তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ১৯

0
543

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ১৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রিমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রেখে হঠাৎই ঢুকরে কেঁদে উঠে। চটজলদি ফোনটা রেখে দ্রুত গতিতে উঠে দাঁড়ায় সে।
অতঃপর টেবিলে রেখে থাকা পানির জগ থেকে পানি গ্লাসে করে ঢেলে ঢগঢগ করে খেয়ে নেয়। নিজের প্রানপ্রিয় মামার শরীরের অবস্হা বেগতিক শুনে রিমি বড্ড ঘাবড়ে গিয়েছে। তার মা কিছুক্ষন আগে ফোন করেছিলো তার ভাষ্যমতে রিমির মামার নাকি হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। যদিও ছোটখাটো অ্যাটাক হয়েছে। হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। আপাতত বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। রিমি শুনেই চিন্তা করবে বলে রিমিকে আগে জানানো হয়নি। রিমির মামার রিমিকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে, তাই
রিমির মা জানিয়ে দিয়েছেন কালকের মধ্যেই যেন রিমি তার মামাকে দেখতে বাড়িতে আসে। রিমি এই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগছে। মামাকে না দেখে অব্দি সে নিজেও শান্তি পাবে না,কিন্তু অয়ন? সে কি আদোও রিমিকে যেতে দিবে? সারাক্ষন তো রিমিকে নজরে নজরে রাখছে সে। রিমির ভাবনার মাঝেই কেউ রিমির গলা জড়িয়ে ধরে। রিমি মুচকি হাঁসে।
রিমি জানে মেঘ এসেছে। মেঘ রিমির গলা জড়িয়েই বলেই,
‘ তোমাকে আমি বলে বুঝাতে পারবো না রিমিপু। আমি কতটা খুশি হয়েছি। ফাইনালি ভাইয়া তার মনের কথা সকলের সামনে খুলে বললো। এখন তুমি এই বাড়িতেই থাকবে আমাদের সাথে আজীবন। আমি সত্যি অনেক খুশি। ‘

কথাটি বলেই মেঘ রিমির গালে চুমু খেয়ে নিলো। রিমিও আদুরে মেঘের গাল টেনে দিলো। যদিও রিমি জানে তার এই বাড়িতে থাকার মেয়াদ ফুড়িয়ে যাচ্ছে। তার উদ্দেশ্য সফল হলেই সে বাড়ি ছেড়ে চলে
যাবে। কথাটি ভাবতে ভাবতে রিমির চোখ আয়নায় চলে যায়। তখনি তার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। তার কারণ অবশ্য অয়ন নিজেই। অয়ন দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রক্তচুক্ষ নিয়ে রিমি এবং মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। রিমির ইচ্ছে করছে নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় মারতে। জয়িতার সামান্য হাত ধরাতেই অয়ন যেমনভাবে রেগে গিয়েছিলো, মেঘ তো গালে চুমু খেয়েছে। নিশ্চয় নিজের বোন মেঘকেও অয়ন ছাড়বে। রিমির ভয়কে সত্যিতে পরিনত করে অয়ন এগিয়ে এসে মেঘের হাত ধরে মেঘাকে কোনকিছুর বলার সুযোগ না দিয়েই, মেঘাকে ঘরের বাইরে বের করে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিমি অয়নের হাত ধরে, অয়নকে ভিতরে নিয়ে যায়। অতঃপর দরজা বন্ধ করে দেয়। মেঘ বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এইভাবে দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় অয়ন বেশ রেগে যায়। অয়ন রিমির দিকে একপ্রকার তেড়ে এসে বলতে থাকে,

‘ তুমি আমাকে ভিতরে নিয়ে কেন নিয়ে এলে? তোমাকে কেন কিস করলো মেঘ? আজ মেঘের সত্যি খবর আছে। ‘

কথাটি বলে অয়ন বেড়োতে নিলে, রিমি অয়নের হাত ধরে অসহায় হয়ে বলে,

‘ ও আপনার বোন! তাকে নিয়েও আপনার জেলাসি? ‘

অয়ন রিমির বাহু চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘ তুমি বুঝতে পারো না রিমিপরী? প্রসঙ্গ যখন তুমি সেখানে দুনিয়ার সকলের প্রতি হিংসা হয় আমার।’

অয়ন রিমির ললাটে ধরে রিমির ললাটে আলতো করে চুমু খেলো। রিমি নিজের হাত দিয়ে জামা খামচে ধরলো। অয়ন রিমির ললাটে ঠোট ছুইয়েই বললো,

‘ তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার শুধুমাত্র আমার। বুঝলে তুমি? ‘

রিমি ঝটফট মাথা নাড়ায়। সে জানে এখন অয়নের
কথা আপাতত না শুনলে তার কপালে দুঃখ আছে বিরাট। এইবার অয়ন রিমিকে নিজের কাছে কিছুটা মিশিয়ে, রিমির ঠোটের দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

‘ মেঘকে তো শাস্তি দিতে দিলে না তুমি কিন্তু তুমি এইবার আমার গভীর ভালোবাসাময় শাস্তির জন্যে
তৈরি হয়ে যাও। ‘

অয়ন রিমির দিকে নিজের ঠোট বাড়াতেই, রিমি অয়নের মুখে হাত দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রেখে বলে,

‘ আমি এইসবের জন্যে মোটেও প্রস্তুত নই ডক্টর এয়ারসি। প্লিয আমাকে সময় দিন একটু। ‘

অয়ন অসহায় পানে রিমির দিকে তাকায়। রিমি মাথা নিচু করে ফেলে। সে তো অয়নের সাথে নিজেকে কিছুতেই জড়াতে চায়না তা কেন বুঝতে চাইছে না অয়ন? সে তো শুধুমাত্র উদ্দেশ্য সফলের জন্যে এই বাড়িতে আছে, কিন্তু রিমি তা অয়নকে কীভাবে বলবে? অয়নতো দিনের পর দিন পাগলে পরিনত হচ্ছে তার জন্যে। রিমি চাইলেও অয়নের সাথে নিজেকে জড়াতে পারবে না তার একটাই কারণ অতীতের এক বিষাদময় স্মৃতির জন্যে চৌধুরী বাড়ির প্রতিটা মানুষের প্রতি কেমন একটা ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে রিমির মনে। বিশেষ করে পুরুষদের প্রতি। অয়ন রিমির কপালে পুনরায় ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে বলে,

‘ দেখো রিমিপরী সময় নিতে নিতে একদিন সময় ফুরিয়ে যাবে,তখন চাইলেও তুমি সেই সময়কে বড্ড
ফিরে পাবে না। সময় যে নদীর স্রোতের মতো। কারো জন্যে সে অপেক্ষা করেনা। ‘

কথাটি বলেই অয়ন বেড়িয়ে গেলো। রিমি জানে রিমির প্রতাক্ষানে অয়ন বেশ রেগে আছে। রিমি এইটাও জানে সেই রাগ অয়ন রিমিকে রাগটুকু দেখাতে চাইনা বলেই বেড়িয়ে গিয়েছে। হয়তো সেই রাগ অন্যকারো উপরে ঝাড়বে অয়ন। নয়তো ঘরে কিংবাঅফিসে গিয়ে জিনিসপত্র ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলবে। রিমি গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। গায়ে চাদর টেনে নিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে সে। হুট করে কাশি উঠে যায় তার। বাইরে বাগানে নিশ্চয় কিটনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে তার বাজে গন্ধ রিমির নাকে আসতেই, কাশি উঠে যায় তার। রিমি পানি নেওয়ার আগেই, কেউ তার দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দেয়। রিমি তাকিয়ে দেখে অয়ন পানি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। রিমিকে নিজ হাতে পানি পান করতে হয়না বরং অয়ন নিজেই রিমির পাশে বসে।অতঃপর রিমিকে নিজের হাতে পানি পান করিয়ে দেয়। রিমিও বিনা বাক্যে পানি পান করে নেয় অয়নের হাতে। অয়ন পানির গ্লাসটা রেখে গলায় কাঠিন্যভাব এনে বলে,

‘ কতদিন আমার থেকে দূরে থাকবে তুমি রিমিপরী? তোমাকে নিজ থেকেই অয়ন চৌধুরীর কাছে ধরা দিতে হবে। কথাটি মাথায় ঢুকিয়ে নাও ভালো করে। ‘

অয়নের কথায় রিমির মুখশ্রীতে মলিনতা এসে পড়ে। মনে ঢুকে যায় একরাশ ভয়। আজ না হয় সে আটকালো অয়নকে, কিন্তু কাল কিংবা পরশু কীভাবে আটকাবে অয়নকে? রিমির মাথা ধরে যাচ্ছে। মনে মনে কঠিন সিদ্বান্ত নিয়ে ফেলেছে সে। তাকে যা করার তাড়াতাড়িই করতে হবে।

__________

ফারহানকে একজন সার্ভেন্ট এসে ঘরের মধ্যেই খাবার দিয়ে চলে যা। ফারহান এক পলক দেখে আবারো ল্যাপটপে কাজ করতে মনোনিবেশ করে।
সে সবসময় ঘরেই খাওয়া দাওয়া করে। পরিবারের কোন ব্যাপারে সে ঢুকতে পছন্দ করেনা। রিমি ধীর পায়ে ফারহানের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। দরজার ফাক দিয়ে দেখতে পায় ফারহান নিজের মতো কাজ করে চলেছে। পড়নে তার সিলভ কটনের সাদা শার্ট এবং কালো রংয়ের ট্রাউজার। শ্যামবর্ন মুখখানি কেমন একটা মলিন হয়ে রয়েছে।
গরম গরম খাবার টা ঠান্ডা হয়ে এসেছে প্রায়। শীতের সময়ে গরম খাবার খুব সহজেই ঠান্ডা হয়ে যায়। রিমি নখ কামড়ে ভাবতে থাকে ফারহানকে যেকোন উপায়ে রুম থেকে বের করতে হবে,নাহলে তার কাজটা কিছুতেই হবেনা। রিমি তার পাশে থাকা টবটা জোড়ে আচার মেরে ভেঙ্গে ফেলে দেয়। কোন কিছু পরার আওয়াজে ফারহান নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসে। রিমি লুকিয়ে পড়ে। ফারহান চারদিকে একবার তাকিয়ে, ভেঙ্গে থাকা টপ টা উঠিয়ে ভ্রু কুচকায়। তারপর ভাঙ্গা টপের রহস্য উদঘাটন করতে নীচে চলে যায়। সেই সুযোগে রিমিও ফারহানের ঘরে আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

চলবে….কী? 🙂
আসসালামু আলাইকুম
[কেউ তেমন একটা ঘটনমূলক কমেন্ট করেন না। তাই লিখতেও তেমন একটা উৎসাহ পাইনি। সবাই ঘটনমূলক কমেন্ট করবেন 🙂]
হ্যাপি রিডিং 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here