তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ৩৮

0
666

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রিমি উপস্হিত থাকা সত্ত্বেও তার স্বামীকে নিয়ে অন্য নারী মাতামাতি করছে। ইশা সর্বদা অয়নের সাথে একপ্রকার ঘেষে বসে কথা বলছে। বাড়িতে ঢুকার সঙ্গেই সঙ্গেই একপ্রকার অয়নের সাথে লেপ্টে রয়েছে। রিমির রাগে মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে। সিরির উপরে দাঁড়িয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে বিশাল ড্রইং রুমের এককোণে সোফায় বসে থাকা অয়ন এবং ইশাকে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। অয়ন ল্যাপটপে বসে কাজ করছে তার পাশেই ছোট একটা নাইট ড্রেস পড়ে অয়নের কাজ বারবার পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে ইশা। ড্রেসের কি একটা বিচ্ছিরি অবস্হা! হাতা কাটা
তার মধ্যে ইশার ধবধবে সাদা পায়ের হাটু বেড়িয়ে রয়েছে। অয়নকে নানান কথা বলে নিজের দিকে আকর্ষিত করতে চাইছে ইশা,কিন্তু অয়ন নিষ্চুপ। সে ল্যাপটপে বসে অফিসের কাজগুলো করে যাচ্ছিলো। মাঝে মাঝে হু হা বলছে শুধু। অয়নের উদাসিনতায় ইশার রাগ হলেও, মুখে তা প্রকাশ করে না। কুটিল হেসে বিভিন্ন গল্প করতে থাকে সে। ইশা এবং অয়নের সামনে বরাবরই বসে আছেন রুজা চৌধুরী। তিনি চা খেতে খেতে একবার অয়ন এবং ইশাকে দেখছিলেন,একবার রিমির মুখশ্রী দেখে রিমির ভিতরের অবস্হা বুঝতে চাইছিলেন। রিমি যে বেশ ভালো ভাবেই রেগে আছে, তা রিমির মুখশ্রী দেখেই খুব ভালোভাবে টের পাচ্ছেন রুজা চৌধুরী।অয়নের হঠাৎ ফোন চলে আসায়, অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে বাইরের দিকে চলে যায়।

আগুন খানিক্টা ঘি ঢেলে দেওয়ার জন্যে, নেকামির সুরে ইশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘ ইশা! জানো? তোমাকে এবং অয়নকে একসাথে দেখলে হৃদয়টা জুড়িয়ে যায়। কি সুন্দর মানায় তোমাদের। আমাদের হিরের টুকরো ছেলের সাথে তোমাকেই মানায় বুঝলে? কিন্তু কপাল দেখো। একটা সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির আশ্রিতা মেয়ে আমাদের চৌধুরীর বাড়ির বউ হয়েছে। ইসস আমার তো এখন আফসোস হচ্ছে। কয়েকদিন আগে যদি তুমি দেশে আসতে, তাহলে বোধহয়। থাক বাদ দাও সেসব কথা। ‘

শেষের কথাটি বেশ আফসোসের সুরেই বললেন রুজা চৌধুরী। রিমির মস্তিষ্কে রাগগুলো নিমিষেই হুট করে উধাও হয়ে যায়। মনের গহীনে ঠায় করে নেয় একগুচ্ছ বিষন্নতা। রুজা চৌধুরী বোধহয় রিমির মতো সাধামাটা মানুষ গ্রেট হার্ট সার্জন অয়ন রওযাক চৌধুরীর মতো মানুষের যোগ্য নয়। নিজের গায়ে থাকা নরমাল ফিনফিনে পাতলা ওড়নাটাকে গায়ে ভালো করে জড়িয়ে, রিমি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালে নিলে, কোন ভারি কিছুর শব্দে থমকে যায়। পিছে ফিরে দেখে রুজা চৌধুরীর বরাবর সাদা কাচের দামি সোপিচের বলটির মাঝ বরাবর দাডালো চাকুটা একপ্রকার গেঁথে রয়েছে। রুজা চৌধুরী ঘাবড়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে, অয়ন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।
রুজা চৌধুরী ভয়ে শুকনো ঢুগ গিলে। চাকুটা একটুর জন্যেই তার গলা বরাবর বসে যেতো। অয়নের দৃষ্টি শান্ত হলেও, তাতে ভয়ংকর রাগ উপচে পড়ছে। অয়ন গটগট পায়ে বলটির থেকে চাকুটি নিয়ে রুজা চৌধুরীর গলা বরাবর ধরে। ইশা তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ায় অবাক হয়ে। রুজা চৌধুরী একপ্রকার ভয়ে ভয়ে কান্নার সুরে বলে,

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

‘ কি করছো তুমি অয়ন? চাকুটা নামাও। আমার গলায় লেগে যাবে। ‘

অয়ন রুজা চৌধুরীর কথার মাঝেই, চাকু দিয়ে সামান্য আচর দিয়ে দেয় রুজা চৌধুরীর গলা বরাবর। সঙ্গে সঙ্গে ফিনকি রক্ত বেড়িয়ে যায়।রুজা চৌধুরী ব্যাথায় চিৎকার করে কুকড়ে উঠে,কিন্তু তবুও তার শব্দ দেয়ালে গিয়ে বারি খায় না। কেননা অয়ন তার মুখ চেপে ধরে রেখেছে। অয়ন রুজা চৌধুরীর গলার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকরভাবে বাঁকা হেসে বলে,

‘ আমার রিমিপরীর চোখের জলের মূল্য দিলাম। হাউ ডেয়ার ইউ? আমার রিমিপরীকে অপমান করার সাহস কে দিয়েছে আপনাকে? ‘

অয়নের হুংকারে পুরো চৌধুরীর বাডির প্রতিটা সদস্য থেকে শুরু করে সমস্ত সার্ভেন্টস,দেহরক্ষীরা কেঁপে উঠে।

‘ যেই গলা দিয়ে আপনি আমার রিমিপরীকে আমার অযোগ্য দাবী করেছেন সেই গলাটা যদি না থাকে, তখন কি হবে রুজা চৌধুরী? ‘

অয়নের কথায় ভয়ে তরতর করে কাঁপতে থাকে। ললাটে জমে থাকে অনিশ্চিত মৃত্যুর চিন্তার রেশ। অয়নকে দিয়ে ভরসা নেই। উম্মাদ ছেলে সে। যখন সে যা ইচ্ছে করে ফেলতে পারে। রিমি অবস্হা বেগতিক দেখে অয়নের কাছে ছুটে গিয়ে, অয়নের হাত থেকে ছুড়িটা ফেলে দেয়। অতঃপর অয়নকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে,

‘ আপনি কি করছেন কি? আপনি কি আদোও তা জানেন? উনি আপনার কাকি হয়। তাকে আপনি মেরে ফেলতে চাইছেন? সামান্য একটা কারণে। ‘

অয়ন দ্বিগুন চিৎকার করে বলতে থাকে,

‘ সামান্য ব্যাপার মানে? তুমি কী আমার জন্যে সাধারণ রিমিপরী? তুমি আমার কাছে কি আমি তা মুখের ভাষায় কখনো বুঝাতে পারবো না। ‘

রিমি অয়নের কথায় মাথা নিচু করে ফেলে। অয়ন কিছুক্ষন রাগে ফুশফুশ করতে থাকে। অতঃপর শীতল কন্ঠে বলে,

‘ তুমি সাধারণ নও প্রেয়সী। তুমি হাজারো সাধারণ ফুলের মাঝে তুমি এক টকটকে সদ্য ফুটে উঠা অসাধারণ এক গোলাপ ফুল। ‘

রিমির ঠোটের কোণে এক চিলতে হাঁসি ফুঠে উঠে অজান্তেই। রুজা চৌধুরী গলায় হাত দিয়ে কোনরকম দৌড়ে উপরে চলে যায়। এতোক্ষন ধরে নিরব দর্শকের ন্যায় সবকিছু দেখে যাচ্ছিলো ইশা।

________________

আমানকে দেখে তড়িৎ গতিতে উঠে দাড়ায় মেঘ। তার সামনেই আমান দাঁড়িয়ে আছে। সাদা একটা ফরমাল শার্ট। কনুই পর্যন্ত ফ্লড করা। ফর্সা মুখস্রীর চারদিকে ক্ষতের দাগ স্পষ্ট। চুলগুলো অগছালো। হাতে ব্যান্ডিজ। তবুও কি স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে আমানকে।

আমান হাটু গেড়ে বসে, নীচে থাকা বইগুলো সযত্নে হাতে তুলে নেয়। অতঃপর মেঘের হাতে ধরিয়ে দিয়ে, কৃতজ্ঞতার সুরে বলে,

‘ আপনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার জীবন বাঁচালেন। আপনি সত্যি সাহসী এক কিশোরী বটে। আপনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়নি। তাই ধন্যবাদ জানাতে ছুটে এলাম আপনার কাছে। ‘

‘ এতো রাতে? ধন্যবাদ জানানোর জন্যে? ‘

মেঘের প্রশ্নে কিঞ্চিত হেসে আমান উত্তর দেয়,

‘ আপনার ভাইয়ের জন্যে লুকিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। দিনে তো সম্ভব নয়। তাই ধন্যবাদ জানাতে রাতেই চলে এলাম। তাছাডাও এক সপ্তাহের মধ্যে আমি অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি। ‘

আমান চলে যাবে কথাটি শ্রবন করার সঙ্গে সঙ্গেই বুকটা ভারি হয়ে আসে মেঘের। নেত্রকোণ হয়ে উঠে টলমলে। মেঘ কোনরকম বলে,

‘ চলে যাবেন আপনি? ‘

‘ থেকে কি করবো বলুন? যাকে পাওয়ার জন্যে ছুটে এলাম। তাকেই তো পেলাম না আমি। আফসোস!’

____________________________

রুহানা চৌধুরী সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন, তারই সামনে মুখ কালো করে বসে আছে রুজা চৌধুরী। গলায় তার বেশ ব্যাথা। ছুড়িটা ছিলো বেশ ধারালো। সামান্য আচ দিতেই, রক্তপাত শুরু হয়ে গিয়েছিলো। রুজা চৌধুরী কান্নার সুরে বললে,

‘ মা! আপনি কি এখনো কিচ্ছুটি বলবেন না? অয়ন আমাকে আঘাত করলো। আরেকটু হলেই মেরেই ফেলতো তবুও আপনি চুপ করে থাকবেন? এবারো আদরের নাত্নীর পক্ষ নিবেন? ‘

রুহানা বিরষ মুখে শুধালেন,
‘ উফফ কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করো না তো। তোমারও দোষ আছে। ‘

কথাটি বলেই রুহানা চৌধুরী হাক ছেডে রিমিকে ডাকলেন। রিমি এবং ইশা রুহানার ডাক শুনে নীচে নামলো। অয়নও সবেমাত্র হসপিটাল থেকে ফিরেছিলো। অয়নকে দেখেই রুহানা চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে, অয়নের কাধ রেখে অপরাধির ন্যায় বললেন,

‘ আমি জানি দাদুভাই। আমি অনেক ভুল করেছি। যার জন্যে আমি সত্যি অনুতপ্ত। আমি সেই ভুলটাকে সংশোধন করতে চাই। তোমার এবং রিমির পুনরায় বিয়েটা দিয়ে। ‘

বিয়ের কথা শুনে ইশার মুখে ঘোর অন্ধকার এসে হানা দিলো। যা রিমির নজরে ঠিকই পড়লো।

চলবে….কী?🙂

নোটঃ আমার অসুস্হতার ফলে গল্প নিয়মিত দিতে ব্যর্থ আমি। আজকেও দিতাম না কিন্তু আপনাদের অপেক্ষা করাতে ভালো লাগে না আমার🙂।কষ্ট করে হলেও দিলাম। সবাই জানাবেন কিন্তু কেমন হয়েছে। যদিও যা লিখছি😕সব গোজামিল হয়ে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here