অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [সূচনা পর্ব]

0
1008

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ
[সূচনা পর্ব]
তাসনিম তামান্না

-‘ আমি তোর সাথে এখানে রোমাঞ্চ করতে আসি নাই তাই কাঁপাকাঁপি বন্ধ কর। আর এই বিয়েটা বন্ধ কর না হলে তোর লাইফ আমি হেল করে দিবো বাচ্চা মেয়ে হয়ে আমাকে বিয়ে করার খুব শখ না? ‘

জারা তবুও কাপতে লাগলো। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে শানের মুখোপানে শানের কথাগুলো তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। বুকের ধুকপুকি বেড়ে গেছে গলা শুকিয়ে মরুভূমিতে রূপান্তর হয়েছে সেখানে পানির ছিটেফোঁটাও নেই। জারার এতো কাছে কোনো ছেলে কখনো আসেনি। শান কথা বলতে বলতে খেয়াল হলো জারার খুব কাছে চলে গেছে সে। দূরত্ব বাড়ালো। মাথার চুল খামছে ধরে বার কয়েক শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে। জারার দিকে শান্ত চোখে, শান্ত কন্ঠে বলল

-‘ দেখো এখন তুমি স্কুলের গন্ডি পার হতে পারো নি। তোমার সামনে ফুল ফিউচার পড়ে আছে আমাকে বিয়ে করে তোমার আমার দু’জনেরই ক্যারিয়ার নষ্ট। তার চেয়ে বড় কথা আমার আর কয়দিন পর ফ্লাইট। আমি দেশের বাইরে চলে যাবো আমি চাইছি না কোনো পিছুটান রেখে যেতে। …. আই থিংক তুমি বুঝবে এবং আমার মা’কে বোঝাবে ‘

এতোক্ষণ পরে জারা মুখ খুলে মাথা নত করে বলল

-‘ আপনি এসব কি বলছেন ভাইয়া এসবের কিছু আমি জানি না! তার চেয়ে বড় কথা মনি আপনার কথা শুনবে আপনি বুঝিয়ে বলেন মনিকে ‘

-‘ আমার কথায় যদি কাজ হতো তাহলে আমি তোর কাছে আসতাম না বুঝলি? তাই তুই জোর দিয়ে বললি এ বিয়ে টা করবি না আর যদি কোনো কিছুতে কাজ না হয় তাহলে তুই বলবি তুই সু’ই*সা’ই’ড করবি না হয় অন্য কোথাও তোর রিলেশন আছে ‘

জারা ভয়ে শুকনো ঢোক গিলছে বার বার শানকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে রেগে আছে অনেক। এদিকে তুই তুমি মিশ্র ভাবে কথা বলছে জারার কাছে কেমন লাগছে শুনতে। শানের শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো সে কখনোই কাউকে বলতে পারবে না জারা এমনিতেই ভীতু মেয়ে এটা শান জানে তবুও এমন কথা বলল।

-‘ এ এ সব কথা আমি কাউকে বলতে পারবো না আপনি বলেন তাহলে কাজ হবে দেখেন’

শান বিরক্তিতে ‘চ’ উচ্চণর করে বলল

-‘ বাচ্চাদের মতো কথা বললে তো আর হয় না মা কখনো এসব বিশ্বাস করবে না তোমাকে যেটা বলছি সেটা করবে গট ইট?.. ‘

জারা প্রতিবাদ করে দৃঢ় কন্ঠে বলল

-‘ আমি কখনোই এসব বলতে পারবো না মনি কষ্ট পাবে ‘

শান রেগে গিয়ে কাবাডের সাথে মুখ চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘ তোর সাথে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে তুই জানিসও না তোর জীবন আমি কিভাবে নড়ক বানিয়ে দিবো মাথায় রাখিস কথাটা ‘

দরজার ওপাশ থেকে হাসাহাসি আওয়াজ ভেসে আসছে। শানের মাথায় দপ করে রাগ উঠে গেলো পা চালিয়ে দরজা খুলে সবাইকে রাম ধমক দিলো সবাই ধমক খেয়ে কাচুমাচু করতে লাগলো। শান চলে যেতেই শানের কাজিন বোন গুলো সবাই রুমে ডুকে জারাকে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো। জারা এখনো ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারি নাই। শানের বোন ইশা বলল

-‘ কি হবু ভাবি বলে ফেলো তো ভাইয়া রুমে ডুকে ওতো জোরে দরজা লাগিয়ে দিয়ে তোমার সাথে কি করলো? বাসার সবাই সেই আওয়াজ শুনতে পেয়েছে ‘

শানের চাচাতো বোন রিমতি বলল

-‘ ভাইয়া নিশ্চয়ই দরজা বন্ধ করে চু-মু-টু-মু খেয়েছে তাই না? সেজন্যই আমাদেরকে লজ্জায় কিছু বলছ না! আরে ব্যাপার না আমরা আমরাই তো বলো না বলো না কি হলো ‘

মামাতো বোন সাদিয়া চোখমুখ কুঁচকে বলল

-‘ ভাইয়া মটেও ওমন নাই নিশ্চয়ই চ-ড় মারছে দেখছ না মুখটা কেমন প্যাচার মতো করে রাখছে। ‘

একাকজন একাক কথা বলতে লাগলো জারা লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে এলো শানের মা সবাইকে ঘর থেকে বেড় করে দিলেন। জারা ফাপ ছেড়ে বাঁচলো যেনো। জারা প্রশ্নাতকচোখে তাকিয়ে বলল

-‘ এসব কি হচ্ছে মনি? আমাকে তো কিছুই বলো নি তোমরা। আর এসব কেনোই বা করছো? আমি বিয়ে করছে চাই না আমি….! ‘

-‘ কেনো আমার ছেলেকে বুঝি তোর পছন্দ নয়’

জারা চুপ হয়ে গেলো। মনে মনে বলতে লাগলো ‘একথা সবাই বুঝতে পারবে যে আমি শান ভাইয়াকে পছন্দ করি যদি কেউ ভালোভাবে খেয়াল করে এমনকি আমার আম্মুও বুঝতে পেরেছিল তাহলে কি মনিও বুঝতে পারছে বুঝতে না পারাটা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় কেনো না মনি বিচক্ষণ মানুষ সব কিছু বুজে যায় ‘

কথাটা ভেবে অতি সাবধানে লুকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিলো মুখে বলল

-‘ মনি দেখো ভাইয়া এই বিয়েতে রাজি নয় আর কারোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করা ঠিক না। ভাইয়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে ‘

-‘ শোন আমি আমার ছেলেকে চিনি ও এসব করবে না। আর তোরও বুঝতে হবে তোর একটা জায়গা দরকার যেখান থেকে তোকে কেউ উপরে না ফেলতে পারে আমার ইচ্ছে ছিলো তুই বড় হলে শান নিজের পায়ে দাঁড়ালে তোদের বিয়ে দিবো কিন্তু পরিস্থিতিটা এখন ভিন্ন ‘

-‘ মনি তবুও বাদ দাও না আমি নিজে কিছু করতে চাই ‘

-‘ তার জন্য নিজের গোড়াটা শক্ত হওয়া চায়। আর এখন মানুষ বিয়ের পরেও পড়াশোনা করে আমি তো বলি নাই আমি তোকে পড়াশোনা করতে দিবো না পড়াশোনা করবি নিজের মতো চলবি কোনো বাঁধা নাই আর শানও চলে যাবে ‘

-‘ কিন্তু ভাইয়া রাজি না আমি এটা করতে পারবো না মনি তুমি বোঝার চেষ্টা করো ‘

-‘ সেটা আমি বুঝবো তুই বিয়েতে রাজি এটাই ফাইনাল ‘

-‘ মনি প্লিজ তুমি বুঝছ না

-‘ শান তোকে কিছু বলছে তাই না ‘

শানের বলা তখনকার কথাগুলো বলতে গিয়েও বলল না

-‘ না না ভাইয়া কি বলবে ‘

-‘ শোন আমাকে বোকা ভাবিস না আমি সব বুঝি শান এসেছিল আমি জানি তোকে হু/ম/কি দিয়ে গেছে আমি জানি দেখবি একবার বিয়েটা হতে দে তাহলে শান মেনে নিবে সব ‘

জারা আর কিছু বলতে পারল না। শানের মা শান্তি চলে গেলেন রুম থেকে। হয়তো শানের রুমে গেলেন। জারার আজ নিজের কাছে নিজেকে কেমন ছোট মনে হচ্ছে। অন্য দিকে আবার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার আকুল আবেদনটা মনজুর হওয়ায় মনের মধ্যে মিশ্র অনুভূতি গুলো রঙিন অম্বরিতে ডানা মেলে উড়াউড়ির করছে। হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগলো এটা কি ঠিক হচ্ছে? জারা দীর্ঘ শ্বাস ছড়লো। এখন আর নিজের জীবনের ওপর কোনো নিশ্চয়ইতা নেই।

সব সিদ্ধান্ত শেষে খবর এলো আজ সন্ধ্যায় বিয়ে হবে। বাসায় হুলুস্থুল বাধিয়ে দিলো। খবরটা পাওয়া মাত্র জারার মনের মধ্যে কেমন খুঁত খুঁত করতে লাগলো। বিয়েটা করতে মন সাই দিচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হবে তো? শান রাজি হয়েছে তো নাকি মনির চাপে পড়ে রাজি হয়েছে? শানের তখনকার কথাগুলো মনে পড়তেই মনের মধ্যে অজানা ভয়েরা উঁকি দিলো। এমন হাজারো চিন্তা কল্পনা করতে লাগলো। মন বলছে কিছু ঠিক হচ্ছে না সবকিছু ভুল! সবকিছু ছেড়ে কি তাহলে তাকে দূরে কোথাও চলে যাওয়া উচিত?

চলবে কি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here