#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৪৯
সোফায় বসে ক্রোদ্ধ হয়ে বসে আছেন শাহিদ সাহেব এবং দিলশান বেগম। রাগান্বিত চোখজোড়া সামনে বসে থাকা কুচকুচে কালো বোরকা পরিহিতা মহিলাটির দিকে। নিকাব সরানো। এলোমেলো দৃষ্টি ছুঁড়ছেন এদিক-ওদিক। কী ভয়ংকর মুহুর্তে আঁটকে আছেন মহিলাটি। এক সমুদ্দুর চাপা আর্তনাদে শ্বাস নিতে কিয়ামত ঘটাচ্ছে।
মৌনতা ভেঙে দিলশান বেগম বলেন,
-কেন এসেছিস এখানে? তোর সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক আগেই চুর্ন-বিচুর্ন করে দিয়েছিলাম।ভুলে গেলি।
কম্পিত স্বর আয়শা বলেন,
-মা চাচিমা,আমি কিছুই ভুলিনি।
ভুল করেছিলাম।এখন তার শাস্তিও পাচ্ছি।
কর্কশ কন্ঠে দিলশান বেগম বলেন,
-ভুল? মারাত্মক ভয়ংকর ভুল করেছিলি।যার ক্ষমা নেই।
আয়শার কলিজা ছিঁড়ে যাওয়ার জোগাড়। চোখে বাঁধ ভাঙা জল।শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে কান্নারত অবস্থায় বলেন,
-আমার ছেলেরা কোথায়?দেখা করিয়ে দাও।
ক্ষমা চেয়ে নিবো। মায়ের সন্তান কখনো হারায় না।
এতটুক কথা দিলশান বেগম আরো দ্বিগুন ক্রোধিত হন। বসা থেকে উঠে কষে চড় মেরে দেন আয়শাকে।যেটা উনার আগে দেওয়া উচিত ছিলো।বাপ-মা মরা মেয়ে ছিলো বলেই লাই দিয়েছিলো কষ্ট পাবে বলে।কিন্তু হয়েছে জগন্য চরিত্রের।
দিলশান বেগমের পায়ের নিচে থুবড়ে পড়েন আয়শা। এতোবছরের পাপ কান্নাতে কখনোই বুজে যাবে না।আরো কঠিণ শাস্তি পেতে হবে।
-“মা,ও চাচিমা, আমার ছেলেদের সাথে দেখা করিয়ে দাও।আমার অভ্র? কোথায়? ওর সাথে আমি অনেক অন্যায় করেছি,পাপ করেছি।একটা বার সুযোগ চাই।”
বলেই পা জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন।
আয়শার কথায় বিন্দুমাত্র মন গলাতে পারেনি দিলশান বেগমের। অভ্রের কষ্ট সে দেখেছিলো।কতোটা নির্দয় মা হলে ছোট ছেলেটাকেও ছেড়ে চলে যেতে পারে তা আয়শাকে না দেখলে বুঝতো না।ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট পেতে দেখেছিলো অভ্রকে।সে নিজের জন্য নয়,ছোট ভাইটির জন্য হলেও তার পাপি মাকে চেয়েছিলো।
কিন্তু এই মহিলার সেদিন কোন ভ্রুক্ষেপ ও ছিলোনা।
ঝাঁটকা মেরে পা সরান দিলশান বেগম,
-কই তোর সেদিনের প্রেমিক? লাত্তি মারছে?
এ কথায় নিরুত্তর রয়ে যান আয়শা।সত্যিই লাত্তি খেয়ে এসেছে।এতোটা বছর। বিষে জর্জরিত ছিলো এতোটা বছর। সে এখন বিছানা সজ্জায়। এখন আবছা শান্তিতে রয়েছে।নাহলে আরো বেশি মার পরতো।
নতজানু হয়ে জিজ্ঞেস করেন আবারও,
-‘আমার ছেলেরা কোথায়?
শাহিন সাহেব এতক্ষণ নিশ্চুপ ছিলেন।এবার কিছু বলা উচিত। নীরবতা ভেঙে বলেন,
-“তাদের দেখার আশা রেখে লাভ নেই। যে পথ দিয়ে এসেছিস,সে পথ দিয়েই ফিরে যা।
কারণ তোর ছায়াও অভ্র সহ্য করবে না।চলে যা। অভ্র এখানেই নাহলে তোকে হয়তো খুন করতেও হাত কাঁপবে না ওর।”
আয়শা কান্না থামিয়ে বলেন,
-‘ আমার ছেলে এমন না,অভ্রের জন্মদিনের দিন আমার সাথে দেখা হয়েছিলো। এখানের রাস্তা থেকে মেইরোডের রাস্তা পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।রিক্সায়ও তুলে দিয়েছিলো। আমি ওর মা বলেই তো দিয়েছে। ”
হঠাৎ উনি কথাগুলো বলে হাসতে লাগলেন।আবার থেমে কাঁদতেন শুরু করেন। হাসি-কান্না দু’টোই একসঙ্গে বিরাজমান। অভ্রের নানা-নানি দু’জনে হতবাক হয়ে যান। কতো বিশ্রী হাসিকান্না।যেনো অশরীরীরা হাসছেন।
-“আমি আজ চলে যাচ্ছি।আবারও আসবো।
আমার ছেলেদের আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।”
হঠাৎ বিকট একটা শব্দে থমকে যায় উভয়ে।সদর দরজায় নজর দিলো। সর্বনাশা মুহুর্ত।সয়ং অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। চোখেমুখে রক্তিম আভা। তবে চাহনি একদম নীরব। নীরবের মধ্যেও ভয়ংকর দেখাচ্ছে অভ্রকে। নিজের উপর এখন রাগ হচ্ছে।এখানে না আসলেই বোধহয় ভালো হতো।
আয়শা আহমেদ অভ্রকে দেখেই দৌড় অভ্রের কাছে যায়।চোখে অস্রু আর মুখে হাসি।যেই অভ্রের গাল স্পর্শ করতে যাবে,তার আগেই অভ্র সরে যায়।
অভ্রের পাশে প্রেমা দাঁড়ানো।বিস্ফোরিত দৃষ্টি ছুড়তে লাগলো অভ্রের মায়ের দিকে।রাগ হয় প্রেমার।তবপ তা অপ্রকাশিত রাখে। অভ্রকপ কষ্ট দিয়েছে ভাবলেই প্রেমারও কলিজা ছিঁড়ে যাওয়ার জোগাড়।
অভ্র প্রেমাকে নিয়ে দরজা থেকে ভেতরে প্রবেশ করেন। শাহিদ এবং দিলশানের কাছে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়েন,
‘-এই মহিলা এখানে কী করছে? উনাকে বলো চলে যেতে আমি ওই মহিলার চেহেরাও দেখতে চাই না। চলে যেতে বলো। আমি…..
অভ্র ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।কথা বলা অসম্ভব হয়ে যায়।শ্বাস যেনো আঁটকে আসবে।আয়শা চেয়েও কথা বাড়াতে পারেনি।দিলশান অভ্রকে নিয়ে ভেতরের রুমে যান।অভ্রকে শান্ত করা খুব জরুরি। একপ্রকার টেনে নিয়ে যান উনি।
ততক্ষণে আয়শা মাঝরাস্তায় চলে আসেন। হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ এভাবেই হয় বুঝি।কষ্ট?
এটার চেয়ে পৃথিবীতে আর কোন কষ্ট। সন্তান তার মায়ের মুখ দর্শণ করতে চাই না।এটা সত্যিই খুব কষ্টকর।
প্রেমার রাগ হলেও এখন বিষণ মায়া হচ্ছে অভ্রের মায়ের উপর।মানুষ মাত্রই ভুল।কিন্তু উনি তো অন্যায় করেছিলেম।ঘোর অন্যায়।
প্রেমা পেঁছন ফিরে অভ্রের মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। তখনি অভ্র এসে প্রেমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে।দ্রুত ফিরে তাকাল প্রেমা।অভ্রকে দেখে ভয় হচ্ছে তার। কয়েক মিনিটের ব্যাবধানে কীভাবে চেহারার রঙ পাল্টে গেছে।
প্রেমাকে চুপ দেখে অভ্র হালকা নিজেকে শান্ত করে। নরম স্বরে বলে, ‘ আমার কষ্টের কথাগুলে নিশ্চয় ভুলে যাওনি।’
প্রেমা অভ্রের কথা অর্থ বুঝতে পারে। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। অভ্র প্রেমার দিকে তাকিয়ে রয় কিছু সময়ের জন্য। পরে বলে উঠে, “চলো’।
প্রেমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অভ্র প্রেমাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। আশেপাশে যেনো তীক্ষ্ণ বাতাস বইছে। অভ্রের বিসর্জিত রাগ যেনো এ বাতাসে মাধ্যম হয়ে আবারও ফিরে এসেছে।
সন্ধ্যা নেমেছে অনেক আগেই। অভ্র আর প্রেমা বাড়ি ফিরে আসে।সাইকান, জেরিনও ছিলোনা।তাদের একটু আগেই ফিরে এসেছে।
অভ্র নিজেকে সামলে স্বাভাবিক হয়ে যায়। দুঃস্বপ্ন ভেবে তখনের ব্যপারটাকে হাওয়াই উড়িয়ে দিচ্ছে।
মেঝেতে চারজনে বসে টিবি দেখছে। অভ্র আঁড়চোখে প্রেমাকে দেখছে একটু পর পর।কেমন যেনো দেখাচ্ছে প্রেমাকে।চোখমুখে চিন্তার চাপ।
প্রেমা ভয়ে কুঁকিয়ে উঠছে।কেন যেনো ভয় ও করছে। বারবার বুক দুরুদুরু করে উঠছে। ভয় এবং আশংকা ঘিরে ধরছে। হাত কচলাতে শুরু করছে অনবরত। ভয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কান্না আসতেও চাইছেনা।আঁটকে আছে।
অভ্র আঙুল দ্বারা প্রেমার হাতে ঠুকা দেয়। চকিত হয়ে মাথা তুলে তাকাল প্রেমা। অভ্র ভ্রু নাড়িয়ে জানতে চাই, ‘কিছু কী হয়েছে’?
প্রেমা হালকা হেসে না জানাল। অভ্রও হেসে টিবিতে মনোযোগ দেয়।
_________________________
বেলা সাড়ে দশটা। ঠিকানা অনুযায়ে প্রেমা আর অভ্র তাদের নতুন বাসাটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রেমা ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলো না। অভ্র একপ্রকাড় প্রেমাকে টেনে নিয়ে যায়।দরজার সামনে এসে বেল বাজাতেই, নাতাশা এসে দরজা খোলে।
-” কেমন আছো তোমরা?(নাতাশা)
‘ভালো, তুমি? (প্রেমা আর অভ্র একসাথে বলে)
-‘ আমিও ভালো,ভেতরে এসো।
প্রেমা নতুন বাড়িটি দেখতে শুরু করে। অভ্রকে বসতে দেয় নাতাশা। প্রেমা তাঁর মায়ের সাথে দেখা করতে যায়। প্রেমার মা কাঁদতে শুরু করে দেন। মেয়েকে স্বার্থপরও বললেন।প্রেমা আসলেই স্বার্থপর।অভ্রকে পেয়ে পরিবারের কথা মনেও ছিলো না।
অভ্র চলে যেতে চাইলে প্রেমার বাবা আঁটকান।না খেয়ে অভ্রকে যেতে দিবেনা।বাধ্য হয়ে অভ্রও বসে থাকে। প্রেমাকে দেখছে না অনেক্ষণ হলো। প্রায় আধঘন্টার কাছাকাছি। অভ্রের কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছিলো।তবুও প্রেমার বাবার সাথে টুকটাক আলাপ-আলোচনা করেন।
ঠিক সেই মুহুর্তে পিয়াস হাওয়ারর বেগে বাড়িতে প্রবেশ করে। হাতে একটা প্যাকেট ছিলো। পিয়াস তার বাবার সামনে এসে টেবিলের উপর ধুম করে প্যাকেটটা টেবিলে রাখলো।
পিয়াসে এমন আচরণে উনি আশ্চর্য হন নি!
বরং প্যাকেট গুলোর দিকে একনজর তাকিয়ে প্রেমাকে ডাকলেন,
বাবার গলার স্বর শুনে প্রেমা ড্রয়িংরুমে আসে।সঙ্গে নাতাশা এবং প্রেমার মাও চলে আসলেন।
পিয়াসের দিকে তাকাতেই প্রেমা লক্ষ্য করে পিয়াস রেগে আছে।সামান্য বরং বেশিই রেগেছে। তা মুখ দেখে বুঝতে পারে।
‘-বাবা আমাকে ডেকেছো? (প্রেমা)
প্রেমার বাবা গম্ভীর্য্য স্বরে বললেন, ‘হুম’। এরপর টেবিল থেকে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে প্রেমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ এটা খোল, দেখ কী আছে? ‘
হঠাৎ অজানা ভয় এসে প্রেমার মনে হানা দিয়ে উঠে। ভীতু চোখে একবার অভ্রের দিকে তাকাল।সেও কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছে। অভ্র চোখের পলক ফেলে প্যাকেটটা হাতে নিতে ইশারা করে।
প্রেমা প্যাকেট হাতে নিয়ে দৃঢ়ভাবে খুলল। ভেতরে হাত দিয়ে দেখলো ছবির মতো কিছু।এবার ভয় আরো দ্বিগুন এসে প্রেমাকে আঁকড়ে ধরে। ছবি গুলে বের করেই প্রেমা থমকে যায়। চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি আসতে শুরু করে দেয়।কাঁপা হাতে কয়েকটা ছবি দেখার পর হাত থেকে ছবি পড়ে যায়। তখনি অভ্র উঠে ছবিগুলো কুঁড়িয়ে নেয়।ছবিগুলো দেখে অভ্র রাগ উঠে যায়।তীক্ষ দৃষ্টি ছুঁড়ে পিয়াসের দিকে।
পিয়াসের ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি লেগে আছে। সঙ্গে বিশ্বজয়ের হাসিও।
অভ্র যথাস্থানে ছবিগুলো রেখে টেবিলে প্যাকেটটা ছুঁড়ে মারে।
প্রেমার হাত ধরে অভ্র প্রেমার বাবার সামনে দাঁড়াল। অভ্রকে একদম স্বাভাবিক দেখে পিয়াসের ভ্রু কোঁচকে আসে।কৌতূহল ভরা চাহনি ছুঁড়ে অভ্রের দিকে।
প্রেমার বাবা একবার প্রেমার দিকে এবং অভ্রের দিকে তাকাল।পরমুহূর্তে তাদের হাতের দিকে তাকাল। রাগত্ব স্বরে বলে উঠলেন,
-‘তোমদের থেকে আমি এটা আশা করিনি।প্রেমা তুই? তুই আমার মেয়ে হয়ে কীভাবে এ কাজটা করলি। তোরা একে-অপরকে ভালোবাসিস আমাকে বলতি। এতোদিন ধরে এতগুলো সম্পর্ক দু’জনে মিলে এভাবে ভেঙে এসেছিস। একবারো আমাদের কথা ভাবলি না?আমাকে অন্তত জানাতি।
প্রেমা আর অভ্র দু’জনে চমকে যায়। বুঝতে পারে পিয়াস সত্যি-মিথ্যে সব একসাথে মিলিয়ে কাহিনী বানিয়ে তাঁর বাবার কানে তুলেছে।এ মুহুর্তে বিষণ রাগ হচ্ছে প্রেমার।পিয়াসকে ভাই হিসেবে অস্বীকার করতেও তার এখন মুখ কাঁপবে না।
-‘ বাবা আমি আসলে…(প্রেমা)
তখনি অভ্র প্রেমাকে চুপ করিয়ে বলে,
‘-আংকেল,প্রেমার কোন দোষ নেই।সব আমিই করেছিলাম। হ্যাঁ বিয়ে ভেঙেছিলাম প্রেমাকে ভালোবাসি বলে নয়।প্রেমার আমার বলেই। যদি আপনি আরো স্পষ্ট ভাবে শুনতে চান তাহলে বলি, আমি আর প্রেমার মধ্যে আলাদা কিছুই নেই।আমরা পুরোপুরি একে-অপরের। আর প্রেম-ভালোবাসা বলে আমাদের ফিলিংসটকে অপমান করবেন না আশা করি।
আপনার সব রকম কথার জবাব আমি দেব।তবে প্রেমার থেকে কিছু জানার চেষ্টা করবেন না।অনুরোধ!
‘-এ ছেলে একদম কথা ঘুরাবে না তোমাকে আমি…(পিয়াস)
পিয়াসের কথায় অভ্র প্রচন্ড রেগে যায়।টেবিলে জগ ছিলো। ঘাঁড় ঘুরিয়ে জগটা হাতে নিয়ে জগের সব পানি পিয়াসের দিকে ছুঁড়ে মারে।
মুহুর্তে সকলে দৃষ্টি বিস্ময়ে চেয়ে যায়। এমন একটা ঘটনা অভ্র ঘটাবে ভাবতে পারেনি।প্রেমার বাবাও অবাক হয়ে যান।পিয়াস বিষণ উগ্র,বদমেজাজি।তাই সবসময় পিয়াসের সাথে কম কথায় সব শেষ করতেন।কিন্তু অভ্রের সাহস দেখে অভ্রের তারিফ করার ইচ্ছে জাগে মনেমনে।
নাতাশা মনেমনে বিষণ খুশী হয়। পিয়াস রেগে তেড়ে আসলে পিয়াসের বাবা হাত বাড়িয়ে দিয়ে থামিয়ে দেন। পিয়াস উপায় না পেয়ে নাতাশাকে রুমে আসার জন্য ইশারা করে চলে যায়।
নাতাশা যাওয়ার পর অভ্র প্রেমার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আন্টি প্রেমাকে নিয়ে যান আংকেলের সাথে কিছু কথা আছে আমার।’
প্রেমার মাও বিস্ময় কাটাতে পারছেন না।অভ্রকে বিষণ নম্র-ভদ্র ছেলে হিসেবে জানতেন। এখন অভ্রকে শয়তানের হাড্ডি মনে হচ্ছে। স্বামীর দিকে তাকালেই, প্রেমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইশারা করলেন।
-“চল প্রেমা, (প্রেমার মা)
প্রেমার অভ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে চলতে শুরু করে। অভ্র প্রেমার দিকে দৃষ্টি ছুঁড়ে হাসে।
প্রেমা যেতেই অভ্র বেশ আয়েশ করে সোফায় বসে। হাতের ঘড়িতে সময়টা দেখে।
এরপর প্রেমার বাবার দিকে তাকাল।হটাৎ প্রেমার বাবাও অভ্রের দিকে তাকিয়ে হাসি দেন,এবং বললেন, ‘ আমার মেয়েকে ভুলে যাও।’
অভ্র হাতের আঙুলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ভুলতে পারি একটা শর্তে,’
প্রেমার বাবা এবার নড়েচড়ে সোফায় বসেন।অভ্রের দিকে চোখ ছোট করে বললেন, ‘কী?
অভ্র সব দাঁত দেখিয়ে হেসে বলে, ‘আপনার কলিজাটা ছিড়ে আমাকে দিয়ে দেন। তারপর আপনার মেয়েকে অনায়াসে ভুলে যাবো।ট্রাস্ট মি প্রেমার নামটাও মনে থাকবে না।
অভ্রের কথায় প্রেমার বাবা বুকে হাত দেন।ভয়ার্ত স্বরে বললেন, ‘ তাহলে আমি বাঁচবো কীভাবে? ‘
অভ্র হাসি চেপে বললেন, ‘তাহলে আমি কী করে বাঁচবো।অন্য কোন উপায় আছে। আমার যে কোন একটা চা-ই চাই। সেটা হোক আপনার মেয়ে বা আপনার কলিজা।
এবার প্রেমার বাবা জোরে হেসে উঠলেন। এতক্ষণের সব নাটকের এখানেই ইতি টানে। হাসতে হাসতে বললেন, ‘ তোমার বাবা আমাকে আগে থেকে সব জানিয়ে দিয়েছে। উনার কথায় চুপ ছিলাম। কারণ দেখতে চেয়েছিলাম পেঁছন থেকে কে কে ছুরি মারে। আরিয়ানও সব জেনে গেছে।সে আর পিয়াস মিলে তোমাদের ছবি গুলো তুলে এনেছিলো।তখন আমি কিছু বলিনি।আগেও বলবো না।তবে চিন্তা করো না। আমি তোমার পাশেই আছি।
শুধু আমার মেয়েটাকে খুশী রেখো।
কথাগুলো বলে উনি উঠে দাড়ালেন,এবং অভ্রের সামনে এসে দাঁড়ান।অভ্রও দাড়িয়ে প্রেমার বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
মনেমনে হাজারো কৃতজ্ঞ জানাল তার বাবাকে।নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে তার।জন্ম না দিয়েও বাবা হওয়ার সবরকমের দায়িত্ব পালন করেছে অভ্রের বাবা।
(চলবে)
রি-চ্যাক দেয়নি।
হাতে ব্যাথা তাই লিখতে পারছি না।😥 Tarin Jannat