তুমিময়_নেশায়_আসক্ত #পর্ব- ১৪

0
590

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ১৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ভালোবাসা মানুষটি আজ অন্যকারোর হয়ে যাওয়ার পরেও তার প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসার ঘাটতি নেই আমানের মনে।

আমানের শুধু মনে হচ্ছে সে যা জানে যা দেখেছে সব মিথ্যে। তার রিমিপাখি তো তাকে ভালোবাসে সে নিশ্চয় অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না। বাংলাদেশে গেলে আমান সর্বপ্রথম রিমির সাথেই কথা বলবে। নিশ্চয় রিমির মনে তার জন্যে ঘৃণা এসে জমাট বেঁধেছে । না সেই ঘৃণার গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে না আমান।সর্বপ্রথম সে তার রিমিপাখির মনে থাকা সমস্ত সংসয় সমস্ত প্রশ্নের খোলাসা করবে বাংলাদেশে গিয়ে ।আমানের ভাবনার মাঝেই একজন লোক এসে জানায় আমানের ফ্লাইট এর সময় হয়ে গিয়েছে। আমান যেন এখনি বেড়িয়ে পড়ে। আমানও লোকটার কথায় ঘড়ির দিকে তাকায়। সত্যি অনেক দেরী হয়ে পড়েছে। তার ফ্লাইটের সময় হয়ে গিয়েছে। আমান সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে তার লাগেজ টা নিয়ে হোটেলের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অতঃপর গাড়িতে উঠে বসে উদ্দেশ্য এয়ারপোর্ট।

__________

অয়ন রাগে ফুশতে ফুশতে সামনের দিকে এগিয়ে জয়িতার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। এতে রিমিসহ জয়িতা ভরকে গিয়ে অয়নের পানে তাকায়।
রিমিকে আরেকদফা অবাক করে দিয়ে, হঠাৎ অয়ন
জয়িতার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বাজখাই গলায় বলে উঠে,

‘ তুমি আমার রিমিপরীকে স্পর্শ করলে কেন? আমার অনুমতি ব্যতিত একদম টাচ করবে না বলে দিলাম।
আর কে আমার রিমিপরীর বিএফ? একবার নাম বলো। মেরে পুতে দিবো একদম। এই মেয়ে তুমি তাড়তাড়ি নাম বলবে নাকি? ‘

কথাটি বলেই অয়ন একপ্রকাত হাতড়ে নিজের পকেট থেকে ধারালো ছুরি খানা বের করে জয়িতার দিকে তাক করে। ছুরি দেখেই জয়িতা ভয়ে কেঁদে ফেলে। মনে পড়ে যায় আসিফের সেই ভয়ানক পরিনতির কথা। রিমি বিস্মিত নয়নে চেয়ে থাকে অয়নের দিকে। অয়নের চোখমুখে যেমন রাগ উপচে পড়ছে তেমনভাবেই প্রখরভাবে হিংস্রতা ফুটে উঠেছে। রিমি ভেবে পায় না এতোদিন ছেলে অব্দি ঠিক ছিলো কিন্তু এখন একজন মেয়েকে নিয়েও অয়ন হিংসে করছে? না অয়ন স্বাভাবিক নয়। অয়ন একজন অস্বাভাবিক যুবক! অয়নকে আটকাতে হবে নাহলে অয়ন যা ছেলে সে জয়িতাকে আঘাত করতে পিছপা হবেনা। রিমির ভাবনার মাঝেই অয়ন
জয়িতার আর‍ো শক্ত করে চেপে ব্জ্রকন্ঠে বললো,

‘ কি হলো? আমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছো না কেন? ‘

জয়িতা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

‘ বিএফ মানে বেস্টফ্রেন্ড। রিমির কখনো কোন বিএফ ছিলো না স্যার। আমি তো মজা করেই বলেছি। ‘

অয়ন জয়িতার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা রিমির বেস্টফ্রেন্ড। তারমানে এই মেয়েটার গুরুত্ব রিমির জীবনে অনেক। হয়তো অয়নের থেকেও। কথাটি ভেবেই রক্তচড়ে বসলো অয়নের। রিমি পরিস্হিতি বেগতিক দেখে অয়নের থেকে জয়িতাকে ছাড়িয়ে নিলো। চোখের ইশারায় জয়িতাকে বেড়িয়ে যেতে বললো। জয়িতা ছাড়া পেয়ে চটজলদি দৌড়ে চলে গেলো। অয়ন রেগে জয়িতার পিছনে চলে যেতে নিলে, রিমি অয়নের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুড়ায়। রিমি বুঝতে পেরেছে এই মুহুর্তে অয়ন নিজের মধ্যে নেই। রিমিকেই সামলাতে হবে অয়নকে। রিমি অয়নের হাত ধরে বাইরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে৷

___________________ (লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

পায়েল নিজের ঘরে চুল খামচে ধরে মাটিতে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। বার বার অনামিকা আংটির দিকে তাকাচ্ছে। যা অয়ন তাকে পড়িয়ে দিয়েছিলো। পায়েল মুখ গুজে কেঁদে দেয়। বার বার তার চোখের সামনে ভেসে আসছে রিমি এবং অয়নের সেই ঘনিষ্ট মুহুর্ত গুলো। পায়েল আংটি টা খুলে ফেলে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে,

‘ অয়ন আমাকে চিট করেছে। হি ইজ আ চিটার। এমনকি চৌধরী বাড়ির সবাই চিটার। সবাই আমাকে প্রতিনিয়ত ধোকা দিচ্ছে। আমার সাথে অয়নের বিয়ে ঠিক করে, অয়নের বর্তমান স্ত্রীকে অয়নের বাড়িতে রেখেছে। তাই ওরা এতোটা কাছাকাছি। আমি কাউকে ছাড়বো না। কাউকে না। ‘

কথাটি ভেবেই তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নেয় পায়েল। অতঃপর ফোন করে রুহানা চৌধুরীর নাম্বারে।

রুহানা চৌধুরী অফিসে বসে ফাইল দেখছিলেন মনোযোগ সহকারে। তখনি তিনি দেখতে পায় পায়েলের ফোন। তিনি ফোন রিসিভ করেই শুনতে পায় পায়েল তাদের কম্পনির সাথে করা সমস্ত ডিল
ক্যান্সেল করে ফেলেছে। তার একমাত্র কারণ স্বয়ং অয়ন। পায়েলের ভাষ্যমতে অয়ন নাকি পায়েলের সাথে প্রতারণা করছে। সবকিছু শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন রুহানা চৌধুরী। বয়স্ক মুখে একরাজ্যের চিন্তা এসে ভর করে। ক্লান্তিতে মাথা এলিয়ে দেন অফিসের চেয়ারে। হাতড়ে এসির রিমোট নিয়ে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দেন তিনি। জানুয়ারী মাস। শীত বেশ ভালোভাবেই পড়েছে ঢাকা শহরে তবুও এই শীতেও চরম ঘেমে একাকার হয়ে পড়েছেন রুহানা চৌধুরী। পায়েল যদি তাদের সাথে কাজ না করে তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে তাদের। রুহানা চৌধুরী সোজা হয়ে বসলেন। এইবার ভালো করে অয়নের সাথে কথা বলতে হবে। অয়নের এইসব পাগলামোর কারণও জানতে হবে।

____________

রিমি অয়নের হাত ধরে হসপিটালের বাগানের দিকটায় নিয়ে আসে। অয়নের রাগ এখনো নাকের ঢগায়। রাগে ফুসফুস করছে। সেই ফুপানির আওয়াজ রিমির কানে এসেছে খুব ভালো মতো করে। রিমি এবং দুজনেই ডক্টরের এপ্রোন পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন রিমির দিকে রাগে ফুশতে ফুশতে বলে,

‘ তুমি আমায় নিয়ে এলে কেন? ওই মেয়েটা তোমাকে… ‘

অয়নের কথা বলার মাঝেই, রিমি বললো,

‘ ও একটা মেয়ে ডক্টর এয়ারসি। প্লিয ওকে নিয়ে জেলাস হবেন না অন্তত। আচ্ছা সেসব বাদ দিন আজকের আবহাওয়া টা অনেক সুন্দর না? একটু চারদিকে তাকিয়ে দেখুন। ‘

রিমি অয়নের রাগটাকে কমানোর জন্যে আবহাওয়ার কথাটি বললো। অয়ন একপলক চারদিকে তাকালো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চারদিকে শীত পড়েছে ভালো। কুয়াশা এখনো পড়া শুরু হয়নি।
তার মধ্যে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। হয়তো জানুয়ারী মাসেও বৃষ্টি পড়বে।
বৃষ্টি আসার পূর্বে ধরনীতে এক অদ্ভুদ সুন্দর বাতাস এসে আচড়ে পড়ে। মনটাকে ভালো লাগায় নাড়িয়ে তুলে সেই বাতাস। অয়নের নিষ্প্রান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো তার রিমিপরীর দিকে। সে তো প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত। প্রকৃতিতে একপ্রকার মিশে যাচ্ছে রিমি। এই সুন্দর প্রকৃতি নিয়েও বেশ হিংসে জমলো অয়নের মনে। রিমি শুধু প্রকৃতিকে কেন দেখছে? কেন এতো অনুভব করছে গভীরভাবে। প্রকৃতি সুন্দর বলে কী তাতে মিশে যেতে হবে? অয়নের মতো সুদর্শন যুবক রিমিতে মগ্ধ সে খেয়াল কি আদোও আছে রিমির? উহু একদমই না। অয়ন পকেটে হাত গুজে বলে,

‘ ওহে প্রকৃতিপ্রেমী রমনী! মাঝে মাঝে এই অধম বান্দার মনের অন্তারালে প্রবেশ করেও তো দেখতে পারো। অনুভব করলে বুঝবে এই যুবক তোমার জন্যে কতটা কাতর। ‘

অয়নের গভীর আবেগমাখা রিমির কানে আদোও কি পৌছালো? হয়তো হ্যা! হয়তো না। রিমি চারদিকে
তাকিয়ে অনুভব করতে লাগলো পরিবেশটাকে। তার মধ্যে ঝুম করে বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিতে লাগলো ধরনীকে। ধরনীও শীতের আমেজে বৃষ্টির সাথে মিশে যেতে লাগলো।

রিমি বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে লাফালাফি করতে থাকে। শীতের মধ্যে বৃষ্টি সত্যি অনাকাঙ্ক্ষিত একটি জিনিস। তবুও বেশ ভালো লাগছে রিমির। রিমিকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে অয়ন এগিয়ে যায় রিমির দিকে। রিমির দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বলে,

‘ কি করছো কি তুমি? এইভাবে বৃষ্টিতে ভিজো না রিমিপরী। জ্বর আসবে তো। ভিতরে চলো। ‘

অয়ন রিমির হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলে, রিমি অয়নের হাত শক্ত করে ধরে আটকে রাখে অয়নকে। গভীর আকুতি কন্ঠে বলে উঠে,

‘ আরো কিছুক্ষন থাকি? আমি বৃষ্টিতে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে চাই এবং চাই সে আমার সমস্ত উদ্বেগ ধুয়ে ফেলুক।’

চলবে….কী?

সবাই বলছেন অয়ন নাকি অতিরিক্ত পাগলামি করছে। আরে ভাই আমি তো আগেই বলেছি এইটা একটা সাইকো স্টোরি।সাইকো নিশ্চয় সুস্হ মস্তিষ্কের মানুষ হবেনা 🙂? না জেনে কমেন্ট করবেন না। গল্পে অনেক কিছু জানার আছে। না জেনে উল্টা পাল্টা কমেন্ট করা বোকামি ছাড়া কিছুই না। অয়ন সাইকো। সাধারণ প্রেমিকের থেকে তার ভালোবাসার ধরণ আলাদা হবে। এইটাই স্বাভাবিক,কিন্তু কেন এই ভিন্নতা তার কারণ খুঁজার চেস্টা করুন।ধন্যবাদ
আসসালামু আলাইকুম
লেখিকা… জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here