তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ২৩

0
547

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ২৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রিমি কথাটুকু বলার সুযোগ পেলো না তার আগেই ভয়ংকর এক শব্দে কেঁপে উঠলো তার হৃদয়টা। কানে হাত দিয়ে নীচে বসে পড়লো রিমি। আমানও কান চেপে ধরলো শব্দটি পেয়ে। এতোটাই ভয়ংকর
হিম করা শব্দটি। আমান একটু ভালো করে অনুভব করে বুঝলো কেউ বেহালা বাজাচ্ছে। এতোটা ভয়ংকর সুর কেউ তুলতে পারে তা ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে আমানের। শব্দের যতটা প্রখর হচ্ছে ততই রিমির তত কষ্ট হচ্ছে। আমান রিমির কছে ঝুঁকে রিমির হাত ধরে কম্পিত কন্ঠে বলে উঠে,

‘ রিমিপাখি তুমি ঠিক আছো তো? ‘

রিমির গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না কেন যেন। রিমির শরীরটা আসার হয়ে যাচ্ছে। শরীরের গতি সে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। আমান উঠে দাঁড়িয়ে পানি নিয়ে এসে রিমির মাথাটা নিজের কাধে রাখে।অতঃপর রিমির চোখমুখে পানি ছিটাতে শুর‍ু করে। রিমি বহু কষ্টে বলে উঠে,

‘ আমি শব্দটা সহ্য করতে পারছি না আমান। প্লিয বন্ধ করান শব্দটা। ‘

আমান মাথা নাড়িয়ে রিমিকে চেয়ারে বসিয়ে জানালা দিয়ে শব্দের উৎস দেখতে গেলো। শব্দের উৎস পেতেই একপ্রকার ভরকে গেলো আমান। রিমিদের বাড়ির চারিপাশে কালো পোষাক পরিহিত গার্ডসরা দাঁড়িয়ে আছে বন্দুক হাতে। অয়ন গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, কালো হুডি পড়ে হাতে কালো রংয়ের একটা বেহালা নিয়ে অদ্ভুদ এক ভয়ংকর সুর তুলছে। অয়নের ভয়ংকরতম শব্দ পেয়ে রিমির মামুসহ রিমির বোনেরা এবং রিমির মা বেড়িয়ে যায়। রিমির মামু এতো গার্ডস এবং অয়নকে এই মুহুর্তে আশা করেনি। রিমির মামাতো বোনেরা কানে হাত দিয়ে একপ্রকার মরন বেদনায় ভুগছে। রিমির মামু হতবাক হয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের সুরে বলে,

‘ বন্ধ করো এইসব শব্দ! দয়া করে বন্ধ কর। ‘

অয়ন থেমে যায়। শান্ত দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে রিমির মামুর দিকে। রিমির মামু সেই শান্ত দৃষ্টি দেখে
ঘাবড়ে যায়। শব্দের তীব্রতা কমতেই রিমি নিজের মধ্যে কিছুটা শক্তি পায়। উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে দ্রুতভাবে। ছোটবেলা থেকে ভয়ংকর শব্দ শুনতে পায়না রিমি। ভয় পায় সে। একধরনের ফোবিয়া আছে তার ভয়ংকর শব্দে। রিমি উঠে দাঁড়িয়ে আমানের পাশে দাঁড়িয়ে দেখে, অয়ন এবং তার গার্ডস তাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অয়নকে দেখে আনমনে হেঁসে উঠে রিমি। যাকে বলে প্রাপ্তির হাঁসি। তার বিশ্বাস তবে ঠিক হলো। অয়ন ডিভোর্স পেপারে সাইন করেনি বলেই তাকে নিতে ছুটে এসেছে এতো দূর। রিমি ‘ডক্টর এয়ারসি ‘ বলে চিৎকার করতে নিলে, তাতে বাঁধা দেয় আমান। হাতের ইশারায় রিমিকে সামনের দিকে তাকাতে বলে। সামনের দিকে তাকাতেই রিমি আৎকে উঠে। কেননা অয়ন রিমির মামুর কপাল বরাবর বন্দুক তাক করে আছে।

_____________

রুহানা চৌধুরীর মাথায় ডক্টর এসে ব্যান্ডিজ করে দিয়েছে। রুহানা চৌধুরী এবং তার ছেলে অফিসে টিভির সামনে বসে আছে। নিউজে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে বেড়িয়েছে তাদের অফিসে ঘটনাটি। পুরো শহরে রটিয়ে পড়েছে অয়ন নিজের অফিসে ভাঙ্গচুর করেছে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে রুহানা চৌধুরীর। এতো বছরের অর্জিত সম্মান নিমিষেই ধুলে মিশে যাচ্ছে তার। সমস্ত মিটিং ক্যানসেল করে ফেলেছে অন্যান্য কম্পানিরা চৌধুরী ফ্যাশন কম্পানির সাথে।
রুহানা চৌধুরীর ছোট ছেলে আশরাফ চৌধুরী রুহানা চৌধুরীর পাশে বসলেন। রুহানা চৌধুরী তার ছেলের দিকে একপলক তাকিয়ে হতাশার সুরে বললেন,

‘ সব শেষ হয়ে গেলো রে আশরাফ। এতো বছরের মান-সম্মান সব শেষ। ‘

আশরাফ নরেচড়ে উঠলেন। তাকেও বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। অতঃপর চিন্তিত গলায় বলে উঠলেন,

‘ একটা খবর দেওয়া আছে তোমাকে মা। ‘

‘ কি খবর? ‘

‘ পায়েলকে পাওয়া যাচ্ছে না। পায়েল যেহুতু মিডিয়ার লোক তাই তার নিখোঁজ হওয়ার খবরটা শহরে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ ও ইনভেস্টিগেট করা শুরু করে দিয়েছে। ‘

রুহানা চৌধুরী ছেলের কথা শুনে হন্তদন্ত হয়ে বললেন,

‘ না না পুলিশকে কিছুতেই এই ব্যাপারটা ইনভেস্টিগেট করতে দেওয়া যাবেনা। অয়ন আমাদের বাড়ির ছেলে। যদি পুলিশ ব্যাপারটা তদন্ত করে তাহলে শুধু অয়নকে নয় পুরো চৌধুরী কম্পানিকে এর জন্যে সাফার করতে হবে। এমনিতেই আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে আমাদের কম্পানির। তুমি এখনি কিছু একটা ব্যাবস্হা করো আশরাফ। যে করেই হোক পায়েলের ক্যাসটা ধামাচাপা দাও। ‘

আশরাফ তার মায়ের আদেশ পাওয়া মাত্র দ্রুত মাথা দুলিয়ে স্হান ত্যাগ করলেন। রুহানা চৌধুরী হাত শক্ত করে মুঠো করে নিলেন। রোষাক্তপূর্ন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন টিভির পর্দায়। আজ সবকিছুর জন্যে দায়ী অয়ন। রুহানা চৌধুরী রোষপূর্ন কন্ঠে বলে উঠলেন,

‘ ছাড়বো না আমি। কিছুতেই ছাড়বো না আমি অয়নকে। ‘

___________

সানা এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিয়ে ভেঙ্গে দিলো। আজ ও তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো, কিন্তু সে কৌশলে পাত্রের দোষ ত্রুটি খুঁজে পাত্রকে নাখোচ করে দিয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সানা গুনগুন করে গান গাইছে এবং তার হাতে থাকা চুড়িগুলো সযত্নে খুলে রেখে দিচ্ছে। সানার মা রেগে
সানার ঘরে আসেন। সানা তার মায়ের রাগান্বিত মুখশ্রী দেখে একপলক হেসে আবারোও কাজে মনে দেয়। তাতে যেন দ্বিগুন রেগে যায় সানার মা। সানার মা সানার সামনে এসে বলে,

‘ এই নিয়ে চতুর্থবার! আর কত বিয়ে ভাঙ্গবি তুই?
তোর কি বিয়ে করার ইচ্ছে নেই? ‘

সানা তার মায়ের গলা জড়িয়ে আদুরে কন্ঠে বলে,

‘ আচ্ছা মা। তুমি আমাকে তাড়ানোর জন্যে উঠে পড়ে লেগেছো কেন? আমি যদি তোমাকে ছেড়ে চলে যাই তাহলে তুমি কীভাবে থাকবে বলো তো? ‘

সানার কথা শুনে সানার মায়ের নেত্রকোণায় জল চলে আসে। সানা আবারোও বলে উঠে,

‘আর বিয়ের ব্যাপার টা তো? তা সঠিক সময়ে আমি করে ফেলবো। তুমি চিন্তা করো না তো। আসছি আমি। অফিসে একটা জরুরী মিটিং চলে এসেছে। আমি আসছি। ‘

সানা কথাটি বলেই বেড়িয়ে যায়। সানার মা হতাশ পানে তাকিয়ে থাকে সানার দিকে। বাপ ছাড়া মেয়েটাকে একাই মানুষ করে এসেছেন তিনি। সত্যিই তিনি বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলছেন। সানা নিশ্চয় সঠিক সময় এলে নিজ থেকেই বিয়ে করতে চাইবে।

__________

সানা অফিসে গিয়ে দেখে ফারহান টিভিতে গভীর দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে। সামনে বড় বড় করে অয়নের খবরটা দেখানো হচ্ছে। ফারহান রিমোর্টটা হাতে নিয়ে খবরের চ্যানেলটা চেঞ্জ করে টিভিটা বন্ধ করে দিয়ে, কাজে মন দিলো। সানা ভরকে গেলো। নিজেদের কম্পানি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই ফারহানের। সারা শহরে যেখানে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে সেখানে ফারহান এতোটা শান্ত কীভাবে থাকে?ভেবে পায় না সানা। ফারহান হয়তো সানার মুখ দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই খুবই শান্ত সুরে বলে,

‘ এতেটা অবাক হওয়ার কিছুই নেই মিস সানা। চৌধুরী পরিবারের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। যা আছে সব ফর্মালিটির।’

‘ কিন্তু কেন স্যার? ‘

‘ ভয়ংকর এক অতীতের জন্যে। ‘

ফারহানের দায়সারা উত্তর।

__________________

অয়ন এইভাবে বন্দুক তাক করে রাখায় বেশ ভয় পেয়ে যায় রিমি। অয়নের ভয়ংকর রুপের সাথে সে আগেও পরিচিত। অয়ন রিমির মামাকেও গুলি করে দিতে বিন্দুমাত্র হাত কাঁপবে না। কথাটা ভেবেই ভয়ে ঢুগ গিলে রিমি । অয়ন রিমির মামুর কপালে বন্দুক তাক করে ঘাড় কাত করে বাঁকা হেসে বলে,

‘ মানুষ কতটা স্বার্থপর হলে, নিজের পদ হারানোর ভয়ে নিজের ভাগ্নীর সংসার শেষ করতে দুইবার ভাবেনা। ‘

রিমির মামু ভয়ে কাঁপছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি অয়ন তাকে গুলি করে দিবে। রিমির বোনগুলোও নিজের বাবার এমন অবস্হা দেখে কেঁদে ফেলে। রিমির মা অসহায় হয়ে তাকিয়ে দেখছে শুধু। অয়ন হঠাৎ করে নিজের বন্দুকটা নীচে ফেলে দেয় এবং খপ করে রিমির মামার হাত ধরে ফেলে। অয়নের কাজে সবাই বেশ অবাক হলেও রিমি হয়না। রিমির ভয়টা সময়ের সাথে সাথে প্রখর হতে থাকে। কেননা অয়নের অধরের কোণে বেশ ভয়ংকর হাঁসি বিদ্যমান। যেই হাঁসির সাথে বেশ পরিচিত রিমি। অয়ন রিমির মামার হাতটা শক্ত করে চেপে শীতল গলায় বলে,

‘ এই হাত দিয়ে আপনি আমার রিমিপরীর হাতে কলম তুলে দিয়েছিলেন না সাইন করানোর জন্যে তাইনা? আমার থেকে আমার রিমিপরীকে আলাদা করার জন্যে? ‘

রিমির মামা ভয়ে মাথা নাড়ায়। অর্থাৎ সে করে নি।
অয়ন রিমির মামার হাত ধরে সামনে থাকা টেবিলে হাতটা রেখে পকেট থেকে হাতুড়ি বের করে, রিমির মামার হাতে জোড়ে বারি দেয়। রিমির মামা জোড়ে চিৎকার করে উঠে। হাত থেকে অনবরত রক্ত বেড়াচ্ছে। এতোটাই জোড়ে বারি দিয়েছে যার জন্যে হাতের অবস্হা করুণ হয়ে গিয়েছে। রিমির মা এবং
রিমির বোনেরা কাঁদতে থাকে। আমান বিষ্ময় নিয়ে থাকিয়ে থাকে। অয়নের পাগলামো সম্পর্কে সে শুনেছিলো কিন্তু এতোটা ভয়ংকর অয়ন তা জানতো না সে। রিমি নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারেনা। দৌড়ে নীচে চলে যায়। আমান চাইলেও আটকাতে পারেনা রিমিকে।

‘ ডক্টর এয়ারসি থামুন প্লিয! দয়া করে মামুকে মারবেন না। ‘

অয়ন দ্বিতীয়বারের মতো আঘাত করলে চাইলে,কাঙ্খিত মানুষটির কন্ঠ পেয়ে থেমে যায়। হ্যা তার রিমিপরী যার জন্যে সে এতো কান্ড করলো। যাকে পাওয়ার জন্যে এতোদূর ছুটে এলো সে। অয়ন হাতুড়িটা রেখে সামনের দিকে তাকায়। রিমি শশরীরে দাঁড়িয়ে আছে সামনে। নেত্রকোণে অজস্র জল এসে
হানা দিচ্ছে রিমির। অয়ন দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে রিমির দিকে। অয়নকে এইভাবে এগিয়ে আসতে দেখে রিমি দ্রুত তার আখিজোড়া বন্ধ করে ফেলে দ্রুত। এই বুঝি অয়ন তাকেও শাস্তি দিবে, কিন্তু রিমিকে সম্পূর্ন রুপে অবাক করে দিয়ে অয়ন রিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অতঃপর রিমির কানের কাছে গিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,

‘ তোমার প্রতি অজস্র অভিমান বুকে পুষে রেখেছি রিমিপরী। এই অভিমান গুলো বেশ তীব্র। বেশ বেদনাদায়ক ।’

চলবে….কী?

আসসালামু আলাইকুম
[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু। আমি ইচ্ছে করে দেরী করে গল্প দেই এমনটা নয়। আমি বেশ ঝালামার মধ্যে আছি। গল্প লেখাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন গল্পের এমন একটা জায়গায় আছি ইচ্ছে করলেও তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারছি না। 😅]
হ্যাপি রিডিং 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here