তুমিময়_নেশায়_আসক্ত #পর্ব- ৮

0
702

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘ আমাদের প্রফেসর এয়ারসি তোর নিজের বর? এতোদিন এই কথাটি কেন লুকিয়েছিলে তুই?’

জয়িতার প্রশ্নে রিমি চুপ হয়ে যায়। অয়নের কেবিনে অয়নের এমন উদ্ভুট পাগলামি দেখে সেখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা রিমি। দ্রুত পায়ে অয়নের কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায় সে। অয়ন কেন যেন রিমিকে আটকায়নি। শুধু চেয়ারে বসে রাগে ফুশফুশ করেছে। রিমি কেবিন থেকে বেড়োতেই রিমির দিকে জয়িতা প্রশ্ন ছুড়ে মারে। রিমি কিছুক্ষন চুপ থেকে জয়িতার হাত ধরে হসপিটালের বাইরের কেন্টিনে নিয়ে আসে। সেখানে দুইজন গিয়ে বসে পড়ে। জয়িতার মনে অনেক প্রশ্ন অনেক কৌতহল তা জয়িতাকে দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। রিমি সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে শুরু থেকে সব খুলে বলে জয়িতাকে। সব শুনে জয়িতা মুখ হাত দিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকে।অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে রিমির পাশে বসে রিমির হাতখানা শক্ত করে ধরে বলে,

‘ এতোকিছু হয়ে গেলো অথচ আমি কিছুই জানিনা?
তুই আমাকে বেস্টফ্রেন্ড বলিস অথচ কিচ্ছুটি বললি না? ‘

‘ সবকিছু এতেটা দ্রুত হয়ে গেলো যে তোকে আমি সবটা গুছিয়ে উঠে বলতেই পারেনি। আমি সত্যি অনেকটা শকড হয়ে পড়েছিলাম। ভাগ্য যে আমাকে এখানে দাঁড় করাবে আমি কখনো ভাবেনি। ‘

জয়িতা রিমির কথা শুনে কিছুটা উৎফুল্ল হয়ে রিমির গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ কিন্তু একটা জিনিস ভালো কি হয়েছে জানিস?
দ্যা গ্রেট হার্ট সার্জন ডক্টর এয়ারসি আমার জিজু হয়। ইসস জিজু যখন তোর পরিচয় সবার সামনে দিলো তখন শকড হলেও আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম রে। মেয়েগুলো অবস্হা দেখলে তোর হাঁসি পেতো রে। ‘

জয়িতা হয়তো উৎসাহিত হয়ে আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু তাতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে মুখে সম্পূর্ন গম্ভীরতা এটেঁ রিমি বলে,

‘ তোকে তো আমি আগেও বলেছি আমাদের বিয়েটা সাময়িক। আমার সম্মান রক্ষার্থে রুহানা চৌধূরী অয়ন চৌধুরীর সাথে আমার বিয়েটা করিয়েছিলেন।
কয়েকদিন বাদে আমাদের ডিভোর্স তারপরই বিখ্যাত মডেল পায়েলের সাথে ডক্টর এয়ারসি ওরফে অয়ন চৌধুরীর বিয়ে। ‘

জয়িতা আর কিছু বলতে পারলো না রিমিকে। আপনমনে বিড়বিড় করতে করতে বলতে লাগলো,

‘ জিজু যদি অন্য কাউকে বিয়ে করবে কয়েকদিন পরে তাহলে জিজু তোর প্রতি এতোটা পসিসিভ হচ্ছে কেন? তোকে কেউ টাচ করলে জিজু কেন সহ্য করতে পারেনা? তোর মনে কি প্রশ্ন জাগে না রিমি? ‘

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

জয়িতার মতো হয়তো রিমির মনের কুঠিয়েও প্রশ্নগুলো জমাট বেধে রয়েছে কিন্তু রিমি চাইলেও তার বহিঃপ্রকাশ করতে পারছে না। অয়ন লোকটা আসলেই চাইছে টা কী।

_____
অয়ন নিজের কেবিনে ইজি চেয়ারে বসে কপালে হাত রেখে কিছু একটা ভেবে চলেছে প্রতিক্ষন। মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠছে তার।
অয়ন চাইলেও রাগটা সংযত করতে পারছে না। তাইতো রিমিকে তখন কেবিন থেকে যেতে দিয়েছিলো। কেননা অয়ন কিছুতেই চায়না তার দ্বারা রিমির কোনপ্রকার ক্ষতি হোক। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে তার কেবিনের পাশে ছোট্ট টেবিলের ড্রয়ার থেকে দ্রুত একটা ওষুধ নিয়ে খেয়ে ফেলে। অতঃপর চেয়ারে ধপ করে চোখ বন্ধ করে বসে পড়ে। অয়ন কিছুটা শান্ত হয় কিন্তু তবুও বার বার শুধু তার মাথায় একটা বিষয়ই ঝটলা পাকাচ্ছে রিমিকে অন্য কেউ স্পর্শ করেছে।সেই অন্য কাউকে নিঃশ্বেষ করে দিবে অয়ন। অয়ন কথাটি ভেবে আনমনেই বাঁকা হাসে। মেঝেতেই পড়ে আছে তার আইফোনটি।যা কিছুক্ষন আগে দেয়ালে ছুড়ে ফেলেছিলো। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে ফোনটি হাতে নিয়ে টেবিলে রেখে দিয়ে
কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়।

_______

অয়নকে অনেক্ষনযাবত ফোন করে যাচ্ছিলো রুহানা চৌধুরী। চতুর্থবার ফোন করাতে ফোনের অপাশ থেকে শুনতে পায় মেয়েলি গলায় কেউ বলছে,

‘ আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ‘

অর্থাৎ অয়নের নাম্বার বন্ধ। রুহানা চৌধুরী কিছুটা চিন্তিত হয় বটে। অয়ন তো কখনো এমনটি করেনা। তিনি ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে ফোন রিসিভ করে ফেলে অয়ন। কিন্তু আজ কি এমন হলো?

‘ কি হলো গ্রেন্ডমা? অয়ন ফোনটা ধরলো? ‘

রুহানা চৌধুরীর থেকে কোনপ্রকার জবাব না পেয়ে আশাহত হলো পায়েল। উঠে দাঁড়ালো সে।

‘ কোথায় যাচ্ছো তুমি? ‘

‘অয়নের হসপিটালে যাচ্ছি। কয়েকদিন বাদে অয়নের সাথে বিয়ে কিন্তু অয়ন এইভাবে আমাকে
ইগ্নোর করে যাচ্ছে। যা আমি মোটেও সহ্য করতে পারছি না গ্রেন্ডমা। সো আমি যাচ্ছি। ‘

কথাটি বলে এই মুহুর্তও দাঁড়ায় না পায়েল। গটগট পায়ে বেডিয়ে যায় রুহানা চৌধুরীর অফিস থেকে।
রুহানা৷ চৌধুরী চাইলেও আটকাতে পারেনা পায়েলকে।

______________

রিমি এবং জয়িতা হসপিটালের করিডোরে বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলো তখনি শুনতে পায় ডক্টর আসিফের অবস্হা নাকি বেশ খারাপ।
হসপিটালে ভর্তি হয়ে রয়েছে। রিমি এবং জয়িতা তাড়াতাড়ি করে আসিফের কেবিনের সামনে উপস্হিত হয়। সেখানে আরো কয়েকজন স্টুডেন্ট উপস্হিত হয়। ভিতরে অজ্ঞান অবস্হায় পড়ে আছে
আসিফ। মুখে অক্সিজেন এর মাস্ক। ডক্টররা চেকাপ করছে তাকে। জয়িতা একজনের কাছে প্রশ্ন করে জানতে পারে আসিফের হাতে যেই চাকুটি নিক্ষেপ করা হয়েছিলে সেই চাকুতে একপ্রকার বিষ ছিলো। যার বিষ ছড়িয়ে পড়েছে আস্তে আস্তে ডক্টরের আসিফের সর্বাঙ্গে। রিমি নিজেরই মাথাটা ঝিম ধরে যাচ্ছে। সে জানতো এমন কিছুই একটা করবে অয়ন। অয়ন তো উম্মাদ পাগল। মানুষকে মেরে ফেলতে তার হাত-পা কাঁপেনা।

_________________

অয়ন নিজের গাড়ির পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। রিমিকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ঠোটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে তার। রিমি সেই হাঁসি দেখে কিছুক্ষন এর স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। লোকটার ফর্সা মুখশ্রীতে বাঁকা হাসি যেন লোকটার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলে দ্বিগুনভাবে। নিজের উটকো ভাবনায় নিজেকেই দোষারপ করতে লাগল রিমি। এগিয়ে গেলো তার সামনে থাকা সাদা এপ্রোন পরিহিত সুদর্শন যুবকের দিকে। উদ্দেশ্য কয়েকটি কড়া কথা শুনানো। রিমি যুবকটির সামনে দাঁড়িয়েই তিক্ততার সুরে বলতে লাগলো,

‘ আপনি কী আদোও মানুষ নাকি সাইকো আপনি কোনটা? সামান্য একটা চিঠি দিয়েছে বলে আপনি লোকটার এমন অবস্হা করবেন? লোকটার তো জীবন -মরণ অবস্হা হয়ে রয়েছে। কি এমন করেছেন উনি? খুন নাকি ডাকাতি? ‘

রিমিকে আরো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, রিমির মুখ চেপে ধরে অয়ন দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে,

‘ তার থেকেও বড় অন্যায় করেছে ওই রাস্কেলটা।
অয়ন চৌধুরীর রিমিপরীর দিকে হাত বাড়িয়েছে। এখনো যে নিঃশ্বাসটুকু নিচ্ছে এইটাই ওর সৌভাগ্য। ‘

রিমি ভালো করে লক্ষ্য করে দেখতে পারলো কথাগুলো বলার সময় অয়নের ললাটের রগ গুলো কেমন ফুলে উঠেছে যা ফর্সা কপালে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আখিজোড়া টকটকে লাল। অয়নের ভয়ংকর মুখশ্রী দেখে অয়নের থেকে রিমি নিজেকে ছাড়িয়ে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে ভয়ার্থ সুরে বলে,

‘ আমি বাড়ি যাবো। ‘

রিমি কথাটি বলে সামনের দিকে পা বাড়ালে নিলে,পিছন থেকে অয়ন খুব শান্ত গলায় বলে,

‘ গাড়িতে উঠে পরো রিমিপরী। ‘

রিমি শুনলো না বরং বড় বড় পা ফেলে সামনের দিকে পা বাড়ালো। অয়ন রিমির কাজে ভিষন রেগে যায়। অয়ন চৌধুরীর কথাতে অবাধ্য হওয়ার গুরুতর অপরাধ করেছে রিমি। তার শাস্তি তো রিমিকে পেতেই হবে। অয়ন বাঁকা হেসে গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

_______________

পায়েল অয়নের কেবিনে সামনে দাঁড়াতেই একজন মেয়ে নার্স এসে বলে,

‘ কাকে চাই ম্যাম? ‘

‘ ডক্টর এয়ারসিকে। আমি পায়েল রুজানা। নিশ্চই চিনেছেন? ডক্টর এয়ারসির হবু স্ত্রী। কোথায় এখন অয়ন? ‘

নার্স পায়েলের কথায় কিছুটা না বেশ অনেকটাই অবাক হয়। অবাকের সুরে বলে উঠে,

‘ কিন্তু ম্যাম উনি তো কিছুক্ষন আগেই উনার ওয়াইফ এর সাথে বেড়িয়ে গেলেন। ‘

পায়েল চিৎকার করে বলে,

‘ ওয়াট? ‘

___________
রিমি অনেক্ষনযাবত রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। বার বার অটো কিংবা রিক্সাকে দাঁড়াতে বলছে কিন্তু তারা বরাবরই রিমিকে উপাক্ষান করে নিজেদের গন্তব্যের দিকে রওনা হচ্ছে। রিমি আশাহত হয়। আজ এমনটা হচ্ছে কেন? কেউই যেতে রাজি হচ্ছে না। সময় যত পেড়িয়ে যাচ্ছে তত রাত গভীর হচ্ছে। রিমির এইবার খানিক্টা ভয় হতে শুরু হলো। সামনের দিকে ধীর পায়ে পা বাড়াতে নিলে,পিছন থেকে কেউ তার হাত টেনে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ এমন আচরণে রিমি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। ঘাড় ঘুড়িয়ে অয়নকে দেখে সস্হির নিঃশ্বাস নেয়। পরক্ষনে আরেকদফা ভয় হতে শুরু করে। কেননা
অয়ন চোখমুখে ভয়ংকর রাগ ধারণ করে রেখেছে। রিমি অয়নের দিকে প্রশ্ন নিক্ষেপ করে বলে,

‘ কেউ আমাকে পৌঁছে দিতে চাইছিলো না কেন?
এইটাও নিশ্চয় আপনার কাজ? ‘

অয়ন রিমির কথার প্রেক্ষিতে হাত ভাজ করে বলে,

‘ এই না হলে ডক্টর এয়ারসির ওয়াইফ। সবকিছু বুঝে যাও তুমি। ডক্টর এয়ারসির ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার
অনেক ধারনা নিতে হবে রিমিপরী। তুমি বড্ড বেশি অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো। যারা ডক্টর এয়ারসির অবাধ্য হয় তাদের কিন্তু কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি পেতে হয়। ‘

রিমি ঘামতে শুরু করে দেয়। এই সাইকো লোকটা আবার তাকে কি কঠিন শাস্তি দিবে?

…………..চলবে কী?

[ কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। পারলে সবাই একটু ঘটনমূলক কমেন্ট করবেন 🙂। আমার জন্যে
একটু দোয়া করবেন। আমি কিছুটা অসুস্হ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here