তুমিময়_নেশায়_আসক্ত #পর্ব- ১১

0
598

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ১১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়নের তপ্ত উষ্ম নিঃশ্বাসের অস্তিত্ব নিজের শরীরে
খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছে রিমি। অয়ন রিমির কোমড় জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। রিমি চাইলেও অয়নকে সরাতে পারছে না। অনেক্ষন চেষ্টা করার পরে যখন রিমি অয়নকে নিজের থেকে একচুলও সরাতে পারলো না তখন ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়। রাতের গভীরতা বাড়ছে তার সাথে নিরবতাও প্রখরভাবেও
বেড়ে চলেছে সময়ের সাথে সাথে। বড় জানালা দিয়ে
শীতের বাতাস এসে রিমির শরীরটাকে নাড়িয়ে তুলছে। রিমির গাঁয়ে পাতলা একটা চাঁদর মাত্র। রিমি একবার ভাবলো উঠে গিয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিবে কিন্তু অয়ন এমনভাবে তাকে জড়িয়ে আছে সে চাইলেও যেতে পারবে না। অয়ন ঘুমের মাঝেই নিজের অধরজোড়া দিয়ে ছুইয়ে দেয় রিমির নরম হাতখানা। রিমি কেঁপে উঠে। রিমি একপলক তাকায় ঘুমন্ত অয়নের দিকে। ঘুমের মাঝে কি সুন্দর লাগছে লোকটা। ফর্সা মুখটায় কোনপ্রকার হিংস্রতা নেই। নেই কোন রাগ। আছে শুধু একরাশ মায়া। ঘুমন্ত অয়নের দিকে তাকিয়ে আদোও কেউ বলবে? এই লোকটা জেগে থাকলে সাইকো হয়ে উঠে। কিন্তু কেন তার এমন আচরণ? কেন অয়ন রিমির প্রতি এতোটা
পসিসিভ হয়ে উঠছে দিনের পর দিন? কথাগুলো
বড্ড ভাবায় রিমিকে। রিমির কি হলো কে জানে রিমি হাত বাড়িয়ে অয়নের মুখশ্রীতে খোচা খোচা চাপদাড়িতে হাত বুলায়। সঙ্গে সঙ্গে তার বুকটা কেঁপে ভালোলাগার কম্পনে। সে হাত সরিয়ে ফেলে।
ঘুমালে একটা মানুষকে এতো ভালো লাগে? রিমি শুধু শুনেছিলে মেয়েরা ঘুমালে নাকি তাদের খুব সুন্দর লাগে। তাদের প্রতি আলাদাই একটা মায়া কাজ করে তখন কিন্তু সেসব কথাতে মিথ্যে প্রমাণ করে দিলো অয়ন। ঘুমন্ত মেয়েদের মুখেই শুধু আলাদা মায়া থাকেনা বরং ছেলেরা ঘুমালেও তাদের মুখে আলাদা এক মায়া কাজ করে। সেই মায়ায় যেকোণ রমনী মন হারিয়ে বসবে। রিমিও কি তবে মন হারিয়ে বসছে ধীরে ধীরে? কথাটি রিমির মস্তিষ্কে কথাটি নাড়া দিতেই রিমি চটজলদি অয়নের থেকে সরে আসে। এতে অয়নের কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।
বিরক্তিতের কপালের বলিরেখায় ভাজ পরে। অয়ন রিমিকে নিজের কাছে টেনে, শক্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলে,

‘ কি করছো কী তুমি? বললাম না? কিছুক্ষব ঘুমাবো জাস্ট। সেই সময়টুকুও দিতে পারলে না তুমি? ওকে ফাইন! আজকে সারারাত তুমি আমার সাথেই ঘুমাবে। ‘

রিমি অয়নের কথায় হতভম্ব হয়ে বলে, ‘ কি বলছেন কি? আমি আপনার সাথে ঘুমাবো মানে? কয়েকদিন পর আমাদের ডিভোর্স ভুলে গেলেন? সবাই কি ভাব্বে? আমি কিছুতেই আপনার সাথে ঘুমাবো না। ‘

রিমির কথাকে গুরুত্ব দিলো না অয়ন। পাজকোলে তুলে নিলো তার রিমিপরীকে। ঢুলুঢুলু পায়ে এগিয়ে যেতে নিলো তার ঘরের দিকে। রিমি হাতপা ছড়াছড়ি করতে করতে অয়নের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে থাকে,

‘ ছাড়ুন আমাকে। আপনি কিন্তু এইভাবে আমার উপর অধিকার ফলাতে পারেন না। আমি এতোদিন চুপ করে আছি বলে। এখনোও চুপ করে থাকবো তা আপনি মোটেও ভাব্বেন না কিন্তু। এইবার আমি রুহানা চৌধুরীর সাথে ডাইরেক্ট কথা বলবো। ‘

অয়ন রিমিকে নিজের ঘরে এনে, রিমিকে তার বিছানায় বসিয়ে, খট করে নিজের দরজা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর নিজের ব্লেজার টা খুলে বিছানায় ফেল্ব দেয়। অয়নের এমন কাজে ভরকে যায় রিমি। জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আওড়াতে থাকে,

‘ আপনি কিন্তু আমার কাছে আসবেন না। একদম না। আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনি আমাকে একা পেয়ে আমার সুযোগ নিবেন তাহলে আপনি কিন্তু ভুল ভাবছেন। ‘

রিমির এমন কথায় অয়ন হঠাৎ রিমির অনেক কাছে এসে,রিমির গাল চেপে ধরে রাগান্বিত সুরে বলে,

‘ সিনেমার ডায়লগ দেওয়া শেষ? আর সবথেকে বড় কথা আমরা এখনো হাজবেন্ড ওয়াইফ। আমি যদি
তোমার উপর অধিকার খাটাতেও চাই তখন তুমি আমাকে চাইলেও আমাকে আটকাতে পারবে না।
তাই এইসব ইডিয়েট কথাবার্তা নেক্সট টাইম থেকে বলবে না। ‘

কথাটি বলেই পুনরায় রিমির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। রিমি কিছু বলতে চাইলে অয়ন ঘুম ঘুম কন্ঠে একপ্রকার শাসিয়ে বলে উঠলো,

‘ এইবার যদি আমাকে ডিস্টার্ব করেছো তাহলে আমি তোমার সাথে রোমান্টিকতার ক্লাস নিবো। ইউ নো সাচ আ হটিনটি রোমান্টিক ক্লাস। বুঝতে পারছো তো রিমিপরী? ওয়াট আই মিন? ‘

অয়ন দুষ্টুহেসে কথাটি বলেই ঘুমিয়ে পড়লো পুনরায়।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

অয়নের দুষ্টুহাসির কারণটি বুঝতে তেমন বেগ পেতো হলো রিমির। রিমি শুকনো ঢুগ গিলে চুপ থাকলো।
এই লোকটাকে দিয়ে তার কোণ বিশ্বাস নেই। যা বলে তাই করে। রিমি আরেকটু ভালো করে অয়নকে পর্যবেক্ষন করে দেখতে পেলো অয়নের ঠোটের কোণে রক্তের দাগ। কিসের সাথে লেগে যেন কেটে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে রিমির অয়নের বলা কিছুক্ষন আগের কথা মনে পড়লো। অয়ন কিসব মারপিটের কথা বলেছিলো। রিমির বুক থেকে সুদীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। অয়নের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে
বিড়বিড় করতে বলতে লাগলো,

‘ না জানি কার বারোটা বাজিয়েছেন উনি। আল্লাহ এই লোকটা কি সত্যিই একটা সাইকো? উফফ! ‘

রিমি অয়নের নামে এইটা সেইটা বলতে বলতে অয়নের বিছানাতে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে গেলো একসময়।

__________

পাখির কিচিরমিচির শব্দে রক্তাভ আকাশে সূর্য যখন উঁকি দিচ্ছে; তখনই শিশির ছড়াচ্ছে সবুজ দূর্বাঘাসে।
শীষের ডগায় জমা শিশিরগুলো যেন মুক্ত দানার মত দ্যুতি ছড়াচ্ছে। হিম হয়ে উঠেছে শীতের ভোরের সকাল।

অয়নের ঘুম প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ভাঙ্গে।
অয়ন যত দেরী করেই ঘুমাক সে তার সঠিক সময় অনুযায়ী ঘুম থেকে উঠে। ঘুম থেকেই উঠেই অয়নের চোখ গেলো তার রিমিপরীর দিকে। সঙ্গে সঙ্গে মনটা তার প্রশান্তিতে ভরে গেলো। ঘুমন্ত রিমিপরীকে বড্ড স্নিগ্ধ লাগছে তার কাছে। যেন কোন ফুটন্ত গোলাপ। অয়ন আলতো হাঁসলো। রিমিকে বড্ড ছুইয়ে দিতে ইচ্ছে হলো তার। অয়ন নিজের ইচ্ছেকে সংযত করলো না বরং রিমির গালে আলতো করে চুমু খেলো। রিমি এতে খানিকটা নড়ে পুনরায় ঘুমিয়ে গেলো। অয়ন হেসে রিমির গায়ে কম্বলটা জড়িয়ে আনমনে বলে উঠলো,

‘ ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে তোমার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত রিমিপরী। ‘

অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে চলে যায়। আজকে কেন যেন তার নামায পড়তে ইচ্ছে হলো। হয়তো মহান আল্লাহ তাকে মহামূল্যবান কিছু দিয়েছে সেইটারই শুকরিয়া আদায় করবে সে।

___________________

রুহানা চৌধুরী তার কেবিনে বসে রাগে ফুশছেন। মাথা কাজ করছে না তার। কিছুক্ষন এর মাঝেই অয়নের উপস্হিতি টের পান তিনি। ক্রোধ নিয়ে অয়নের পানে চেয়ে থাকেন। অতঃপর ক্ষিপ্ত গলায় বলে,

‘ অয়ন তুমি জানো তুমি কী করেছো? ‘

‘ জানি আমি। ‘

অয়নের সহজ উত্তর ।

‘ মিঃ শেখ হসপিটালে ভর্তি। উনার যদি কিছু হয়ে যায় তখন উনি আমাদের উপর স্টেপ নিবেন। আমাদের কম্পানির একটা বিশাল ক্ষতি তো তুমি করেই ফেলেছো । পায়েল অসুস্হ হয়ে পড়েছে তাই ক্যানাডা যেতে পারেনি। তার মধ্যে তুমি মিঃ শেখের সাথে যা করেছো এতে উনি আমাদের সাথ শত্রুতা করবেন। যার ফল মোটেও ভালো হবেনা। তুমি শুনছো কিছু অয়ন? ‘

অয়ন শান্তভঙ্গিতেই চেয়ারে বসে পড়ে। তার মনে পড়ে যায় কালকের ঘটনা। সে যখন হসপিটালে বসে ছিলো তখন তার চোখ যায় সিসিটিভির দিকে। ড্রইং রুমে তখন রুহানা চৌধুরী এবং মিঃ শেখ ছিলেন।
মিঃ শেখকে রুহানা চৌধুরী বিশেষ নিমন্ত্রন করেছিলেন এবং কিছু কম্পানির ব্যাপারে মিটিং করবে বলে। তখনি ড্রইং রুমের সদর দরজা দিয়ে রিমি হসপিটালে উদ্দেশ্য বের হয়ে যাচ্ছিলো। মধ্যবয়স্ক মিঃ শেখ রিমিকে দেখেই মন্তব্য করে বসেন,

‘ মিসেস চৌধুরী মেয়েটা কে বলুন তো? ‘

‘ আপ্নাকে তো বলেছিলাম অয়নের ব্যাপারটা। নামের কয়েকদিনের বউ। ‘

‘ তা ডিভোর্স এর পরে এই মেয়েটা কী করবে?
রক্ষিতার কাজ করবে? আমার ছেলের আবার রক্ষিতার খুব দরকার। ‘

কথাটি বলেই হেসেটে ফেটে পড়েছিলেন মিঃ শেখ।

অয়নের কানে সেই কথাটি যায়। অয়ন সোজা বাড়িতে চলে যায়। মিঃ শেখকে তার মাথা ঠিক থাকেনা। সামনে থাকা রড দিয়ে ইচ্ছেমতো মারতে শুরু করে দিয়েছিলো। মিঃ শেখ রক্তাক্ত হয়ে পড়ে থাকে মাটিতে। কেউ চাইলেও আটকাতে পারেনা অয়নকে। অয়ন পাগলের মতো আচরণ করছিলো। হিংস্রভাবে মারছিলো মিঃ শেখকে।অয়ন রাগে গর্জে উঠে বলে,

‘ ইউ ব্লাডি এতো সাহস কী করে হয় আমার রিমিপরীকে রক্ষিতা বলার? তোকে তো আমি মেরেই ফেলবো। ‘

কথাটি বলে অয়ন তার মেশিং গান বের করলে রুহানা চৌধুরী কোনরকম অয়নকে ধরে ভিতরে নিয়ে গিয়ে ওষুধ খায়িয়ে শান্ত করে। মিঃ শেখকে হসপিটালে ভর্তি করান।

‘ কি হলো অয়ন? আমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছো না কেন তুমি? তুমি ওই সামান্য মেয়েটার জন্যে আমাদের কম্পানির এতো বড় ক্ষতি কেন করলে? ‘

রুহানা চৌধুরীর প্রশ্নে অয়ন…..

চলবে কী?

[ প্লিয কেউ ছোট বলবেন না। আমি এখনো অসুস্হ
🙂কোনরকম লিখে দিলাম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। প্লিয কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here