Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera ………………… Part – 7.

0
633

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
………………… Part – 7………………………..

মায়া বুঝতে পেরেছিল যে কেউ একজন তার দিকে এগিয়ে আসছিল।। তাই সে প্রাণপনে কাঠের ভারি পিলার টা সরানোর চেষ্টা করছিল।। এতে তার প্রচুন্ড ব্যাথা আর কষ্ট হচ্ছিল।। তার পা পিলারের নিচে পড়ায় সে ক্রমাগত পা কে টেনে বার করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিছুতেই পা কে বার করতে পারছিল না।।
.
এদিকে অলোক তলোয়ার বের করে আস্তাবলের কাছাকাছি এসে শুধু মাত্র ভেঙে যাওয়া আস্তাবল ছাড়া আর কিছু দেখতে পেল না।। আস্তাবলের এক কোনা পোড়া দেখে সে ভাবলো হয়ত পুড়ে যাওয়ায় আস্তাবলটি ধসে পড়েছে।। তাই সে তলোয়ার টা খাপে ঢুকিয়ে ফিরে যাবে ঠিক সে মুহুর্তে এক খানা ফর্সা পায়ের উপর তার নজর পড়ল।। ফর্সা পা টা দেখে তার বুকের ঢিপ ঢিপ শব্দ টা সে শুনতে পেল কিন্তু বুঝতে পারল না কেন এটা এত জোরে শব্দ করছিল।।
.
পা টা চাপা পড়ে আছে কাঠের পিলারের মধ্যে। সে এগিয়ে গেলো।। তারপর এক হাতে পিলারটি ধরে অপর দিকে ছুড়ে মারল।। আর সাথে সাথে মায়া চমকে উঠল। সে ধরা পড়ে গেছে।। তাড়াতাড়ি আহত পা কে টেনে পিছু হটতে চাইলো।
.
অলোক হঠাৎ করে মায়া কে দেখে থমথম খেয়ে গেল। সে পা দেখে কোন সাধারন মেয়ে হবে ভেবেছিল।। কিন্তু এভাবে মায়া কে খুজে পাবে সেটা সে কল্পনা করে নি।। কিন্তু নিজেকে সামলাতে সময় লাগলো না।।। সে এগিয়ে এলো মায়ার দিকে।। মায়া বসেই পিছনে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না। কিন্তু
তার পিঠ ঠেকে গেল।। অলোক সরাসরি মায়ার সামনে দাড়ালো।। তারপর পায়ে পাতার উপর ভর দিয়ে মায়ার সামনে বসল।। মায়া আরেকটু পিছনে সেটে গেল।।
.
অলোক এক দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকালো।। এই সেই মায়া যাকে সে এত বছর প্রাণপন খুজছে! এত মানুষের জান নিয়েছে।। সে মোটেও চিনতে ভুল করে নি।। এই তার মায়া।। তার ঠোঁটের এক কোণে হাসি ফুটে উঠল।। মায়া ভয়ে কাপঁছিল।। কিছুতেই তার মন সায় দিচ্ছিল না যে সে অলোকের কাছে ধরা পড়ে গেছে।।
.
সে দাড়ানোর চেষ্টা করছিল।। তার চেষ্টা দেখে অলোক তার খোলা ফর্সা পায়ের দিকে তাকালো।। তার চোখে খানিকটা নেশা লেগে গেলো মায়ার ফর্সা পা দেখে।। সে হাত বুলাতে চাইলো।। কিন্তু তার আগে মায়া বলে উঠল
…… খবর দার আমায় ছোবে না!!
অলোক শুধু একবার মায়ার চেহারা দিকে তাকালো।। ব্যাথায় তার মুখ নীল হয়ে আসছে।।
.
এরপর অলোক মাথার পাগড়ি থেকে খন্ডিত কাপড়ের টুকরো নিয়ে পায়ে র একটু উপরে কেটে যাওয়া যায়গায় বেধে দিল।। মায়া বাধা দিল।। কিন্তু অলোক কোনো বাধা শুনলো না।। বাধা শেষ হলে অলোক আর একবার মায়ার উদোম পায়ে হাত বুলালো।। আর মায়া ঘৃণায় দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে রইল।
.
তারপর অলোক মায়া কে দু হাতে ধরল।। আরর মায়া চিৎকার করে বলতে লাগল
…… আমাকে ছোবে না বলছি।।। ছেড়ে দাও আমাকে!! ছেড়ে দাও।।
মায়া হাত পা ঝাপটাতে লাগল।। কিন্তু অলোক কোন কথা বলল না। চোখ মুখ শক্ত করে ফেলল।। তারপর মায়া কে দাড় করিয়ে এক ঝটকায় কাঁধে তুলে নিল।। সেটা এতটায় দ্রুত ছিল যে মায়া পেটে তীব্র ব্যাথা পেল।।
.
সে চিৎকার করে বলছিল তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা।। কিন্তু অলোক ছাড়ল না। তার এত সহজে ছেড়ে দেবারও কথা না।। কারন যাকে সে এত বছর ধরে কাছে পাওয়ার চেষ্টা করছে তাকে এত কাছে পেয়ে সে কিছুতেই তাকে ছেড়ে দেবেনা।। তাই মায়ার কোন অনুরোধ তার কানে গেল না।।
.
এদিকে বার্বান সমস্ত সৈন্যরা দেখল যে তাদের সম্রাট এক ক্রন্দন রত রমনী কে কাঁধে করে নিয়ে আসছে আর রমনী টি কেদে কেদে হাত পা ছুড়ছে।। সম্রাট অলোক কে এগিয়ে আসতে দেখে তার সেনা পতি সামনে এসে জিজ্ঞেস করল
…… মাফ করবেন সম্রাট!! আপনি এ কাকে নিয়ে এসেছেন এভাবে???
অলোক কিছু না বলে শুধু এক মুহুর্তের জন্য তার বিশ্বস্থ সেনাপতির দিকে তাকালো।।
.
আর তাতে তার সেনাপতি বুঝে গেল তাদের সম্রাট চোখের ইশারায় কি বলল।। সে তার সমস্থ সৈন্য কে গুটিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিল।। সমস্ত বন্দি কে ছেড়ে দেয়া হল।। ছাড়া পেয়ে সব বন্দি পালাতে লাগল।। কিন্তু পালাতে পারল না একজন।। আর সে হল মায়া।। সে অলোকের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য সমস্ত ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
.
যখন অলোক মায়া ঘোড়ার উপর তুলল ঠিক তখন চিৎকার করতে করতে এগিয়ে কুহর আর তার স্ত্রী।। কুহর এসে কান্না করতে করতে বলতে লাগল
…… সম্রাট দয়া করুন!! এ আমাদের এক মাত্র কন্যা দিবা।। এ কে ছেড়ে দিন।। একে ছাড়া আমরা কিভাবে বাচঁবো???
.
মূলত কুহর জানত যে সম্রাট অলোক মায়া কে খুজছে।। যদি এটা বিশ্বাস করানো যায় যে এ মায়া না।। তাদের কন্যা তাহলে হয়ত ছেড়ে দিবে।। দিবা কুহরের কন্যার নাম।। এক বছর আগে পানিতে ডুবে দিবা মৃত্যু বরন করেছিল।। আর তাই কুহর মায়া কে নিজের কন্যা রুপে রেখে দিতে চেয়েছিলো।।
.
বৃদ্ধ বৃদ্ধার কান্না দেখে অলোক মায়ার দিকে তাকালো।। মায়ার দিকে তাকাতেই মায়াও মাথা নাড়ল অলোক কে বুঝানোর জন্য যে সে তাদেরই কন্যা।। কিন্তু অলোক বিন্দু মাত্র সন্দেহে ছিল না।। কারন প্রথমত মায়ার সবুজাভ চোখ, দ্বিতীয়ত তার গলার লকেট।। যেটা সে প্রথম দেখায় দেখেছিল।।
.
এবার অগ্নিদৃষ্টিতে অলোক কুহর আর তার স্ত্রীর দিকে তাকালো।। তারপর শুধু একটা ইশারা করল সেনাপতির দিকে। ইশারা পেয়ে সেনাপতি দেরি করল না।। সাথে সাথে তলোয়াড় বের করে দুজনের শরীর থেকে ধড় আলাদা করে দিল।। আর এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠল।।
.
তাদের মুন্ডহীন শরীর মাটিতে তড়পাতে দেখে মায়ার গা গুলিয়ে আসল।। চারদিকে ধোয়াসা দেখতে লাগল।। তারপর সে জ্ঞান হারালো।। মায়াকে জ্ঞান হারাতে দেখে অলোক বিন্দুমাত্র বিচলিত হল না।। বরং আরো খুশি হল যে কোনো জোর ছাড়া তাকে সহজে নিয়ে যেতে পারবে বলে।। এরপর সে সবাই কে স্বদেশে ফিরে চলার জন্য অনুমতি দিল।।।
.
মায়ার হুশ আসল কয়েক ঘন্টা পর।। প্রথমে হুশ আসলে সে বুঝতে পারল না সে কোথায়।। শুধু অনুভব করল যে সে দুলছে। তারপর সে ভালো করে চোখ খুলে বুঝতে চাইল সে কোথায়?? যখন বুঝতে পারল তখন আর তার কিছু করার নেই।। নিরবে তার কান্না আসছিল।। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি ঝড়ছিল।। কি এমন ভুল সে করেছিল, কি এমন পাপ সে করেছিল যার জন্য আজকে তাকে এদিন দেখাচ্ছে।।
.
মনে মনে মায়া ঈশ্বরের কাছে নিজের মৃত্যু কামনা করল।। তারও কয়েক ঘন্টা পর অলোক তার কাফেলা কে থামতে বলল।। কারন সন্ধা হয়ে এসেছে তার উপর সবার বিশ্রামের প্রয়োজন।। তাই সবাই ঘোড়া থামিয়ে, মাল পত্র নামিয়ে যে যার যার কাজ করতে লাগল।। তাবু টাঙ্গাতে লাগল।। সবার আগে সম্রাট অলোকের টা তৈরি করা হল।।
.
এরপর সম্রাট মায়া কে কোলে তুলে একটা গাছের ছায়ার নিচে বসাল।। তারপর পানির পিপে থেকে পানি নিয়ে মায়ার মুখে ধরল।। তারপর বলল
…… নাও
মায়া শুধু মাত্র অলোকের দিকে তাকালো।। কিন্তু পানি পান করার কোন আগ্রহ দেখালো না।। এটা দেখে অলোক গম্ভির গলায় বলল
…… কোন লাভ হবে না এভাবে তাকিয়ে।।। তার চেয়ে পান কর।। ভালো থাকবে।।
তারপর পানির পাত্রটা অলোক মায়ার ঠোটে চেপে ধরল।। আর মায়া সেটা মুখে নিল।। মুখে নিতেই অলোকের মুখে হাসি ফুটে উঠল।। কিন্তু সেটা কিছুক্ষনেরর জন্য।। মায়া মুখে নেয়া পানিটা কুলির মত করে অলোকে হাসি মাখা মুখ টাতে মেরে দিল।।।
.
অলোকের মুখে পানির ছিটকা পড়ায় অলোক থম থম খেয়ে গেল।। সাথে সাথে আশে পাশের সব সৈন্য তলোয়ার নিয়ে মায়া কে আঘাত করতে উদ্ধত হয়ে গেল।। কিন্তু অলোকের বাধার কারনে আর পারল না।। সবাই কে যার যার করতে বলল।।
.
এরপর অলোক মায়ার খুব কাছে এগিয়ে এসে তাকালো।। এই মুহুর্তে অন্য কোন মানুষ হলে এতক্ষন সে জীবিত থাকত না।। কিন্তু মায়ার চেহেরা দেখে অলোকের কিছু বলতে ইচ্ছা হল না।। সে শুধু এগিয়ে বলল
…… মায়া বার্বান রাজ্য অনেক দূরের পথ।। পানির তৃষ্ণা পেলে বলবে।।
এই বলে অলোক উঠে চলে যাচ্ছিল।। কিন্তু তখন মায়া বলে উঠল
…… আমি কোথাও যাব না।।
শুনে অলোক হাসল।। কিছু বলল না।। কারন সে না গেলে তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হবে।। অলোক বলল
…… তুমি না গেলে আমার আরো পন্থা আছে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার।। সুতরাং এখানে তোমার অনুমতি নেওয়ার আমার কোন প্রয়োজন নেই।।
এটা বলে মায়াকে আর কোন কথার সুযোগ দিল না অলোক।। কয়েক জন সৈন্য কে পাহারায় রেখে সে চলে গেল।।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here