#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
নিজের চোখের সামনে নিজের স্বামীকে অন্য কোন মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। দৃশ্যটি অত্যন্ত জঘন্যতম মনে হচ্ছে রিমির কাছে। রিমি হা হয়ে তাকিয়ে আছে অয়ন এবং মেয়েটির দিকে। অয়নও কিছু একটা ভেবে পিছনে ঘুড়ে। অতঃপর খুশি হয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে। রিমির চোখ যেন কটর থেকে বেড়িয়ে যাছে। বড় বড় হয়ে যাবে। অয়নও যে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরবে তা কখনোই ভাবতে পারেনি রিমি। রিমির ইচ্ছে করছে এখুনি গিয়ে মেয়েটার সব চুল ছিড়ে দিতে। কত বড় স্পর্ধা! তারই সামনে তারই স্বামীকে স্পর্শ করে জড়িয়ে ধরছে। এমনকি অয়ন নিজেও মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরেছে। রিমি দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে হাত মুঠো করে। অয়ন কিছুক্ষন মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে,ছাড়িয়ে নেয়। অতঃপর হাঁসিমুখে মেয়েটির হাত ধরে রিমির কাছে আসে। মেয়েটির পরনে কালো একটি ওয়েস্ট্রেন ড্রেস। গলায় সাদা একটা স্কাফ ঝুঁলানো। চোখে মোটা ফ্রেমের সানগ্লাস ফর্সা লম্বাটে মুখে মানিয়েছে। রিমি একপলক রক্তচক্ষু নিয়ে মেয়েটির এবং অয়নের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। অয়ন অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে আছে ভাবতেই শরীর রাগে রিনরিন করে ওঠে রিমির। অয়ন মেয়েটির দিকে মুচকি হেসে, রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ রিমিপরী! মিট মাই অন এন্ড অনলি বেস্ট ফ্রেন্ড ইশা। পরিচয়ে ইশাও একজন হার্ট সার্জন।
এতোদিন আমেরিকাতে ছিলো। আজ বাংলাদেশে এসেছে। এন্ড ইশা ও হচ্ছে…..
অয়নের কথার মাখে ফোড়ন কেটে ইশা চটজলদি রিমির কাছে এসে খুশি হয়ে বলে,
‘ তুমি তাহলে আমার বন্ধুর সেই রিমিপরী। যার জন্যে ডক্টর এয়ারসি ওরফে অয়ন চৌধুরী দেওয়ানা হয়ে গেছে একপ্রকার প্রেমে। ‘
রিমি প্রতিউত্তরে হাস শুধুমাত্র। যদিও তার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে ইশাকে। বেস্টফ্রেন্ড হয়েছে বলে কি হয়েছে? এইভাবে বিবাহিত পুরুষকে জড়িয়ে ধরবে? এমনকি অয়নও জড়িয়ে ধরলো। কত্ত সাহস! রিমিকে তো ছেলে মানুষ দূরে থাক,কোন মেয়ে স্পর্শ করলেই রেগে আগুন হয়ে যায়, সেখানে নিজে আরেকটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরছে। ইশা রিমিকে উদ্দেশ্য করে দু হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,
‘ হেই রিমি লেটস সাম হাগস। কাম ফাস্ট। ‘
ইশা রিমিকে জড়িয়ে ধরতে নিলে, অয়ন তাতে বাঁধা দেয়। ইশার হাত ধরে ইশাকে থামিয়ে দিয়ে, রিমির পাশে দাঁড়ায়। অতঃপর রিমির কাধে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে ভারি গাম্ভীর্য কন্ঠে বলতে থাকে,
‘ ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মাই গার্ল। সি ইজ অনলি মাইন। সো ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ হার। ‘
ইশার মুখটা হা হয়ে গেলো। হাত গুটিয়ে নিলো নিমিষে। অতঃপর এক বিশাল বিস্ময় নিয়ে বললো,
‘ অয়ন! আমি একজন মেয়ে। আমাকে নিয়েও এইভাবে পসিসিভনেস দেখাবি? তুই আসলে কি রে?’
‘ মেয়ে হয়েছিস তো কি হয়েছে? আমার রিমিপরীকে যে কেউ যখন- তখন টাচ করতে পারেনা। আগে আমার পারমিশন নেওয়ার উচিৎ ছিলো তোর। ‘
অয়ন বেশ রাগ নিয়েই কড়া গলায় ইশাকে জবাব দেয়। ইশা অয়নের উত্তরে আগের তুলনায় যে দ্বিগুনভাবে বিম্মিত হয়েছে, তা ইশার চোখ-মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। রিমির ইচ্ছে করছে নিজের কপাল চাপড়াতে লাগলো। পাগল এক লোকের পাল্লায় পড়েছে সে।যাকে বলে সাইকো! রিমি বিড়বিড়িয়ে অত্যান্ত বিরক্ত সহিত বলে,
‘ একে বলে জাতে মাতাল তালে ঠিক। নিজের বেলায় সবকিছু জায়েজ। আমার বেলাতেই নাকি পাপ!’
রিমির বিরক্ত লাগলেও অয়নের কথাট বেশ মনে ধরেছে তার। মাই গার্ল। ‘ কতটা অধিকারবোধ কতটা
ভালোবাসার সমিশ্রন থাকতে এতোটা অধিকার নিয়ে দাপটের সাথে কথাগুলো বলা যায়। ভাবতেই ক্ষীন্ন হাঁসে রিমি।
_____________
ফারহান অফিসের কিছু কাজ আজ আগে থাকতেই শেষ করে ফেলেছে। ঘড়ির কাটা প্রায় সারে সাতটা ছুঁই ছুঁই করছে। ফারহান তার হাতে থাকা ফাইলগুলো একত্রে করে একটা রশি দিয়ে বেঁধে নেয়। অতঃপর ফাইলগুলো হাতে নিয়ে সানার কেবিনের দিকে রওনা দেয়। সানা তার কেবিনে মাথা
নিচু করে বসে ছিলো। সকাল থেকেই বেশ মাথা ব্যাথা করছে তার। খানিক্ষন ঘুমিয়ে নিলে হয়তো তার ভালো লাগতো।কড়া ঘুমের ওষুধ খেয়েও লাভ হয়নি সানার। চোখে একফোটা ঘুমের ছিটাফোটাও নেই। ঘুম এলে সানা তার বাসায় চলে যেতো, কিন্তু তার চোখে ঘুমই ধরা দিচ্ছে না। সমস্ত নিদ্রা যেন আজ সানার সাথে গভীর অভিমান করে একসাথে পালিয়ে গিয়েছে। সানা আরেকটু নিবিড়ভাবে মাথাটা ডেস্কে এলিয়ে দিয়ে ঘুমানোর প্রচেষ্টা করে, কিন্তু তাতে বিঘ্ন ঘটিয়ে ফারহান নক না করেই, সানার কেবিনে প্রবেশ করে। সানাকে অসুস্হ দেখে, সানার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
‘ মিসেস সানা! আপনি কি অসুস্হ? ‘
সানা মাথা তুলে ফারহানকে একপলক দেখে,নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা করে। ফারহানকে দেখলেই তার গলা চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। তার ভাবতেই কষ্ট লাগে যাকে নিয়ে সে এতো স্বপ্ন দেখেছিলো, সে আসলে অন্য কারো। সানা কোনরকম ভেজা গলায় উত্তর দিয়ে বলে,
‘ আমি ঠিকই আছি স্যার। ঠিক না থাকলেও, থাকতে হয়। আমার মতো মানুষের চিন্তা আপনাকে করতে হবে না স্যার। আমি তো আপনার সামান্য পিএ মাত্র। আপনি বলুন না? আপনি ঠিক কোন দরকারে এসেছেন। ‘
সানার কথাটি অদ্ভুদ লাগলেও তা নিয়ে মাথা ঘামায় না ফারহান। হাতে থাকা ফাইলগুলো সানার টেবিলে রেখে, অত্যান্ত শান্ত সুরে বললো,
‘ ফাইলগুলো রেখে গিয়ে গিলাম। আপনি পুনরায় চেক করে নিয়েন। আমিই দিতাম, কিন্তু আপাতত আমাকে যেতে হবে। ‘
‘ আপনি তো নয়টার আগে কখনো বের হন না স্যার। আজ হঠাৎ সাতটা বাজতে বাজতেই চলে যাচ্ছেন যে। ‘
‘ আমার কিছু কাজ ছিলো। ‘
‘ কি কাজ স্যার? সেইটাই জানতে চাইছি। ‘
ফারহানের মুখশ্রী সঙ্গে সঙ্গে গাম্ভীর্যে আকার ধারণ করে শক্ত হয়ে গেলো। ফারহানের চেহারার ধরণ হঠাৎ পাল্টে যাওয়া স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে, তার কাছে সানার প্রশ্নটি অযুক্তিক ছাডা আর কিছুই নয়।
ফারহান সামান্য কেঁশে কিছুটা গম্ভীর সুরে সানাকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে,
‘ আপনি কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে ইন্টারফায়ার করছেন মিস সানা। যা আমার মোটেও পছন্দ নয়। আশা করি নেক্সট টাইম থেকে এইসব প্রশ্ন যেন মোটেও আমাকে করা না হয়। ‘
কথাটি বলে ফারহান বেড়িয়ে যেতে নিলে, সানার কথায় একপ্রকার থমকে যায়।
_________________
রিমি সবেমাত্র তার ক্লাসটা শেষ করে বেড়োতে যাবে, তখনি বলিষ্ট একজোড়া শক্ত শীতল হাত পিছন থেকে রিমির কোমড় জড়িয়ে ধরে। রিমি স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। হৃদয় জুড়ে বয়ে যায় তার অদ্ভুদ ভালোলাগার জোয়ার। রিমি পিছনে না ঘুড়েও দিব্বি
বুঝতে পারছে এই গভীর স্পর্শ অয়নের। অয়ন ছাড়া আর সাধ্যি বা ক্ষমতা আছে তার রিমিপরীকে গভীরভাবে ছুঁইয়ে দেওয়ার। অয়ন রিমির কোমড় জড়িয়েই বলতে থাকে,
‘ তোমাকে গভীরভাবে ভালোবাসতে খুব ইচ্ছে করে রিমিপরী। খুব ইচ্ছে করে। অপেক্ষা বড্ড বাজে জিনিস। ‘
কথাটি বলেই অয়ন রিমিকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে থাকে কেবিনের দিকে। সকল স্টাফরা দেখেও না দেখার ভান করে নিজেদের মতো কাজ করতে থাকে। রিমি হাত-পা ছড়াতে ছড়াতে বলে,
‘ কি করছেন কি? সবাই দেখলে কি ভাববে বলুন তো? ‘
অয়নের একরোখা জবাবা ‘ আই ডোন্ট কেয়ার। ‘
অয়ন রিমিকে নিজের কেবিনে নিয়ে আসে,অতঃপর নিজে চেয়ারে বসে, রিমিকে নিজের কোলপ বসিয়ে নেয়।। রিমি এবং অয়ন দুজনের গাঁয়েই এপ্রোন। রিমি বরাবরের মতো নিজেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্রু সে ব্যর্থ। রিমি কিছুটা লজ্জা নিয়েই বলে,
‘ কেউ আসলে কি ভাব্বেন বলুন তো? আমাকে ছাড়ুন না প্লিয। ‘
‘ আমার হসপিটাল, আমার বউ! আমি যা ইচ্ছে করবো। কার কি? ‘
অয়নের কথার মাঝেই হুট করে ইশা ঢুকে পড়ে। ইশাকে দেখে একদফা লজ্জায় পড়ে যায় রিমি, কিন্তু অয়নের মতো নির্লজ্জ ব্যক্তিকি আদোও তা বুঝবে? সে রিমিকে বিন্দুমাত্র ছাড়েনা বরং শক্ত করে চেপে ধরে। ইশা কিছুটা ঠাট্টার ছলে বলে,
‘ আমি বোধহয় তোদের রোমান্স টাইমে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে চলে আসলাম। ‘
‘ যখন বুঝেছিস তাহলে এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বের হ। ‘
অয়নের কথায় ইশার মুখে এক টুকরো অন্ধকার এসে হানা দিলো, যা অয়ন না দেখলেও রিমি ঠিক খেয়াল করেছে।
চলবে…….কী?
[ রিমির জেলাস কেমন লাগছে পাঠকগন😁? সবাই একটু মজাদার কমেন্ট করুন তো]