বসন্তের_ফুল🌺🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট৩৩

0
438

#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৩৩

অনেকক্ষণ ধরে আরিয়ান প্রেমাকে খোঁজে চলেছে। কিন্তু প্রেমার ছায়া ও আরিয়ান দেখতে পাচ্ছেনা।
“মা প্রেমাকে দেখেছো? কোথায় দেখছিনা।
” আদ্রকে জিজ্ঞেস কর।ওর সাথেই ছিলো।
(আরিয়ানের মা)

আরিয়ান তাঁর মায়ের কথা শুনে আদ্রের কাছে যায়।
“আদ্র তোর ভাবিকে দেখেছিস?(আরিয়ান)
আরিয়ানের মুখে ভাবি ডাক শুনে আদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
” ভাবি? (আদ্র)
“আরে মানে প্রেমা,তোর প্রেমা আপু!(আরিয়ান)
” ওহ, জানিনা দেখিনি, (আশেপাশে তাকিয়ে বলে)
আরিয়ান এবার চিন্তায় পড়ে যায়।উপর থেকে নিচে নেমে চারপাশে ভালোকরে খোঁজে,কিন্তু পায় নি। চলে আসার সময় অভ্রকে দেখতে পায় ছেলেদের শফ থেকে বের হচ্ছে।অভ্রকে দেখতেই আরিয়ান অভ্রের কাছে ছুটে যায়।
“অভ্র শুন, তোর ভাবিকে দেখেছিস? (আরিয়ান)
অভ্র আরিয়ানের কথা শুনে একবার হাতে থাকা গড়িটির দিকে একবার তাকায়। এরপর আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে ব্যাস্ত গলায় বলে উঠে,
” শরীর খারাপ করছে বলল ,বাসা যাবে বলে বেরিয়েছে দেখলাম।(অভ্র)
“কি বলছিস? আটকাতে পারলি না,আমাকে বলতি আমি পৌঁছে দিতাম। (আরিয়ান)
” হুহ,খায় দায় আর কাজ নাই আমার।(অভ্র বিড়বিড় করে বলে উঠে)
” কিছু বলেছিস? (আরিয়ান)
“হ্যাঁ, বলছি আমি ড্রাইবার আংকেলকে বলেছি বাসায় পৌঁছে দিতে। (অভ্র)
” উফফ! বাঁচালি,ভালো কাজ করেছিস। আমি তো চিন্তায় মরতে বসছিলাম। (আরিয়ান)
“তোমাদের কতদূর? আর কতক্ষণ লাগবে?(অভ্র)
” আরো অনেক দেড়ি। রাত বারোটা হবে হতে পারে।
“আচ্ছা আমি আসছি আমার কাজ আছে।
কথাটা বলে অভ্র দ্রুত পা চালিয়ে শপিংমল থেকে বের হয়ে যায়। প্রেমাকে বের হওয়ার সময় অভ্র দেখেছিলো। ইচ্ছে করেই আটকায়নি। উপায় না পেয়ে আরিয়ানের সাথে মিথ্যে বলেছে।
আশেপাশে অনেক গাড়ির চলাচল। দৃঢ় পায়ে হাটছে প্রেমা। রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে। সব রাগ অভ্রের উপরেই বিরাজ করছে প্রেমার।সকল রাগের কারনও যেনো অভ্রের। মনেপ্রাণে চাইছে বিয়েটা যেনো ভেঙে যাক। অভ্রই ভাঙুক বিয়ে।কিন্তু অভ্র? কোনো হেলদেল নেই তার। কিন্তু অভ্রের প্রতি দুর্বলতাকে কোনো মতে মানতে পারছেনা প্রেমা।
হেঁটে অনেকটা পথ চলে আসে। এবার ভয় করতে শুরু করে প্রেমার।রাগের মাথায় কাউকে না বলে চলে এসেছে। ফোন দেওয়ার জন্য ব্যাগ খোঁজতে গিয়ে প্রেমার খেয়াল হয় ব্যাগ,ফোন কিছুই আনে নি। এবার বেশ অস্তিত্বতে পড়ে যায়। প্রতিবারই এমন হয়। রাগের মাথায় কোনো কিছুর খেয়াল থাকে না। হঠাৎ প্রেমার চোখ যায় একটা পার্কের দিকে। পার্কটা চেনা চেনা মনে হচ্ছিলো তার।মাথায় একটু চাপ দিতেই মনে পড়ে সেদিন অভ্রের সাথে এই পার্কে ফ্রেন্ডশীফ করেছিলো।কি অদ্ভুদ সেদিন ফ্রেন্ডশীফ করেছিলো।অথচ আজ সে সম্পর্কের কোনো ভিত্তি নেয়।কিন্তু অভ্রের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত ওকে ভালো লাগায় ভড়িয়ে দিয়েছে। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে প্রেমার। না চাইতেও পার্কের ভেতরে প্রবেশ করে। কয়েকজন কাপল বেঞ্চে বসে আছে। কিন্তু সেদিনের বেঞ্চটা ফাঁকা রয়ে গেছে। প্রেমা গিয়ে বেঞ্চটাতে বসে পড়ে। উপরে আকাশের দিকে তাকায়।ঘুটঘুটে অন্ধকার।চাঁদ থাকলে ভালো লাগতো। কৃত্রিম আলোর অভাব নেই কিন্তু এ মুহুর্তে প্রেমার দরকার চাঁদের আলো। যেনো চাঁদের দিকে তাকিয়ে নিজের বিষন্নতা কমাতে পারে। অল্প শ্বাস ফেলে চোখজোড়া বন্ধ করে প্রেমার।
তখনি অভ্র এসে ধপ করে প্রেমার পাশে বসে।তবে দূরত্ব রেখে। পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে চোখ মেলে পাশে তাকায় প্রেমা। তখনি প্রেমার চোখ ছানাবড়া। এবং শ্বাস আটকে আসার উপক্রম। এ মুহুর্তে অভ্রকে একদম আশা করেনি প্রেমা। মুখে কিছু বলার চেষ্টা করলেও গলা পর্যন্ত এসে তা আটকে যায়। উপায় না পেয়ে প্রেমা অন্যদিকে ফিরে তাকায়। রাগ একটু একটু করে উঠছে তার। প্রেমার রাগ দেখে অভ্র ঠোঁট টিপে হাসে।তাই প্রেমাকে রাগানোর জন্য বলে উঠে,

” কনগ্রেচুলেশন।(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা চট করে অভ্রের দিকে তাকায়।এবং রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বলে,
” আমি তোমার ওই পাগল ভাইকে বিয়ে করবনা।
“কী বলো? পরশু বিয়েটা তাহলে কার সাথে হচ্ছে ভাইয়ার? (অবাক হওয়ার ভান করে বলে)
” জানিনা, (ঝাঁঝালো কন্ঠে)
“এটা কিন্তু ঠিক না,সবাই সব ঠিক করে ফেলছে বিয়ের জন্য। তুমি শেষে তোমার মত পাল্টাচ্ছো। (অভ্র)
” তুমি কে?তুমি কে হ্যাঁ? আমার বিষয়ে নাক গলাও কেন? আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো। (প্রেমা)
চেঁচিয়ে অভ্রকে কথাগুলো বলে কেঁদে উঠে প্রেমা। প্রেমা লাল মুখ,ভেজা চোখ,আর ঠোঁট ভেঙে কান্না দেখতে বিষণ ভালো লাগছিলো অভ্রের। অভ্রের এখানে আসার মূল কারন ছিলো প্রেমাকে কাঁদানো।প্রেমাকে কাঁদতে থেকে এখন শান্তি পাচ্ছে।
“কাঁদো, কারো কান্না চিরস্থায়ী হয়না।অস্থায়ী হয়।কান্নার পরেইতো আসে সুখ।”(মনেমনে অভ্র কথাটা বলে)
অভ্র প্রেমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে,এরপর আবছা শব্দে বলে ” আমি কে? আমি তোমার হবু দেবর।”
অভ্রের কথাটা কানে আসতেই প্রেমা রেগে যায়। ধুম করে উঠে হাঁটা দেয়। প্রেমাকে হাঁটতে দেখে অভ্রও হেঁটে প্রেমার পাশে এসে দাঁড়ায়। প্রেমা আরো জোরে হাঁটতে চাইলে অভ্র হাত ধরে ফেলে।
“চুপচাপ আমার সাথে চলো,নাহলে? (অভ্র)
” নাহলে কী? (প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র কোনো উত্তর দেয় নি। চুপচাপ প্রেমার হাত ধরে টেনে একটা সিএনজিতে উঠে যায়।

(চলবে) Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here