তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ২

0
843

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ২
#Jannnatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রিমি বাইরে পা দেওয়ার আগেই দেখতে পায় তার স্বামীর সাথে পায়েলের বিভিন্ন ঘনিষ্ট মুহুর্ত ক্যামেরায় বন্ধী হচ্ছে। অয়ন পায়েলের কোমড় জড়িয়ে সামনের দিকে ছবি তুলছে।অর্থাৎ ফটোশুট চলছে তাদের। রিমি বাইরে যেতে গিয়েও,যায়না। সাংবাদিকরা জোড় হয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে রুহানা চৌধুরীকে।
রুহানা চৌধুরীর কথার মাঝে ব্যাঘাত ঘটায় তার ছোট ছেলে আশরাফ চৌধুরী। আশরাফ তার মাকে
কিছুটা দুরে নিয়ে গিয়ে বলতে থাকে,
‘ মা তুমি এখন এইসব কি করছো? অয়ন এবং পায়েলের এন্গেজমেন্ট এর কথাটি যদি বাইরে ভাইরাল হয়ে যায় তাহলে কিন্তু আমাদেরই ক্ষতি।
চারদিকে শত্রুদের অভাব নেই। তারা যদি জেনে যায়
পায়েল আমাদের বাড়ির বউ হতে চলেছে। তাহলে তারা কিছুতেই বিয়েটা হতে দিবেনা। তুমি বুঝতে পারছো তো আমি কি বলছি? ‘

রুহানা চৌধুরী কিছুক্ষন ছেলের কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শ্রবন করলেন। তারপর আফসোসের সুরে বললেন,

‘ আমার সত্যি বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। আমাকে এখুনি
যেতে হবে। বাইরে কথাটি ভাইরাল হলে চলবে না। বিয়েটা ভালোই ভালোই হয়ে যাক তখন সবাইকে জানাবো। ‘

র‍ুহানা চৌধুরী বাইরে এসে সমস্ত প্রেস-মিডিয়াকে
ব্যাপারটি আপাতত নিউজ করতে নিষেধ করে দিলেন। সমস্ত প্রেস-মিডিয়া রুহানা চৌধুরীর কথায় আস্তে আস্তে পার্টি ত্যাগ করে চলে গেলো। এতে রিমি কিছুটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বাইরে তাকে আর যেতে হলো না। দুইদিন ধরে এই বিশাল চৌধুরী বাড়িতে সে এসেছে,কিন্তু কোনার একটি ঘরটাতেই সেই দুইদিন ধরে আছে। বাইরে বের হয়নি।
এই কোনার ঘরটিই বলতে গেলে প্রায় দুটি রুমের সমান। তাই রিমির এই ঘরটাতে থাকতে তেমন অসুবিধা হয়না। সার্ভেন্ট এসেই খাবার তার রুমে দিয়ে যায়। এই দুইদিনে অয়ন ও রিমিকে একটিবারের জন্যে ও দেখিনি। অয়নের কাছে রিমি শুধুই একজন অপরিচিতা ছাড়া আর কিছুই না।
ইতিমধ্যে রুহানা চৌধুরী তাদের ডিভোর্সের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। যদিও বিয়ের ছয় মাসের আগে
ডিভোর্স হয়না কিন্তু রুহানা তার ক্ষমতার জোড়ে তিন মাসেই রিমি এবং অয়নের ডিভোর্স করিয়ে দিবেন।
কিছুক্ষন এর মাঝেই অনুষ্টানের সমাপ্তি ঘটলো। গেষ্টরা আস্তে আস্তে চলে গেলো। গেষ্টরা চলে যেতেই,
অয়ন পায়েলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। হঠাৎ এমনটা হওয়ায় পায়েল নীচে পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। অয়ন নিজের পোষাক ঝাড়তে ঝাড়তে পায়েলের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

‘ এতোক্ষন ধরে শুধুমাত্র গ্রেন্ডমার কথায় তোমার মতো নোংরা মেয়েকে আমি সহ্য করেছি এন্ড বিয়েও করতে যাচ্ছি। বাট তুমি ভেবে না বিয়ে করলেই এই অয়ন চৌধুরীর কাছে তুমি ঘেষতে পারবে। আজকে শুধু সহ্য করলাম বাট নেক্সট টাইম যেন আমাকে টাচ করার সাহস না হয়। নাহলে খুব খারাপ হবে তোমার সাথে। ‘

কথাটি বলেই হনহন করে উপরে চলে গেলো অয়ন।
পায়েল অসহায়ের দৃষ্টিতে অয়নের পানে চেয়ে রইলো। অয়নের ছোট কাকি রুজা চৌধুরী পায়েলকে দেখে মুখ বেকায়। রুহানা চৌধুরী পায়েলকে শান্ত হতে বলে উপরের দিকে চলে যায়। তিনি জানেন এখন তার নাতী ঠিক কি করতে পারে। অয়নের ঘরে এসেই তিনি থেমে যায়। অয়ন তার সুবিশাল ঘরটিকে তছনছ করে দিচ্ছে মুহুর্তেই। রুহানা চৌধুরী তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলেন। এইটাই স্বাভাবিক। অয়ন একবার রেগে গেলে তাকে রুহানা চৌধুরী ছাড়া কেউ সামলাতে পারেনা। সেদিন রুহানা চৌধুরীর কথায় বিয়ে করলেও, অফিসে গিয়ে জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলেছে। দুজন গার্ডকে অয়নকে ধরতে নিলেরাগের মাথায় দুজন গার্ডের পায়ে গুলিও করে দিয়েছে। এতোটাই ভয়ংকর রাগ তার। যদিও অয়নের ভয়ংকর রাগের সাথে এখন অব্দিও পরিচত নয় রিমি।

রুহানা চৌধুরী এগিয়ে অয়নকে শান্ত করার প্রচেষ্টা করিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলেন। অয়ন রাগে ফুশফশ করছে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ক্ষিপ্ত সুরে বলে,

‘ আই সওয়ার গ্রেন্ডমা ওই নোংরা মেয়ে যদি আবারো আমাকে টাচ করে আমি জাস্ট ওকে মেরে ফেলবো। আর সবাই কি বলা বলি করছে? ওই মেয়ে নাকি আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড। লাইক সিরিয়াসলি?
তুমিও জানো আমিও জানি ওই মেয়েটার সাথে আমার কখনো কোন রিলেশন ছিলো না। ও নিজেই মিডিয়াতে এইসব আজগুবি কথা ছড়িয়েছে।’

‘ শান্ত হও অয়ন। এতোটা রেগে গেলে কি হয় বলো?
আমি সবটাই জানি। পায়েলের সাথে তোমার তেমন কিছুই নি। পায়েলই বরাবর তোমাকে পছন্দ করতো।
ছোটবেলা থেকে একসাথে পড়াশোনা করেছো।
এই মুহুর্তে আমাদের কম্পানির পায়েলকে কতটা জরুরী তা তো বুঝতেই পারছ। আমাদের কম্পানি এখন উন্নতির শীর্ষে। তার কিছুটা অবদান পায়েলেরও। কেননা পায়েল শুধুমাত্র আমাদের ফ্যাশন হাউজের পক্ষ থেকে মডেলিং করে। বড় বড় কম্পানি তাকে বড় এমাউন্ড দিয়েও হাইয়ার করতে পারছে না। এখন যদি পায়েল আমাদের হয়ে কাজ করেনা তাহলে আমাদের কম্পানির বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। পায়েল তো তোমাকে ভালোবাসে তাই সেই শর্ত জুড়ে দিয়েছে তুমি তাকে বিয়ে না করলে সে কিছুতেই আমাদের কম্পানির হয়ে কাজ করবে না। তাই না চাইলেও বিয়েটা তোমাকে করতে হবে অয়ন।
আমার অনেক পরিশ্রমের কম্পানি। ‘

শেষের কথাটি কিছুটা কঠোর গলায় বললেন রুহানা চৌধুরী। অয়নের রাগ কমে নি। বরং সময়ের সাথে সাথে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুনভাবে।

রুহানা চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে অয়নের হাতে একটি ওষুধ দিলেন। অয়ন পানি দিয়ে ওষুধ টি খেয়ে নিলো। আস্তে আস্তে কিছুটা শান্ত হলো সে। শান্ত হয়ে বলে উঠলো,

‘ তুমি আমার সব গ্রেন্ডমা। আমি কখনো কাউকে পরোয়া করিনি আর করবোও না। তোমার জন্যে আমি সবকিছুই করতে পারি। বিয়েটা কবে আমাকে বলে দিও। আমাকে আর এইসব ব্যাপারে জড়িও না।’

‘ তোমার এবং ওই মেয়েটার ডিভোর্স এর আগে বিয়েটা দিতে পারবো না। তাই তিন মাস পরেই ধুমধামের সাথে বিয়েটা হবে। ‘

‘ মেয়েটাকে ওর টাকা বুঝিয়ে দিও। নিশ্চই মেয়েটা ডিভোর্স এর বদলে অনেক টাকা চেয়েছে। আচ্ছা কি নাম যেন মেয়েটার। ‘

রুহানা চৌধুরী কিছু বলার আগেই তার ছোট ছেলে মাঝখানে ফোড়ন কেটে বলে,

‘ রিমি মেয়েটার নাম। ‘

‘রিমি ‘ নামটা শুনে বুকটা অদ্ভুদ ভাবে কেঁপে উঠলো। বিয়ের সময় ও এই নামটি শুনেছিলো। যদিও ততোটা গুরুত্ব দেইনি তখন। বর্তমানেও মেয়েটির ব্যাপারে কোনপ্রকার কৌতহূল নেই অয়ন। সে দ্রুত
পায়ে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে। বাড়ির কেউ চাইলেও তাকে আটকাতে পারেনা। বাপ-মা মরা ছেলে সে। ছোটবেলায় কোন এক কারণে তার বাবা-মা মারা গিয়েছে। তখন থেকেই একরোখা এবং জেদীতে পরিনত হয়েছে সে। তাকে শুধু রুহানা চৌধুরী সামলাতে পারেন।

______
রিমি নিজের রুমের সেল্ফ থেকে বই বের করে পড়তে থাকে। এই বাড়িতে সে অন্য একটি উদ্দেশ্যে আসলেও, সে ঢাকাতে পড়তেও এসেছে। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ডাক্তারি নিয়ে পড়বে। সে অনুযায়ী সে যথেষ্ট ভালো ফলাফলও করেছে এবং ঢাকার স্বানামধন্য একটি হসপিটালে সে চান্স পেয়েছে। পরশুদিন তার প্রথম ক্লাস। রুহানা চৌধুরীকে এই বাড়িতে থাকার সাথে সাথে সে যেন লেখাপড়ার সুযোগটিও পায় সেই শর্তটিও জুড়ে দিয়েছিলো। নিঃসন্দেহে সেদিন রুহানা চৌধুরী শর্তটি মেনে নেয়।
রিমি বই পড়ছিলো তখনি গাড়ির শব্দে তার চোখ জানালা যায়। অয়ন ব্লেজারটি হাতে নিয়ে গাড়িতে উঠে এক টানে গাড়ি নিয়ে বাড়ির গেট দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। রিমি সেদিন খেয়াল করেনা। বইয়ে মনোযোগ
দেয়।

_________

সকাল সকাল অয়ন বাগানে বক্সিং গ্লাভস পড়ে একের পর এক পাঞ্চ মেরে যাচ্ছে।পড়নে তার গাঁয়ে সাদাস্লিভ কটন শার্ট। যা তার পেশিবহুল গাঁয়ের সাথে লেগে রয়েছে। ফর্সা চেহারাটি কিছুটা ঘামার্ত
কিন্তু তেজ প্রখোর। যেকোন রমনী এমন অবস্হায় দেখে নিশ্চিত নিজের মন দিয়ে বসবে অয়ন নামক যুবকের কাছে। অয়নদের বাগানটি বেশ সুবিশাল।
এই বাগানের পর পর তিন চারটা বড় বড় হোটেল করা যাবে। বাগানের চারপাশে গার্ডসরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

রিমি সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। গাঁয়ে ওড়না পেঁচিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। মুখে এখনো ঘুমের রেশ খাটেনি। বারান্দায় এসে তার মন উৎফল্ল হয়ে যায়। গাছের নির্মল বাতাস তার হৃদয়টাকে নাড়িয়ে তুলছে। সে আখিঁজোড়া বন্ধ করে নেয়।

অপরদিকে অয়ন তার প্রেক্টিস করে খানিকক্ষণ বিরতি নিয়ে একজন সার্ভেন্ট এর থেকে ফলের জুস নিয়ে তা পান করতে করতে এগোতে থাকে। হঠাৎ তার চোখ আকটে যায় সামনে বারান্দায় থাকা রমনীর দিকে। রমনী তার আখিজোড়া বন্ধ করে রেখেছে। চোখ বন্ধ রেখেও, ঠোটের কোণে মিষ্টি হাঁসি ঝুলে রয়েছে। দেখেই মনে হচ্ছে সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেছে। চুলগুলো এলোমেলো মুখে কি সুন্দর হাঁসি।
অয়ন শুকনো ঢুগ গিললো। বুকটা কেমন চিনচিন করছে। সে অপলক রমনীর দিকে তাকিয়ে থাকে,কিন্তু তাতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে রমনী নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। অয়ন যেন একপ্রকার ঘোরে চলে গিয়েছিলো। সে ঘোর থেকে ফিরে আসে। প্রচন্ড বিরক্ত হয় সে। মেয়েটার এতো সাহস হলো কী করে
অয়ন চৌধুরীর কাজে ব্যাঘাত ঘটায়,কিন্তু মেয়েটি কে? তাকে তো আগে দেখেনি সে। মনে একঝাঁক প্রশ্ন যুবকের।সে হাত নাড়িয়ে সার্ভেন্টকে ডেকে প্রশ্ন করে,

‘ মেয়েটি কে? ‘

‘ কোন মেয়েটি স্যার? ‘

‘যে মেয়েটি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো।’

‘ ওর নাম তো রিমি। দুইদিন আগে রুহানা ম্যাম এর সাথে এই বাসায় এসেছে। ‘

অয়ন স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এই নামটি সে আগেও শুনেছিলো। হ্যা মেয়েটি তো তার স্ত্রী।
হ্যা তার বর্তমানের স্ত্রী। অয়ন আনমনে বলে উঠে,

‘ রিমি রাইট? নামটা বেশ ছোট। ‘

কথাটি বলে থেমে যায় অয়ন। তৎক্ষনাৎ মুখে হাঁসি ফুটে উঠে তার। বিড়বিড় করে আওরাতে থাকে,

‘ রিমিপরী! হুম এইবার ঠিক আছে। আমি তোমাকে এই নামেই ডাকবো শুনছো পরী? ‘

_____________চলবে……কী?

নোট ঃ কালকের পর্বে ছোট্ট একটি মিস্টেক ছিলো যে আমি রিজন বলেছিলাম সেইটা সম্পূর্ন টাইপিং মিস্টেক ছিলো। ‘রিয়ন ‘ জুটি হবে আর গল্পটি কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here