#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ২১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অসুস্হ মামাকে দেখতে এসে নিজের প্রাক্তন প্রেমিকের মুখোমুখি এসে দাঁড়াবে তা কখনোই কল্পনা করেনি রিমি।
সকালে রওনা দিলেও সিলেটে এসে রিমি পৌঁছেছে রাতে। অসুস্হ মামাকে দেখতে মামার বাড়িতে গিয়ে,ড্রইং রুমে আমানকে বসে থাকতে দেখে রিমি বেশ অবাক হয়ে যায়। যেন সে আমানকে এই মুহুর্তে একদমই আশা করেনি। রিমির উপস্হিতি টের পেয়ে ঘাড় কাত করে রিমির দিকে একপলক তাকিয়ে আলতো হাঁসে। রিমি এখনো দরজা দাঁড়িয়ে আছে। বাহির থেকে নিজের মামাকে হাঁসতে হাঁসতে বেড়োতে আরেকদফা ভরকে যায় রিমি। রিমির মামা আমানের পাশে বসে গল্প করতে বসে যায়। নিজের মামাকে সুস্হ অবস্হা দেখে রিমির মাথা ঘুড়ানোর উপক্রম হয়েছে। সে তো শুনেছিলো তার মামা গুরুতর অসুস্হ। যাকে কালকে হসপিটাল থেকে
বাসায় আনানো হয়েছে,তাহলে এক রাতের মধ্যে এতোটা সুস্হ কিকরে হলো রিমির মামু? তিনি তো দিব্যি সবকিছুই করতে পারছেন।
____
অপরদিকে আজ অয়নের বেশ ধকল গিয়েছে। পরপর পাঁচটি ওটি করতে হয়েছে তাকে। তাই সকাল থেকেই বেশ ব্যস্ত ছিলো সে। অয়ন নিজের কেবিনে আসতেই দেখে মহিলা গার্ডসগুলো মাথা নিচু করে আছে। অয়ন তাদের দিকে একপলক তাকিয়ে ল্যাপটপ বের করে সিরিটিভিতে দেখতে থাকে রিমি
লুকিয়ে চৌধুরী বাড়িতে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছে। রিমি জানালার কাছে এক সিড়ি ছিলো তা দিয়ে রিমি খুব সহজেই নিজের
অতঃপর পিছনের গেট দিয়ে বেড়িয়ে যায়। মহিলা গার্ডসগুলো নিচু গলায় বলে,
‘ সরি স্যার! আমরা ম্যামকে আটকাতে পারেনি। উনি আমাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। আর আপনি তো আজ খুব ব্যাস্ত ছিলে তাই আপনাকে খবর দিতেও পারেনি। ‘
অয়ন খুব শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ মেলে রইলো স্ক্রিনের উপর। অতঃপর অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে খুবই শীতল গলায় বললো,
‘ আমি বেড়োবে। আমার গাড়ি রেডি করো ফাস্ট। ‘
অয়নকে খুবই শান্ত এবং উৎফল্ল দেখাচ্ছে। যেন এমন একটি ঘটনা সম্পর্কে সে অবগত ছিলো। অয়নের কন্ঠ শীতল হলেও তা খুবই ভয়ংকর শুনাচ্ছে। গার্ডসদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অয়ন ধমক দিয়ে বলে,
‘ কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন সবাই? জাস্ট গেট লস্ট। ‘
অয়নের ধমকে সমস্ত গার্ডরা বেড়িয়ে যায়।
রিমি তার মাথায় থাকা প্রশ্নগুলো উত্তর খুঁজে পেতে দরজা থেকে ঘরের ভিতর ঢুকে যায়। রিমির মামার চোখ রিমির দিকে পড়তেই, দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ রিমি মা তুই এসেছিস? আমি জানতাম তুই আসবি। দেখ আমান ও এসে পড়েছে তোর জন্যে। ‘
‘ এইসব এর মানে কি মামু? তোমরা সবাই আমার সাথে ছলনা করেছো? কেন করলে এমন আমার সাথে? ‘
রিমি একপ্রকার চিৎকার করে তার মামার দিকে প্রশ্নটা নিক্ষেপ করলো। রিমির মামু রিমির কথার বিপরীতে টু-শব্দ টাও করলো না। বরং খুবই শান্ত ভাবে বসে পড়লো আমানের পাশে। অতঃপর ধীর কন্ঠেই বললো,
‘ ছলনা না করলে কি তুই আসতি? ‘
রিমির মামুর কথায় রিমি হতবাক হয়ে একবার আমান পানে তাকায় আরেকবার নিজের প্রানপ্রিয় মামার দিকে তাকায়। রিমির বুঝতে বাকি থাকেনা তাকে মিথ্যে বলে নিয়ে আসা হয়েছে। রিমির ভাবনার মাঝেই রিমির মা ফলের জুস নিয়ে আমানের সামনে রাখে। অতঃপর রিমির দুই মামাতো বোন ও বিভিন্ন খাবার নিয়ে এসে আমানের সামনে উপস্হিত হয়। যেন তারা জামাই আপ্পায়ন করছে। আমান এতো খাবার দেখে কিছুটা অস্বস্হির সহিত বলতে থাকে,
‘এইসব কি করছেন? আমি এতো খাবার খেতো খাবার খেতো পারবো না। ‘
‘ আমাদের বাড়িতে তোমার এতো কিসের লজ্জা বলো তো? আমাদের বাড়ির জামাই হতে চলেছো তুমি।’
রিমির মামার কথায় রিমির দিকে তাকিয়ে আমান
লাজুক হাঁসে। রিমি তার মামুর কাছে গিয়ে অবিশ্বাসের গলায় বলে,
‘ মানে মামু? এইসব কি বলছো তুমি? উনি আমাদের বাড়ির জামাই হবে মানে? ‘
রিমির মামার মুখের হাঁসি মুহুর্তেই উবে গেলো। মুখে এসে দখল করলো বেশ খানিকটা গাম্ভীর্য। গম্ভীর মুখেই তিনি বললেন,
‘ আমরা সব জেনে গিয়েছি রিমি। তোমার সাথে অয়নের বিয়েটা শুধু সম্মান রক্ষার্থের জন্যে হয়েছিলো। রুহানা চৌধুরী আমাকে সবটাই বলে দিয়েছেন। ‘
রিমির মামার কথায় মুখখানা পানসে হয়ে যায় রিমির। রিমির মামা রিমির হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে বলে,
‘ এইটাতে সাইন করে দাও। ‘
রিমি পেপারটার দিকে তাকিয়ে দেখে পেপারটি হচ্ছে ডিভোর্সের কাগজ। রিমি কাগজটা দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পারে রিমির মামু সবটা জেনে গিয়েছে তাই তিনি রিমি এবং অয়নের ডিভোর্সটা করিয়ে, আমানের সাথে বিয়েটা দিবে। তাইতো আমানের সাথে প্ল্যান করে রিমিকে এতোদূর নিয়ে এসেছে রিমির মামু। তাই রিমির মা যেন ফোনে বার বার বলে দিয়েছিলো রিমি যেন অয়নের সাথে না আসে। তাইতো রিমি অয়নের কাছ থেকে একপ্রকার লুকিয়ে
চলে আসে। সেদিন মায়ের অদ্ভুদ আবদারে রিমি অবাক হলেও তখন কিছু বলেনি কিন্তু এখন রিমি সবটা বুঝতে পারছে।
রিমির মামু তার মামাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলে,
‘বিয়ে করবো মানে? মামু তুমি কী ভুলে গেছো আমি অয়ন চৌধুরীর বর্তমান স্ত্রী? ‘
‘ তাইতো বলছি ডিভোর্স পেপার টা সাইন করে দে।
রুহানা চৌধুরী আজকেও আমাকে ফোন করে শাসিয়েছেন যেন অতি দ্রুত তোর সাথে আমি অয়নের ডিভোর্সটা করিয়ে দেই। কয়েকদিন পর অয়নের বিয়ে অন্যকারো সাথে। আমি কেন তোকে বসিয়ে রাখবো? আমিও তোর সাথে আমানের বিয়ে দিবে দেখিয়ে দিবো চৌধুরীর বাড়ির সবাইকে। ‘
রিমি তার মামুর দিকে অসহায় পানে তাকিয়ে রইলো। তার মামুর মাঝে এক জেদ চেপে বসেছে তা শুধু রিমিকে ঘিড়েই, কিন্তু এই দাম্ভিক জেদি মামুকে তো রিমি চিনেনা। রিমি বুক ভরে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
‘ কিন্তু উনি এই বিয়েটা করবে না। মামু তোমরা অয়ন চৌধুরীকে চিনো না। ‘
‘ তুই ভালো করে ডিভোর্স পেপারটা দেখ অয়ন ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। ‘
মামুর কথা শুনে রিমি ভালো করে কাগজটা দেখে লক্ষ্য করলো তাতে স্পষ্ট জ্বলজ্বল করছে অয়নের সাইন। রিমির বুক ভারি হয়ে আসে। নেত্রকোনায়
এসে জল গুলো বাধাট আসে। কালকেই তো লোকটা তাকে এতো গুলো কথা বললো! আজকে সাইনও করে দিলো? রিমি কিছু একটা ভেবে বলে,
‘ কিন্তু এইটা কী করে সম্ভব হতে পারে? উনি তো…
রিমির কথার মাঝে ফোড়ন কেটে রিমির মা বললেন,
‘ কেন সম্ভব নয়? যে ছেলে নিজের দাদির কথা শুনে তোকে বিয়ে করতে পারে। সে নিশ্চয় তার দাদির কথা শুনে তোকে ছেড়েও দিতে পারে। এইবার চলদি সাইন টা করে দে। ‘
__________
রুহানা চৌধুরী বসে আছেন একটি চেয়ারে। আজ বেশ খুশি তিনি। তিনি অয়নের সাইন নকল করে রিমির মামার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং হুমকি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যেন রিমিকে দিয়ে রিমির মামু যেন সাইনটি করিয়ে নেয়। নাহলে তাদের পরিবারের উপর বিরাট বড় ঝর আসবে। এমনকি রিমির মামুর পদটাও তিনি সরিয়ে ফেলার ব্যাবস্হা করবেন। রুহানা চৌধুরীর হুমকিতে বেশ ভয় পেয়ে যায় রিমির মামু। তাই তিনি রিমি এবং অয়নের ডিভোর্সটা করিয়ে ফেলতে রিমিকে মিথ্যে বলে ঢাকা থেকে সিলেটে নিয়ে আসেন।
সামনে ফটোশ্যুট চলছে বিভিন্ন মডেলদের। কিছুক্ষন এর মাঝেই পায়েল বেশ দামি একটা গ্রাউন পড়ে ফটোশ্যুট এর চলে আসে। অতঃপর রুহানা চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলে,
‘ এই শেষবারের মতো অয়নকে পাওয়ার আশায় আপনার কথায় ফটোশ্যাুট করতে এলাম। ‘
রুহানা চৌধুরী কুটিল হাঁসি হেসে বলে,
‘ এইবার তুমি আশাহত হবেনা। আশা করি। ‘
চলবে…কী?
[আজকের পার্টটা আমি মনে হয় সাঁজাতে পারেনি🙂]
[ কেউ ছোট বলবেন না প্লিয। পারলে ঘটনমূলক কমেন্ট করুন। আপ্নারা সবাই জানেন আমি ব্যস্ততার মাঝে রয়েছি এবং গল্পে রহস্য যখব আছে তখন তা সমাধান ও হবে।শুধু অপেক্ষা করুন]