খোজা হচ্ছে।। কোনো ভাবে তারা খবর পেল যে মায়া এখানে আছে।। তাই এই গুপ্ত হামলা!!
.
মায়া আর নিজেকে নিরাপদ বোধ করল না।। ধীরে ধীরে পিছন থেকে সরে যেতে লাগল।। এভাবে পিছন দিকে সরতে গিয়ে মায়া খেয়াল করেনি যে এই আস্তাবল টা অত্যন্ত জীর্ণ।। তাছাড়া আগুন লেগে এর কিছুটা অংশ পুড়ে গেছে।। তাই মায়ার পায়ের সাথে দড়ি লেগে টান পড়ে হুড়মুড় করে আস্তাবলের ছাদটা ভেঙে পড়ল।। গাছের তৈরি একটা পিলার সরাসরি মায়ার পায়ের উপর পড়ল।। মায়া ব্যাথায় একবার আর্তনাদ করেই নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরল। মনে হল তার যেন পা টা ভেঙে গুড়ি হয়ে গেছে।।
.
মুখ চেপে রেখেও কিন্তু লাভ হলনা।। আর্তনাদ ঠিকই অলোকের কানে পৌছাল।। সে চেক করা বাদ দিয়ে আস্তাবলের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল।। কাছাকাছি এসেই তলোয়াড় টা বের করে নিল।।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here