#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ১৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
বিয়ের কয়েকদিন আগে নিজের হবু বরের সাথে তার বর্তমান স্ত্রীর ঘনিষ্টতা নিজের চোখে দেখে মাথা ঘুড়ে যাওয়ার উপক্রম পায়েলের। পায়েল স্পষ্ট দেখতে পারছে অয়ন এবং রিমি একে অপরের কতটা কাছে।
তাও আবার একা একটি বন্ধ কেবিনে।পায়েল এসেছিলো ভালো ভালো কথা বলিয়ে অয়নের সাথে নিজের ঝামালাটা মিটিয়ে নিবে, কিন্তু সে এখানে এসে যে এমন দৃশ্য দেখবে তা কখনোই বুঝতে পারেনি সে। পায়েল কিছুক্ষন ঠায় দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে রাগে ফুশতে ফুশতে বেড়িয়ে যায়। অয়ন এখনো রিমির কাছাকাছি রয়েছে। দুজনের নিঃশ্বাসের গতি সমানতালে বেড়ে চলেছে। বেড়ে চলেছে দুজনের হৃদয়ের স্পন্দন। অয়নের রিমির ভীত মুখশ্রীর দিকে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা বড্ড কঠিনতম কাজ লাগলো। নিজের জিহবা দিয়ে হাল্কা গোলাপি অধরজোড়া ভিজিয়ে নিলো। অতঃপর রিমির ঠোটের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলো নিজের অধরজোড়া। রিমি শুকনো ঢুগ গিললো। সে বুঝতে পারছে সে যদি এখন অয়নকে না আটকায় তাহলে বড় কোন অঘটন ঘটে যাবে। অয়নের ঠোট ছুই ছুই প্রায় রিমির ঠোটে তখনি রিমি নিজের হাতদিয়ে অয়নের ঠোট চেপে ধরে কম্পিত গলায় বলে উঠলো,
‘ আমার মনে হচ্ছে এখন আমাদের যাওয়া উচিৎ!
আজকে তো আমাদের কয়েকটা কেবিনেও যেতে হবে পেশেন্ট দেখতে। ‘
রিমির কথায় অয়নের প্রচন্ড রাগ হলো। রাগে নাক কেমন ফুলে গেলো। ফর্সা মুখটা লাল টকটকে হয়ে গেলো মুহুর্তেই রাগে। অয়ন রিমিকে নিজের সাথে মিশিয়ে দাঁতে দাঁতে চেপে বললো,
‘ সবসময় কাছে আসতে চাইলে এতো বাহানা করো কেন? হাজবেন্ড হই তোমার! ‘
এইবার রিমিরও বেশ রাগ উঠে। লোকটা তার উপর অধিকারবোধ দেখাচ্ছে? যাকে কয়েকদিন পরে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে তার উপর কিসের অধিকারবোধ অয়নের? রিমিও সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দিয়ে বলে,
‘ কিন্তু নামের হাজবেন্ড হন আপনি মিঃ এয়ারসি।
ভুলে যাবেন না আমার প্রতি আপনার কোন অধিকার নেই। একদম আমার প্রতি নিজের অধিকারবোধ কাটাতে যাবেন না। ‘
অয়নের দিকে আঙ্গুল তাক করে রিমি কথাগুলো বলে। অয়ন রাগে ফুশ করে উঠে। কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো ঠেলে পিছনে নিয়ে নেয়। ফর্সা মুখটা রাগে টগবগ করতে থাকে। অয়ন নিজের ফোনটা এক আচার মেরে দেয়। কেবিনের জিনিসপত্র ছুড়তে থাকে। রিমি বিস্মিত নয়নে অয়নের কার্যকলাপ দেখতে থাকে। অয়ন দেয়ালে পাঞ্চ মেরে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। অতঃপর হাতড়ে একটা ওষুধ নিয়ে চটজলদি খেয়ে রিমির দিকে তেড়ে আসে। রিমি পিছাতে চাইলে,অয়ন হেচকা মেরে রিমির কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলে,
‘ অধিকার কেউ কাউকে দেয় না রিমিপরী। অধিকার অনেকসময় আদায় করে নিতে হয় ভালোবেসে নাহলে জোড় করে। ‘
কথাটি বলেই অয়ন রিমির হাত ধরে চুমু খায়। রিমি স্হীর নয়নে চেয়ে থাকে অয়নের পানে। অয়ন নীচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
‘ আমাকে রাগিও না রিমিপরী। তুমি জানো রাগের মাথায় আমার হিতাহিতজ্ঞান থাকেনা। আমি চাইনা তোমাকে কোনপ্রকার আঘাত করতে। তাই প্লিয আমাকে রাগিও না। ‘
রিমি চোখ তুলে অয়নের দিকে তাকায়। অয়নের দৃষ্টি এখনো নীচে। অয়ন নীচের দিকে তাকিয়েই বললো,
‘ আমাদের সময় হয়ে যাচ্ছে রিমিপরী। নাও ইটস টাইম ফর চেকিং পেশেন্টস! লেটস গো। ‘
কথাটি বলেই অয়ন রিমিকে একপ্রকার টেনে নিয়ে
বাইরে চলে যায়।
__________
ফারহান গাড়িতে বসে মাথা নিচু করে বসে আছে। রিমিকে দেখার পরেই তার কেন যেন খুব অস্হির লাগছে। মনে হচ্ছে রিমি যা দেখাচ্ছে সে তা একদমই নয়। তার পরিচয় অন্যকিছু। যা সে প্রতিনিয়ত লুকিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তার এমন তার পরিচয়? রিমির চেহারাটা দেখলেই ফারহানের মস্তিষ্কে এসে হানা দেয় ‘ জান্নাত ‘ নামটি। সঙ্গে সঙ্গে ফারহানের আখিজোড়ার কোনায় জমাট বাধে অশ্রু। ফারহান তা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছার চেস্টা করে। পকেট থেকে ওলেট থেকে একটা ছবি বের করে। ছবিতে ভেসে উঠে তার প্রিয়তমার প্রতিচ্ছবি। ফারহান তা দেখে একপ্রকার হু হু কেঁদে উঠে।
‘ স্যার? ‘
মেয়েলি কন্ঠে নিজেকে সামলে নেয় ফারহান। ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতে পায় তার গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীকে। তার সহকারী। বলতে গেলে অফিসে ফারহানের এসিস্ট্যান্ট হয় সে। ফারহান হাত নাড়িয়ে
রমনীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ মিস সানা আসুন। আমাদের দেরী হচ্ছে। ‘
ফারহানের ডাকে সানার হুস আসে। সে চটজলদি
ফারহানের গাড়িতে উঠে বসে। আজকে তাদের অফিসের জরুরী মিটিং আছে। সানা একপলক ফারহানকে দেখে নিলো। সাদা ব্লেজার পরিহিত বলিষ্ট দেহীর শ্যমবর্নের যুবক ফারহানকে আজ অন্যদিনের তুলনায় অন্যরকম সুন্দর লাগছে। সানা যে তাকে গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষন করছে তা কী আদোও লক্ষ্য করছে ফারহান?ফারহান তো নিজের আপনমনে ল্যাপটপে চেয়ে রয়েছে। সানা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে জানালার দিকে মনোযোগ দেয়।
(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
_____________
অয়নের সাথে রিমি আজ রুগী দেখতে বের হয়েছে। অয়ন সত্যি যথেষ্ট ভালো একজন ডক্টর। মাথায় সমস্যা থাকলেও কাজের সময় সে একেবারে ঠিক-ঠাক। রুগীদের সাথ বেশ আপনমনে কথা বলে চলেছে সে এবং খুবই নিষ্টার সাথে তাদের সমস্যাগুলো বুঝার চেস্টা করছে। অয়নের সমস্ত কিছু রিমি লক্ষ্য করছে এবং সঙ্গে সঙ্গে তা খাতায় টুকেও নিচ্ছে। অয়ন এবং রিমি একজন বৃদ্ধা মহিলার চেকাপ করছে একসাথে। বৃদ্ধা মহিলা রিমি এবং অয়নকে একসাথে দেখেই মুখের হাসি চওরা করে বলে,
‘ তোমাদের তো বেশ ভালোই মানিয়েছে। তোমরা কী স্বামী -স্ত্রী লাগো নাকি গো? ‘
বৃদ্ধার কথা শুনে অয়ন বৃদ্ধার গাল টেনে আদুরে কন্ঠে বলে,
‘ তোমার তো বেশ ভালোই বুদ্ধি আছে। ইটস গুড ভেইরি গুড। তুমি ঠিকই ধরেছো আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ। ‘
মহিলা আরেকদফা হেসে রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ তা বিয়ে তো হলেই। দুটিকে মানিয়েছে খুব। তা নাত্নি
বাচ্চা কাচ্চা কবে নিচ্ছো? ‘
এই বয়স্ক মহিলাদের এই একটা জাতীয় সমস্যা। সদ্য বিবাহিত কোন নর-নারীকে দেখলেই এদের রেডিও যেখানে সেখানে শুরু হয়ে যায়। বাচ্চার কথা শুনে অয়ন ঘাড় ঘুড়িয়ে রিমির দিকে বাঁকা হাসি দেয়। সেই বাকা হাসির মানে বুঝতে খুব একটা বেশি বেগ হতো হলো না রিমির। অসস্হি এবং লজ্জা দুটোই আকড়ে ধরলো তাকে। রিমিকে লজ্জা পেতে দেখে আরেকদফা মুগ্ধ হলো অয়ন। নারীকে লজ্জা লাগলে এতো সুন্দর দেখায় কেন? সত্যি নারী অন্যান্যা।
উহু অয়নের রিমিপরী অয়নের চোখে অন্যান্যা এক রুপবতী।
__________
রিমি হসপিটালের করিডোরে হাটছিলো আনমনে। অয়ন রিমির পিছনে আসছিলো। অয়নের খুব ইচ্ছে হলো রিমির হাতখানা ধরে একটু হাটতে। অয়নের ভাবনার মাঝেই জয়িতা এসে রিমির হাত ধরে বলতে লাগলো,
‘ কিরে রিমু? ছোটবেলার বিএফকে রেখে কই যাচ্ছিস তুই?আমারে তো এখন তুই পাত্তা ও দেস না।
জামাই পাইয়া ভুলে গেছোস। আয় দুজনে আজকে একসাথে ফুচকা খাই। ‘
জয়িতা রিমির হাত ধরে রাখায় অয়নের রাগে ফুশ করে উঠে। তার রিমিপরীর হাত অন্য কেউ কেন ধরবে? এই হাতখানা তো সে ধরতে চেয়েছিলো। জয়িতা যতই মেয়ে হোক অয়নের অনুমতি ব্যতিত তার রিমিপরীকে কেন স্পর্শ করলো জয়িতা? আর কিসের বিএফ এর কথা বলছে? কে রিমির বিএফ?
তাকে পেলে মাটিতে পুতে দিবে অয়ন! কথাটি ভেবেই অয়ন রাগে ফুশতে ফুশতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
_________
অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশাল কক্ষে এক যুবক গভীর চিন্তায় চিন্তিত। তখনি একজন লোক তার রুমে ঢুকে বলে,
‘ স্যার আপনার কথামতো বাংলাদেশের ভিসা কম্পলিট। আপনার ফ্লাইটের টিকেটও রেডি। ‘
আমান নামক যুবক লোকটার দিকে মুচকি হাসে।
চলবে….কী?
[কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। যেহুতু এটি একটা সাইকো স্টোরি তাই অয়ন মাত্রাধিক পাগলামি করবে এইটাই স্বাভাবিক]