#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
যার সাথে কয়েকদিন পর পায়েলের বিয়ে সে তার বর্তমান স্ত্রীর সাথে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না পায়েল।
গালে যুবকের ঠোটের আলতো স্পর্শ পেয়ে রিমি স্হীর হয়ে বসে থাকে। শরীরে এক অদ্ভুদ স্রোত বয়ে যায় তার।যুবকটি এখনো রিমির খুব কাছাকাছি। নিঃশ্বাস উঠানামা করছে দুজনের দ্রুততার সাথে। রিমি চোখ পিটপিট করে খুলে অয়নকে নিজের কাছে দেখে দ্রুত সরে যেতে চায় কিন্তু বরাবর মতোই ব্যর্থ হয়। অয়ন রিমির গালে হাত রেখে শান্ত দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকে কিছুক্ষন তার ভয়ার্থ রিমিপরীর দিকে। অতঃপর খুব শীতল গলায় বলে উঠে,
‘ তোমাকে আমি আগেও বলেছিলাম রিমিপরী নিজের সজ্ঞানে আমি তোমাকে কখনোই আঘাত করতে পারবো না। অন্যদের ক্ষেত্রে শাস্তি কঠোরতম হলেও তোমার ক্ষেত্রে শাস্তিটা কিছুটা আলাদা কিছুটা বিশেষ। ‘
‘ কিন্তু কেন? ‘
রিমির অবুঝ প্রশ্নে অয়ন রাগ করেনা বরং মাথা নাড়িয়ে রিমির গালে হাত রেখেই বলে,
‘ রিমিপরী তুমি আমার কাছে বিশেষ এক নাম তাই।’
______________
গাড়িতে রিমি এবং অয়ন বসে আছে। অয়ন ড্রাইভ করছে, রিমি অয়নের পাশের সিটে বসে আছে।
শীতের রাত পিনপিন নিরবতা চারদিকে এখন। শীতের রাতে যুবক যুবতী গাড়িতে বসে আনমনে কিছু ভেবে চলেছে প্রতিক্ষন,কিন্তু আদোও তারা কি একে অপরের মনের অবস্হা বুঝতে পারছে? রিমির কাছে অয়ন চৌধুরী শুধুমাত্র এক রহস্যময় চরিত্র মনে হচ্ছে। যাকে বলে উপন্যাসের কেন্দ্রিয় রহস্যময় চরিত্র। রিমি নিজের গালে হাত ছুয়ালো অয়ন তখন
কঠিনতম শাস্তির কথা বলে যে তার গালে আলতো করে ঠোটের স্পর্শ দিবে তা কখনোই আশা করেনি রিমি। বার বার শুধু গালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে দৃশ্যটা কল্পনা করছে। তখন কেন সে অয়নকে আটকায় নি কেন? নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রিমি। রিমি গাড়ির আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে অয়ন খুব মনোযোগ সহকারে গাড়ি চালালেও,তার অধরের কোণে মুচকি হাসি বিদ্যমান। অর্থাৎ অয়ন এতোক্ষন ধরে রিমির সমস্ত কার্যকলাপ লক্ষ্য করছিলো। কথাটি ভেবেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় রিমি। গৌর বর্নের মুখশ্রীতে এক টুকরো লজ্জার গাঢ় রং এসে হাতছানি দেয়। অয়ন তা ঠিকই লক্ষ্য করে। গাড়িতে হঠাৎ করে ব্রেক কষে যুবক। অয়নের এমন আচরণে কিছুটা হচকিয়ে যায় রিমি। তাতে গুরুত্ব না দিয়ে, অয়ন গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বসে বুকে হাত দিয়ে মুধুর কন্ঠে বলে উঠে,
‘ রিমিপরী তোমার লজ্জামাখা মুখশ্রী অয়ন চৌধুরীর বুকে আঘাত করতে যথেষ্ট । ‘
_________________
অয়ন চৌধুরী বাড়ির সামনে গাড়িটি থামাতেই,রিমি চটজলদি গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। অয়ন বাড়ির ভিতর ঢুকেনা বরং গাড়িটা পার্ক করতে পার্কিং এর জায়গায় যায়।বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই রিমি খেয়াল করে পায়েল এবং রুহানা চৌধুরী ড্রইং রুমে বসে আছে। রিমিকে দেখতেই তারা কেমন সরু চোখে রিমির দিকে তাকায়। তাদের এমন চাহনীর মানে রিমি হঠাৎ বুঝতে পারলো না। রিমিকে দেখেই পায়েলের মাথায় আগুন ধরে যায়। পায়েল উঠে দাঁড়িয়েই রিমির সামনে দাঁড়িয়ে রিমির হাত জোড়ে চেপে ধরে বলে,
‘ অয়নের সাথে আজকাল তো বেশ ভালো ঘুড়ে বেড়াচ্ছো তুমি। আবার সবাইকে বলে বেড়াচ্ছো তুমি অয়নের ওয়াইফ। হাও ডেয়ার ইউ। ‘
পায়েল রিমির হাত অনেক শক্ত করে চেপে ধরেছে যার ফলে রিমি ব্যাথা পাচ্ছে। রিমি হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে উঠে,
‘ আমি কাউকে কিচ্ছু বলেনি। তার আগে আপনি আমার হাতটা ছাড়ুন। ‘
পায়েল রিমির হাত ছাড়েনা বরং আরো শক্ত করে চেপে হুমকির সুরে বলে,
‘ ছাড়বো না আমি। কী করবে তুমি? এই মেয়ে একটা কথা মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নাও। একদম অয়নের ওয়াইফ হওয়ার চেস্টা করবে না। কয়েকদিন পর আমার এবং অয়নের বিয়ে। আমার অয়নের আশে-পাশেও যেন তোমাকে না দেখি। ‘
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
অয়ন গাড়িটা পার্ক করে বাড়িতে ঢুকছিলো তখনি তার সামনের দিকে চোখ যায়। সঙ্গে সঙ্গে চোখদুটো রাগে টগবগ করতে থাকে। পায়েল শক্ত করে তার রিমিপরীর হাত চেপে ধরে আছে এমনকি শাসাচ্ছে।
একজন স্টাফ রুহানা চৌধুরীর জন্যে কফি নিয়ে যাচ্ছিলো। অয়ন স্টাফ এর থেকে সেই কফিটা নিয়ে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে পায়েলের থেকে রিমির হাত ছাড়িয়ে, পায়েলের হাতে সেই গরম কফিটা ঢেলে দেয়। পায়েল ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে। অয়নের এমন কাজে রিমিসহ সবাই হতবাক হয়ে যায়। রুহানা চৌধুরী উঠে দাঁড়ান। পায়েলের চিৎকারে মেঘ এবং রুজা চৌধুরীও বেড়িয়ে আসেন। পায়েল ব্যাথায় রিতিমত কেঁদে ফেলেছে। ফোসকা পড়ে গেছে তার হাতে। একদম গরম কফিটা অয়ন তার হাতে ঢেলে দিয়েছে। অয়ন পায়েলের সেই ফোসকা পড়া হাতটা চেপে ধরে। এতে পায়েল ব্যাথায় দ্বিগুনভাবে কুকড়ে উঠে। অয়ন পায়েলের হাত চেপে ধরেই ক্ষিপ্তসুরে বলে,
‘ আমার রিমিপরীকে টাচ করার সাহস পেলে কোথা থেকে তুমি? জাস্ট রিডিকিউলাস! তোমাকে আমি আগেও বলেছি একদম আমার প্রতি নিজের অধিকারবোধ দেখানোর সাহস দেখাবে না। তোমাকে জাস্ট গ্রেন্ডমার জন্যে বিয়েটা করতে যাচ্ছি আমি। ‘
পায়েল ছলছলে চোখে বলে,
‘ অয়ন তুমি এই দুইদিনের মেয়ের জন্যে আমার হাত গরম কফি ঢেলে দিলে? ‘
অয়ন পায়েলের হাত ছেড়ে শক্ত মুখে বলে,
‘ পারলে তো যেই হাত দিয়ে তুমি আমার রিমিপরীকে
টাচ করার সাহস দেখিয়েছো সেই হাতটাই ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতাম এন্ড মুখ সামলে কথা বলো।দুইদিনের মেয়ে মানে? ও হচ্ছে মিসেস অয়ন চৌধুরী। এখনো কিন্তু আমাদের ডিভোর্সটা হয়নি। ‘
কথাটি বলেই রিমিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিমির হাত ধরে সকলের সামনে অয়ন রিমিকে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো। রুজা চৌধুরী হা হয়ে তাকিয়ে আছে। পায়েল ফোসকা পরা হাত নিয়ে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ এইরকম দৃশ্য দেখে মুখ দিয়ে সিটি বাজিয়ে দেয়। এইসব কিছুর নিরব দর্শক হয়ে রইলেন রুহানা চৌধুরী। তিনি বুঝতেই পারছেন না অয়ন আসলে চাইছে টা কী? হঠাৎ এক ভয়ে মনে ঝেঁকে বসে রুহানা চৌধুরীর। তিনি যা ভাবছেন তা যদি সঠিক হয়, তাহলে তো সব শেষ!
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
______
অয়ন রিমির হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে আসে দরজা খট করে বন্ধ করে দেয়। অয়নের হঠাৎ দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় ভরকে যায় রিমি। ভয়ার্থ গলায় বলে উঠে,
‘ আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন? দরজা খুলুন বলছি। সবাই কি ভাব্বে? আপনি কি শুরু করেছেন হ্যা? আপনাকে না আমার পাগল ছাড়া আর কিচ্ছু মনে হচ্ছে না। নীচে কী কান্ড টা ঘটালেন আপনি?এইভাবে কেউ গরম কফি ঢেলে দেয়? ‘
অয়ন রিমির কথার গুরুত্ব দেয়না বরং ওয়াশরুমে গিয়ে মগে ঠান্ডা পানি নিয়ে এসে, রিমির হাতখানা আলতো করে ধরে রিমির হাতের লাল হওয়া জায়গাটিতে ঠান্ডা পানি দিতে থাকে। অয়ন জানে রিমি হাতে ব্যাথা পেয়েছে। রিমি চোখ বন্ধ করে ফেলে। রিমি ব্যাথা পাওয়াতে অয়নের কষ্ট লাগে তার থেকে বেশি রাগও উঠে। পায়েলকে সে কিছুতেই ছেড়ে দিবেনা। তার রিমিপরীকে যে বা যারা আঘাত করতে চাইবে সবাইকে নিঃশেষ করে দিবে অয়ন।
____________
রিমি এবং মেঘ বাড়ির বাগানের দোলনায় বসে নিজেদের মতো গল্প করছে। মেঘের একমাত্র গল্পের সঙ্গী হয়ে উঠেছে রিমি। রিমিরও বেশ ভালো লাগে মেঘকে। বেশ মিশুকে মেয়ে। গল্পের এক পর্যায়ে মেঘ রিমির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
‘ রিমিপু তুমি কী একটা জিনিস গভীরভাবে ভেবে দেখেছো? ‘
‘ কি ভাব্বো? ‘
‘ অয়ন ভাইয়া কেমন পসিসিভ হয়ে উঠেছে তোমার প্রতি। আজকে কেমন সকলের সামনে পায়েল আপুর হাতে গরম কফি ঢেলে দিলো। এইসব এর মানে কিছু বুঝতে পারছো তুমি? ‘
রিমি জানে মেঘ আসলে তাকে কি বলতে চাইছে। রিমি কিছু বলতে যাবে তখনি কেউ মেঘকে হাক ছেড়ে ডাকে। পুরুষের গলা পেয়ে রিমি এবং মেঘ একসাথে পিছনে ঘুড়ে তাকায়। ফারহান তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ফারহানকে দেখেই রিমির ভয়ে হাত-পা কাঁপতে থাকে। ফারহান তো তার দিকেই এগিয়ে আসছে। এখন যদি ফারহান রিমিকে দেখে ফেলে তখন তো ফারহান রিমিকে চিনে ফেলবে। কি হবে তখন? কি করবে রিমি?
……চলবে কী?
নীচের লাইন সবাই পড়বেন প্লিয 👇
[ জ্বরের ঘোরে কি লিখছি জানিনা🤦♀️। জ্বর থাকায় দুইদিন গল্প দিতে পারেনি। আপ্নারা সবাই জানেন।
প্লিয কেউ ছোট বলবেন না। এই পর্বটা অনেক কষ্টে লিখেছি। ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার জন্যে সবাই দোয়া করবেন। ফি আমানিল্লাহ্। ]
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি