তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ২৫ #Jannatul_ferdosi_rimi

0
557

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ২৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
পায়েল অয়নের কলার চেপে ধরে ক্রোধে, মাত্রাধিক ক্ষোভে। তার ভাষ্যমতে সে নিজের স্বার্থের জন্যে অয়নকে বিয়ে করতে চাইলেও,অয়ন তাকে ঠকিয়েছে। তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেছে। প্রতিউত্তরে অয়ন পায়েলকে
নিজের থেকে ছাড়িয়ে, আরেকদফা থাপ্পড় মেরে,একরোখা কন্ঠে বলেছে,

‘ আমি তোমাকে কখনো ঠকায়নি। তুমি আজ নিজের কর্মের ফল পেয়েছো শুধুমাত্র,কিন্তু এখনো তোমার পাপের শাস্তি পূর্ন হয়নি। ‘

‘ মানে? আর কত শাস্তি দিবে তুমি আমাকে অয়ন? ‘

পায়েলের প্রশ্নে অয়ন পায়ের উপর পা তুলে দায়সারা ভাবে বলে,

‘ তুমি যেন ভবিষ্যতে আমার এবং রিমিপরীর মাঝে ঢুকতে না পারো। সেই ব্যাবস্হাই করবো আমি। না থাকবে ফুল না থাকবে কাটা। ‘

অয়নের হিম করা কন্ঠে কথাটি শুনে তরতর করে ঘামতে থাকে পায়েল। হাতপাগুলো নিজের গতি নিয়ন্ত্রন করে ফেলে। মাথা ঘুড়াবে মনে হচ্ছে তার। অয়নের কথার ধরনে খুব স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে অয়ন পায়েলকে মেরে ফেলার কথা বলছে। পায়েল বুঝতে পারছে না সে কি করবে।কীভাবে অয়ন নামক সাইকোর থেকে নিজেকে বাঁচাবে। পায়েলের ভাবনার মাঝেই, অয়ন হাত দিয়ে ইশারা করে মহিলা গার্ডসগুলোকে পায়েলকে নিয়ে যেতে। মহিলা গার্ডসগুলোও পায়েলকে নীচ থেকে উপরে উঠিয়ে নেয়। অয়ন পায়েলের গাল চেপে ধরে ঠোট কামড়ে হেসে বলে,

‘ পায়েল ডার্লিং! আর মাত্র একটা দিন সময় আছে তোমার হাতে। ইঞ্জয় ইউর ডে। ‘

কথাটি বলে অয়ন চলে যেতে নিলে, তার মাঝে ফোড়ন কেটে কাঁপাকাপা গলায় পায়েল বলে উঠে,

‘ কার কাছে কতটু্কু সময় রয়েছে, তা তো সঠিক সময় এলেই বুঝা যাবে অয়ন চৌধুরী। পায়েল রুজানা এতো সহজে মরবে না। আজকে যার জন্যে তুমি আমার থেকে আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছো।তাকেই আমি তোমার থেকে কেড়ে নিয়ে,
তোমাকে পুরোপুরি উম্মাদে পরিনত করবো আমি। ‘

পায়েলের কথাটি কানে আসতেই, অয়নের মুখস্রীতে অদ্ভুদ ক্রোধের গাঢ় লাল রং এসে হানা দেয়। আখিজোড়া ক্রমোশ লাল হয়ে উঠে। ‘পায়েল অয়নের থেকে তার রিমিপরীকে কেড়ে নিবে ‘কথাটি
মাথায় চওড়া দিয়ে উঠতেই রেগে ফেটে পড়ে অয়ন।
তড়িঘড়ি করে পিছনে ঘুড়ে পায়েলের গলা চেপে ধরে। পায়েলের গলায় চেপে ধরায় পায়েলের নেত্রকোনা থেকে জল গড়িয়ে গালে এসে ঠেকছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। এই বুঝি সে মরেই যাবে চিরতরের জন্যে। অয়ন কি একটা ভেবে পায়েলকে তৎক্ষনাৎ ছেড়ে দিলো। অতঃপর হিম ধরা শীতল গলায় বলে উঠলো,

‘ তোমার মতো স্টুপিড মেয়েকে মেরে ফেলা আমার বা হাতের খেল,কিন্তু আমি আজকে তোমাকে মারবো না। বিখ্যাত মডেল পায়েল রুজানা তুমি। তোমার মৃত্যুটা একটু স্পেশালভাবে হবে। ‘

কথাটি বলেই অয়ন চোখে তার কালো সানগ্লাসটা পড়ে বেড়িয়ে গেলো দ্রুত পায়ে হেটে।

______

অপরদিকে রিমি দরজায় কান পেতে খুব ভালো করেই শুনতে পারছে ফারহানের কথাগুলো। ফারহান ফোনে কাউকে বলছে,

‘যত টাকা লাগে আপনি নিন কিন্তু পেশেন্ট যেন সুস্হ হয়ে যায়। আপ্নারা দ্রুত ওটির ব্যবস্হা করুন। আমি কালকে সকালের মধ্যেই হসপিটালে চলে আসবো।’

ফারহান কথাটি বলেই ফোনটি রেখে দিলো। অতঃপর ধীর পায়ে স্হান ত্যাগ করলো। রিমি হচকিয়ে গেলো। বেশ বিস্ময় নিয়ে ফারহানের কথাগুলো ভাবতে লাগলো। ফারহান কার জন্যে কালকে হসপিটালে যাবে? ফারহান বেশ লুকিয়ে কথাটি বলছিলো যার মানে এই বিষয়ে ফারহান ছাড়া এই বাড়ির কোন লোক কিচ্ছুটি জানে না। রিমি একবার ভাবলো ফারহানের পিছন পিছনে সে হসপিটালে গিয়ে সত্যিটা তাকে খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে হয়তো সে তার অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে।পরক্ষনেই সে ভাবলো অয়ন থাকতে কি সে আদোও কাজটি করতে পারবে?এমনিতেই অয়ন প্রচন্ড রেগে আছে রিমির উপর। রিমি হয়তো তার প্রশ্নের উত্তর কখনোই পাবে না। কথাটি ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রিমি। রিমির ভাবনার রেশ কাটতে না কাটতে দরজা খট করে অয়ন প্রবেশ করলো। রিমি অয়নের দিকে তাকালো। অয়নও রিমির এক পলক তাকিয়ে নিজের শার্টটা খুলে, ওয়াশরুমে চলে গেলো। রিমি অয়নের দিকে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকলো। অন্যদিন হলে অয়ন তাকে জড়িয়ে ধরতো এসেই কিন্তু আজ তার ব্যাতিক্রম। হয়তো অভিমানের পরিমান প্রখর। রিমিও অয়নের ব্যাপারটি নিয়ে মাথা ঘামালো না। অয়নের প্রতি শুধু ঘৃণা এসে বাসা বাধছে তার মনে। কতটা নির্মমভাবে অয়ন তার মামুকে মারলো। আমানের অবস্হাও হয়তো খুব সচনীয়। তাদের একটা খবরও রিমি পাচ্ছে না। বড্ড চিন্তা হচ্ছে নিজের পরিবারের জন্যে। রিমির ধারণামতে আজ অয়নের সাথে নিজের জীবন জড়িয়ে সে অনেক ভুল করে ফেলেছে। তার এই ছোট্ট ভুলের মাশল তার পরিবারকে গুনতে হচ্ছে। অয়ন ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখতে পায় তার রিমিপরীর আখিতে অশ্রু টলমল করছে। যেকোন সময় বৃষ্টির মতো তা ঝড়ে পড়বে গাল বেয়ে। অয়ন দেয়ালে শব্দ দিয়ে ঘুষি মারে। কেঁপে উঠে রিমির সর্বাঙ্গ। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে রিমির গাল চেপে ধরে, তিক্ত সুরে বলে,

‘ বললাম না কাঁদবে না। তবুও কেন কাঁদছো। তোমার ওই নেত্রজোড়ায় যদিকোন জল এসে হানা দেয়। তা শুধু অয়ন চৌধুরীর জন্যে। অন্য কারো জন্যে নয়। ‘

রিমির মেজাজ তঙ্গে উঠে যায়। নিজের থেকে অয়নকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্বিগুন চিৎকার করে বলে,

‘ আমাকে কি আপনি নিজের মতো নির্দয় মনে করেছেন? আপনার আপনার পরিবারের জন্যে ভালোবাসা না থাকলেও, আমার নিজের পরিবারেী জন্যে ভালোবাসা রয়েছে। তারা আমাকে ছোটবেলা থেকে বড় করেছে। ‘

‘ ভালোবাসা থাকলেও, তা এখনি নিজের হৃদয় থেকে মুছে ফেলো রিমিপরী। তোমার হৃদয়ে মনে শুধু
অয়ন চৌধুরী জন্যে ভালোবাসা থাকবে। ‘

অয়নের একরোখা কথায় রিমি আশাহত হয়। সে জানে অয়নকে সে যত কিছুই বলুক। অয়ন কিছুতেই রিমির কথাকে গুরুত্ব দিবে না। রিমি তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে অয়নের কাছে গিয়ে, কান্না ভেজে গলায় বললো,

‘আমার মনে, আমার জীবনে প্রতিটি পদক্ষেপে আপনি শুধুমাত্র নিজের অস্তিত্ব বিস্তার করতে চাইছেন, এইটা কী বলে জানেন? অসুস্হ ভালোবাসা। দেখবেন আপনার এই অসুস্হ ভালোবাসাটাই আমাকে আপনার থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে। ‘

অয়ন রিমির কথা শুনে, রিমির দিকে হাত বাড়ায় থাপ্পড় মারার জন্যে কিন্তু মারেনা। হাত নামিয়ে ফেলে। রাগ প্রচন্ড মাথায় চড়ে বসেছে তার। তার ভালোবাসাকে তারই রিমিপরী অসুস্হ ভালোবাসার নামক উপাধি দিয়ে দিলো। ভাবতেই মাথায় রক্ত চড়ে যাচ্ছে অয়নের। অয়ন নিজের রুমের পাশের স্টাডি রুমে চলে যায়। ফেলে গুড়িয়ে ফেলে সমস্ত জিনিস। রিমি ঠোট কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অয়ন স্টাডি রুমের দরজা খট করে বন্ধ করে দেয়। অতঃপর ড্রয়ার থেকে ওষুধ বের করে চটজলদি খেয়ে নেয়। অয়ন সোফায় ধপ করে বসে পড়ে। মাথার ব্যাথা প্রচন্ড নাড়া দিয়ে উঠেছে তার। চুল খামচে ধরে সে। আপনমনে বিড়বিড় করতে থাকে,

‘ রিমিপরী তুমি আমাকে বুঝেও বুঝতে চাইলে না। এতোটা অবুঝ হয়ে থেকো না পরী। আমার কষ্ট হয়। ‘

_______________

রুহানা চৌধুরী এবং তার আশরাফ চৌধুরী ড্রইং টেবিলে বসে আছেন। রুজা চৌধুরী এবং মেঘ ও বসে আছে। সার্ভেন্টরা তাদের খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছে। রিমি দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে আসে। অয়ন এখনো স্টাডি রুমে দরজা বন্ধ করে রয়েছে। রিমিকে বেড়োতে দেখে, মেঘ উঠে দাঁড়িয়ে রিমির হাত ধরে বলে,

‘ রিমিপু তুমি এসেছো? জানো একদিনেই তোমাকে কতটা মিস করেছি আমি। এসো আজ তুমি আমাদের সাথে বসেই ডিনার টা সেড়ে নাও। ‘

মেঘের এমন আবদারে নাখোচ করতে পারছে না রিমি। মেয়েটা বড্ড ভালোবাসে তাকে। এই বাড়িতে আসার পর এই মেয়েটাই তো তাকে একদম কাছ থেকে আপন করে নিয়েছে। রিমি মেঘাকে না করতে পারেনা। হাত ধরে ড্রাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিয়ে, নিজেও রিমির পাশে বসে পড়ে। রুহানা চৌধুরী ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছেন রিমির দিকে। আজ এই মেয়েটার জন্যেই তার ব্যবসার এতো ক্ষতি হয়েছে,কিন্তু রুহানা চৌধুরী চাইলেও কিছু বলতে পারছে না। অয়ন এমনিতেই রেগে আছে। তারমধ্যে রিমিকে তিনি কিছু করলে অয়ন আরো ভয়ংকর কিছু করে বসতে পারে। সার্ভেন্ট এসে রিমিকে খাবার পরিবেশন করে দিয়ে যায়। রুহানা চৌধুরী রিমিকে উদ্দেশ্য করে খাবার খেতে খেতে বললেন,

‘ তা রিমি! এতো বড় টেবিলে নিশ্চয় কোনদিন খাওনি। খাবে কীকরে এতো বড় টেবিল তুমিতো দেখোই নি। ক্লাস বলে তো কিছুই নি। সারাজীবন মামার ঘাড়ে বসে খেয়েছো। ‘

রিমি সরু চোখে তাকায় রুহানা চৌধুরীর দিকে। রিমি খুব ভালো করে বুঝতেই পারছে রুহানা চৌধুরী তাকে জব্দ করার জন্যেই কথাটি বলেছে। রিমি কিছু বলবে, তার আগেই অয়ন……….

চলবে…কী?
আসসালামু আলাইকুম

[ কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু…😊]
[ঘটনমূলক কমেন্ট প্রত্যাশিত।]
হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here