তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ৩৭

0
378

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অন্য একটি মেয়ের সামনে এইভাবে জড়িয়ে ধরে রাখায় বেশ অস্বস্হিতে পড়ছে রিমি। রিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে রেখেছে অয়ন। ইশা যে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাদের পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে সে নিয়ে কোনপ্রকার হুশ অয়নের না থাকলেও,রিমির নজরে দৃশ্যটি এড়ায়নি। ইশার চোখমুখে অদ্ভুদ এক ক্ষোভ উপচে পড়ছে রিমি এবং অয়নকে একসাথে দেখে। রিমিরও সকালের অয়নকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটি মনে পড়ে গেলো। তৎক্ষনাৎ রিমির মস্তিষ্কে এসে হানা দিলো দুষ্টুমি বুদ্ধি। রিমিও কুটিল হেসে অয়নের গাঁয়ের সাথে বেশ ভালোভাবে লেপ্টে রইলো একদম নিবিড়ভাবে। হাত নাড়িয়ে অয়নের কপালের কিনারে লেপ্টে সিল্কি ঘন
চুলগুলো আলতোভাবে ছুঁইয়ে খেলা করতে লাগলো। ইশার চোখ দ্বিগুনভাবে বড় বড় হয়ে গেলো। ইশা কিছুটা অস্বস্হি নিয়ে বলো,

‘ আমি ভেবেছিলাম তোদের সাথে যাবো। আসলে আমি দেশে এসেছি শুনে,গ্রেন্ডমা বলেছে আমি যেন
চৌধুরী বাড়িতে গিয়ে কয়েকটা দিন থাকি। আসলে আমার তো ফ্যামেলি কেউই বাংলাদেশে থাকেনা। তাই আমি ভেবেছিলাম তোদের সাথেই যাবো। তোরা কি এখন বের হবি? ‘

ইশা, অয়ন এবং রিমির সাথে একই বাড়িতে থাকবে, কথাটি ভাবতে গেলেই মুখটা বেকিয়ে ফেলে। রিমি অয়ন রিমিকে কোলে নিয়েই ল্যাপটপে কি যেন টাইপ করে যাচ্ছে,যেন ইশার কথা সে শুনেই নি।

‘ আমি তোকে কিছু বলছিলাম অয়ন। ‘

অয়নের ধ্যান ফিরে। চটজলদি বলে উঠে,

‘ হ্যা? কি যেন বলছিলি তুই? ‘

‘ তার মানে তুই এতোক্ষন ধরে আমার কোন কথাই শুনিস নি? এতোটাই বউয়ের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিস? ‘

ইশার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে উদাসিন হয়ে নিজের মতো কাজ করে যায় অয়ন। তা দেখে ইশা চোখমুখ কালো করে দাঁড়িয়ে থাকে ইশা। ইশার বুকের ভিতর থেকে হতাশার দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে শুধু।রিমি কিছুটা ঠাট্টার ছলেই বলে,

‘ ইশা আপু! দেখতেই তো পারছেন আমরা ব্যস্ত আছি। আপনি বরং একাই চলে যান। আমরা নাহয় পরে একসাথে চলে যাবো। ‘

ইশা রিমির কথায় এক মুহুর্ত ও দাঁড়ায় না। গটগট পায়ে বেড়িয়ে গেলো। অয়ন রিমির কথাতে অবাক হলেও,পরক্ষনে মুচকি হাঁসলো।

_______________

‘ আপনার জীবিত ওয়াইফকে মৃত্যু বানিয়ে রাখার কারণ কি স্যার? ‘

সানার হঠাৎ এমন প্রশ্নে বেশ বড়ভাবেই চমকে উঠলো ফারহান। ফারহানের বুঝতে বাকি রইলো না সুমাইয়া যে জীবিত রয়েছে, তা জেনে গিয়েছে সানা। ফারহান পুনরায় গলার স্বর গম্ভীর করে, প্রশ্ন এড়ানোর জন্যে বললো,

‘ আপনি পুনরায় আমাকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছেন মিস সানা। এইভাবে চলতে থাকলে কিন্তু আমি স্টেপ নিতে বাধ্য হবো। ডোন্ট ক্রশ ইউর লিমিট। ‘

সানা থেমে যায়। ফারহান বিরক্ত হয়ে বেড়িয়ে যেতে নিলে, সানা দ্বিগুনভাবে উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে,

‘ কিসের এতো লুকোচুরি স্যার? দুনিয়ার সামনে কেন সত্যিটা আড়াল করছেন আপনি? আপনি কি জানেন না? আপনার এই একটা সত্যি লুকানোর ফলে, আমার জীবনটা আজ শেষ হতে চললো স্যার।’

কথাটি বলেই কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সানা। সানার আস্মমিক কান্নায় নিজের কাঁধে থাকা ব্যাগটি টেবিলে রেখে, ফারহান একপ্রকার ছুটে গিয়ে সানার পাশে বসলো। সানার কান্না যেন থামছেই না, তা সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে প্রখরভাবে। ফারহান হতবাক হয়ে সানাকে পর্যবেক্ষন করলো।

‘ আমি আপনার কথা সত্যিই বুঝতে পারছি না মিস সানা। আপনি কাঁদছেন কেন? ‘

সানা নিষ্চুপ থাকে। ঢুকরে কাঁদতে থাকে কিছুক্ষন।একটা সময় পর সানা নিজের নেত্রপল্লব থেকে আগত পানিগুলো পরম যত্নে মুছে ফেলে। অতঃপর ধীর কন্ঠে বলে,

‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি ফারহান স্যার। খুব ভালোবাসি। আপনি তো আদোও আমার ব্যবহারে বুঝতে পারেন না? কতটা ভালোবাসি আমি আপনাকে। ‘

ফারহান সানার কথায় পাথরের ন্যায় একপ্রকার থমকে বসে থাকে। সানা হেচকি তুলে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে তার। কান্নাভেজা গলায় পুনরায় ফারহানকে উদ্দেশ্য করেদোষীর ন্যায় বলে,

‘ আপনি যদি কথাটি আমার থেকে কিংবা দুনিয়ার থেকে না লুকাতেন,তাহলে বোধহয় আপনাকে ভালোবাসার মতো মস্ত বড় ভুলটা কখনোই করতাম না ফারহান স্যার। কেন আপনি লুকালেন? আমি যে পারছি না ফারহান স্যার। আপনি অন্য কারো হওয়া সত্ত্বেও আপনাকে পাওয়ার লোভ আমাকে দিনের পর দিন গ্রাস করে ফেলছে। ‘

সানা থামে, ফারহানের উত্তরের আশায় ফারহানের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন। ফারহানের মুখের ভঙ্গিমা দেখে কিছুই বুঝার সাধ্যি নেই। তাই ফারহান মনের অবস্হা বুঝতে ব্যর্থ সানা। ফারহান মন মস্তিষ্কক বার বার সানার ‘ ভালোবাসা ‘ কথাটি ঘুড়পাক খাচ্ছে। ফারহান হুট করে রেগে যায়। অতঃপর কিছুটা ক্ষিপ্ততা নিয়ে বাজখাই গলায় বলে,

‘ আমাকে ভালোবাসার কথাটি এখুনি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন মিস সানা। আপনি এখন নিজেও খুব ভালো করে জানেন আমার ওয়াইফ বেঁচে আছে। তবুও আপনি একজন বিবাহিত পুরুষকে ভালোবাসি বলছেন? জাস্ট সেম অন ইউ। ‘

ফারহান কথাটি বলেই দ্রুত উঠে যায়। অতঃপর গটগট পায়ে বেডিয়ে যায় কেবিন থেকে। সানা ঠোট কামড়ে পুনরায় কেঁদে উঠে।

_______________

রিমি গাড়িতে বসে আছে। পাশেই অয়ন ড্রাইভ করে যাচ্ছে। রিমি আজ বেশ ফুড়ফুড়ে মেজাজে রয়েছে। ইশার মুখটা দেখে তার বেশ মজা লাগছিলো, কিন্তু সে একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছে না ইশা কেন ওইভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো? রিমির ভাবনার মাঝেই, অয়ন গাড়ি ব্রেক কষে। রিমি সামনের দিকে তাকায়। জ্যাম পড়েছে বেশ! ঢাকা শহর জ্যাম থাকাটাই স্বাভাবিক। অয়ন গাড়ির হ্যান্ডেলে হাত রেখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রিমি জানালা দিয়ে রাতের ঢাকা শহর দেখতে ব্যস্ত। তখনি একজন বাচ্চা ছেলে কড়া নাড়ে। হাতে তার তাজা গোলাপ ফুল। রিমি জানালা খুলতে চাইলে,অয়ন তাতে বাঁধা দিয়ে ক্রোধান্তিত গলায় শুধায়,

‘ কি করছো রিমিপরী? জানালা খুলতে চাইছো কেন? ‘

‘ দেখুন না বাচ্চাটা হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে তাজা। ‘

রিমি বেশ উৎশুক হয়ে গোলাপফুল গুলে দেখে যাচ্ছিলো। অয়নের ললাটের মাঝ বরাবর দাম্ভিক এক ভাজ পড়ে। অয়ন ছেলেটাকে তার জানালার সামনে আসতে বলে। ছেলেটি অয়নের জানালার সামনে আসে। অয়ন জানালা খুলে ছেলেটিকে প্রশ্ন করে,

‘ সব ফুলগুলো কত? ‘

ছেলেটি বড় বড় দাঁত বের করে মিষ্ট হাঁসি উপহার দিয়ে বলে,

‘ জে স্যার। আঙ্গে ১০০ টাহা। ‘

অয়ন হাত বাড়িয়ে সব ফুলগুলো নেয়। অতঃপর পকেট থেকে এক হাজার টাকার চকচকে নোট ছেলেটি হাতে গুজে দিয়ে গম্ভীর সুরে বলে,

‘ কিছু বিক্রি করতে হলে আমার সামনে আসবে। আমার রিমিপরীর সামনে ঘুড়ঘুড় করবে না বুঝলে?’

অয়ন কথায় রিমি মুখ ফুলিয়ে ফেলে। বাচ্চা একটা ছেলেকে নিয়েও পসেসিভ হওয়ার কি হলো?আসলেই লোকটা সাইকো!

ছেলেটা কি বুঝলো কে জানে?মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘ ঠিক আছে কিন্তু সাহেব আমার কাছে তো এক হাজার ভাংতি নাই। ‘

‘ তোমাকে টাকা ফিরত দিতে হবেনা। তুমি পুরো টাকাটা রেখে দিও। ‘

ছেলেটি খুশি মনে অয়নকে মনে মনে শত ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো। আজ সে এবং সাথীরা মিলে বেশ ভালো কিছু খেতে পারবে। রিমিও অয়নের কাজে বেশ খুশি হয়। লোকটা অতোটাও খারাপ নয়। অয়ন রিমির হাতে ফুলের গুচ্ছটি তুলে দেয়। টকটকে তাজা ফুলগুলো দেখে অয়নকে চমৎকার হাঁসি উপহার দেয় রিমি। রিমির হাঁসি দেখে, বুকে হাত দিয়ে সিটে হেলিয়ে বসে অয়ন। রিমি ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে বলে,

‘ ডক্টর এয়ারসি দেখুন! ফুলগুলো সুন্দর না অনেক?’

‘ উহু! গোলাপের থেকেও অধিকতর অদ্ভুদ সুন্দর তুমি রিমিপরী। ‘

রিমি অয়নের কথায় বেশ লজ্জায় পায়, তখনি তার ফোনে একটি অদ্ভুদ মেসেজ আসে।

____________

মেঘ সবেমাত্র কোচিং থেকে ফিরছিলো। আজ সে ঠিক করেছে হেঁটেই বাড়ি ফিরবে। তাই আজকে সে তার ড্রাইভারকে মানা করে দিয়েছিলো। মেঘের হাত থেকে হুট করে সমস্ত বই পড়ে যায়। মেঘ নীচে ঝু্ঁকতেই, খেয়াল করে তার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে তা স্বয়ং আমান!

চলবে…..কী?

[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু🙈]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here