#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব-৩২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়নের শীতল কন্ঠে বলা কথাটি মস্তিষ্কে প্রবেশ করতেই,রিমি থমকে যায়।অয়ন রিমির ললাটে ধরে অধর ছুঁইয়ে দেয়। রিমি খামচে ধরে অয়নের ব্যান্ডিজ করা বলিষ্ট বাহু। রিমির নখের ধারালো খামচিতে ক্ষিন্ন ব্যাথা পেলেও, চোখ বুজে আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় অয়ন। রিমির থুত্নি উঁচু করে, রিমির অশ্রুশিক্ত আখিজোড়ার দিকে তাকিয়ে অয়ন হাসিমুখে বলে,
‘ আমার প্রতি তোমার আকুলতা,তোমার ভিতরের তীব্র ব্যাথা আমাকে বড্ড তৃপ্তি দিচ্ছে রিমিপরী। বড্ড সুখী মনে হচ্ছে নিজেকে। ‘
অয়নের কথায় বেশ বড়ভাবে বিষ্মিত হলো রিমি। আমতা আমতা সুরে বললো,
‘ মানে! কি বলছেন আপনি? ‘
অয়নের মুখের হাঁসি প্রসস্ত হলো বেশ বডভাবে। রিমির কানের কাছে ফিসফিস সুরে বলতে লাগলো,
‘ তোমার ডক্টর এয়ারসিকে গুলি করবে, এমন সাধ্য কারো নেই রিমিপরী। আমি তো শুধু তোমার জীবনে নিজের গুরুত্বটা উপলব্ধি করার জন্যে, নিজেই নিজের হাতের বাহুতে গুলি করে দিয়েছি। ‘
রিমি সঙ্গে সঙ্গে পিছিয়ে গেলো। নেত্রকোনে জ্বলজ্বল করলো। চোখ চলে গেলো অয়নের বলিষ্ট বাহুর ব্যান্ডিজের দিকে। রক্তগুলো শুকিয়ে গিয়েছে। ক্ষতগুলো কিছুটা অস্পষ্ট! রিমি চোখ সরিয়ে নিলো।
গলা ফেঁটে কান্না চলে আসলো তার। লোকটা সত্যি পাগল।যাকে বলে সাইকো! নাহলে কেউ নিজের হাতে কেউ গুলি করে? হুট করেই রিমির মাঝে বেশ অভিমান এসে ভীর করতে লাগলো। রিমি হঠাৎ করেই অয়নের কলার চেপে ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলতে থাকে,
‘ কেন করলেন? কেন নিজের ক্ষতি করলেন আপনি? এতো রক্ত ঝরিয়ে কি লাভ হলো? এতো পাগল কেন আপনি? ‘
‘ সামান্য রক্ত ঝরিয়ে যদি তোমার আখিঁতে নিজের প্রতি ভালোবাসা দেখা যায়,তাহলে আমি প্রতিবার রক্ত ঝরাবো। ‘
অয়নের পাগলামো কথায় ভরকে গেলো রিমি। কপাট রাগ দেখিয়ে বললো,
‘ আপনার শরীর থেকে রক্ত ঝরার ফলে আমার আপনার প্রতি যা কনসার্ন, সবকিছুই একজন মানুষ হিসেবে। আপনার প্রতি আমার কোন আলাদা ভালোবাসা নেই। ‘
রিমির কথা শুনে অয়নের তেমন প্রতিক্রিয়া হলো না। শান্তভাবে হাত ভাজ করে শান্ত দৃষ্টিতে রিমির পানে তাকিয়ে রইলো। অয়নের কাজে রিমি কিছুটা অবাক হলেও চুপ করে থাকে। অয়ন পুনরায় রিমির দিকে এগিয়ে যায়। অতঃপর রিমিকে পাজকোলে তুলে নেয়। রিমিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, অয়ন রিমিকে ড্রাইনিং টেবিলে চুপটি করে বসিয়ে দেয়। অতঃপর হাটু গেড়ে বসে রিমির হাত দুটো শক্ত করে আকড়ে ধরে বললো,
‘ চুপটি করে বসে থাকো তো রিমিপরী। তোমায় পরান ভরে দেখি কিছুক্ষন৷ ‘
‘ সারাক্ষন তো দেখতেই থাকেন, তবে আজ আমাকে দেখার জন্যে এতোটা আকুল কেন হচ্ছেন আপনি?’
রিমির প্রশ্নে আরেকদফা মুচকি হাঁসে। রিমির চুলে হাত দিয়ে, কানে গুজে দিতে দিতে বলে,
‘হাজারো বছর দেখিলেও তোমাকে দেখার প্রখর তৃষ্ণা নিবারণ হবে না রিমিপরী। ‘
রিমি থমকালো। শুকনো ঠোটজোড়া ভিজিয়ে নিলো। মাথা ঝিম ধরে গেলো। বসে থাকতে ইচ্ছে করলো না তার। মন চাইছে ছুটে গিয়ে কোথাও লুকিয়ে বসে থাকতে। তাহলে বোধহয় তার লজ্জাটা কিছুটা হলেও কমতো, কিন্তু তা কি আদোও সম্ভব? রিমি দেখতে পারছে অয়ন কতটা শান্ত হয়ে মুগ্ধতা নিয়ে বসে আছে তার রিমিপরীর দিকে। লোকটার যত পাগলামি সব তো তার প্রিয়সী তার স্ত্রীকে ঘিড়েই। বাচ্চা ছেলে যেমন তার পছন্দের খেলনা পেয়ে গেলে শান্ত হয়ে যায়, তেমনি অয়নও তার রিমিপরীকে পেয়ে একদম শান্ত, একদম নির্বিকার হয়ে রয়েছে।
______________
গাছ থেকে ঝরে পড়ছে পুরাতনি যতো ধূসর পাতা। আর তার জায়গা বদল করছে সবুজ কিশলয়। আচানক কোথাও ডেকে উঠছে কোকিল। রঙে-বেরঙের ফুলে ভরে উঠছে বাগানগুলো। দীর্ঘ শীতের কুয়াশা মোড়ানো প্রান্তর পাড়ি দিয়ে অবশেষে আমাদের দোরগোড়ায় এসেছে ফাল্গুন। এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত! আজ শুধুই কি বসন্ত? উহু আজ ভালোবাসা দিবসও বটে।মানব-মানবীর চিরন্তন ভালোবাসা উড়ছে রঙিন প্রজাপতি হয়ে।
অন্যান্য যুবক যুবতীর মতো আজ সানার জীবনেও ভালোবাসার রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে উঠেছে। আজকে সানা
শাড়ি পড়েছে শুধুমাত্র ফারহানের জন্যে। আজ ভালোবাসা দিবসেও সানা ফারহানকে মনের কথা খুলে ফেলবে। সানা শাড়ি পড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। অফিসে যাওয়ার পথেই সানা দেখতে পায়, ফারহানের গাড়ি একটি হসপিটালের সামনে থেমে রয়েছে। ফারহানের গাড়ি হঠাৎ হসপিটালের সামনে কেন? প্রশ্ন জাগে সানার মনে। সেই প্রশ্নের উদঘাটন করতে, সানা এগিয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় ফারহান একটি কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করছে হাতে তার টকটকে লাল গোলাপ। সানার বেশ খটকা লাগে। ফারহান কার জন্যে গোলাপ নিয়ে গেলো। সানাও এগিয়ে গেলো কেবিনের উদ্দেশ্যে। কেবিনে গিয়েই ফারহানের কান্নার আওয়াজ কানে আসতেই,একপ্রকার থমকে যায় সানা। ফারহান কাঁদতে কাঁদতে তার সামনে থাকা রমনীর হাতজোড়া আকড়ে ধরে বলে,
‘ হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে মাই লাভ। আজকের দিনটা তোমাকে ছাড়া আমি কাটাতেই পারছিলাম না। তাইতো ছুটে এলাম তোমার দারপ্রান্তে। দেখো তোমার প্রিয় গোলাপ ফুলটাও নিয়ে এসেছি। এই সুমু! কথা বলো না? তুমি কি এখনো আমার উপর অভিমান করে থাকবে? ‘
অপাশ থেকে কোনপ্রকার উত্তর এলো না। উত্তর আসবে কি করে? কোমায় থাকা মানুষ কি কখনো কথা বলতে পারে?ফারহান আশাহত হলো।
সানা ধপ করে বসে পড়লো। মুখ চেপে কান্না সংযত করার প্রয়াস করতে লাগলো। সে তো জেনেছিলো সুমাইয়া বেঁচে নেই তাহলে সে কী করে জীবিত রয়েছে?
__________________
রুহানা চৌধুরী বার বার অয়নের নাম্বারে অনবরত ফোন করে যাচ্ছে,কিন্তু বরাবরের মতো তার নাম্বার বন্ধ! রুহানা চৌধুরীর ঠিক সামনেই বসে রয়েছে রুজা চৌধুরী এবং আশরাফ চৌধুরী। আশরাফ চৌধুরী বিরক্ত হয়ে তিক্ত মেজাজে রেগে বললেন,
‘ মা! জানো তো অয়ন তোমার ফোন ধরবে না। তাহলে কেন এতো ফোন দিচ্ছো। ‘
রুহানা চৌধুরী পায়ের উপর পা তুলে বলে,
‘ অয়নের সাথে খুব জরুরী কথা আছে আমার। ‘
‘ কি এমন জরুরী কথা? ‘
রুজার প্রশ্নে রুহানা খুব সাধারন ভাবেই বললেন,
‘ আমার আদরের নাতী আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই আমার এখন অয়নের সাথে পুনরায় সম্পর্কটা ঠিক করতে হবে। ‘
‘ কিন্তু কি করে তা সম্ভব? ‘
রুজা এবং আশরাফ একসাথে প্রশ্ন ছুড়ে মারে রুহানা চৌধিরীর উদ্দেশ্যে। রুহানা চৌধুরী সামান্য হাসে মাত্র।
______
অয়নের পুরো ফার্ম হাউজে শুনশান নিরবতা। আজ অয়ন ঠিক করেছে রিমি এবং সে আজকে ফার্ম হাউজেই কাটিয়ে রাতটি কাটিয়ে দিবে। ফার্ম হাউজে
চারদিকে শুধু দেহরক্ষীদের ছড়াছড়ি। তারা বন্দুক হাতে পাহারা দিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। রিমির কাছে দমবন্ধ লাগছে ব্যাপারটা। আজকে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে যেখানে সকল প্রেমিক প্রেমিকা ভালোবাসায় রঙ্গিন হয়ে উঠছে সেখানে রিমি বন্দী জীবন পার করছে। রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হয়তো তার ভাগ্যে সাধারণ মানুষের মতো জীবম-যাপন লেখা নেই। রিমির ভাবনার মাঝেই, অয়ন পিছন দিয়ে রিমিকে জড়িয়ে ধরে। রিমি কেঁপে উঠে। অয়ন রিমিকে জড়িয়ে ধরেই বলে,
‘ রিমিপরী তোমার নিরবতা আমাকে বড্ড কষ্ট দেয়। কি হয়েছে খুলে বলো আমাকে? ‘
‘ আজকে তো ভ্যালেন্টাইন ডে। একটা গিফট চাইবো দিবেন আমাকে? ‘
রিমির প্রশ্নে অয়ন কিছুটা অবাক হলেও, পরক্ষনে খুশি হয়ে বলে,
‘ কি চাই বলো রিমিপরী? তুমি যা চাইবে তাই দিবো। একবার শুধু চেয়ে দেখো। সবকিছু দিবো। এখনি বলো ড্রেস চাই? গয়না চাই? কি চাই একবার বলো?’
রিমি অয়নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গলায় গম্ভীরতা নিয়ে এসে বলে,
‘ এইসব গয়না দামি গিফটের প্রতি আমার কোনদিনই আকর্ষন ছিলো না। আপনি জানেন ডক্টর এয়ারসি। ‘
‘ তাহলে কি চাই বলো?’
‘ মুক্তি চাই আমার……..’
চলবে….কী?
[ আপ্নারা সবাই ভ্যালেন্টাইন ডে স্পেশাল পার্ট চেয়েছিলেন তাই দিলাম। যদিও আমি সাজতে পারেনি। আমি আত্বীয়ের বাসায় আছি🙂। বাসায় নেই। এখন ঘুড়তে এলে মন শুধু উড়ে। এই অবস্হায় গল্প লিখতে মন চায় না। তবুও আপনাদের জন্যে দিলাম। কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু।]