#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘অয়ন চৌধুরী অর্থাৎ ডক্টর এয়ারসি তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে রেখে অন্য একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে লিপিবদ্ধ হয়েছেন। সে মেয়েটি ডক্টর এয়ারসির সাথে চৌধুরী বাড়িতেই থাকেন। আমাদের তথ্যঅনুসারে জানা গিয়েছে মেয়েটি ডক্টর এয়ারসির হসপিটালেরএকজন স্টুডেন্ট। কিন্তু ডক্টর এয়ারসি এবং মেয়েটি কি আদোও একে-অপরের প্রফেসর এবং স্টুডেন্ট?না তা একদমই নয়। তাদের মধ্যে আরো গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তা আপনারা আমাদের কিছুক্ষন আগের তোলা ছবিতেই স্পষ্ট দেখতে পারবেন। ‘
সাংবাদিক মেয়েটি স্টুডিওতে বসে কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থামলো। অতঃপর টিভির স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে ভেঁসে উঠলো রিমি এবং অয়নের
একে অপরের জড়িয়ে ধরার ছবিখানা। রিমির মনে পড়ে গেলো কিছুক্ষন আগের ঘটনা,কিছুক্ষন আগে অয়ন তাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। সেই ছবিটাই কোন এক সাংবাদিক ছবি তুলেছে। যা এখন খবরে পরিনত হয়ে, ব্রেকিং নিউজ হচ্ছে। সাংবাদিক মেয়েটি অত্যান্ত দাপটতার সাথে নিজের গাঁয়ের কোর্টটা ঠিক করে, কলম দিয়ে কাগজে কিছু একটা লিখে, একের অপর এক কাগজ বের করে বলতে লাগলো,
‘ বিখ্যাত মডেল পায়েল রুজানাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সেদিকে কোন খেয়াল নেই অয়ন চৌধুরীর। তিনি তো তার ছাত্রীকে নিয়ে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত কাটাচ্ছেন। ‘
রিমির পক্ষে এই নিউজটি আর দেখা সম্ভব হলো না। ধপ করে বসে পড়লো সোফায়। মিডিয়ার লোকেরা একটা খবর পাওয়া মাত্রই সেই সম্পর্কে না জেনেই
একপ্রকার যাতা খবর বানিয়ে ফেলেছে। রিমি এবং অয়নের সম্পর্ককে নোংরা এবং কুরুচিপূর্ণ একটি বিষয়ের রুপান্তরিত করে ফেলেছে। খবরের লোকগুলো তো প্রায় এমনই হয়, কিছু না জেনেই নিউজ তৈরি করে ফেলে, অথচ সেই খবরের পিছনের গল্পটা তারা কখনোই জেনে নেওয়ার প্রচেষ্টা করেনা। কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে,চটজলদি নেত্রপল্লবে এসে ভীর করা জলগুলোকে মুছে নেয় রিমি। রিমি তাকিয়ে দেখে রুহানা চৌধুরী তার কাধে হাত রেখে, তার পাশে বসে আছেন। তিনি অত্যান্ত স্নেহের সহিত রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। অতঃপর নরম সুরে বলেন,
‘ আজকে তোমার এবং অয়নের চরিত্র নিয়ে মিডিয়া যত কথা হচ্ছে তার পিছনে আমি দায়ী। হ্যা আমারই দোষ। আমি যদি তোমাকে মেনে নিতাম, তাহলে আজ সকলে জেনে যেতো তোমরা স্বামী এবং স্ত্রী। তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কে এমন নোংরা মন্তব্য করার কেউ সাহস পেতো না তখন। ‘
রিমি মাথা নিচু করে ফেলে। মিডিয়াতে তাকে নিয়ে এমন বাজে মন্তব্য করায় তার যেমন খারাপ লাগছে,তেমনি অস্বস্হিও হচ্ছে দ্বিগুনভাবে। রুহানা চৌধুরী পূর্বের ন্যায় নরম সুরে বললেন,
‘ ভুল যখন আমার। সেই ভুলটাকে আমিই শুধরাবো।’
রিমি রুহানা চৌধুরীর দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁকাতেই, রুহানা চৌধুরী স্মিত হেসে বললেন,
‘ আমি তোমার এবং অয়নের বিয়ে দিবো পুনরায়। একদম ধুমধাম করে। সবাইকে জানিয়ে দিবো, তোমাদের সম্পর্কের কথা। ‘
রিমি কথাটি শুনেই উঠে দাঁড়ায়। তার মাথা ঘুড়ে যাওয়ার উপক্রম। যেই রুহানা চৌধুরী তার এবং অয়নের ডিভোর্স দেওয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিলো। সে আজ রিমি এবং অয়নের বিয়ে নিজ থেকে দিতে চাইছে কিন্তু কেন? এর পিছনে উনার কি স্বার্থ থাকতে পারে? রিমির মনে বার বার প্রশ্নের উৎপত্তি ঘটছে। রুহানা চৌধুরী সেসব প্রশ্নের সমাধানে বললেন,
‘ আমি বুঝেছি আমার নাতী আমার থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। তাই অয়ন যার সাথে সুখে থাকে, আমি তার সাথেই ওর বিয়ে দিবো। আমি জানি নিজের স্বার্থের জন্যে আমি আমার নাতীকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে ফেলেছি। তাই আমি ঠিক করেছি তোমার সাথে অয়নের পুনরায় বিয়ে দিবো। একদম ঘটা করে। কেমন? ‘
কথাটি বলেই রুহানা চৌধুরী রিমির গালে হাত রেখে মুচকি হাঁসে। রিমি বিস্মি নয়নে চেয়ে থাকেন রুহানা চৌধুরীর দিকে। মহিলাটাকে তার বেশ রহস্যময়ী এবং অদ্ভুদ মনে হয়। যাকে তিনি সহ্য করতেই পারেন না, তার সাথে অয়নের পুনরায় বিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। বেশ অদ্ভুদ ব্যাপার!
_________________
অয়ন এবং তার গার্ডসরা মেঘের ফার্ম হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অধরের কোণে তার অদ্ভুদ হাঁসি ঝুলে রয়েছে। ঠোট প্রশ্রস্ত করে হেসে অয়ন পকেটে হাত ঢুকিয়ে, মেঘ যেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখছে সেই জানালার বরাবর তাকিয়ে অয়ন বিড়বিড়িয়ে বলে,
‘ মাই ডিয়ার সিস্টার! অনেক তো হলো লুকোচুরি খেলা। নাউ ইটস টাইম টু ফিনিশড দ্যা গেম। ‘
অয়নের বলার মাঝেই, সাদেক কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। অতঃপর হাপাতে লাগলো। অয়ন পুনরায় বিরক্ত হলো। সাদেক অনেক্ষন ধরেই তাকে অনাবরত ফোন করে যাচ্ছিলো, কিন্ত সে ইচ্ছে করেই ধরেনি। তার একটাই কারণ সে আপাতত কাজের মধ্যে অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক নয়। সাদেক অস্হির হয়ে বললো,
‘ ভাই আপনি আমার ফোন ধরছিলেন না। তাই ছুটে এসেছি। ‘
‘ সাদেক আপাতত তুমি যাও। আমি মোটেও তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই। ‘
অয়নের কথায় বিঘ্ন ঘটিয়ে, সাদেক ফোন বের করে একটি নিউজ অয়নকে দেখায়। নিউজটি দেখেই অয়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বলিষ্ট হাতের মুঠো
শক্ত হয়ে উঠে। অয়নের ইচ্ছে করছে নিউজ চ্যানেলটাকেই শেষ করে দিতে। তার রিমিপরীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করেছে। তার শাস্তি পেতেই হবে ওদের। অয়ন গর্জে উঠা কন্ঠে চেচিয়ে উঠে বলল,
‘ এখুনি এইসব নিউজ বন্ধ করিয়ে দাও। সবগুলোকে শেষ করে দিবো আমি। আমার রিমিপরীর চরিত্র নিয়ে কথা বলার জন্যে ওদের পস্তাতে হবে। জাস্ট ২৪ ঘন্টা সময় দিলাম। এর মাঝে ওই নিউজ চ্যানেলগুলো বন্ধ করিয়ে দিবে সাদেক! গট ইট? ‘
সাদেক দ্রুত মাথা নাড়িয়ে স্হান ত্যাগ করে। সাদেক চলে যাওয়া মাত্রই অয়ন তার পকেট থেকে ভারি চকচকে বন্দুকটা সোজা তাঁক করে জানালার বরাবর গুলি করে। কেঁপে উঠে মেঘ। ছিটকে সূরে সরে আসে দ্রুত জানালা থেকে। আমানও চমকে উঠে। মেঘ আমানের কাছে এসে বলতে থাকে,
‘ ভাইয়া চলে এসেছে। আপনি দ্রুত পালিয়ে যান। আপনাকে পেলে ভাইয়া জীবিত রাখবে না। মেরে ফেলবে। ‘
আমান চোখমুখ শক্ত করে একরোখা জবাব দেয়,
‘ আমি তো কোন দোষ করেনি। আমি কেন পালাবো?
আমি রিমিপাখিকে ভালোবাসি। আমার মনে হয় না আমি কোন অন্যায় করেছি। ‘
‘আমান রিমিকে ভালোবাসে ‘কথাটি কর্নে পৌঁছাতেই
মেঘের বুকের ভিতর ছেদ করে উঠলো। যেন কথাটি পৃথিবীর সবথেকে ভারি কথাটি অয়ন তাকে বলেছে। মেঘ ঠোট কামড়ে কান্না সংযত করে, অনুনয়ের সুরে আমানকে অনুরোধ করলো,
‘ দয়া করে আপনি এখান থেকে চলে যান। আপনাকে অনেক কষ্টে আমি বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। আমার কষ্ট আপনি এইভাবে বিফলে যেতে দিবেন না। দয়া করে পালিয়ে যান। ‘
আমানের কেন যেন মেঘের প্রতি বেশ মায়া হলো। এইটুকু একটা মেয়ে কেন তার জন্যে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে গিয়েছে? এই কথাটি বুঝতে পারছে না আমান। আমান মেঘের অনুরোধ ফেলতে পারেনা।
দ্রুত বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। ফার্মের পিছনের জংগল দিয়ে সহজেই পালিয়ে যেতে পারবে আমান।
____________
আমান চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমান প্রবেশ করে
রুমে। আমানকে না দেখে মাথায় রক্ত চড়ে উঠে অয়নের। রাগে ফুসফুসিয়ে উঠে একপ্রকার। বন্দুক বের করে মেঘের মাথায় ঠেকিয়ে, তীব্র ক্ষোভে চেচিয়ে উঠে,
‘ কোথায় ওই ব্লাডি আমান? এখুনি ওর ঠিকানা বলে দাও মেঘ। নাহলে আমি কিন্তু তোমার ক্ষতি করে দিবো। ‘
‘ কি করবে তুমি? নিজ হাতে নিজের বোনকে গুলি করে খুন করবে? করো! দেখি তুমি কতটা নিষ্টুর হতে পারো। কিন্তু আমি মুখ খুলবো না কিছুতেই। ‘
অয়ন তার হাতে থাকা বন্দুকটা ফেলে দেয়। রাগে দেয়ালে ঘুষি মেরে, একজন গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ এই স্টুপিড মেয়েটা এখুনি বাড়িতে দিয়ে আসো।
ওই ব্লাডি আমানকে তো আমি খুঁজে বের করবোই।’
কথাটি বলেই অয়ন বেড়িয়ে যায়। মেঘের ঠোটের কোণে আলতো হাঁসি ফুঠে উঠে। সে জানে তার ভাই তার থেকে যত দূরেই থাকুক না কেন, তার প্রতি সুপ্ত এক ভালোবাসা অয়নের মনে আছে। যতই হোক ভাই তো।
_________________
রিমি হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে বই হাতে পড়ছিলো। একটা বিষয় তার কিছুতেই মাথা ঢুকছে না। তাই রিমি ঠিক করেছে অয়নের কাছে গিয়ে বুঝে নিবে। রিমির ভাবনার মাঝেই অয়ন প্রবেশ করে হসপিটালে গাড়ি দিয়ে। অয়ন বের হওয়ার সাথে সাথে কোথা থেকে একটি মেয়ে এসে পিছন থেকে অয়নকে জড়িয়ে ধরে।
চলবে….কী?
(আচ্ছা একটা কথা বলবো? আপ্নারা যে তুমিময় নেশায় আসক্ত গল্পটি পড়ছেন আপ্নারা কি আদোও জানেন এই গল্পের লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি? আসলে কিছু পাব্লিক আছে যারা লেখিকার নামই জানিনা। এরা কি আদোও পাঠক? ব্যাপারটা খুবই হতাশাজনক। এতো কষ্ট করে লিখি অথচ আমাকেই কেউ চিনে না🙂।)